প্রশ্ন-৪৯ : বর্তমান যুগে আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ, আত-ত্বয়িফাহ আল-মানছুরাহ কোনটি? তাদের গুণ এবং বৈশিষ্ট্যাবলি কী কী?

উত্তর : আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ আল-মানছুরাহ বর্তমান যুগে এবং কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক যুগে ঐ ফিরকা, যে ফিরকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة، وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة، وستفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة، كلها في النار إلا واحدة . قالوا: من هي؟ قال : من كان على مثل ما أنا عليه اليوم وأصحابي

ইয়াহূদিরা ৭১ দলে ও খ্রিষ্টানেরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছে। আর অচিরেই আমার উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া তাদের প্রত্যেকেই জাহান্নামে যাবে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, সেটি কোন দল? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বর্তমানে আমি এবং আমার ছাহাবীরা যে মতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, যে দল এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।[1] তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَداً ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও প্রথম এবং যারা, তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী থাকবে অনন্তকাল। এটাই মহাসাফল্য (সূরা আত তাওবাহ ৯:১০০)।

এই ফিরকা তথা আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ আল-মানছুরাহর কিছু গুণাবলী উল্লেখ করা হলো-

(১) তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবীগণ যে মতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তারাও সে মতের উপর অটল থাকে।

(২) তারা হকের উপর ধৈর্য ধারণ করে।

(৩) বিরুদ্ধবাদীদের কথার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করে না। আল্লাহর ক্ষেত্রে তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لا تزال طائفة من أمتي على الحق ظاهرين، لا يضرهم من خذلهم ولا من خالفهم حتى يأتي أمر الله وهم على ذلك

আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের নিন্দা করবে কিংবা যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। কিয়ামত পর্যন্ত তারা এই মতের উপর অটল-অবিচল থাকবে।[2]

(৪) তারা সালাফে সালেহীনকে ভালোবাসে, তাদের প্রশংসা করে, তাদের আছার ধারণ করে।

(৫) ছাহাবী বা পরবর্তী কোন ছালাফকেই তারা কটাক্ষ করে না।[3]

ভ্রান্ত ফিরকা-এর আলামাত বা নিদর্শনসমূহ : তারা সালাফদেরকে এবং সালাফদের মানহাজকে অপছন্দ করে ও সালাফদের কর্মপন্থা থেকে মানুষদেরকে সতর্ক করে।[4]


[1]. তিরমিযী হা/২৬৪১, হাকিম হা/১২৯, লালকাঈ হা/১০০, আজুররী ‘আশ-শরী‘আহ’ নামক গ্রন্থে পৃ.২৬, আল-মারওয়াযী ‘আস-সুন্নাহ’ নামক গ্রন্থে।

[2]. মুসলিম হা/১৯২০।

[3].  ইমাম আবু মুহাম্মাদ আল-হুসাইন ইবনে আলী আল-বারবাহারী তার শারহুস সুন্নাহ নামক কিতাবে বলেন, ‘যখন তুমি কাউকে দেখবে যে সে আবু হুরায়রা, আনাস ইবনে মালিক ও উসাইদ ইবনে হুদ্বাইরকে ভালোবাসে তাহলে তুমি নিশ্চিত বিশ্বাস করবে যে, সে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী।

যদি তুমি কাউকে দেখ যে, সে আইউব, ইবনু আওন, ইউনুস ইবনে উবাইদ, আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরিস আল-আওদী, শা‘বী, মালিক ইবনে মিগওয়াল, ইয়াযিদ ইবনে যুরাই‘, মাআয ইবনে মুআয, ওয়াহাব ইবনে জারীর, হাম্মাদ ইবনে সালামাহ, হাম্মাদ ইবনে যায়দ, মালিক ইবনে আনাস, আউযা‘ঈ ও যায়িদাহ ইবনে ক্বুদামাহকে ভালোবাসে তাহলে তুমি নিশ্চিত হও যে, সে সুন্নাহর অনুসারী।

যদি তুমি কাউকে দেখ যে, সে আহমাদ ইবনে হাম্বল, হাজ্জাজ ইবনে মিনহাল, আহমাদ ইবনে নাসরকে ভালোবাসে, তাদেরকে ভালোভাবে স্মরণ করে ও তাদের মত অভিমত পোষণ করে তাহলে তুমি নিশ্চিত হও যে, সে সুন্নাহর অনুসারী। খালিদ আর-রদ্দাদী সম্পাদিত শারহুস সুন্নাহ পৃ নং ১২০-১২১

[4]. আল্লামা বারবাহারী শারহুস সুন্নাহর ১১৫ নং পৃ. তে বলেন, যদি তুমি কাউকে দেখ যে, সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন ছাহাবীর প্রতি কোন মন্দারোপ করছে তাহলে নিশ্চিত জেনে নাও যে, সে মন্দভাষী ও প্রবৃত্তিবাদী।

পৃ. ১১৫-১১৬ তে বলেন, যদি কোন ব্যক্তিকে কোন আছারের নিন্দা করতে, আছার খণ্ডন করতে কিংবা  আছার ছাড়া অন্য কিছু চায় বিধায় ইসলামের উপর অপবাদ দিচ্ছে তাহলে তুমি নিশ্চিত হও যে সে প্রবৃত্তিবাদী ও বিদাতী।

কুতাইবা ইবনে সা‘ঈদ বলেন, যদি কাউকে আহলুল হাদীছ বা হাদীছ শাস্ত্রবিদদের ভালোবাসতে দেখেন তাহলে সে আহলুস সুন্নাহ তথা সুন্নাহর অনুসারী। আর যে ব্যক্তি হাদীছ শাস্ত্রবিদদের বিরোধিতা করে নিশ্চিত জেনে নাও যে সে বিদাতী।  মুকাদ্দামাতু শিআরি আসহাবিল হাদীছ পৃ. ০৭

আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, ‘বিদাতীদের পক্ষে তারা আহলুল আছার তথা আছারবিদদের সমালোচনায় লিপ্ত হয়। আল-লালকাঈ ০১/১৭৯