কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা চতুর্থ অধ্যায়: আরকানুল ঈমান ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

কুরআনের বর্ণনা অনুসারে আমরা জানতে পারি যে, মহান আল্লাহ সকল যুগে সকল সমাজেই নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন:

وَإِنْ مِنْ أُمَّةٍ إِلا خَلا فِيهَا نَذِيرٌ

‘‘প্রত্যেক জাতিতেই সর্তককারী প্রেরণ করা হয়েছে।’’[1]

অন্য আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে:

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَسُولٌ فَإِذَا جَاءَ رَسُولُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَهُمْ لا يُظْلَمُونَ

‘‘প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে একজন রাসূল, আর যখন কোনো জাতির  রাসূল তাদের মধ্যে আবির্ভূত হয়েছেন তখন তাদের মধ্যে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ফয়সালা দান করা হয়েছে, এবং তাদেরকে জুলুম করা হয়নি।’’[2]

এসকল সতর্ককারী নবী-রাসূলের বিস্তারিত বিবরণ মহান আল্লাহ জানাননি। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে:

وَرُسُلا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ

‘‘অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের কথা ইতোপূর্বে আপনাকে বলেছি এবং অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি যাদের কথা আমি আপনাকে বলি নি।’’[3]

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ

‘‘আপনার পূর্বে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি, যাদের মধ্যে কারো কথা আপনার কাছে বিবৃত করেছি, আর কারো কারো কথা আপনার কাছে বিবৃত করিনি।’’[4]

নবী-রাসূলদের সংখ্যার বিষয়ে কোনো প্রসিদ্ধ গ্রন্থে কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। মুসনাদ আহমদ, মুসনাদ আবী ইয়ালা মাওসিলী, সহীহ ইবন হিববান ইত্যাদি গ্রন্থে বিভিন্ন সনদে সংকলিত কয়েকটি হাদীসে এ বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবীগণের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৪ হাজার। অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে নবীগণের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার। অন্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবীগণের সংখ্যা এক হাজার বা তার বেশি ছিল। একাধিক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলগণের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন বা ৩১৫ জন। এ সকল হাদীসের অধিকাংশই দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থে এ সকল হাদীসের সনদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সামগ্রিক বিচারে একাধিক সনদের কারণে কোনো কোনো মুহাদ্দিস হাদীসগুলিকে গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।[5]

যেহেতু এ বিষয়ক সংখ্যাগুলি খাবারু ওয়াহিদ পর্যায়ের হাদীস এবং বিশেষত এগুলির সনদে দুর্বলতা রয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে সুনিশ্চিত কিছু না বলাই উত্তম বলে মত প্রকাশ করেছেন মুহাক্কিক আলিমগণ। মোল্লা আলী কারী বলেন: ‘‘বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে নবীগণের সংখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন: ১ লক্ষ ২৪ হাজার। কোনো কোনো বর্ণনায়: ২ লক্ষ ২৪ হাজার। তবে তাঁদের বিষয়ে কোনো সংখ্যা নির্ধারণ না করাই উত্তম।’’[6]

তিনি আরো বলেন: ‘‘উত্তম এই যে, নবীগণের সংখ্যা নির্ধারিত সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখা; কারন ‘খাবারুল ওয়াহিত’ পর্যায়ের হাদীসের উপরে আকীদার বিষয়ে নির্ভর করা যায় না। বরং জরুরী এই যে, আল্লাহ যেভাবে বলেছেন সেভাবে সাধারণভাবে নবী-রাসূলগণের উপর ঈমান আনা ... ফিরিশতাগণেল সংখ্যা, কিতাবসমূহের সংখ্যা, নবীগণের সংখ্যা, রাসূলগণের সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে মনোনিবেশ না করা।’’[7]

[1] সূরা (৩৫) ফাতির: ২৪ আয়াত।
[2] সূরা (১০) ইউনূস: ৪৭ আয়াত।
[3] সূরা (৪) নিসা: ১৬৪ আয়াত।
[4] সূরা (৪০) গাফির/মুমিন: ৭৮ আয়াত।
[5] মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ ৬/৩৫৮-৩৬৯।
[6] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ৯৯-১০০।
[7] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১০১।