মুমিন জননীদের ও বনী ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহাকে অপমান করা:

শিয়া মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতাগণ প্রমাণ সাব্যস্ত করেছে যে, তাদের ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত নিষ্পাপ এবং তারা নবীদের সকলের চেয়ে উত্তম। আর তাদের আনুগত্য করা এবং তাদের ইমামত তথা নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখা বাধ্যতামূলক; যেমনিভাবে বাধ্যতামূলক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর আনুগত্য করা। আর তারা তাদের ইমামদের জন্য এমন সব গুণাবলী ও মর্যাদার কথা বলে, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও জন্য সাব্যস্ত হতে পারে না। সুতরাং তারা তাদের ইমামদের জন্য দাবি করে যে, যা হয়েছে এবং যা হবে, তারা সেই জ্ঞান রাখে। আর তারা তাদের মৃত্যুর সময় সম্পর্কেও জানে, এমনকি তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুবরণ করে।[1] আর ফযিলতের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা হলেন জাতির সাহসী সন্তান ইত্যাদি ইত্যাদি।

একদিকে তারা তাদের (ইমামদের) জন্য এই ধরনের শ্রেষ্ঠত্ব, অলৌকিক ঘটনা ও কল্পকাহিনী থেকে যা সাব্যস্ত করেছে, এ সব এমন ধরণের কল্পকাহিনী যে তা নিজের জন্য সাব্যস্ত করা বা নিজের প্রতি সম্পৃক্ত করা থেকে যে কোন সাধারণ মানুষও নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করে এবং তা সাব্যস্ত করতে লজ্জাবোধ করে; কারণ তাতে রয়েছে সীমাহীন লজ্জা ও অবমাননা। অপরদিকে তারা তাদের জন্য স্থির করেছে যে, তারা মুনাফিক ও কাপুরুষ ছিল এবং তারা মিথ্যা বলে ইত্যাদি।

আমরা তাদের মাযহাবের নির্ভরযোগ্য প্রধান গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের বর্ণনা ও বক্তব্যসমূহ থেকে অংশবিশেষ আপনার সামনে উপস্থাপন করতে চাই। অতএব তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক উম্মে কুলসুম বিনতে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ব্যাপারে লিখেছে: “ইমাম জাফর সাদিক বলেছেন: সেই প্রথম (গুপ্তাঙ্গ), যা আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।”[2]

আমরা সাইয়্যেদা (উম্মে কুলসুম), তাঁর পিতা আলী এবং তাঁর ভাই হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমের ব্যাপারে তাদের এই নির্লজ্জ মন্তব্য থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাই।

মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসীর বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক শিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একজন এই বর্ণনাটির সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন:

“অভিশপ্ত মুনাফিক ওমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট উম্মে কুলসুমকে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি ছিল নিরুপায় হয়ে ‘তাকীয়া’ পদ্ধতি বা নীতির অনুসরণে।”

দেখুন, কোন প্রশ্নকারী কি এই প্রশ্নটা করতে পারে না যে, তখন আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) আল-গালিব সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বীরত্ব ও ব্যক্তিত্ব কোথায় ছিল? অনুরূপভাবে তাঁর দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বীরত্ব ও ব্যক্তিত্বই বা কোথায় ছিল?

আর যাইনুল আবেদীন ইয়াযীদকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

“তুমি যে চেয়েছ, আমি তা স্বীকার করে নিচ্ছি; আর আমি হলাম তোমার অপছন্দের গোলাম। সুতরাং তুমি চাইলে আমাকে আটকিয়ে রাখতে পার; আবার চাইলে বিক্রিও করে দিতে পার।”[3]

কিভাবে শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী নিষ্পাপ ইমাম নিজেকে ইয়াযীদের গোলাম বলে স্বীকৃতি দেবে এবং তা কি করে হয়?

আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:

“ইবনু আবি ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’[4]-এর মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর নাবীয ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।”[5]

তিনি আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”[6]

তিনি আরও বর্ণনা করেন:

“মা‘মার ইবন খাল্লাদ থেকে বর্ণিত, আমি আবূল হাসান আ.-কে ওলীদের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম; আবূ জাফর আ. বললেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”[7]

তিনি আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে সুলায়মান! তোমরা এমন ব্যক্তির দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছ, যিনি তা গোপন করে রেখেছেন; আল্লাহ তাকে সম্মান দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি তা প্রচার করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন।”[8]

তিনি আরও বর্ণনা করেন:

