প্রশ্ন-১১৫ : অনুসরণযোগ্য আলিমগণের গুণাবলি কী কী?

উত্তর : অনুসরণযোগ্য আলিমদের গুণাবলি হলো তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান রাখবেন, কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে বিদগ্ধ বিদ্বান হবেন এবং উপকারি ইলম ও আমালে সলিহ উভয় অলংকারে অলংকৃত হবেন।

অনুসরণযোগ্য আলিম হলেন তারা- যাদের মাঝে উপকারি ইলম এবং সৎ আমল সমন্বিত ভাবে পাওয়া যাবে। সুতরাং যে আলিম ইলম অনুযায়ী আমল করেনা তার অনুসরণ করা যাবে না। এমনিভাবে কোন জাহিল বা মূর্খের ও অনুসরণ করা যাবে না।

আল-হামদু লিল্লাহ আমাদের দেশে অনুসরণযোগ্য ও যাদের ক্যাসেট গ্রহণ করা যেতে পারে এরকম আলিমের সংখ্যা অনেক। তারা জনগণের নিকট সুপরিচিত। গ্রাম্য-শহুরে, বড়-ছোট প্রত্যেকেই তাদেরকে চেনে। তারা ফাতওয়া-ফায়ছলা ও দারস-তাদরীস ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের ইলম, তাক্বওয়া সম্পর্কে জনগণের জানা রয়েছে। আমাদের অনুসরণযোগ্য আলিমদের প্রথম শ্রেণিতে রয়েছেন শায়খ আবদুল ‘আযীয ইবনে বায হাফিযাহুল্লাহ।[1] আল্লাহ তা‘আলা তাকে পর্যাপ্ত ইলম, আমালে সলিহ (সৎ আমল), আল্লাহর পথে দাওয়াত, ইখলাছ, ছিবদক্বের বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন যা কারো নিকট গোপন নয়। ওয়া লিল্লাহিল হামদ তার থেকে অনেক বই-পুস্তক, ক্যাসেট ও দারস প্রকাশিত হয়েছে। এমনিভাবে, যে আলিমগণ নুরুন আলাদ দারবি (আলোর পথ) রেডিওতে ফাতওয়া প্রদান করেন সম্মানিত শায়খ আবদুল আযীয ইবনে বায, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল ‘উছায়মীন ও তাদের সহযোগী বিচারকগণ। কেননা তারা ফায়ছালার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়েই ফায়ছালা করেন। যার কারণে জনগণ তাদের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রম্নর ক্ষেত্রে তাদের উপর আস্থা রেখে থাকে। দাওয়াহ, ইখলাছ, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মানহাজের বিরোধিতা করে সহীহ পন্থায় তাদের মতামত খণ্ডনে উল্লেখিত শায়খগণের অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টা বিদ্যমান। তাদের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা বিভিন্ন মতামত যাচাই বাছাই করেন এবং সহীহকে দুর্বল থেকে পৃথক করেন। তাদের ক্যাসেট এবং দারসের বহুল প্রচার করা উচিত যাতে লোকজন ব্যাপকভাবে তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে। প্রত্যেক যে আলিমেরই ভুল-ভ্রান্তি এবং চরিত্র ও চিন্তা-চেতনায় আহলুস সুন্নাহর মানহাজচ্যুতির ব্যাপারে জানা নাই তার থেকেই ইলম গ্রহণ করা যেতে পারে।

সুতরাং কোন জাহিল বা আলিম দাবিদার, শিরক মিশ্রিত আকবীদাহ পোষণকারী, এমনিভাবে আলিমনামীয় বিদাতী ও আকীদা বিকৃতকারীদের নিকট থেকে ইলম গ্রহণ করা যাবে না। মোটকথা হলো মানুষ তিন প্রকারে বিভক্ত। যথা-

(ক) উপকারী ‘ইলম বিশিষ্ট ও ইলম অনুযায়ী সৎ আমল সম্পাদনকারী।

(খ) আমলহীন আলিম।

(গ) ইলম বিহীন আমলকারী।

আল্লাহ রববুল আলামীন সূরা ফাতিহাতে উল্লেখিত তিন শ্রেণির আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে প্রথম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করার ও অন্য দুই শ্রেণি থেকে মুক্ত রাখার জন্য তার নিকট প্রার্থনা করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ }

আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে নি‘মাত দিয়েছেন (নাবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ, সৎকর্মপরায়ণ) : যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয় (সূরা ফাতিহা ৬-৭)।

আল্লাহ তা‘আলা প্রথম শ্রেণিকে নিয়ামত প্রাপ্ত এবং দুই শ্রেণিকে অভিশপ্ত ও ভ্রষ্ট ঘোষণা করেছেন।

পরবর্তী এই দুই শ্রেণি বর্তমানের ভ্রষ্ট ফিরকার উদাহরণ। যদিও এ ফিরকাগুলোকে ইসলামের প্রতি সম্বন্ধ করা হয়।


[1]. আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অবিরাম রহমত বর্ষন করুন। তাকে জান্নাতের প্রশস্ততম স্থানে স্থান দান করুন। জান্নাতুল ফিরদাউসকে তার আবাসস্থলে পরিণত করুন। আমাদেরকে তার ইলম দ্বারা উপকৃত করুন। উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর প্রদানের সময় শায়খ (রহ.) জীবিত ছিলেন।

শায়খের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : তিনি হলেন (তার যুগের) সুন্নাহর সাহায্যকারী, বিদআত ও বিদাতীদেরকে অপনোদনকারী ইমাম আবদুল ‘আযীয ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায। তিনি ১২ এ জিলহাজ্ব ১৩৩০ হিজরীতে রিয়াদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩৫০ হিজরীতে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। তিনি বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হওয়ার পূর্বেই কুরআনুল কারীম হিফয সমাপ্ত করেন। তিনি শারঈ জ্ঞান-বিদ্যায় গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি ১৩৫০ সালে ক্বাযী বা বিচারক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তিনি ইলম অর্জন, গবেষণা, তাদরীস (শিক্ষা প্রদান) ও বই-পুস্তক রচনার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন।

তিনি যে সকল শায়খের নিকট জ্ঞানার্জন করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল লাত্বীফ ইবনে আবদুর রহমান আলিশ শায়খ, শায়খ সলিহ ইবনে আবদুল আযীয ইবনে আবদুর রহমান আলিশ শায়খ, শায়খ সা‘দ ইবনে হামদ ইবনে আতীক, শায়খ হামদ ইবনে ফারিস, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে আবদুল লাত্বীফ আলিশ শায়খ এবং শায়খ সা‘দ ও শায়খ ওয়াক্কাস আল বুখারী (রহ.)।

তিনি ১৩৮১ হিজরীতে মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। অতঃপর ১৩৯০ হিজরীতে আচার্য নিযুক্ত হন। এমনিভাবে তিনি রাজকীয় ফরমানে ১৩৯৫ হিজরীর ১৪ এ শাওয়াল সাউদী ইলম গবেষণা, ফাতওয়া, দাওয়াহ ও ইরশাদ বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৪১৪ হিজরীর মুহাররাম মাসে সাউদী আরবের গ্রা- মুফতী নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন সাউদী উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য, সাউদী স্ট্যান্ডিং ফাতওয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান, রাবিত্বা আলাম আল ইসলামিয়্যাহর চেয়্যারম্যান, আল-মাজলিসুল আ‘লা আল আলামী লিল মাসাজিদের চেয়্যারম্যান, মক্কা ফাতাওয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাদীনাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পরিষদের সদস্য এবং আল-হাইয়াতুল ‘উলয়া লিদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়্যাহর সদস্য।

তার লিখনি: শায়খ এর ৪১-এর অধিক গ্রন্থ, পুস্তিকা, টীকা-টিপ্পনি রয়েছে।

তিরোধান: শায়খ ২৮ শে মুহাররাম ১৪২০ হিজরী বৃহষ্পতিবার তায়িফ শহরে মৃত্যু বরণ করেন। তাকে আল-আদল কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা তার কবরকে সুবাসিত করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তার স্থান দান করুন। আমীন।

তার মৃত্যুর মাধ্যমে জাহিলদের নেতাদের ফাতওয়া নিয়ে অনধিকার চর্চার পথ অবারিত হয়েছে। তারা বিভিন্ন মিডিয়ায় ফাতওয়া প্রদান করে। লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।