الفصل الثاني: ظهور البدع في حياة المسلمين - দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: মুসলিম সমাজে বিদআত প্রকাশিত হওয়া

এতে দু’টি মাস‘আলা রয়েছে

(১) বিদআত প্রকাশের সময়: শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রহি.) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের শেষের দিকে মুসলিম জাতির আকীদা ও আমলের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিদআতের প্রকাশ ঘটেছে। যার সংবাদ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেই আমাদেরকে প্রদান করেছেন এবং বিদআত থেকে মুসলিম জাতিকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন,

«عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ»

‘‘আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা সে সময় আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে তোমরা দীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতের পরিণাম গোমরাহী’’।[1]

বিদআতী ফির্কাসমূহের মধ্যে কাদরীয়া, মুর্জিয়া, শিয়া এবং খারেজী সম্প্রদায়ের বিদআত সর্বপ্রথম হিজরী দ্বিতীয় শতকে প্রকাশ পায়। এ সময় সাহাবীদের অনেকেই জীবিত ছিলেন। তারা এ সমস্ত বিদআতের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। অতঃপর মু‘তাযিলা সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। যার ফলে মুসলমানদের মাঝে অসংখ্য ফিতনা-ফাসাদের সৃষ্টি হয়। মুসলিম জাতির বিরাট এক অংশ বিদআতী মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অতঃপর সম্মানিত সাহাবীদের যুগ অতিবাহিত হওয়ার পর সূফীবাদ নামে আরেক নতুন মতবাদ দেখা দেয়। পর্যায়ক্রমে কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ, কবর পাকা করা ও কবর কেন্দ্রিক অসংখ্য বিদআতের প্রকাশ ঘটে। এভাবে সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে বিদআতের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন আকার ধারণ করতে থাকে।

২) বিদআত প্রকাশের অঞ্চল সমূহ:

বিদআত প্রকাশের দিক দিয়ে ইসলামী অঞ্চলগুলো কয়েক ভাগে বিভক্ত। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ মোট পাঁচটি শহরে বসবাস করতেন। এ সমস্ত দেশ থেকে ঈমানের আলো বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। শহর পাঁচটি হলো মক্কা, মদীনা, বসরা, কুফা ও শাম (সিরিয়া)। এ সমস্ত দেশ থেকে কুরআন, হাদীছ, ফিক্হ ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিস্তার লাভ করেছে।

পরবর্তীতে মক্কা মুকার্রামা ও মদীনা মুনাওয়ারা ব্যতীত বাকি স্থানগুলো থেকেই বড় বড় বিদআত বের হয়েছে। কুফা নগরী থেকে বের হয়েছে শিয়া ও মুর্জিয়াদের বিদআতী কথা ও মতবাদ। অতঃপর তা অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বসরা শহর থেকে কাদরীয়া ও মু‘তাযিলাদের বিদআতসহ বিভিন্ন ভ্রান্ত ইবাদতের আবির্ভাব হয়ে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

সিরিয়া থেকে বের হয় আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের প্রতি ঘৃণা ও তাঁদের সম্মানে কালীমা লেপনকারীদের বিদআতী কথা-বার্তা। জাহ্মীয়াদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে খোরাসানের সীমান্তবর্তী কোন এক অঞ্চলে। আর এটি হল সর্বনিকৃষ্ট বিদআত। যে দেশ রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মদীনা থেকে যত দূরে অবস্থিত, সেখানকার বিদআতও তত ভয়াবহ ও জঘন্য। উছমান (রা.) এর শাহাদাত বরণের পরপরই বের হয়েছে খারেজী সম্প্রদায় ও তাদের বিদআতসমূহ। তবে রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শহর মদীনা এ সমস্ত বিদআত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল। যদিও কোন কোন লোক মদীনাতে অবস্থান করেও গোপনে কিছু কিছু বিদআতী আকীদা পোষণ করতো। কিন্তু তারা অপমানিত অবস্থায় মদীনা বাসীদের সাথে বসবাস করতো। মদীনাতে তাদের সামাজিক কোন প্রভাব ও মূল্য ছিল না। একদল কাদরীয়া মতবাদের লোক মদীনাতে লাঞ্ছিত অবস্থায় বসবাস করতো। অপর দিকে কুফায় শীয়া ও মুর্জিয়া, বসরায় মু‘তাযিলা ও বিদআতী নিয়মে ইবাদতকারীদের দল এবং সিরিয়ায় নাসীবীয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রকাশ্যে বিদআতের চর্চা করতো। সহীহ বুখারীতে রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, আখেরী যামানায় দাজ্জালের ফিতনা মদীনাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

ইমাম মালেক (রহি.) এর সময়কাল পর্যন্ত মদীনাতে ইলম ও ঈমানের শিক্ষা বর্তমান ছিল। সম্মানিত তিন যুগে মদীনাতে বিদআতের নাম-নিশানা ছিল না। দীনের মৌলিক বিশ্বাসে আঘাতকারী কোন বিদআতও বের হয়নি। যেমনটি বের হয়েছে অন্যান্য শহর থেকে।  


[1]. আবু দাউদ হা/৪৬০৭, অধ্যায়: কিতাবুস্ সুন্নাহ, তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুল ইল্ম। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীছটি হাসান সহীহ। মুসনাদে আহমাদ, (৪/১২৬), মাজমূ‘ ফাতাওয়া (১০/৩৫৪)।