বিদআতের কতিপয় ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব রয়েছে; তার মধ্য থেকে নিম্নে কিছু তুলে ধরা হল।

১. যা কুফর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেন :

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَأْخُذَ أُمَّتِي بِأَخْذِ الْقُرُونِ قَبْلَهَا شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَفَارِسَ وَالرُّومِ فَقَالَ وَمَنْ النَّاسُ إِلَّا أُولَئِكَ. (بخاري)

অর্থ : ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ আমার উম্মত পূর্ববর্তী যামানার লোকদের হুবহু পদাঙ্ক অনুসরণ না করবে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! রোম এবং পারস্যের মতো? উত্তরে তিনি বললেন, মানুষের মধ্যে একমাত্র তারাই।[1]

আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ؟(متفق عليه)

 অর্থঃ তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী যামানার লোকদের হুবহু পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তের ভিতর প্রবেশ করে থাকে তাহলে তোমরাও তাদের অনুসরণে সেখানে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহূদী এবং নাসারাগণ? তিনি বললেন, আর কারা?[2

২. অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা   

বিদআতের অন্যতম কুফল হল, অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা। কেননা কোন পর্যবেক্ষক বিদআতপন্থীর চরিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবে, তাদের অনেকে আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামে মিথ্যা বলছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের মিথ্যারোপ করতে নিষেধ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الأَقَاوِيلِ َلَأخَذْنَا مِنْهُ بالْيَمِينِ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ  الْوَتِينَ . (الحاقة: 44-46)

অর্থঃ যদি সে নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিত, তবে অবশ্যই আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী (শাহরগ)।[3]

এমনিভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মিথ্যারোপ করতে নিষেধ করেছেন এবং এর জন্য কঠিন আযাবের হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِباً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنْ النَّارِ.(متفق عليه)

 অর্থঃ যে আমার উপর মিথ্যারোপ করার ইচ্ছা পোষণ করল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে ফেলল।[4]

(৩) বিদআতপন্থীরা সুন্নাত ও তার অনুসারীদের দুশমন

বিদআতের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হল, বিদআতপন্থীরা সুন্নাত ও তার অনুসারীদের দুশমন হয়ে থাকে। ইমাম ইসমাইল বিন আঃ রহমান ছাবুনী রহ. বলেন, বিদআতপন্থীদের যে নিদর্শন সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের ধারক-বাহকগণকে দুশমন মনে করে ও তাদের হেয় প্রতিপন্ন করে।

(৪) বিদআতপন্থীর আমল গ্রহণযোগ্য নয়

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ. (متفق عليه)

অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমলের প্রবর্তন করল যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।[5]

অপর বর্ণনায় এসেছেঃ

مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ. (مسلم)

অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যাতে আমার সমর্থন নেই, তা গ্রহণযোগ্য নয়।[6]

(৫) বিদআতপন্থীর পরিণাম ভয়াবহ

শয়তান কয়েকটি প্রতারণার জালের যে কোনটির মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে চায়। প্রথমতঃ আল্লাহর সাথে শিরক করা। যদি মানুষ এ ধোকা হতে মুক্তি পায়, তাহলে তার সামনে শয়তান বিদআতকে পেশ করে। এ কথার দ্বারা বুঝা যায়, বিদআত অন্যান্য গুনাহের চেয়েও ভয়ানক।[7] তাই সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, বিদআত শয়তানের নিকট অন্যান্য গুনাহের চেয়েও প্রিয়। কেননা গুনাহ্ হতে তাওবা করার সুযোগ হলেও বিদআত থেকে তাওবা করার সুযোগ হয় না।[8]

কেননা একে হক মনে করা হয়, আল্লাহ্ আমাদেরকে  সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

(৬) বিদআতীরা উল্টো বোঝে

সে নেক কাজকে গুনাহ মনে করে এবং গুনাহকে নেক কাজ মনে করে, সুন্নাতকে বিদআত মনে করে ও বিদআতকে সুন্নাত মনে করে।

হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা) বলেন, আল্লাহর কসম! বিদআত এমন ভাবে প্রচার প্রসার লাভ করবে যে, যদি একটি বিদআত ছেড়ে দেয়া হয়, লোকেরা মনে করবে একটি সুন্নাত ছেড়ে দেয়া হয়েছে।[9]

(৭) বিদআতীর সাক্ষ্য ও বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়

সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের ঐকমত্য হল, যে বিদআতী স্বীয় বিদআতমূলক কার্যক্রমে কুফরী করে। তার রেওয়ায়েত (বর্ণনা) গ্রহণযোগ্য নয়। আর যে বিদআতী স্বীয় বিদআতমূলক কার্যক্রমে কুফরী করে না, তার রেওয়ায়াত (বর্ণনা) গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম নববী রহ. বলেন, যদি সে তার বিদআতের প্রতি মানুষকে আহবানকারী না হয়, তাহলে তার রেওয়ায়াত গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি আহবান করে তাহলে গ্রহণযোগ্য হবে না।[10]

