৩.২ রমযান মাসের ফযীলত প্র: ৫. রমযান মাসের ফযীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাই

চন্দ্র মাসের মধ্যে এটা এক অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের ফযীলত অপরিসীম। নিচে ধারাবাহিকভাবে রমযান মাসের কিছু ফযীলত তুলে ধরা হলো:

১. ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হলো সিয়াম। আর এ সিয়াম পালন করা হয় এ মাসেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۳﴾ۙ

অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” (সূরা ২; বাকারা ১৮৩)

২. এ মাসের সিয়াম পালন জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, যাকাত আদায় করল, রমযান মাসে সিয়াম পালন করল তার জন্য আল্লাহর উপর সে বান্দার অধিকার হলো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া।” (বুখারী: ২৭৯০)

৩. রমযান হলো কুরআন নাযিলের মাস।

شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۸۵﴾

অর্থাৎ “রমযান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।” (সূরা ২; বাকারা ১৮৫)।
সিয়াম যেমন এ মাসে, কুরআনও নাযিল হয়েছে এ মাসেই। ইতঃপূর্বেকার তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলসহ যাবতীয় সকল আসমানি কিতাব এ মাহে রমযানেই নাযিল হয়েছিল। (সহীহ আল জামে'-১/৩১৩ হা. ১৪৯৭, আহমদ- ৪/১০৭)

এ মাসেই জিবরাঈল (আঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কুরআন শুনাতেন এবং তাঁর কাছ থেকে তিলাওয়াত শুনতেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শেষ রমযানে পূর্ণ কুরআন দু’বার খতম করেছেন। (মুসলিম)

৪. রমযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

“যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়।” (মুসলিম: ১০৭৯) আর এ জন্যই এ মাসে মানুষ ধর্ম-কর্ম ও নেক আমলের দিকে অধিক তৎপর হয় এবং মসজিদের মুসল্লীদের ভীড় অধিকতর হয়।

৫. এ মাসেই লাইলাতুল কদর। এক রাতের ইবাদত অপরাপর এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সাওয়াব হয় এ মাসের ঐ এক রজনীর ইবাদতে।

ক. আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থাৎ “কদরের একরাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ [জিবরাঈল (আঃ)] তাদের রব্ব-এর অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়।(এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি- তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত থাকে।” (সূরা ৯৭; ক্বদর ৩-৫)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলতঃ সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো।” (নাসায়ী: ২১০৬)।

৬. এ পুরো মাস জুড়ে দুআ কবুল হয়।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“এ রমযান মাসে প্রত্যেক মুসলিম আল্লাহর সমীপে যে দু'আই করে থাকে- তা মঞ্জুর হয়ে যায়।” (আহমাদ- ২/২৫৪)

৭. এ মাসে মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

অর্থাৎ “মাহে রমযানে প্রতিরাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে থাকেন এবং প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় প্রত্যেক মুসলিমের দু'আ মুনাজাত কবুল করা হয়ে থাকে।” (আহমাদ- ২/২৫৪)।

৮. এ মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথ চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা কত লোককে জাহান্নাম থেকে। মুক্তি দিয়ে থাকেন। (তিরমিযী: ৬৮২)

৯. এ মাস ক্ষমা লাভের মাস। এ মাস ক্ষমা লাভের মাস। এ মাস পাওয়ার পরও যারা তাদের আমলনামাকে পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত করতে পারল না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ধিক্কার দিয়ে বলেছেন,

“ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধুসরিত হোক যার কাছে রমযান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না।” (তিরমিযী: ৩৫৪৫)

১০. রমযান মাসে সৎ কর্মের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি রমযান মাসে কোন একটি নফল ইবাদত করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর রমযানে যে ব্যক্তি একটি ফরয আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরয আদায় করল।” (ইবনে খুযাইমা: ১৮৮৭, হাদীসটি দুর্বল)

১১. এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হজ্জ আদায়ের সওয়াব হয় এবং তা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হজ্জ আদায়ের মর্যাদা রাখে।

ক. হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“রমযান মাসে উমরা করা আমার সাথে হজ্জ আদায় করার সমতুল্য।” (বুখারী: ১৮৬৩)।

হাদীসে আছে,
খ. একজন মেয়েলোক এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল,
“কোন ইবাদতে আপনার সাথী হয়ে হজ্জ করার সমতুল্য সাওয়াব পাওয়া যায়? তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, রমযান মাসের ওমরা করা।” (আবু দাউদ: ১৯৯০)