“যুরারা মুহাম্মদ বাকের আ.-কে এক মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তিনি বললেন: আগামীকাল তুমি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন আমি তোমাকে কিতাব পড়ে শুনাব; অতঃপর আমি পরের দিন যোহরের পর তার নিকট এসে উপস্থিত হলাম। আর আমার যে সময়টিতে আমি তাঁর সাথে নির্জনে কাটাতাম সে সময়টি ছিল যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়। আর আমি নির্জনে ব্যতীত তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতে অপছন্দ করতাম এই আশঙ্কায় যে, তার নিকট উপস্থিত ব্যক্তির কারণে তিনি আমাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ফতোয়া দেবেন।”[9]

তিনি আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার পিতা বনী উমাইয়াদের যুগে ফতোয়া দিতেন যে, বাজপাখি ও ঈগল পাখি অন্যান্য শিকারী পাখি দ্বারা যা হত্যা করা হয় তা খাওয়া বৈধ (হালাল), কিন্তু তিনি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ করতেন। আর আমি তাদের নিকট ‘তাকীয়া’ না করেই বলতাম, সেগুলোর দ্বারা হত্যা করা বস্তু হারাম (অবৈধ)।”[10]

তিনি বর্ণনা আরও করেন:

“যখন তিনি (ইমাম) মারা গেলেন এবং তা (নেতৃত্ব বা শাসনক্ষমতা) মুহাম্মদ ইবন আলী আ.-এর নিকট স্থানান্তর হল, তখন পঞ্চম মোহর খুললেন এবং তিনি তাতে যা পেলেন, তা হচ্ছে: তুমি আল্লাহর কিতাব ব্যাখ্যা (তাফসীর) কর ... এবং ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সর্বাবস্থায় সত্য কথা বল; আর আল্লাহকে ব্যতীত আর কাউকে ভয় করো না। অতঃপর সে তাই করল।”[11]

অর্থাৎ- তার পূর্ববর্তী ইমামগণ ভয়ভীতি ও নিরাপদ অবস্থায় সত্য কথা বলতেন না এবং তারা জনগণকে ভয় করতেন (নাউযুবিল্লাহ)।

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“যুরারা ইবন আ‘ইউন থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি আমাকে জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট জনৈক ব্যক্তি আসল এবং তার নিকট সে একই প্রশ্ন করল; তখন তিনি আমাকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট (একই প্রশ্ন নিয়ে) অপর আরেক ব্যক্তি আসল; তিনি আমাকে ও আমার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত জওয়াব দিলেন। অতঃপর যখন উভয় ব্যক্তি বের হল, তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূলের (বংশের) ছেলে! ইরাক থেকে আপনাদের দলীয় দুই লোক আগমন করে প্রশ্ন করলে আপনি তাদের প্রত্যেককে তার সঙ্গীকে যে জওয়াব দিয়েছেন, অপর জনকে তার বিপরীত জওয়াব দিয়েছেন? অতঃপর তিনি বললেন: হে যুরারা! এটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর এবং আমাদের ও তোমাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী।”[12]

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“মূসা ইবন আসইয়াম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-এর নিকট ছিলাম; অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল, আর তিনি তার জওয়াব দিলেন। অতঃপর তার নিকট আরও এক প্রবেশকারী এসে প্রবেশ করল; অতঃপর সে তাকে ঐ একই আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করল; অতঃপর তিনি তাকে প্রথম ব্যক্তির জবাবের বিপরীত জওয়াব দিলেন। আর সেই থেকে আমার মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী এমন কিছু বিষয় প্রবেশ করল, এমনকি শেষ পর্যন্ত মনে হল আমার হৃদয়কে ছুরি দিয়ে উম্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। অতঃপর আমি মনে মনে বললাম: আমি আবূ কাতাদাকে শাম (সিরিয়া) দেশে রেখে এসেছি, তিনি ওয়াও (واو) এবং তার অনুরূপ কিছুর মধ্যেও ভুল করতেন না; আর আমি এর নিকট আসলাম, সে তো সবকিছুতেই ভুল করে। সুতরাং আমার অবস্থা যখন এই রকম, তখন অপর আরেক ব্যক্তি এসে তার নিকট প্রবেশ করল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করল ঐ আয়াত সম্পর্কে ; অতঃপর তিনি আমাকে ও আমার সাথীকে যে উত্তর দিয়েছিলেন, তাকে তার বিপরীত বা ভিন্ন উত্তর দিলেন। অতঃপর আমি আমার মনের সান্ত্বনা পেলাম এবং জানতে পারলাম যে, এটা তার পক্ষ থেকে ‘তাকীয়া’ হিসেবে হয়েছে। সে বলল: অতঃপর তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং আমাকে বললেন: হে আশইয়ামের ছেলে! আল্লাহ তা‘আলা সুলাইমান ইবন দাঊদ আ.-কে ক্ষমতা প্রদান করেছেন; অতঃপর তিনি বলেছেন: এটা আমাদেরকে দেয়া উপহার। সুতরাং তুমি (এর মাধ্যমে) দয়া কর, অথবা বিরত থাক; এর জন্য তোমাকে হিসেব দিতে হবে না। আর তিনি (আল্লাহ) ক্ষমতা প্রদান করেছেন তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তিনি বলেন:

﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْ﴾ [سورة الحشر: 7]

“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক।”— (সূরা আল-হাশর: ৭)

সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে ক্ষমতা দান করেছেন, সেই একই ক্ষমতা তিনি আমাদের প্রতি অর্পণ করেছেন।”[13]

এটা কি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের মধ্যে শির্ক নয়, অথবা এই আকিদা বা বিশ্বাসের পরও (নাউযুবিল্লাহ) কি কোন মানুষ মুসলিম থাকতে পারে?

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“সালামা ইবন মিহরায থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বললাম: জনৈক আরমানীয় ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমার নিকট অসিয়ত করল; তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আরমানীয় কী? আমি বললাম: পাহাড়ে বসবাসকারী অনারব লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি মারা গেল এবং সে আমাকে উত্তরাধিকারের ব্যাপারে অসিয়ত করল এমন অবস্থায় যে, সে তার এক কন্যা রেখে গিয়েছিল। তখন তিনি (আবূ আবদিল্লাহ আ) আমাকে বললেন, তাকে অর্ধেক দিয়ে দাও। তিনি (সালামা ইবন মিহরায) বলেন: আমি এই বিষয়টি যুরারাকে জানালাম; তখন তিনি আমাকে বললেন: সে তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছে, সম্পদ সবটুকুই তার। তিনি বললেন: পরবর্তীতে আমি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম: আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করে দিক; আমাদের সাথীগণ ধারণা করেছে যে, আপনি আমার সাথে ‘তাকীয়া’ করেছেন। তখন তিনি বললেন: না, আল্লাহর কসম! আমি তোমার সাথে ‘তাকীয়া’ করি নি; বরং আমি ‘তাকীয়া’ করেছি তোমার প্রতি অর্পিত তোমার কর্তব্যকে। সুতরাং এই সম্পর্কে কেউ জানতে পেরেছে কি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি তাকে (তার কন্যাকে) বাকিটুকু দিয়ে দাও।”[14]

এই বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, ইমামগণ একবার মাসআলা গোপন করতেন এবং আরেকবার তা পরিবর্তন করতেন। আর তাদের জওয়াবসমূহ এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির নিকট পরিবর্তন করে করে বলেন। আর মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে গোপন করাটাই হল তাদের দীনের সিংহভাগ; বরং তারা তাদের (ইমামদের) থেকে মিথ্যা ও বানোয়াট বর্ণনা পেশ করে যে, ‘যে ব্যক্তি দীন গোপন করবে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন; আর যে ব্যক্তি তা প্রকাশ করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন। সুতরাং তাদের নিকট তাদের নিষ্পাপ ইমামদের অবস্থা যখন এই রকম, তখন আল্লাহর কসম! এসব ইমামদের উপর কিভাবে নির্ভর করা সম্ভব? তারা কি দীন বিকৃত ও গোপন করার ক্ষেত্রে ইহুদী আলেমদের মত নয়? আর এ সবই আহলে বাইতের ইমামদের ব্যাপারে শিয়াদের পক্ষ থেকে কুৎসা রটনা ও অবমাননা; আর তারা (আহলে বাইতের ইমামগণ) এসব ভ্রান্ত ও কুটিল বক্তব্যসমূহ থেকে মুক্ত।

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“আমার নিকট হিশাম ইবন হেকাম ও হাম্মাদ যুরারা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি মনে মনে বলি, শাইখের বিতর্ক করার মত কোন জ্ঞান নেই (আর শাইখ দ্বারা উদ্দেশ্য হল তার ইমাম)।”[15]

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা খলিল আল-কাযবিনী ফারসি ভাষায় লিখেছেন, যার অর্থ হল: এই শাইখ অক্ষম, তার কোন জ্ঞান-বুদ্ধি নেই এবং বিতর্ককারীর সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারে না।

কাশি বর্ণনা করেন:

“যুরারা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম ... আমি বললাম: التحيات و الصلوات ... অতঃপর আমি তাকে ‘তাশাহহুদ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন সে অনুরূপই বলল, সে বলল: التحيات و الصلوات; অতঃপর আমি যখন বের হলাম, তখন আমি তার দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করলাম এবং বললাম, সে কখনও সফলকাম হবে না।”[16]