 (৮) বিদআতীরা অধিকাংশই ফেতনায় পতিত হয়

আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদেরকে ফেতনায় পতিত হওয়ার ব্যাপারে সর্তক করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَاتَّقُواْ فِتنَةً لاَّ تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوْا مِنكُم خَآصَّةً وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.(الأنفال: 25)

অর্থঃ তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় কর যা তোমাদের মধ্যকার জালিম ও পাপিষ্ঠদেরকেই বিশেষভাবে ক্লিষ্ট করবে না, বরং সবার উপরই আসবে। তোমরা জেনে রেখ! আল্লাহ্ শাস্তি দানে খুব কঠোর।[11]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوِ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ .  (النور: 63)

অর্থঃ অতএব, যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে। তারা যেন সতর্ক হয় ঐ বিষয় থেকে, যা তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।[12]

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরোধিতা বা নাফরমানীর চেয়ে আর কোন ফিতনা বড় হতে পারে কি? অথচ তিনি ফিতনায় পতিত হওয়ার পূর্বেই সৎকর্ম করার উৎসাহ প্রদান করেছেন।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنْ الدُّنْيَا. (مسلم)

অর্থঃ অন্ধকার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার আগেই অধিকহারে সৎকাজ কর। তখন কোন ব্যক্তি সকালে মুমিন হবে আবার বিকালে সে কাফের, আবার সন্ধ্যাকালে মুমিন থাকবে আবার সকালে কাফের হয়ে যাবে।[13]

(৯) বিদআতপন্থী শরীয়ত সংস্কারের দাবীদার

বিদআতপন্থী স্বীয় বিদআতের মাধ্যমে একথা বুঝাতে চায় যে, দ্বীন অসম্পূর্ণ ছিল। সে দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছে। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نَعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُمْ الإِسْلامَ دِيْنًا . (المائدة: 3)

অর্থ : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।[14]

আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনসহ সকল বিষয় কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتاَبَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَئْْ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ .   (النحل: 89)

অর্থঃ আমি আপনার উপর কুরআন নাযিল করেছি। যাতে সকল কিছুর বর্ণনা রয়েছে এবং তা হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ মুসলমানদের জন্য।[15]

(১০) বিদআতপন্থীর নিকট হক ও বাতিল মিশ্রিত হয়ে যায়

বিদআতপন্থীর নিকটে হক ও বাতিল উভয়টা মিশ্রিত হয়ে যায়। সে এতদুভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য করতে পারে না। হক ও বাতেলের মাঝে পার্থক্য করার ইল্ম আল্লাহ্ প্রদত্ত একটি নূর, তা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। এছাড়াও বিদআতপন্থী তাকওয়া বঞ্চিত হয়, যা মানুষকে হকের দিকে পৌঁছে দেয়।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

ياَاَيُّهَا الَّذِينَ  ءَامَنُواْ إِن تَتَّقُواْ اللهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا ويُكَفِرْعَنْكُم سَيِئاَتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ  ذُو الْفَضْلِ الَظِيمِ. (الأنفال : 29)

অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভয় কর তবে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার একটি মানদন্ড ও শক্তিদান করবেন আর তোমাদের দোষক্রটি তোমাদের হতে দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ বড় অনুগ্রহশীল ও মঙ্গলময়।[16]

(১১) বিদআত প্রবর্তক নিজ গুনাহ্ ও অনুসারীদের গুনাহ বহন করে

আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا. (مسلم)

অর্থঃ যে ব্যক্তি কোন হেদায়াতের দিকে আহবান করবে তাকে তার অনুসারীদের সাওয়াব না কমিয়ে তাদের সমান সাওয়াব দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোন গোমরাহী বা অন্যায়ের দিকে আহবান করবে তাকে তার অনুসারীদের গুনাহ না কমিয়ে তাদের সমান গুনাহ দেয়া হবে।[17]

(১২) বিদআতপন্থী লানত প্রাপ্ত

আনাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় বিদআত প্রচারকারীর ব্যাপারে বলেন :

مَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا. (متفق عليه)

অর্থঃ যে ব্যক্তি কোথাও কোন বিদআতের প্রচলন করবে অথবা কোন বিদআতপন্থীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহর, ফিরিশতাগণের ও সকল মানুষের লানত। আল্লাহ তার কোন নফল বা ফরজ আমল গ্রহণ করবেন না।[18]

ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, এ হাদীস ব্যাপকভাবে সকল প্রকার শরীয়ত বিরোধী কাজ ও বিদআতকে অন্তর্ভুক্ত করে।[19]

(১৩) বিদআতপন্থী কিয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি পাবে না

সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

أَناَ فَرْطُكُمْ عَلَى الحَْوْضِ مَنْ وَرَدَ شَرِبَ وَ مَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا وَلَيَرُدَّنَّ عَليَّ أَقْوَامُ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَ بَيْنَهُمْ .(متفق عليه)

অর্থঃ আমি তোমাদের আগেই হাউজে কাউসারে থাকব। যে পানি পান করতে চাইবে আমি তাকে পান করাব, আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসিত হবে না। আমার সামনে এক জামাতকে আনা হবে তারা আমাকে চিনবে আমিও তাদের চিনব কিন্তু পরক্ষণেই তাদের মাঝে ও আমার মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি হয়ে যাবে।[20]

অন্য রেওয়ায়াতে আছে, অতঃপর আমি বলব তারা আমার দলের। বলা হবে আপনি জানেন না, তারা আপনার অবর্তমানে কি বিদআত সৃষ্টি করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও, দূর হও, যারা আমার পর দ্বীনের মাঝে বিদআত সৃষ্টি করেছ।[21]

আব্দুল্লাহ্ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ

يَارَبَِّّ أَصْحَابِيْ أَصْحَابِيْ فَيُقَالُ : إِنَّكَ لا تَدْرِيْ مَا أَحْدَثُوْا بَعْدَكَ. (متفق عليه)

অর্থঃ হে রব! তারা আমার দল, তারা আমার দল! জবাব দেয়া হবে, আপনি জানেন না তারা আপনার পর কি নতুন জিনিস সৃষ্টি করেছে।[22]

আসমা বিনতে আবি বকর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِنِّي عَلَى الْحَوْضِ حَتَّى أَنْظُرَ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ مِنْكُمْ وَسَيُؤْخَذُ نَاسٌ دُونِي فَأَقُولُ يَا رَبِّ مِنِّي وَمِنْ أُمَّتِي فَيُقَالُ هَلْ شَعَرْتَ مَا عَمِلُوا بَعْدَكَ وَاللَّهِ مَا بَرِحُوا يَرْجِعُونَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ فَكَانَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ أَنْ نَرْجِعَ عَلَى أَعْقَابِنَا أَوْ نُفْتَنَ عَنْ دِينِنَا. (متفق عليه)   

অর্থঃ আমি হাউজে কাউছারের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখব তোমাদের থেকে কারা কারা আসছে। কিন্তু একদল লোককে আমার কাছে আসতে দেয়া হচ্ছে না, তখন আমি বলবঃ হে রব! তারা আমার দলের, তারা আমার উম্মত। তখন বলা হবেঃ আপনি কি জানেন তারা আপনার পর কোন নতুন জিনিস এর উপর আমল করেছে? আল্লাহর কসম! তারা আপনার দ্বীনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এজন্যে ইবনু আবি মুলাইকা রহ. দুআ করতেন, হে আল্লাহ! পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া ও দ্বীনের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।[23]

(১৪) বিদআতপন্থী আল্লাহর জিকির হতে দূরে থাকে

বিদআতপন্থী আল্লাহর জিকির হতে দূরে থাকে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে  আমাদের অনেক জিকির ও দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। কিছু  দুআ বা জিকির নির্ধারিত আছে যেমন ফরজ সালাতের পর দুআ, সকাল-সন্ধ্যার তাসবীহ, ঘুমানোর সময়কার দুআ ও ঘুম হতে জাগ্রত হওয়ার পরের দুআ ইত্যাদি। আবার কিছু জিকির বা দুআ এমন আছে যার কোন নির্ধারিত সময় বা স্থান নেই।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

يَا أيُّها الَّذِينَ ءَامَنُوا اذكُرُوا اللهَ  ذِكْرًا كَثِيْرًا وَسَبِحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلاً.(الأحزاب : 41-42)

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কর এবং সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর।[24]

(১৫) বিদআতপন্থী সত্যকে নিজের ও অনুসারীদের মাঝে গোপন রাখে

বিদআতপন্থী সত্য থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখে ও অনুসারীদের কাছেও তা গোপন রাখে। আল্লাহ্ তা‘আলা এ ধরনের লোকদের প্রতি লা’নত করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا  مِنَ الْبَيَّناَتِ وَالْهُدَى  مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَاهُ  لِلنَّاسِ فِى الْكَتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُمُمُ اللّعِنُونَ.(البقرة: 159)

অর্থঃ আমি যেসব উজ্জ্বল নিদর্শন ও পথ নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, আমি ঐ গুলোকে সর্ব সাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐ সব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদের লা’নত করেন এবং লা’নতকারীগণও তাদেরকে লা’নত করেন।[25]

(১৬) ইসলামে বিদআতপন্থীর আমল ঘৃণিত  

যখন বিদআতপন্থী কোন বিদআতী আমল করে তখন ইসলামের দুশমনদের কাছে ইসলাম ঠাট্টার বস্ত্ত হয়ে দাঁড়ায়। অথচ ইসলাম এ সকল বিদআত হতে পবিত্র।

(১৭) বিদআতপন্থী উম্মতকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত  করে

বিদআতপন্থী ব্যক্তি উম্মতকে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত  করে। কেননা বিদআতপন্থী নিজ বিদআত দ্বারা একটি দল তৈরী করে, যা মূল দল থেকে  আলাদা হয়ে যায়। এ ভাবে উম্মতে মুসলিমার মাঝে অনেক দলের সৃষ্টি হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন :

إِنَّ الَّذِين فَرَّقُواْ  دِينَهُمْ  وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنُهُمْ فِى شَيء إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوأ يَفْعَلُوَن. ( الأنعام: 159)

অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে নানা মতভেদ সৃষ্টি করে তাকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে, উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহর তত্ত্বাবধানে রয়েছে, পরিশেষে তিনিই তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন।[26]

(১৮) উম্মতে মুসলিমাকে বিদআত হতে বাঁচানোর লক্ষ্যে প্রকাশ্য বিদআতপন্থীর (গীবত) সমালোচনা করা বৈধ

প্রকাশ্য ফাসেকের চেয়ে প্রকাশ্য বিদআতী অধিক ভয়ানক। কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা মতে গীবত করা হারাম। কিন্তু ছয় কারণে শরীয়তে গীবতকে বৈধ করা হয়েছে।[27]

(ক) অত্যাচারীত হলে, (খ) গর্হিত কাজ দূরীকরণে সাহায্য প্রার্থনা কালে, (গ) ফতোয়া প্রার্থনার ক্ষেত্রে, (ঘ) মুসলিমদেরকে অনিষ্ট হতে বাঁচাতে, (ঙ) সংজ্ঞা দিতে গিয়ে  ও (চ) প্রকাশ্য বিদআতপন্থীর বেদআতের বর্ণনা দিতে গিয়ে।[28]

(১৯) বিদআতপন্থী প্রবৃত্তির অনুসারী ও শরীয়ত অস্বীকারকারী হয়[29]

(২০) বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের সমকক্ষ বা সাদৃশ বানিয়ে নেয়

বিদআতপন্থী নিজেকে শরীয়ত প্রবর্তকের সমকক্ষ বা সাদৃশ বানিয়ে নেয়। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা শরীয়তকে নিজেই বানিয়েছেন এবং বান্দাদেরকে তা অনুসরণ করে চলার আদেশ করেছেন। ঠিক তদ্রূপ বিদআত প্রবর্তক নিজে কোন আমল নতুন ভাবে উদ্ভাবন করে তদানুযায়ী মানুষকে আমল করতে উৎসাহিত করে।[30]

আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে ও সকল মুসলিম ভাইকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও সুস্থতা দান করুন ও বিদআত থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবায়ে কেরাম ও কিয়ামত পযর্ন্ত আগত তাঁর সকল একনিষ্ঠ অনুসারীগণের উপর। আমিন

[1] বুখারী : ৭৩১৯
[2] বুখারী : ৭৩২০ ও মুসলিম : ২৬৬৯
[3] আল-হাক্কাহ : ৪৪-৪৬
[4] বুখারী : ১০৮ ও মুসলিম : ২
[5] বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮
[6] মুসলিম : ১৭১৮
[7] মাদারিজুস্ সালিকীন-ইবনে কাইয়্যিম : ১/২২২
[8] শারহুস্ সুন্নাহ- বাগভী (র) : ১/২১৬
[9] কিতাবু মা জাআ ফিল বিদই : ১২৪পৃ: ১৬২নং
[10] শরহে মুসলিম-নববী (র) : ১/১৭৬
[11] আনফাল : ২৫
[12] নূরঃ ৬৩
[13] মুসলিম : ১১৮
[14] মায়েদা : ৩
[15] নাহল : ৮৯
[16] আনফাল : ২৯
[17] মুসলিম :২৬৭৪
[18] বুখারী : ৭৩০৬ ও মুসলিম : ১৩৬৬
[19] আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/২৪৬
[20] বুখারী : ৭/২৬৪ ও মুসলিম : ২২৯০
[21] বুখারী : ৬৫৮৩
[22] বুখারী : ৬৫৮৫ ও মুসলিম : ২২৯৫
[23] বুখারী : ৬৫৯৩ ও মুসলিম : ২২৯৩
[24] আহযাব : ৪১-৪২
[25] বাকারা : ১৫৯
[26] আনআম : ১৫৯
[27] শরহে মুসলিম-নববী (র) : ১৬/১৪২
[28] ফতহুল বারী : ১০/৪৭১
[29] আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/৬১
[30] আল-ইতিসাম- শাতেবী : ১/৬১-৭০