৫. ২. ৩. ২. ৭. রাশি, তাবিয ইত্যাদি ব্যবহার করা

বিভিন্ন হাদীসে তাবিজ, কবজ, রশি, সূতা, তাগা, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি ব্যবহার শিরক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যান্য হাদীসে ঝাড়-ফুঁক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ সকল হাদীসের সমন্বয়ের জন্য অনেক আলিম বলেছেন যে, কুরআনের আয়াত, হাদীস বা ভাল অর্থের দু‘আ দ্বারা যেমন ঝাড়ফুঁক বৈধ, তেমনি এরূপ আয়াত, হাদীস বা ভাল অর্থের দু‘আ লিখে ‘তাবিয’ আকারে ব্যবহারও বৈধ। কোনো কোনো আলিম বলেছেন যে, কুরআনের আয়াত, হাদীস বা ভাল অর্থবোধক দু‘আ দিয়ে ঝাড়-ফুঁক দেওয়া বৈধ, কারণ তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে তাবীজ ব্যবহার কোনোভাবেই বৈধ নয়, কারণ তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। হাদীস শরীফে কুরআনের আয়াত বা ভাল দু‘আ দ্বারা ঝাড়-ফুঁক দেওয়া বৈধ বলে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে অনেককে ফুঁক দিয়েছেন। তবে তিনি নিজে বা তাঁর সাহাবীগণ কখনো কাউকে তাবিজ লিখে ব্যবহার করতে দিয়েছেন বলে কোনো সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। উকবা ইবনু আমির আল-জুহানী (রাঃ) বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هَذَا قَالَ إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيمَةً فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا فَبَايَعَهُ وَقَالَ مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ

‘‘একদল মানুষ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকট আগমন করেন। তিনি তাদের ৯ জনের বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং একজনের বাইয়াত গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি ৯ জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন কিন্তু একে পরিত্যাগ করলেন? তিনি বলেন, এর দেহে একটি তাবিজ আছে। তখন তিনি তার হাত ঢুকিয়ে তাবিজটি ছিড়ে ফেলেন। অতঃপর তিনি তার বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং বলেন: ‘‘যে তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করল।’’[1]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদের (রাঃ) স্ত্রী যাইনাব (রাঃ) বলেন,

انَ عَبْدُ اللَّهِ إِذَا جَاءَ مِنْ حَاجَةٍ فَانْتَهَى إِلَى الْبَابِ تَنَحْنَحَ ... وَإِنَّهُ جَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ فَتَنَحْنَحَ قَالَتْ وَعِنْدِي عَجُوزٌ تَرْقِينِي مِنْ الْحُمْرَةِ فَأَدْخَلْتُهَا تَحْتَ السَّرِيرِ فَدَخَلَ فَجَلَسَ إِلَى جَنْبِي فَرَأَى فِي عُنُقِي خَيْطًا قَالَ مَا هَذَا الْخَيْطُ قَالَتْ قُلْتُ خَيْطٌ أُرْقِيَ لِي فِيهِ قَالَتْ فَأَخَذَهُ فَقَطَعَهُ ثُمَّ قَالَ إِنَّ آلَ عَبْدِ اللَّهِ لأَغْنِيَاءُ عَنْ الشِّرْكِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) يَقُولُ: إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ قَالَتْ قُلْتُ لِمَ تَقُولُ هَذَا وَاللَّهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِي تَقْذِفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلانٍ الْيَهُودِيِّ يَرْقِينِي فَإِذَا رَقَانِي سَكَنَتْ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّمَا ذَاكَ عَمَلُ الشَّيْطَانِ كَانَ يَنْخُسُهَا بِيَدِهِ فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِي كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) يَقُولُ أَذْهِبْ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لا شِفَاءَ إِلا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا

