২.৪১ খতীব সাহেবদের করণীয় ও বর্জনীয় - ১৭৪. খতীব সাহেব কেমন হওয়া উচিত? তিনি কী কী কাজ বর্জন করবেন?

তার কাজ অনেক। তবে প্রাধান্য ভিত্তিতে নিম্ন বর্ণিত কাজ করা আবশ্যক:

১. খতীব হবেন তার নিজ মহল্লাবাসীর জন্য একজন উত্তম ও আদর্শ দাঈ অর্থাৎ আল্লাহর  পথে আহ্বানকারী ব্যক্তি। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই দাওয়াতী কাজ করে যাবেন,  রিজক হাসিলের জন্য নয়।

২. খতীব সাহেব সর্বদা ব্যক্তিগত অধ্যয়ন চালু রাখবেন। প্রতিনিয়ত ইলম অর্জন করে যাবেন। কারণ, ইলমের গভীরতা না থাকলে তিনি মুসল্লিদের কী দেবেন?

৩. ইলম অনুযায়ী আমল করবেন। তার চরিত্র হবে সুন্দর। তিনি হবেন সকলের কাছে শ্রদ্ধার  পাত্র।

৪. খতীব সাহেব নিজে খুৎবা তৈরি করবেন। এটি একেবারে সহজ কাজ। প্রথমে আলহামদুলিল্লাহ ... বা নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা ... পড়বেন। অতঃপর কালেমা শাহাদাত ও দরূদ শরীফ পড়বেন। পূর্ব থেকেই একটি বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে নেবেন এবং এ অনুযায়ী কিছু পড়াশোনা করে প্রস্তুতি নিয়েও রাখবেন। যে বিষয়ে খুৎবা দেবেন সে বিষয়ে কুরআন থেকে কয়েকটি আয়াত ও সংশ্লিষ্ট কয়টি হাদীস বলবেন। এগুলোর বাংলা অর্থ তখনি বলে দেবেন, সাথে সাথে কিছু নসীহত ও উপদেশ প্রদান করবেন। দ্বিতীয় খুৎবা প্রথম খুৎবার মতোই। দ্বিতীয় খুৎবার শেষাংশে দু'আ করবেন। এ সময় ইমাম সাহেব হাত উঠাবেন না। আর মুসল্লীরাও হাত না উঠিয়েই আস্তে আস্তে আমীন বলবে। এইতো খুৎবা হয়ে গেল। উল্লেখ্য যে, দু'আর জন্য অত্র বইয়ের লেখক কর্তৃক সংকলিত ‘শুধু আল্লাহর কাছে চাই’ নামক দু'আর বইটি দেখে নিতে পারেন।

৫. সময়ের দাবি অনুযায়ী খুৎবার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করবেন। ধরা-বাধা ছাপানো বারো চান্দের একই খুৎবা বছরের পর বছর পড়া উচিত নয়।

৬. বর্তমান প্রেক্ষাপট, সমসাময়িক অবস্থা ও ঘটনাবলি এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সামনে রেখে খুৎবার ভাষণ প্রস্তুত করা।

৭. পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে খুৎবা প্রদান করা।

৮. খুৎবায় আকীদার বিষয়বস্তুকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া। কারণ আকীদা শুদ্ধ হলে ইবাদত শুদ্ধ, আর তা ভুল হলে ইবাদতও ভুল হয়ে যায়। আকীদার বিভ্রান্তিতে একজন মুমিন কখনো কখনো ঈমান থেকেও খারিজ হয়ে যায়।

৯. হাদীসের উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে সর্বদা সহীহ হাদীস পেশ করা। দুর্বল ও জাল হাদীস পরিহার  করা। এ জাতীয় হাদীস দিয়ে হুকুম, আহকাম ও ফযীলত বর্ণনা না করা।

১০. খুৎবার সময় প্রবেশকারী কোন মুসল্লিকে বসে পড়তে দেখলে খতীবের উচিত তাকে দু’ রাকাআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করে বসতে বলা।

১১. দলীলের বিশুদ্ধতা যাচাই করে বক্তব্য প্রদান করা এবং কোন মাসআলা ভুল প্রমাণিত হলেও এর প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব না করা।

১২. সূর করে খুৎবা না দেওয়া।

১৩. হাদীস ও অন্যান্য আরবী ইবারত পাঠে ইখফা, ইদগাম, ইযহার বা তাজবীদের কায়দা প্রয়োগ না করা। কারণ তাজবীদের হুকুম প্রয়োগ শুধুমাত্র কুরআন তিলাওয়াতের জন্য খাস।

১৪. নামাযী, বেনামাযী, ধনী, গরীব, মুমিন, মুনাফিক সকল শ্রেণীর লোকের সাপ্তাহিক এ সমাবেশকে দাওয়াতী কাজের এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে এর সদ্ব্যবহার করা। আল্লাহ আমাদের সকলের যাবতীয় নেকআমল কবুল করুন। আমীন।