আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী الشرك الأصغر - বা ছোট শিরক শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান ১ টি
(১) الحلف بغير الله عز وجل আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা

আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা শিরক। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেছেন,   مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْكَفَرَ أَوْ أَشْرَك  ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল, সে কুফুরী করলো অথবা শিরক করল’’। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর হাসান বলেছেন এবং আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকেম এটিকে সহীহ বলেছেন।

‘‘সে কুফুরী করলো অথবা শিরক করলো’’: এখানে বর্ণনাকারী সন্দেহ পোষণ করেছেন। অথবা শব্দটি এবং অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। তখন অর্থ হবে সে কুফুরী করলো এবং শিরক করলো। তবে এটি বড় কুফুরীর চেয়ে কম মানের কুফুরী। এটি ছোট শিরকও বটে।

বর্তমান সময়ের অনেক মানুষই আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করে। তারা আমানতের নামে কসম খায়, নবীর নামে শপথ করে, কেউ কেউ বলে আমার জীবনের কসম, হে অমুক! তোমার জীবনের শপথ! এ ধরণের আরো অনেক শব্দ তারা ব্যবহার করে। আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেসব হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, আমরা তা শুনলাম। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করাকে কুফুরী অথবা শিরক হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কেননা কোনো জিনিষের শপথ করার অর্থ হলো উক্ত জিনিসকে সম্মান করা। সুতরাং যাকে সম্মান করা আবশ্যক এবং যার নামে শপথ করা যায় তিনি হলেন আল্লাহ তা‘আলা। আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা শিরক এবং বিরাট অপরাধ।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,

لَأَنْ أَحْلِفَ بِاللهِ كَاذِبًا أحَبَّ إليَّ مِنْ أحْلِفَ بِغَيْرِهِ صَادِقًا

‘‘আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করা আমার কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে সত্য কসম করার চেয়ে বেশী পছন্দনীয়। ইহা জানা কথা যে, আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করা কবীরা গুনাহ। কিন্তু শিরক করা যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা সমস্ত কবীরা গুনাহর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ কবীরা গুনাহ। যদিও তা শির্কে আসগার বা ছোট শিরক হয়।

সুতরাং মুসলিমদের সতর্ক হওয়া আবশ্যক। জাহেলী যুগের অভ্যাস যেন পুনরায় তাদের কাছে ফিরে না আসে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেন,

لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ ‘‘তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করো না’’। এ ছাড়া আরো অনেক দলীল রয়েছে। যা আমাদেরকে আদেশ করে যে, আমরা যখন শপথ করার ইচ্ছা করবো, তখন যেন একমাত্র আল্লাহর নামের সাথেই কসমকে সীমিত রাখি এবং তিনি ছাড়া অন্যের নামে শপথ না করি।

যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কসম করার পরও সন্তুষ্ট হয় না, তার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল­াম বলেছেন,

مَنْ حَلَفَ بِاللَّهِ فَلْيَصْدُقْ وَمَنْ حُلِفَ لَهُ بِاللَّهِ فَلْيَرْضَ وَمَنْ لَمْ يَرْضَ بِاللَّهِ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কসম করে, সে যেন সত্য বলে। আর যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নামে কসম করা হবে, সে যেন উক্ত কসমে সন্তুষ্ট থাকে। আল্লাহর কসমে যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট হলো না, তার সাথে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই’’। ইমাম ইবনে মাজাহ হাসান সনদে এটি বর্ণনা করেছেন।[1]


[1]. এ হাদীছের সনদে দুর্বলতা থাকলেও তার মর্মার্থ গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ বিষয়ে একাধিক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«أَلا مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلا يَحْلِفْ إِلاَّ بِاللَّهِ فَكَانَتْ قُرَيْشٌ تَحْلِفُ بِآبَائِهَا، فَقَالَ:«لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ»

‘‘খবরদার যে ব্যক্তি শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ না করে। কুরাইশরা তাদের বাপদাদার নামে শপথ করতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কথার প্রতিবাদ করে বললেন, তোমরা তোমাদের বাপদাদাদের নামে শপথ করো না’’। (বুখারী, হাদীছ নং- ৩৮৩৬)