মুমিনদের জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত

কিয়ামতের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি শাফা‘আত হবে সকলের জন্য। আর সেটা বিচার-ফয়সালা শুরু করার আবেদন সম্পর্কে। সকল নবী ও রাসূল এ ব্যাপারে শাফা‘আত করতে অস্বীকার করবে, নিজেদের অপরাগতা প্রকাশ করবে। শেষে আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফা‘আত করবেন। এটা হলো সাধারণ শাফা‘আত। সকল মানুষ এ শাফা‘আত দ্বারা উপকৃত হবে।

আরেকটি শাফা‘আত হবে যে সকল মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে গেছে তাদের উদ্ধার ও মুক্তির জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফা‘আত করবেন।

যেমন হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ، فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا»

“প্রত্যেক নবীর রয়েছে কিছু দো‘আ যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সকল নবী এ দো‘আগুলো করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করেছেন। কিন্তু আমার উম্মতকে কিয়ামতের দিন শাফা‘আত করার জন্য এ দো‘আগুলো আমি ব্যবহার করিনি। ইনশাআল্লাহ সেই শাফা‘আত পাবে আমার অনুসারী ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ যারা কখনো আল্লাহ তা‘আলার সাথে কোনো কিছু শরীক করে নি”।[1]

হাদীসে আরো এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ القِيَامَةِ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ ظَنَنْتُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَنْ لاَ يَسْأَلُنِي عَنْ هَذَا الحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلُ مِنْكَ لِمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلَى الحَدِيثِ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ، مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ، أَوْ نَفْسِهِ»

“আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কিয়ামতের দিন আপনার শাফা‘আত দ্বারা কে ভাগ্যবান হবে? তিনি বললেন, “হে আবু হুরায়রা আমি জানি তোমার পূর্বে কেউ এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে নি। তোমাকে হাদীসের বিষয়ে বেশি আগ্রহী দেখছি। কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর দিয়ে নির্ভেজাল পদ্ধতিতে বলেছে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই”।[2]

এ দুটো হাদীস পাঠে আমরা জানতে পারলাম কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত দ্বারা কারা ধন্য হবে। যারা অন্তর দিয়ে শির্ক মুক্ত থেকে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদে বিশ্বাস করেছে তারাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত পাবে। তারা যতই পাপী হোক না কেন।

আমাদের সমাজে আমরা এমন কিছু লোক দেখি যারা রাসূলের শাফা‘আত লাভ করার জন্য বিভিন্ন শির্ক ও বিদ‘আতী কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। আর বলে এগুলো করে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত লাভ করতে পারবো। তাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহর সাথে শির্ক করে কখনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফা‘আত লাভ করা যাবে না। ঈমান যদি সম্পূর্ণ শির্কমুক্ত থাকে তখন পাপের পাহাড় যত বড়ই হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত লাভ ও আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ ক্ষমায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে। কিন্তু ঈমান যদি সম্পূর্ণ শির্কমুক্ত না থাকে তাহলে নেক আমলের পাহাড় নিয়ে উপস্থিত হলেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ নেই। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফা‘আত লাভে ধন্য হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৯।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯।