সমকালীন প্রচলিত বিদআত - প্রথমঃ মিলাদ মাহফিল

প্রথমঃ মিলাদ মাহফিল

মিলাদ মাহফিল করা বিদআত। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে উবায়দীরা এ বিদআতের প্রবর্তন করে। বর্তমান ও পুর্বেকার সকল উলামায়ে কেরাম একে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা এ ধরণের বিদআতের প্রবর্তন করেছে ও আমল করেছে, উলামায়ে কেরাম তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই মিলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়। কারণ :

১ম কারণঃ যে সকল কুসংস্কারের ব্যাপারে শরীয়তে কোন প্রমাণ নেই; তার অন্যতম হল মিলাদ মাহফিল। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ প্রসঙ্গে কোন বক্তব্য, আমল বা সমর্থন পাওয়া যায় না।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَمَآ ءأتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ  فَانْتَهُوا.(الحشر: 7)

অর্থঃ রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।[1]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرجُواللهَ وَالْيَومَ اْلاخِرَ وَ ذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا.(الأحزاب: 21)

অর্থঃ অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের জীবনের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কিয়ামত দিবসে (মুক্তির) আশা করে। আর অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।[2]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ.(بخاري و مسلم)

 অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।[3]

২য় কারণঃ খোলাফায়ে রাশেদীন এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর অন্যান্য সাহাবীগণ মিলাদ মাহফিল করেননি। এমন কি তার দাওয়াতও দেননি, অথচ তারাই হচ্ছেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত।

খুলাফায়ে রাশেদীনের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ .(أبو داود)&

অর্থঃ তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোন জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরীয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিস্কার করা হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্ত্তই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।[4]

৩য় কারণঃ মীলাদ মাহফিল করা বক্রতা সৃষ্টিকারী পথভ্রষ্টদের প্রথা। এ প্রথাকে সর্ব প্রথম ফাতেমী ও উবাইদী গোত্রের লোকেরা হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে প্রবর্তন করে। তারা নিজেদেরকে ফাতেমা (রা) এর সাথে সম্পৃক্ত করে, যা অন্যায়, অযেŠক্তিক ও অপবাদ ব্যতীত আর কিছুই নয়। মূলতঃ তারা ইহুদী। কেউ বলেন, তারা অগ্নিপুজক, আবার কেউ বলেন, তারা মুলহিদীন বা নাস্তিক। তাদের প্রথম ব্যক্তি হল, মুইজুদ্দীন ওবায়দী। সে পাশ্চাত্যের অধিবাসী। সেখান থেকে সে ৩৬১ হিজরীর শাওয়াল মাসে মিশরে আগমন করে এবং ৩৬২ হিজরী রমজান  মাস পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে।[5]

এখন কোন বুদ্ধিমানের জন্য এটা কি উচিত হবে যে, সে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত ছেড়ে একজন ইহুদীর অনুসরণ করবে? (আদৌ নয়)।

৪র্থ কারণঃ আল্লাহ্  তা‘আলা এ দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

اَلْيَوْمَ  أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكَمْ نعْمَتِيْ وَ رَضِيْتُ لَكُم الإِسْلامَ دِيْنًا.(المائدة: 3)

অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।[6]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের প্রচার করেছেন। জান্নাতে পৌঁছার সকল পথ ও জাহান্নাম হতে বাঁচার সকল উপায় উম্মতের সামনে বর্ণনা করে দিয়েছেন।

একথা সকলের জানা যে, আমাদের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল নবীগণের সর্দার এবং তিনি সর্বশেষ নবী, পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ কামনা করেছেন। সুতরাং যদি মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অংশ হতো আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হতো, তাহলে অবশ্যই তিনি তা উম্মতের জন্য বর্ণনা করতেন বা তাঁর জীবনে একবার হলেও আমল করে দেখাতেন।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেনঃ

مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَّبِيِّ إِلَّا كَانَ حَقًا عَلَيْهِ أَنْ يَّدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَايَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ. (مسلم)

অর্থঃ আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন তাদের সকলের উপর দায়িত্ব ছিল উম্মতকে ভাল কাজের দিক নির্দেশনা দেয়া ও অন্যায় কাজ হতে ভীতি প্রদর্শন করা।[7]

৫ম কারণঃ মিলাদ মাহফিলের মত বিদআত আমলের আবিস্কারের মাধ্যমে এ কথা প্রতীয়মাণ হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা দ্বীনকে এ উম্মতের জন্য পরিপূর্ণ করেননি, তাই দ্বীনের পরিপূরক কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। তেমনি একথাও বুঝা যায় যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মতের জন্য কল্যাণকর সকল বিষয়ের তাবলীগ বা প্রচার করেননি। যে কারণে পরবর্তীতে আল্লাহর অনুমোদন ব্যতিরেকে শরীয়তে নতুন কিছু আবিস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায়। এটা চুড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায় ও ভুল। এটা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর অভিযোগ। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও বান্দাদের জন্য সকল নিয়ামত সস্পূর্ণ করে দিয়েছেন।

৬ষ্ঠ কারণঃ এ উম্মতের বড় বড় আলেমগণ কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে মীলাদ মাহফিলের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বিদআত পরিহার করতে ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ করতে বলেন এবং কথা, কাজ ও আমলে তাঁর বিরোধিতা করা হতে সতর্ক করেন।

৭ম কারণঃ মীলাদ মাহফিলের দ্বারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর ভালবাসা অর্জিত হয় না বরং তাঁর অনুসরণ ও সুন্নাত অনুযায়ী আমলের দ্বারা তা অর্জিত হয়।


আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

قُلْ إِن كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ  وَاللهُ غَفُورُ رَّحِيْمٌ. (آل عمران: 31)

অর্থঃ )হে নবী( আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহর ভালবাসার দাবি কর, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।[8]

 ৮ম কারণ : মীলাদ মাহফিল, জসনে জুলুস ও ঈদে মিলাদুন্নবী ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের উৎসবের সাদৃশ। আর ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে ও তাদের অনুসরণ করতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন।[9]  

৯ম কারণঃ সারাদেশে মিলাদ মাহফিলে অধিক হারে লোক সমাগম দ্বারা জ্ঞানী লোকেরা কখনও প্রভাবিত হয় না। কেননা সঠিক ও সত্য হওয়াটা মানুষের আধিক্যতা দ্বারা বুঝা যায় না বরং শরীয়তের দলিলের মাধ্যমে বুঝা যায়।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَإِن تُطِعْ أكْثَرَ مَن فِى اْلأَرْضِ يُضِّلُوكَ عَن سَبِيلِ اللهِ. (الأنعام: 116)

অর্থঃ যদি আপনি দুনিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদের অনুকরণ করেন, তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে।[10]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَمَآأكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بمؤمنين. (يوسف: 103)

অর্থঃ যদিও আপনি মনে প্রাণে চান তবুও অধিকাংশ লোক ঈমানদার নয়।[11]

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَ قَلِيلٌ مِّنْ عِباَدِيَ الشَّكُور.(السبا: 13)

অর্থঃ আমার বান্দাদের কম সংখ্যকই কৃতজ্ঞ।[12]

১০ম কারণঃ শরয়ী নীতিমালার যে সকল ব্যাপারে মানুষ বাক-বিতন্ডা ও ঝগড়া করে, সে সকল বিষয়ে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করা উচিৎ।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

يَا أَيُّها الّذِينَ ءَامَنُوا اَطِيعُوا اللهَ وَاَطِيعُوا الرَّسُولَ وأًولِى الأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِى شَىْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَي اللهِ وَ الرَّسٌولِ إِن كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الأَخِر ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأوِيلاً.(النساء: 59)

অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দেয় তবে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর।[13]

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

وَمَا اخْتَلَفْتُمْ  فِيهِ مِن شَيءِ فَحُكْمُهُ إِلَى اللهِ.(الشورى: 10)

অর্থঃ তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট।[14]

নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি মীলাদ মাহফিলের ব্যাপারে আল্লাহ্ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিক নির্দেশনার প্রতি ধাবিত হবে, সে জানতে পারবে, আল্লাহ তাআলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

وَمَآ ءأتَاكمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَـكُمْ عَنْهُ  فَانْتَهُوا. (الحشر: 7)

অর্থঃ রাসূল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাক।[15]

আল্লাহ তাআলা দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীলাদ মাহফিলের জন্য কাউকে নির্দেশ দেননি, তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণও তা কখনও করেননি। সুতরাং মীলাদ মাহফিল দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা নব্যসৃষ্ট বিদআত।

১১তম কারণঃ সোমবার সিয়াম পালন শরীয়ত সিদ্ধ। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সোমবারের সিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, ذلِكَ يَوْمٍ وُلِدْتُ فِيْهِ، وَيَوْمَ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلي فِيْه.    (مسلم) অর্থঃ এটা এমন দিন যে দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি, আমি নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছি অথবা আমার প্রতি সেদিন কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।[16]

সুতরাং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শ হল সোমবার সিয়াম পালন করা, তবে এ উপলক্ষে মীলাদ মাহফিল করা বৈধ নয়।

১২তম কারণঃ ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা গর্হিত ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলীর অন্যতম। আর তা বুঝা যায় এ ধরণের মাহফিলে উপস্থিত হওয়া দ্বারা। এ ধরণের গর্হিত কাজের কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হল।

১। মীলাদে অংশগ্রহণকারীদের রচিত অধিকাংশ কবিতা ও স্তুতিমূলক বাক্যগুলোতে শিরকী ও বাড়াবাড়িমূলক কথা পাওয়া যায়। অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেন,

لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُه. (بخاري)

অর্থঃ তোমরা আমার প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রীষ্টানরা ইবনে মারইয়ামের প্রশংসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছিল। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা বল আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।[17]

২। মীলাদ মাহফিলে অনেক ক্ষেত্রে হারাম কাজ হয়ে থাকে। যেমন নারী-পুরুষ মিলেমিশে বসা, গান-বাদ্য করা, মদ-গাজা সেবন ইত্যাদি। আর কখনও কখনও এতে শিরকে আকবরও সংঘটিত হয়। যেমন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বা অন্য কোন অলীর কাছে সাহায্য চাওয়া, আল্লাহর কিতাবের অসম্মান করা, কুরআনের মজলিসে ধূমপান করা ইত্যাদি। মীলাদের দিনগুলোতে উচ্চস্বরে মসজিদে জিকির করা ও সুর করে শরীয়ত পরিপন্থী কবিতা আবৃত্তি করা। যা হক্কানী আলেমগণের ঐকমত্যে শরীয়ত সম্মত নয়।

৩। মীলাদ মাহফিলে আরো কিছু গর্হিত কাজ সংঘটিত হয়। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্মের ঘটনা আলোচনা কালে তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ান এই বিশ্বাস নিয়ে যে, তিনি এ মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন। তাই তাঁর অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। আর এ সবই চরম ভ্রান্তি ও মূর্খতা, যা নিন্দিত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামতের পূর্বে কবর থেকে বের হবেন না। কোন লোকের সাথে সাক্ষাত করবেন না, কোন সম্মেলনে উপস্থিত হবেন না। বরং তিনি কিয়ামত পর্যন্ত নিজ কবরে অবস্থান করবেন। আর তাঁর রুহ ইল্লিয়্যিনের সর্বোচ্চ স্তরে তাঁর প্রভুর কাছে সম্মানিত স্থানে রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

ثُمَّ إِنَّكم بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُون، ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ.(المؤمنون:15-16)

অর্থঃ এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।[18]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ.

(مسلم)

 অর্থঃ আমি কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের নেতা, সর্ব প্রথম কবর থেকে উত্থিত ব্যক্তি, সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সর্বপ্রথম আমার সুপারিশ গৃহিত হবে।[19]

উক্ত আয়াত, হাদীস এবং এ জাতীয় আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে বুঝে আসে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য মৃতদের ন্যায় মৃত। তিনি কিয়ামতের দিন কবর থেকে উত্থিত হবেন।

আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে বায বলেন, এ বিষয়ে সমস্ত আলেমের ঐকমত্য রয়েছে, এতে কারো মতবিরোধ নেই।[20]

[1] হাশর : ৭
[2] আহযাবঃ ২১
[3] বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮
[4] আবু দাউদ:৪৬০৭
[5] বিদায়া ওয়ান নিহায়া-ইবনে কাসীর:১১/২৭২-৭৩
[6] মায়েদা: ৩
[7] মুসলিম:১৮৪৪
[8] আলে-ইমরান: ৩১
[9] যাদুল মায়াদ-ইবনে কাইয়্যিম (র): ১/৫৯
[10] আনআম: ১১৬
[11] ইউসুফ: ১০৩
[12] সাবা: ১৩
[13] নিসা: ৫৯
[14] আশ-শুরা: ১০
[15] হাশরঃ ৭
[16] মুসলিম :
[17] বুখারী : ৩৪৪৫
[18] মুমিনুন : ১৫-১৬
[19] মুসলিম : ২২৭৮
[20] আত-তাহযীর মিনাল বিদআঃ ১৪