কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউজে কাউসার

কিয়ামতের দিন মুসলিমগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য সমবেত হবে। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, মেশকের চেয়ে এর সুঘ্রাণ তীব্র আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত। যে এ থেকে একবার পানি পান করবে সে আর কখনো পিপাসিত হবে না।

হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«تَرِدُ عَلَيَّ أُمَّتِي الْحَوْضَ، وَأَنَا أَذُودُ النَّاسَ عَنْهُ، كَمَا يَذُودُ الرَّجُلُ إِبِلَ الرَّجُلِ عَنْ إِبِلِهِ» قَالُوا يَا نَبِيَّ اللهِ أَتَعْرِفُنَا؟ قَالَ: " نَعَمْ لَكُمْ سِيمَا لَيْسَتْ لِأَحَدٍ غَيْرِكُمْ تَرِدُونَ عَلَيَّ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، وَلَيُصَدَّنَّ عَنِّي طَائِفَةٌ مِنْكُمْ فَلَا يَصِلُونَ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ هَؤُلَاءِ مِنْ أَصْحَابِي. فَيُجِيبُنِي مَلَكٌ، فَيَقُولُ: وَهَلْ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ؟ "

“হাউজে কাউসারে আমার উম্মত সমবেত হবে। আমি অনেক মানুষকে এমনভাবে তাড়িয়ে দেব যেমন একজনের উট অন্য জনের উটের পাল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাদের তখন চিনবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা, তোমাদের এমন কিছু আলামত আছে যা অন্যদের নেই। তোমরা আমার কাছে উপস্থিত হবে আর তোমাদের অজুর স্থানগুলো চকমক করতে থাকবে। তোমাদের একটি দলকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে, তারা হাউজের কাছে পৌছতে পারবে না। সে সময় আমি বলব, হে আমার প্রভূ এরা আমার অনুসারী। তখন এক ফিরিশতা উত্তর দিবে, আপনি কি জানেন আপনার পরে তারা কি প্রচলন করেছে?”[1]

এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:

এক. উম্মতের সকল মানুষ হাউজে কাউসারে পানি পানের জন্য ভীড় করবে।

দুই. অজুর আলামত দেখে মুসলিমদের চেনা যাবে।

তিন. অজুর ফযীলত।

চার. মুসলিমদের একটি অংশকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। কারণ, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গত হওয়ার পর ইসলামে নতুন বিষয়ের প্রচলন করেছে বা তাতে লিপ্ত হয়েছে।

পাঁচ. ইসলামে বিদ‘আত প্রচলন ও তার অনুসরণ একটি মহা-পাপ।

হাদীসে এসেছে: আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ِنِّي عَلَى الحَوْضِ حَتَّى أَنْظُرَ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ مِنْكُمْ، وَسَيُؤْخَذُ نَاسٌ دُونِي، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ مِنِّي وَمِنْ أُمَّتِي، فَيُقَالُ: هَلْ شَعَرْتَ مَا عَمِلُوا بَعْدَكَ، وَاللَّهِ مَا بَرِحُوا يَرْجِعُونَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ »

“আমি হাউজে কাউসারে থাকব আর দেখব তোমাদের কে কে আসছে। কিন্তু কিছু মানুষকে আমার অনুমতি ব্যতীত নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে রব! এরা আমার অনুসারী, আমার উম্মতের অংশ। আমাকে বলা হবে, আপনি কি জানেন, আপনার পরে এরা কি কাজ করেছে? আল্লাহর শপথ! তারা পিছনে ফিরে যাবে”।[2]

হাউজে কাউসারে মুসলিম উম্মাহ কখন সমবেত হবে? এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এটা পুলসিরাতের পূর্বে হবে। আবার কেউ কেহ বলেছেন এটা হিসাব-কিতাব, মিযান ও পুলসিরাতের পরে হবে।

আমি মনে করি প্রথম মতটি অধিকতর সঠিক। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের সাক্ষাতের ওয়াদা করেছেন হাউজে কাউসারে কাছে। যেমন, হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ ইবন আসেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,

«إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ بَعْدِي أُثْرَةً، فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوْنِي عَلَى الحَوْضِ»

“আমার পরে তোমরা অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে শাসকদের অগ্রাধিকার দেখতে পাবে। তোমরা তখন ধৈর্য ধারণ করবে হাউজে কাউসারে আমার কাছে সাক্ষাত লাভ পর্যন্ত”।[3]

হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ، مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ، وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ المِسْكِ، وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ، مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلاَ يَظْمَأُ أَبَدًا»

“আমার হাউজের প্রশস্ততা হবে এক মাসের সমান দূরত্ব। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুঘ্রান মেশকের চেয়ে উত্তম। আর তার পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মতো। যে তা থেকে পান করবে কখনো পিপাসিত হবে না”।[4]

এ হাদীসটি দিয়ে বুঝা যায় কিয়ামত সংঘটনের পর পরই জান্নাত জাহান্নাম নির্ধারণ হওয়ার আগে হাউজে কাউসারে সমবেত হওয়ার বিষয়টি চলে আসবে।

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৭।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৯৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৪৫।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৯২।