কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা চতুর্থ অধ্যায়: আরকানুল ঈমান ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৪. ২. ৭. মালাকগণের আকৃতি-প্রকৃতিতে বিশ্বাস

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, অদৃশ্য জগতের কোনো কিছুর বিষয়ে আল্লাহ আমাদেরকে ততটুকুই জানিয়েছেন, যতটুকু জানলে এবং বিশ্বাস করলে আমরা জাগতিক আধ্যাত্মিক কল্যাণ লাভ করতে পারব। এজন্য কুরআন ও হাদীসে মালাকগণ সস্পর্কে যে সকল বর্ণনা এসেছে তা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, এ সকল আয়াত ও হাদীস মূলত আল্লাহর সাথে মালাকগণের সম্পর্ক, সৃষ্টি পরিচালনায় ও আল্লাহর ইচ্ছা ও নির্দেশ বাস্তবায়নে তাঁদের  দায়িত্ব এবং মানুষের প্রতি তাঁদের  দায়িত্ব ও কর্তব্য ইত্যাদি বিষয়েই আলোচনা করা হযেছে। তাঁদের  সৃষ্টি ও আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সাধারণত বিশেষ কিছু বলা হয়নি। তবে কুরআন-হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা যা বুঝতে পারি তা নিম্নরূপ:

৪. ২. ৭. ১. মালাকগণ মানুষের পূর্বে সৃষ্ট

কুরআনের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, মহান আল্লাহর মানব সৃষ্টির পূর্বে মালাকগণকে সৃষ্টি করেন, মানব সৃষ্টির প্রাক্কালে তাঁর ইচ্ছার কথা তাঁদেরকে জানিয়েছিলেন এবং আদমের সৃষ্টির পরে আল্লাহর নির্দেশে তাঁরা আদমকে সাজদা করেন। যেমন একস্থানে আল্লাহ বলেন:

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ فَسَجَدَ الْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ

‘‘তোমার প্রতিপালক যখন মালাকগণকে বলেছিলেন: ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করছি মাটি থেকে, যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদাবনত হয়ো।’ তখন মালাকগণ সকলেই সাজদাবনত হলেন।’’[1]

৪. ২. ৭. ২. মালাকগণ আল্লাহর সম্মানিত ও অনুগত বান্দা

মক্কার কাফিরগণ মালাকগণকে আল্লাহর সন্তান ও কন্যা-সন্তান বলে কল্পনা করত, তাঁদের ইবাদত করত এবং দাবি করত যে, তাঁদের ইবাদত করলে তাঁরা খুশি হয়ে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করে তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন। তাদের এ বিশ্বাসের প্রতিবাদ করে আল্লাহ বলেন:

وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يَشْفَعُونَ إِلا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ.

‘‘তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তিনি যাদের প্রতি সন্তুষ্ট তাদের ছাড়া আর কারো জন্য তারা সুপারিশ করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।’’[2]

৪. ২. ৭. ৩. মালাকগণ নূরের তৈরি

মানুষ ও জিন্ন জাতির সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে কুরআন কারীমে বারংবার বলা হয়েছে যে মানুষকে মাটি থেকে এবং জিন্ন-কে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মালাকগণের সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে কুরআন কারীমে কিছুই বলা হয় নি। তবে একটি হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, তাঁদেরকে নূর বা আলো থেকে তৈরি করা হয়েছে।

خُلِقَتْ الْمَلائِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ

‘‘মালাকগণকে নূর (আলো) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, জিনণদেরকে প্রজ্জলিত অগ্নি শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর মানুষকে কোন্ বস্ত্ত থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা তো তোমাদেরকে জানানো হয়েছে।’’[3]

[1] সূরা (৩৮) সা’দ: ৭১-৭৩ আয়াত। আরো দেখুন: সুরা বাকারা: ৩০, ৩৪; আ’রাফ: ১১; হিজর: ২৮, ৩০; ইসরা (বনী ইসরাঈল): ৬১; কাহাফ : ৫০; সূরা তাহা: ১১৬ আয়াত।
[2] সূরা (২১) আম্বিয়া: ২৬-২৮ আয়াত।
[3] মুসলিম, আস-সহীহ ৪/২২৯৪।