অলীদের কারামত ও যাদুকর-ভেলকিবাজ ও মিথ্যুকদের কারসাজির মধ্যে পার্থক্য

অলীদের কারামত এবং যাদুকর, ভেলকিবাজ ও মিথ্যুকদের ধোঁকাবাজির মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার ভয় এবং সৎ আমলের মাধ্যমে কারামত অর্জিত হয়। আর যাদুকর ও ভেলকিবাজদের দ্বারা অস্বাভাবিক যা কিছু প্রকাশিত হয়, তা কুফুরী ও পাপাচারের কারণেই প্রকাশিত হয়। অলীদের কারামতের মাধ্যমে সৎ ও তাকওয়ার কাজ অথবা পার্থিব বৈধ কাজে সাহায্য গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ভেলকিবাজ ও মিথ্যুকদের কাজের মাধ্যমে শিরক, কুফুরী হত্যা ইত্যাদি হারাম কাজে সাহায্য নেয়া হয়।

আল্লাহর যিকির ও তাওহীদের মাধ্যমে অলীদের কারামত শক্তিশালী হয়। কিন্তু যাদুকর ও ভেলকিবাজদের কাজ-কর্ম আল্লাহর যিকির, কুরআন তেলাওয়াত ও তাওহীদের মাধ্যমে বাতিল অথবা দুর্বল হয়ে যায়। অলীদের কারামত এবং ভেলকিবাজ ও মিথ্যুকদের রসিকতা-কৌতুক ইত্যাদির মধ্যে এমন পার্থক্য রয়েছে, যা সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করে দেয়।

আমরা উপরে উল্লেখ করেছি যে, যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অলী, তাদের হাতে আল্লাহ তা‘আলা যেসব কারামত প্রকাশ করেন, তারা সেটাকে মানুষের ধন-সম্পদ চুরি ও ফাঁকিবাজির মাধ্যম বানান না এবং সেটাকে মানুষ থেকে অতিরিক্ত সম্মান আদায়ের হাতিয়ারও বানান না;  বরং কারামত কেবল তাদের বিনয়, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং তার ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করে। ভেলকিবাজ ও মিথ্যুকদের কথা ভিন্ন। তাদের হাতে যেসব শয়তানী অবস্থা প্রকাশ পায়, সেটার মাধ্যমে তারা মানুষকে নিজেদের দিকে টেনে আনে, তাদের নৈকট্য অর্জনের প্রতি উৎসাহ দেয় এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের ইবাদত করারও আহবান জানায়। প্রত্যেক ভ- অলী নির্দিষ্ট তরীকা তৈরী করে নিয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের নামে একটি করে জামা‘আত রয়েছে। যেমন শাযেলী তরীকা, রেফাঈ তরীকা, নকশবন্দী তরীকা এবং অনুরূপ আরো অনেক সুফী তরীকা রয়েছে।

মোটকথা, কারামতের ব্যাপারে লোকেরা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়েছে। এক শ্রেণীর লোক কারামত অস্বীকার করতে গিয়ে সীমালংঘন করেছে এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃত মুত্তাকী অলীদের জন্য কুরআনুল কারীম ও সহীহ সুন্নাত দ্বারা সুসাব্যস্ত কারামতগুলোকে অস্বীকার করেছে। আরেক শ্রেণীর লোক কারামত সাব্যস্ত করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে এবং যাদু, ভেলকিবাজি এবং মিথ্যাচারকে কারামতের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এগুলোকে তারা শিরকের মাধ্যম বানিয়েছে এবং এগুলোর জীবিত ও মৃত উদ্ভাবনকারীদের ব্যাপারে নিকৃষ্ট আকীদা পোষণ করেছে। এ থেকে শুরু হয়েছে বড় শিরক, কবর পূজা, ব্যক্তি বিশেষের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনায় বাড়াবাড়ি। কেননা লোকেরা তাদের থেকে কারামত ও অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার ধারণা করেছে।

আর তৃতীয় শ্রেণী হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত। তারা কারামত সাব্যস্ত করার ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছে। তারা এ বিষয়ে কড়াকড়ি অবলম্বন করেনি এবং শৈথিল্য প্রদর্শন করেনি। তারা কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা সাব্যস্ত কারামতগুলোতে বিশ্বাস করেছে এবং যাদের হাতে এগুলো প্রকাশিত হয়েছে, তাদের প্রশংসায় তারা বাড়াবাড়ি করেনি ও আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে এদের উপর নির্ভরও করেনি। কেননা কারামতহীন এমন অলী রয়েছেন, যারা কারামতপ্রাপ্ত অলীদের চেয়ে উত্তম। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকেরা কারামতের নামে কুরআনুল কারীম ও সহীহ সুন্নাহ বিরোধী ভেলকিবাজি, ধোঁকাবাজি, ফাঁকিবাজির প্রতিবাদ করেন। তারা মনে করেন এগুলো শয়তানের কাজ; অলীদের কারামত নয়।

সত্য প্রকাশিত হওয়া এবং বাতিল সুস্পষ্ট হওয়ার জন্য আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿وَلَٰكِن لِّيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا ِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَن بَيِّنَةٍ وَيَحْيَىٰ مَنْ حَيَّ عَن بَيِّنَةٍ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَسَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾

 ‘‘বস্তুত যা ঘটার ছিল তা সম্পন্ন করার জন্য উভয় দলকে যুদ্ধক্ষেত্রে সমবেত করলেন। যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে জীবিত থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’’। (সূরা আনফাল: ৪২)