প্রশ্ন-২০ : অনেক লোক বলে যে, ‘‘ইয়াহূদীদের সাথে আমাদের বিরোধ কোন ধর্মীয় বিরোধ নয়: কেননা আল-কুরআনুল কারীমে তাদের বন্ধুত্ব গ্রহণ করা ও আন্তরিক হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।’’ এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?[1]

উত্তর : এটি একটি বিভ্রান্তিকর কথা। ইয়াহূদীরা কাফির। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কাফির বলেছেন,

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرائيل

বানী ইসরা‘ঈল সম্প্রদায়ের কাফিরদের উপর (আল্লাহর) লা‘নত বর্ষিত হয়। (সূরা আন মায়িদাহ ৫:৭৮)

রাসুলূল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لعنة الله على اليهود والنصارى

ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের উপর আল্লাহর লা‘নত বর্ষন করুন।[2]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ

কিতাবধারীদের মাঝে যারা কুফরি করে ও মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে চিরস্থায়ী হবে; ওরাই হলো নিকৃষ্ট সৃষ্টি।  (সূরা আল বাইয়্যিনাহ ৯৮:৬)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ

হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু।  (সূরা আল মায়িদা ৫:৫১)

সুতরাং তাদের সাথে আমাদের দ্বীনী শত্রুতা রয়েছে। আর আমাদের জন্য তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদেরকে ভালবাসা জায়েয নয়। কেননা কুরআন এ সম্পর্কে আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যা পূর্বোল্লিখিত আয়াতগুলিতে উল্লেখ হয়েছে।


[1]. এটা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্নার মত। মাহমুদ আব্দুল হালিম কর্তৃক লিখিত ‘আল-ইখওয়ানুল মুসলিমীন আহদাছুন ছবুনিআতিত তারিখ’ নামক কিতাবের ৪০৯ নং পৃষ্ঠায় দেখুন, ঠিক এমন মারাত্মক কথা বলেছে বিপথগামী, খারিজী মুহাম্মাদ আল-মিস‘আরী ।

লক্ষ্য করুন, তাদের উভয়ের মাঝে আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে মতপার্থ্যক্য থাকলেও তাদের কথায় মিল রয়েছে! তারা ভালোর বিনিময়ে মন্দ গ্রহণ করেছে। ‘তাওহীদের ভূমি, হারামাইনের ভূমি যেন কুফুরির ভূমি ও কাফিরদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। এর বাসিন্দারা কাফিরদের নিকট থেকে বিচার ফায়ছালায় সন্তুষ্ট হয়েছে’।

শারক্বুল আওসাত্ব নামক পত্রিকার ৬২৭০ তম সংখ্যা, রবিবার, ৮ এ রামাদ্বান হিজরী ১৪১৬ তে প্রকাশিত বক্তব্যে মিস‘আরী বলেন, ‘‘ সাউদী আরবের বর্তমান অবস্থা হলো যে, সেখানে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে প্রকাশ্যভাবে তাদের ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালন করতে দেওয়া হয় না।

লাজনা (তার লাজনাতুদ দিফা‘ আনিল হুক্বুকিশ শার‘ইয়্যাহ আল মায‘উমাহ’’ নামক কমিটি) ক্ষমতায় গেলে অচিরেই তা পরিবর্তিত হবে। সংখ্যালঘুদেরকে তাদের অধিকার প্রদান করা অত্যাবশ্যক। এই অধিকার হলো চার্চে তাদের ধর্মকর্ম ও রীতিনীতি পালন করার অধিকার, তাদের ধর্মের বিশেষ রীতিতে বিবাহ-শাদী করার অধিকার ইত্যাদিসহ ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও  হিন্দু যে ধর্মেরই হোক না কেন। তিনি আরো বলেন যে, ইসলামী শরী‘আতে চার্চস বানানো বৈধ। বিবিসি রবিবার ,২৯-০৬-১৪১৭হি. তে তার ভয়েসে প্রচার করেছে।

উপস্থাপক বলেন, লন্ডনে অবস্থানকারী জিহাদী উপাধি ধারী সাউদী বিচ্ছিন্নতাবাদী মুহম্মাদ আল মিস‘আরী চলতি মাসের শেষে শি‘আ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য একটা সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছেন।

