প্রশ্ন নং ২৭: ছাত্রদের ইলম অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে- এমন কতিপয় বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দলাদলির সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তারা কোন কোন আলেমের সম্মানের হানি করছে; আবার কারো কারো ব্যাপারে অতিভক্তি দেখাচ্ছে। সম্মানিত শায়েখ! অনুগ্রহপূর্বক আমাদের জন্য বিষয়টি স্পষ্ট করবেন। কারণ এই মাসআলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ; তাছাড়া বর্তমানে ছাত্রদের মাঝে এ সমস্যাটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অতএব, এ ব্যাপারে আপনার দিকনির্দেশনা কী?

উত্তর : একটা সময় ছিল যখন এদেশবাসী, আলিমদের আঁকড়ে থাকতো ফলে তারা যুবক হোক বা বৃদ্ধ প্রত্যেকেই সুন্দর ও সঠিক অবস্থানে থাকতো। কোনো বিদেশী মতবাদ তাদের কাছে আসতো না বলে তারা ঐক্যবদ্ধ ছিল। তারা তাদের আলিম, নেতা ও বিজ্ঞজনের প্রতি আস্থা রাখত। তারা এক অভিন্ন জামাত ছিল। তাদের অবস্থান খুবই সুন্দর ছিল। এরপর একপর্যায়ে কিছু আগন্তুকের মাধ্যমে বৈদেশিক মতবাদের অনুপ্রবেশ ঘটল।[1]

অথবা যুবকেরা পাঠ করে এমন কিছু বই-পুস্তক ও ম্যাগাজিন যার মাধ্যমে দলাদলি ঘটেছে।[2] যে যুবকেরা দাওয়াতের ক্ষেত্রে সালাফী মানহাজের (কর্মপন্থার) বিরোধিতা করে তারা এ সকল বিদেশী মতবাদে প্রভাবিত।

আর যে সকল দাঈ ও যুবকেরা এ সকল মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে তাদের আলিমদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, আল-হামদুলিল্লাহ তারাই সালাফে সালেহীনের মানহাজের উপর অটল রয়েছে।[3]

সুতরাং এই দলাদলি ও ফিরকাবাজীর কারণ হলো এদেশীয় আলিমদেরকে বাদ দিয়ে[4] বিদেশী সংশয়বাদী আলিম ও ভ্রষ্ট ব্যক্তিদের নিকট থেকে চিন্তা-চেতনা ও দাওয়াতের মানহাজ গ্রহণ করা।[5]

তারা আমাদের দেশের নিয়ামত; শান্তি-শৃঙখলা, স্থায়িত্ব, শরী‘আহ দ্বারা বিচার ফায়ছালা ও আরো কিছু কল্যাণকর বিষয় যা শুধু আমাদের দেশেই পাওয়া যায়, অন্যত্র পাওয়া যায় না এগুলোর বিলুপ্তি চায়। তারা আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে, আমাদের যুবকদেরকে দূরে সরাতে এবং আমাদের আলিমদের গ্রহণযোগ্যতা কমাতে চায়। তাদের পরিণাম অশুভ হোক। আমরা এ কাজ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।

আমাদের আলিম, দাঈ, যুবক এবং সাধারণ জনগণ সবার জন্য ঐ ভ্রান্ত দলাদলির ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত যে, আমরা ঐ সকল দলবাদী মতবাদ ও সংশয়পূর্ণ নীতি গ্রহণ করব না। যদিও তা হক, কল্যাণ ও সুন্নাহর পোশাক পরিধান করে আসুক না কেন?

আমরা আমাদের অবস্থানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করি না। আলহামদুল্লিস্নাহ।[6]

আমরা বিশুদ্ধ মানহাজ ও বিশুদ্ধ আক্বীদার উপর রয়েছি। সুতরাং আমরা কেন বিদেশী অনুপ্রবেশকারী চিন্তা-চেতনা, আক্বীদা মানহাজ গ্রহণ করব এবং কেনইবা তা আমাদের যুবকদের মাঝে প্রচলন করব?

সুতরাং এসকল ফিরক্বাদের জন্য আবশ্যক হলো যাবতীয় বিদেশী চিন্তা-চেতনা পরিত্যাগ করে আমাদের নিকট যেসকল কল্যাণ,[7] কাজ-কর্ম ও দাওয়াহ রয়েছে তা গ্রহণ করা।

হ্যাঁ, আমাদের ভুল-ত্রুটি রয়েছে। তবে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী মতবাদ, সালাফদের মানহাজ বিরোধী বিদেশী কোনো মতবাদ অথবা এদেশে অবস্থানকারী সংশয়বাদীদের মত ভ্রষ্টদের নিকট ধরণা দেওয়া ছাড়াই আমাদের ভুল আমাদের নিজেদের পক্ষেই সংশোধন করা সম্ভব।

বর্তমান সময়টা ফিতনার সময়, যতই সময় যাবে ফিতনা ততই প্রকট আকার ধারণ করবে। আপনাদের উচিত এ অবস্থা সম্পর্কে অনুধাবন করা। সন্দেহ সংশয়ের ব্যাপারে কান খোলা রাখা। সংশয়বাদী ও পথভ্রষ্টদের দিকনির্দেশনা না মানা। আমরা যে নি‘আমতে বসবাস করছি ওরা চায় এই নিয়ামত দূরীভূত হোক, আমরা যেন অন্যান্য দেশের মত হয়ে যাই, যেথায় থাকবে ডাকাতি, ছিনতাই, খুন-খারাবি অধিকার হরণ আক্বীদা বিধ্বংসী কাজ কারবার, শত্রুতা, দলাদলি।

আমি বলি একমাত্র তিন শ্রেণির লোকেরাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত আলিমদের বিরোধিতা করে।

(১) মুনাফিক : যার নিফাকিব সম্পর্কে জানা রয়েছে।

(২) ফাসিক : আলিমগণ তাকে পাপাচার থেকে বারণ করলে সে আলিমদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে।

(৩) ভ্রষ্ট দলবাদী : যেহেতু আলিমগণ তার ভ্রান্ত দলও মতের সাথে একমত পোষণ করে না। সুতরাং সে আলিমদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে।


[1]. যেমন ইখওয়ানুল মুসলিমীন ফিরকা। যাদের মাধ্যমে খুব সহজেই আকীদাগত বিপদ মুছীবত ও সালাফে সালেহীনের মানহাজের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এমনিভাবে তাবলীগ জামাত ও অন্যান্যদল আমরা আল্লাহর নিকট এসকল দল থেকে মুক্তি চাই।

[2]. যেমন ইখওয়ানুল মুসলিমীন ও এধরণের সংগঠনগুলোর বই-পুস্তক, ইখওয়ানুল ম্যাগাজিন যা আস-সুন্নাহ বলে নামকরণ করা হয়েছে, মূলতঃ তা মধুর সাথে বিষের মিশ্রণ। এ আন্দোলনের পরিচালক ও তাদের বইপুস্তক সম্পর্কে সামনে আলোচনা আলোকপাত করা হবে।

[3]. সুন্নাহ আঁকড়ে ধারণকারী, আহলুল আছার সালাফীগণকে আহলুস সুন্নাহ বিরোধীরা মূর্খতাবশতঃ মুতাশাদ্দিদ (কঠোরতাকারী), দালাল ও তোষামোদকারী ইত্যাদি বলে অপবাদ দেয়। সালাফগণকেও এইভাবে অপবাদ দেয়া হতো। তাদেরকে বলা হতো আল হাশাবিয়্যাহ, আল মুজাস্সমাহ ইত্যাদি। আহলুল আছার বিরোধিতায় এটাই হলো বিদাতীদের আবহমান কালের অভ্যাস। (আল-ওয়াকীআহ ফি আহলিল আছার)

[4]. কেননা আমরা শক্তভাবে বিশ্বাস করি যে, এদেশের আলিমগণ (আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হিফাযত করুন) আকীদা ও মানহাজগত দিক থেকে সালাফদের উত্তরসূরী। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সালাফী আলিম থাকলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় এদেশে সালাফী আলিমদের সংখ্যা বেশি।

[5]. উদাহরণ: মানহাজুল আম্বিয়া গ্রন্থের লেখক মুহাম্মাদ সুরুর ইবনে না‘ঈম যায়নুল আবিদীন। পাঠক ভ্রাতা ইনশাআল্লাহ আমরা অচিরেই এ কিতাব থেকে তার সন্দেহপূর্ণ আকীদাগুলো উল্লেখ করব। মুহাম্মাদ আল মিস‘আরী ও সা‘দুল ফাকহী এরা উভয়েই আল্লাহর নি‘আমতের কুফুরী করে মুসলিম জামাত থেকে বের হয়ে কুফুরির দেশে পলায়ন করেছে। অতঃপর ভ্রান্তপথে আহবান করতে শুরু করেছে। এরপর পরস্পর লা‘নাত দেওয়া ও জঘন্যভাবে সমালোচনা করা শুরু করেছে। আমরা আল্লাহর নিকট এর থেকে মুক্তি চাই। ইবনে লাদিন সেও কুফুরি করে মুসলিম জামাতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে খারিজী মতবাদ গ্রহণ করেছে। সে পৃথিবীতে বিদ্রোহ, ফিতনা বিশৃংখলা ছড়ায়। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ও তার সমমনা লোকদেরকে ক্ষমা করুন।

[6]. এক ব্যক্তি হাসান বাছারী (রহ.) এর নিকট এসে বলল: হে আবু সা‘ঈদ আমি তোমার সাথে বিতর্ক করতে চাই। তার প্রতুত্তরে হাসান বাছারী (রহ.) বললেন: তুমি আমার নিকট হতে দূর হয়ে যাও। আমি নিশ্চিতভাবে আমার দীনের সত্যতার ব্যাপারে জানি। তোমার সাথে তো সেই ব্যক্তিই বিতর্ক করতে যাবে যে তার দীনের ব্যাপারে সন্দিহান। (আল লাল কাঈ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ১২৮)

মা‘ন ইবনে ঈসা (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মালিক ইবনে আনাস (রহ.) মাসজিদ থেকে থেকে বের হয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় আবু হুরায়্যাহ নামক এক ব্যক্তি এসে তাকে ঘিরে ধরল। সে মুরজিয়া হিসাবে পরিচিত ছিল। অপবাদিত ছিল। সে বলল: হে, আব্দুল্লাহ, আমি তোমাকে কিছু বলব তা শোন এবং তোমার সাথে বিতর্ক করব ও আমার সম্পর্কে জানাব। হাসান বাছরী (রহ.) বললেন, যদি তুমি আমার উপর বিজয়ী হও তাহলে কি হবে?

সে বলল: আমি তোমার উপর বিজয়ী হলে তুমি আমার ইত্তিবা‘ (অনুসরণ) করবে। হাসান বাছরী (রহ.) বললেন, এরপর অন্য কোন লোক এসে যদি আমাদের উভয়ের উপর বিজয়ী হয় তাহলে? সে বলল তাহলে আমরা উভয়েই তার অনুসরণ করব। হাসান বাছরী (রহ.) বললেন, হে আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একক দীনসহ প্রেরণ করেছেন। আর তোমাকে দেখছি এক দীন থেকে অন্য দীনে স্থানান্তরিত হচ্ছো (আশ-শরী‘আহ ৬২)।

[7]. আমাদের নিকট যে কল্যাণ রয়েছে তাহলো সহীহ আকীদা, কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা দৃঢ় সালাফী মানহাজ যার উপর উম্মাহর সালাফে সালেহীন প্রতিষ্ঠিত ছিল।