তবে সব কর্ম এক পর্যায়ের নয়। কিছু কর্ম আছে যা সাধারণভাবে মানুষ ‘ইবাদত’ হিসেবেই করে। যে সত্তার এরূপ অলৌকিক ক্ষমতা ও আধিপত্য আছে তাকেই তা প্রদান করে। সকল সমাজের সকল ভাষার মানুষই এগুলি জানেন। পূজা, অর্চনা, বলি, কুরবানী, মানত, প্রার্থনা ইত্যাদি এই জাতীয় কর্ম। পাশাপাশি কিছু কর্ম আছে যা মানুষ ইবাদত হিসেবে করে, আবার জাগতিকভাবেও করে। যেমন প্রশংসা করা, ভয় করা, আনুগত্য করা ইত্যাদি। এগুলি মানুষ মানুষ হিসেবে জাগতিকভাবে অন্য মানুষের জন্য করে। আবার ‘মা’বূদ’ বা পূজিত সত্তার জন্যও করে।

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রথম প্রকারের কর্ম আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করাই শিরক। যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য মানত, বলি, উৎসর্গ, জবাই ইত্যাদি করা। এগুলি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করলে তা শিরক বলে গণ্য হবে। কারণ কারো ভিতরে ঈশ্বরত্ব (divinity, holiness, sacredness, sanctity) ঐশ্বরিক ক্ষমতা, চূড়ান্ত আধিপত্য, অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা, অলৌকিক শক্তি ইত্যাদি কল্পনা না করলে কেউ তার জন্য এরূপ কর্ম করে না। এ বিষয়ে শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী (রাহ) বলেন:

اعلم أن العبادة هي التذلل الأقصى. وكون التذلل أقصى من غيره لا يخلو إما أن يكون بالصورة، مثل كون هذا قياماً وذلك سجوداً، أو بالنية بأن نوى بهذا الفعل تعظيم العباد لمولاهم، وبذلك تعظيم الرعية للملوك، أو التلامذة للأستاذ، لا ثالث لهما.

‘‘জেনে রাখ, ইবাদত হলো চূড়ান্ত ভক্তি-বিনয়। কোন্ ভক্তি-বিনয় চূড়ান্ত এবং কোন্টি চূড়ান্ত নয় তা দুভাবে জানা যায়: (১) ভক্তি-বিনয়ের প্রকার থেকে, যেমন দাঁড়িয়ে ভক্তি করা চূড়ান্ত ভক্তি নয় তবে সাজদা করা চূড়ান্ত ভক্তি এবং (২) নিয়্যাত বা উদ্দেশ্য থেকে, যেমন বান্দা হিসেবে তার মাবূদকে ভক্তি করার উদ্দেশে যে ভক্তি বা বিনয় প্রকাশ করা হয় তা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং প্রজা হিসেবে রাজার বা ছাত্র হিসেবে শিক্ষকের ভক্তির নিয়েতে যা করা হয় তা চূড়ান্ত ভক্তি নয় বলে গণ্য। ভক্তি-বিনয় চূড়ান্ত পর্যায়ের কি না তা জানার তৃতীয় কোনো পথ নেই।’’[1]

[1] শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ১/১৭৯।