এই আবূ আবদিল্লাহই হলেন ইমাম জাফর সাদিক, যার সাথে সম্পর্ক যুক্ত করে শিয়াদের একটি গ্রুপ (দল) নিজেদেরকে জাফরী বলে পরিচয় দেয়। আর এই যুরারা হল শিয়াদের অন্যতম সর্দার বা নেতা। আর ইমামদের অধিকাংশ বর্ণনাই শিয়াগণ একই পদ্ধতিতে বর্ণনা করে। নিঃসন্দেহে যুরারা তার (বিশ্বাসমত) নিষ্পাপ ইমামের সাথে যে ব্যবহার করেছে, তা বড় ধরনের অপমান-অবমাননার শামিল। আর যেখানে সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে কোন নগণ্য ব্যক্তি কাউকে তার চেহারা বা দাড়ির মধ্যে সশব্দে বায়ু নির্গত করাকে মেনে নেয় না, সেখানে কিভাবে জাফর সাদিক র.-এর মত সম্মানিত ইমামের চেহারা বা দাড়ির সামনে তা করার মত দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারে?!!!

আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী ‘জালাউল ‘উয়ুন’ (جلاء العيون) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অর্থ হল:

“আমার দাদা থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন জাফর ইবন মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন হোসাইন জন্ম গ্রহণ করবে, তখন তোমরা তার নাম রাখবে ‘সাদিক’। কারণ, তার পঞ্চম আওলাদ থেকে জাফর নামে যে ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করবে, মিথ্যা ইমামতের দাবি করবে এবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করবে, সে হবে আল্লাহর নিকট জাফর আল-কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী জাফর)।”[17]এই বর্ণনাটিতে যাকে জাফর আল-কাযযাব বলা হচ্ছে সে আর কেউ নয়, তাদেরই ইমাম নকী’ -যিনি শিয়াদের নিকট স্বীকৃত নিষ্পাপ ইমামদের একজন- এই জাফর তাঁরই ছেলে এবং ইমাম হাসান আল-‘আসকারী’র সহোদর ভাই। যে হাসান আল-আসকারী শিয়াদের নিকট স্বীকৃত দ্বাদশ নিষ্পাপ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। আর এই জাফর, তিনি তো আলী ও ফাতেমার বংশেরই সন্তান এবং হোসাইন ও যাইনুল আবেদীনের বংশের অন্যতম ব্যক্তি। সুতরাং কিভাবে তারা আহলে বাইতের প্রতি তাদের অসার ভালবাসার দাবি করে। নিশ্চয় তার বংশের এই ধারাটি হল ‘সোনালী ধারা’; কিন্তু ‘আলে বাইতের’ (নবী পরিবারের) মহব্বতকারী শিয়াগণ তাকে ‘জাফর আল-কাজ্জাব’ (মিথ্যাবাদী জাফর) উপাধিতে ভূষিত করে। সুতরাং হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র (সুবহানাল্লাহ) ...!

>
[1] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৫৮-১৫৯

[2] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), দ্বিতীয় খণ্ড।

[3] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), রওযা অধ্যায়।

[4] ‘তাকিয়া’ (التقية) হচ্ছে মানুষের মনের বিপরীত অভিমত প্রকাশ করা। অর্থাৎ ভিতর এক রকম, আর বাহির অন্য রকম। - অনুবাদক।

[5] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮২। অর্থাৎ শিয়ারা নাবীয খাবে না ও মোজার উপর মসেহ করবে না, এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে তার ঘোষণা দিচ্ছে। এ দু’ ব্যাপারে তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে আলাদা নীতি অবলম্বন করবে না। তন্মধ্যে নাবীয হচ্ছে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে সে পানি (মাদকতা আসার আগেই) খাওয়া, যা খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনায় বৈধতা এসেছে, অথচ তারা তা খাবে না। আর মোজার উপর মাসেহ করার ব্যাপারে মুতাওয়াতির হাদীস রয়েছে। যার অস্বীকারকারী কাফির হয়ে যাবে। অথচ তারা তাই অস্বীকার করছে। এজন্য আপনি দেখবেন, তারা মোজা খুলে খালি পায়ে মাসেহ করে অযু করে থাকে। একদিকে খালি পায়ে মাসেহ করার কারণে তাদের অযু শুদ্ধ হয় না। অপরদিকে মোজার উপর মাসেহ করা অস্বীকার করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সাথে বিরোধিতা করে এবং মুতাওয়াতির হাদীসের উপর আমল করে না। শয়তান তাদেরকে এভাবে প্রতারিত করছে। [সম্পাদক]

[6] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৩

[7] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪

[8] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪

[9] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২

[10] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৮০

[11] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৭১

[12] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৩৭

[13] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৬৩

[14] ফুরু‘উল কাফী (فروع الكافي), ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৮

[15] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৫৫৭

[16] মা‘রেফাতু আখবারির রিজাল (معرفة أخبار الرجال), পৃ. ১০৬

[17] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মাজলিসী, জালাউল ‘উয়ুন (جلاء العيون), পৃ. ৩৪৮
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে