শির্ক কী ও কেন? চতুর্থ পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি

আমরা প্রথম অধ্যায়ে এ-কথা আলোচনা করে দেখিয়েছি যে, আরবের মুশরিকরা মহান আল্লাহকে এ মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা, জীবিকা দানকারী, জীবন ও মৃত্যুদাতা এবং পরিচালক বলে স্বীকৃতি দিত। এ স্বীকৃতির পাশাপাশি তারা বিভিন্নভাবে আল্লাহর উপাসনাও করতো। সে-জন্য তারা নিজেদেরকে দ্বীনে ইব্রাহীমের অনুসারী বলেও দাবী করতো। তবে সৃষ্টি, রেযেক, জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে তারা যেভাবে আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাসী ছিল, উপাসনার ক্ষেত্রে তারা সেরকম বিশ্বাসী ছিল না। তারা বাহ্যিক কিছু উপাসনাদি বিশেষভাবে আল্লাহর জন্যে করলেও শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে অন্তরের সাথে সম্পর্কিত আল্লাহর উপাসনাদিতে আল্লাহর সাথে অতীতের কিছু ওলিদের নামে নির্মিত মূর্তি এবং ফেরেশতাদের উদ্দেশ্য করে নির্মিত কিছু গাছ ও পাথরের প্রতিমা ও দেবীদেরকে শরীক করে নিয়েছিল। আমাদের দেশের মুসলিমদের আউলিয়া কেন্দ্রিক যে বিশ্বাস ও তাঁদের কবর কেন্দ্রিক যে সব কর্ম রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তাদের অনেকেই আল্লাহর উপাসনায় ওলিগণ কে শরীক করে নিয়েছেন। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে তারা আরবের মুশরিকদেরকেও অতিক্রম করে গেছেন। নিম্নে তাদের কতিপয় শির্কী কর্মের উদাহরণ বর্ণিত হলো :

১. আল্লাহ তা‘আলার নামের যিকরের সাথে বা এককভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামের যিকর করা :

এ কথা সর্বজন বিদিত যে, ইয়া আল্লাহ, ইয়া রহমানু[1] ইত্যাদি বলে মুখে জপ করাকে আল্লাহর যিকির ও তাঁর উপাসনা বলা হয়। এ জাতীয় যিকির কেবল তাঁর নাম ও গুণাবলী ব্যতীত অপর কারো নাম নিয়ে করা শির্কের অন্তর্গত। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক যিকিরকারীকে ‘ইয়া আল্লাহু’ বলে যিকির করার পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালবাসার আতিশয্যে ‘ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন’ বলে তাঁর নামেও যিকির করতে দেখা যায়। অনেককে আবার ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বা ‘নূরে রাসূল নূরে খোদা’ বলেও যিকির করতে দেখা যায়। এ জাতীয় যিকির করার প্রচলন কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী উপজেলার মুহাম্মদ আলী দরবেশের ভক্তদের মধ্যে রয়েছে। অনুরূপভাবে ‘হক বাবা হক বাবা’ বলেও কোনো কোনো কবরের ভক্তদেরকে তাদের পীর সাহেবের নামে জিকির করার প্রচলন রয়েছে।

২. কবরমুখী হয়ে বা কবরের পার্শ্বে নামায আদায় করা :

আল্লাহর উপাসনাকে শির্কমুক্ত রাখার জন্য কবরমুখী হয়ে বা কবরের পার্শ্বে নামায আদায় করা থেকে নিষেধ করে দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

«لاَ تُصَلُّوا إِلَى الْقُبُوْرِ»

‘‘তোমরা কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে না।’’[2]

