আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, তাওহীদের দাও‘আতই সকল নবী-রাসূল (আঃ)-এর মূল দাও‘আত। বস্ত্তত শিরকই মানব সমাজের কঠিনতম পাপ যা মানুষের পারলৌকিক মুক্তির সকল আশা চিরতরে নস্যাত করে দেয়। এজন্য শয়তান সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে সকল মানুষকে এ কঠিন পাপের মধ্যে নিপতিত করতে। নবী-রাসূলগণের দাও‘আতের মাধ্যমে যারা হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছেন তাদেরকে এবং বিশেষকরে তাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলিকে তাদেরই নামে শিরকে লিপ্ত করেছে শয়তান। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইহূদী, খৃস্টান এবং আরবের মুশরিকগণ। এরা সকলেই নবী-রাসূলগণের হেদায়েত প্রাপ্ত মানুষদের উত্তরসূরী ও অনুসারী। যুগের পর যুগ এরা বংশ পরম্পরায় নবী-রাসূলগণের হেদায়াত বহন করেছেন এবং তাদের দীন পালন করেছেন। কিন্তু এরই মাঝে শয়তান এদের মধ্যে শিরক্-এর প্রচলন করতে সক্ষম হয়।

মহান আল্লাহর সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বজনীন শরীয়ত ও দাওয়াত হিসেবে ইসলামে শিরক প্রতিরোধের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর অন্যতম হলো মূল ওহীর বিশুদ্ধতা রক্ষা করা এবং একে সর্বজনীন করা। পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখব যে, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের উম্মাতদের মধ্যে শিরক প্রবেশের মূল কারণগুলির অন্যতম ছিল (১) ওহী ভুলে যাওয়া বা ওহীর বিকৃতি ঘটা এবং (২) ওহীর পরিবর্তের মানুষদের মতামত, ব্যাখ্যা ও পছন্দকে বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা।

এ সকল মানুষ ওহীর ব্যাখ্যা ও দীনের নামে বিভিন্ন শিরক, কুফর ও কুসংস্কার সমাজে প্রচলন করে এবং এগুলিকেই মূল তাওহীদ ও দীন বলে দাবি করে। মূল ওহী বিকৃত, বিলুপ্ত বা আংশিক বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় এদের মতের অসারতা প্রমাণের পথ থাকে না। ফলে এদের মতামতই দীন বলে পরিগণিত হয়। মুসলিম উম্মার মধ্যে শিরকে প্রচলন বিষয়ক আলোচনায় আমরা দেখব যে, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শিরক প্রচলনের জন্য শয়তান ও তার শিষ্যরা একইভাবে চেষ্টা করেছে। তবে মূল ওহী অর্থাৎ কুরআন ও হাদীস সংরক্ষিত থাকার কারণে তাদের প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল হয় নি।

পবিত্র কুরআন ও হাদীস অধ্যয়ন করলে আমরা দেখি যে, তাওহীদের প্রচার ও শিরক অপনোদনই কুরআন-হাদীসের মূল আলোচ্য বিষয়। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমরা দেখেছি যে, তাওহীদ ও শিরকই কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে কুরআন ও হাদীসে শিরক প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে (১) মুশরিকগণের পরিচিতি ও তাদের শিরকী বিশ্বাস ও কর্মগুলি উল্লেখ করা, যেন মুমিনরা কখনো সেগুলিতে লিপ্ত না হয়, (২) শিরকের কারণ ব্যাখ্যা করা, যেন মুমিনগণ এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন, (৩) শিরকের অযৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা, (৪) শিরকের ভয়াবহ পরিণতি ব্যাখ্যা করা এবং (৫) শিরকের পথগুলি বন্ধ করা। আমরা এখানে এ সকল বিষয়ে আলোচনা করতে চাই। আল্লাহর তাওফীক ও কবুলিয়্যাত প্রার্থনা করছি।