‘‘ইবনু মাসঊদ (রাঃ) যখন বাড়িতে আসতেন তখন সাড়া দিয়ে আসতেন। ... একদিন তিনি এসে সাড়া দিলেন।  তখন আমার ঘরে একজন বৃদ্ধা আমাকে ঝাড়ফুঁক করছিল। আমি বৃদ্ধাকে চৌকির নিচে লুকিয়ে রাখি। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ঘরে ঢুকে আমার পাশে বসেন। এমতাবস্থায় তিনি আমার গলায় একটি সুতা দেখতে পান। তিন বলেন, এ কিসের সুতা? আমি বললাম, এ ফুঁক দেওয়া সুতা। যাইনাব বলেন, তখন তিনি সুতাটি ধরে ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন, আব্দুল্লাহর পরিবারের শিরক করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি: ‘‘ঝাড়-ফুঁক, তাবীজ-কবজ এবং মিল-মহববতের তাবীজ শিরক।’’ যাইনাব বলেন, তখন আমি আমার স্বামী ইবনু মাসঊদকে বললাম, আপনি এ কথা কেন বলছেন? আল্লাহর কসম, আমার চক্ষু থেকে পানি পড়ত। আমি অমুক ইহূদীর কাছে যেতাম। সে যখন ঝেড়ে দিত তখন চোখে আরাম বোধ করতাম। তখন ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন: এ হলো শয়তানের কর্ম। শয়তান নিজ হাতে তোমার চক্ষু খোচাতে থাকে। এরপর যখন ফুঁক দেওয়া হয় তখন সে খোচানো বন্ধ করে। তোমার জন্য তো যথেষ্ট ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলতেন তা বলবে। তিনি বলতেন: অসুবিধা দূর করুন, হে মানুষের প্রতিপালক, সুস্থতা দান করুন, আপনিই শিফা বা সুস্থতা দানকারী, আপনার শিফা (সুস্থতা) ছাড়া আর কোনো শিফা নেই, এমন (পরিপূর্ণ) শিফা বা সুস্থতা দান করুন যার পরে আর কোনো অসুস্থতা অবশিষ্ট থাকবে না।’’[2]

তাবিয়ী ঈসা ইবনু আবি লাইলা বলেন,

دخلنا على عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُكَيْمٍ وَهُوَ مَرِيضٌ نَعُودُهُ فَقِيلَ لَهُ لَوْ تَعَلَّقْتَ شَيْئًا فَقَالَ أَتَعَلَّقُ شَيْئًا وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ

‘‘আমরা সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উকাইম আবূ মা’বাদ জুহানীকে (রাঃ) অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গেলাম। আমরা বললাম, আপনি কোনো তাবিজ ব্যবহার করেন না কেন? তিনি বলেন: আমি তাবিজ নেব? অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যদি কেউ দেহে (তাবিজ জাতীয়) কোনো কিছু লটকায় তবে তাকে উক্ত তাবিজের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।’’[3]

তাবিয়ী উরওয়া ইবনুয যুবাইর বলেন:

دَخَلَ حُذَيْفَةُ  عَلَى مَرِيْضٍ فَرَأَى فِيْ عَضُدِهِ سَيْراً فَقَطَعَهُ أَو انْتَزَعَهُ ثُمَّ قَالَ: وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَهُمْ مُشْرِكُوْنَ

‘‘সাহাবী হুযাইফা (রাঃ) একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যান। তিনি লোকটির বাজুতে একটি রশি দেখতে পান। তিনি রশিটি কেটে দেন বা টেনে ছিড়ে ফেলেন এবং বলেন[4],  অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং তারা শিরকে লিপ্ত থাকে।’’[5]

[1] আহমদ, আল-মুসনাদ ৪/১৫৬; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/১০৩। হাদীসটির সনদ সহীহ। আলবানী, সিলসিলাতুস সাহীহাহ ১/৮০৯।
[2] আহমদ, আল-মুসনাদ ১/৩৮১; আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/৯; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/২৪১। হাদীসটির সনদ সহীহ।
[3] আহমদ, আল-মুসনাদ ৪/৩১০; তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৪০৩; আবূ দাউদ, আস-সুনান ৩/৩০০। হাদীসটি হাসান।
[4] সূরা ইউসূফের ১০৬ নং আয়াতের উদ্ধৃতি।
[5] ইবনু কাসীর, তাফসীর ২/৪৯৫।