অতঃপর মিস‘আরীর কণ্ঠে প্রচারিত হয়, ‘অচিরেই সেখানে একটি সমন্বয় সাধন করা হবে এবং সম্ভবত জোট বিসৃত্মত করা হবে। আমরা এর জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি। এর যোগাযোগ ও মূল বন্ধন হলো পায়ের সাথে পা ও কাঁধের সাথে কাধ মিলিয়ে। এটা একটি ইসলামী আন্দোলন। এটা কোন সুন্নী বা শী‘আ আন্দোলন নয়। ইসলামী আন্দোলন মূলতঃ সুন্নী-শী‘আ সকল মুসলিমকে নিয়েই গঠিত হয়। এই আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যেন ইসলাম থেকেই বিচ্ছিন্ন হওয়া। এখানে সকল মুসলিম মুসলিম পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ হবে। সুন্নী শী‘আ ইত্যাদির ঊর্দ্ধে উঠে মুসলিমদের ও সকল জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করবে। ইসলামী রাষ্ট্র ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান, মূর্তিপূজক সহ সকল নাগরিকের যাবতীয় অধিকার রক্ষা করবে।

সুতরাং এই অর্থে আমাদের আন্দোলন হলো ইসলামী মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এটা কোন দলীয় বা উপদলীয় আন্দোলন নয়। ইসলামের উপর এর চেয়ে বড় আঘাত ও দুঃসাহস আর কী হতে পারে?

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী (তোমরা আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদেরকে বের করে দাও। বুখারী হা/২৮৮৮, ২৯৯৭, ৪১৬৮) এর ব্যাপারে মিস‘আরীর আমল কোথায়?

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন ‘জাযিরাতুল আরবে দু’টি দীন একত্রিত হবে না।’ ইয়াহইয়ার বর্ণনায় মুআত্তা খ. ০২, পৃ. ২৮০-২৮১ হা/১৮৬২ আবু মুস‘আবের বর্ণনায় আল-কুবরা লিল বাইহাকী খ.০৯ পৃ.২০৮।

এরকম সুস্পষ্ট হাদীছ সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি কি কখনো পরিচালক বা নেতা হওয়ার যোগ্য হতে পারে? হলেও তা শুধু ভ্রষ্টতা ও প্রবৃত্তিপূজারীরই নেতা হতে পারে। আমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও মুক্তি কামনা করছি।

সে যেন কবির কথারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি-

তাদের বাড়ি তো হলো সেই বাড়ি যেথায় আমি থাকি

তাদের জমিন তো সেই জমিন যেথায় আমি ঘুরি ফিরি।

‘রিয়াদ’ পত্রিকা তার সংখ্যা ১২১৮২, প্রকাশ বুধবার, ১৫ই শা‘বান ১৪২২হিজরীতে সাউদী আরবের গ্রা- মুফতী, শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রহ.) এর একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। ঐ প্রবন্ধে উল্লেখ রয়েছে। ‘‘বর্তমানে মুহাম্মাদ আল মিস‘আরী এবং সা‘দ আল ফাক্বীহ ও তাদের সমমনা যে সকল ভ্রষ্টতা ও গোমরাহীর দাওয়াত প্রচারক রয়েছে নিঃসন্দেহে তাদের কাজ মারাত্মক খারাপ। তারা খুবই অনিষ্ট ও বিশৃঙ্খলার পথের আহবায়ক। তাদের প্রচারিত বিষয়াবলি ও তদনুযায়ী ফায়ছালা করা থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজীব। তাদের প্রচারণা কে ধ্বংস করা ও তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য না করা উচিত। তাদের সঠিক পথের হকের প্রতি/উপদেশও দিকনির্দেশন প্রদান করা ও এ বাতিল পথ থেকে সতর্ক করা উচিত। কারো জন্য তাদেরকে এই অনিষ্টকর কাজে সাহায্য করা বৈধ হবে না।

মিস‘আরী, ফাক্বীহ ও ইবনে লাদেন এবং প্রত্যেক যে ব্যক্তিই তাদের পথে চলে তাদের প্রতি আমার উপদেশ হলো, তারা যেন আল্লাহর আযাব-গযবের কথা স্মরণ করে এ খারাপ পথ/ নিন্দনীয় পথ থেকে সঠিক পথে প্রত্যাবর্তন করে। যেন তারা তাদের অতীত কৃত কর্মের জন্য তাওবাহ করে। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের তাওবা কবুল করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। দেখুন ইবনে বায, মাজমু‘ ফাতাওয়া ০৯/১০০।          

[2]. সহীহ বুখারী হা/৪২৫, মুসলিম হা/৫৩১।