যদি কেউ তা করে তবে তার এ সালাত দ্বারা আল্লাহর তা‘যীম আদায় না হয়ে কবরবাসীরই তা‘যীম প্রকাশিত হয়ে থাকবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো কোনো কবরের ভক্তদের মধ্যে এমনটি করার প্রচলন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ শরীয়তপুর জেলার ‘শুরেশ্বর’ কবরের ভক্তদের কথাই বলা যায়। তাদের অনেকেই তাদের পীরের কবরকে ক্বিবলার মত গণ্য করে সে দিকে মুখ করে সালাত আদায় করে থাকে। কবরের পার্শ্বে কবরের তা‘যীম করার উদ্দেশ্য ছাড়া সালাত আদায় করা হারাম, শির্ক নয়। তবে কেউ যদি কবরের তা‘যীম করার উদ্দেশ্যে এর পার্শ্বে সালাত আদায় করে, তা হলে শির্ক হিসাবে গণ্য হবে। মুল্লা আলী ক্বারী হানাফী উপর্যুক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন :

ولو كان هذا التعظيم حقيقة للقبر و لصاحبه لكفر المعظم

“এ তা‘যীম যদি কবর ও কবরস্থ ব্যক্তির জন্যে হয়ে থাকে, তা হলে তা‘যীমকারী কাফের হয়ে যাবে।”[3]

৩. দ্রুত দো‘আ কবুল হওয়ার আশায় মুরশিদ বা পীরের বৈঠকখানার দিকে মুখ করে দো‘আ করা :

মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ فَأَيۡنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجۡهُ ٱللَّهِۚ﴾ [البقرة: ١١٥]

‘‘তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাওনা কেন সে দিকেই আল্লাহর দিক রয়েছে’’[4]

এ আয়াতের ভিত্তিতে যে কোনো দিকে মুখ করে আল্লাহকে ডাকা যেতে পারে। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর দিকে মুখ না করে দ্রুত দো‘আ কবূলের জন্য তার মুরশিদ বা পীরের বৈঠকখানার দিকে মুখ করে, তা হলে এ উপাসনা আল্লাহর জন্য না হয়ে তার মুরশিদ বা পীরের জন্যেই হবে। এ জাতীয় কর্মের প্রচলন ফরিদপুর জেলার আটরশির বিশ্বজাকির মঞ্জিলের ভক্তদের মাঝে রয়েছে। অথচ আল্লাহর নিকট কিছু চাইতে হলে সরাসরি তা তাঁরই কাছে চাওয়ার নির্দেশ করে তিনি বলেছেন :

﴿ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ﴾ [غافر: ٦٠]

‘‘তোমরা আমাকে আহ্বান কর, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’’।[5] আমরা যদি আল্লাহ- মুখী হয়ে তাঁর কাছে সরাসরি না চেয়ে অপর কোনো মৃত মানুষের মাধ্যমে তাঁর কাছে কিছু চাই, তা হলে এ চাওয়া আল্লাহর কাছে না হয়ে মধ্যস্থ সে ব্যক্তির কাছেই চাওয়া হিসেবে গণ্য হবে। কেননা; এ জাতীয় চাওয়া আল্লাহর নিকট সরাসরি চাওয়ার উপাসনায় তাঁর সাথে মধ্যস্থ ব্যক্তিকে শরীক করে নেয়া হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। আর এ জাতীয় উপাসনার ব্যাপারে হাদীসে কুদসীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً وَأَشْرَكَ فِيْهِ مَعِيْ غَيْرِيْ تَرَكْتُهُ وَ شِرْكَهُ وَجَعَلْتُ الْعَمَلَ لِلَّذِيْ أَشْرَكَهُ»

‘‘যে ব্যক্তি কোনো কাজে আমার সাথে অপর কাউকে শরীক করে, আমি তাকে ও তার কর্মকে ছেড়ে দেই এবং এ কাজে যাকে সে শরীক করেছে, তাকেই সে কাজটি দিয়ে দেই।’’[6]

৪. ওলীদের নিকট কিছু কামনা করা :

মানুষের জীবনে এমন অনেক প্রয়োজন রয়েছে যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অপর কেউ পূরণ করতে পারে না। সে সব প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছে : সন্তান দান, রোগ মুক্তি, ব্যবসায় উন্নতি ইত্যাদি। এ জাতীয় বিষয় প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত কর্ম ক’রে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছেই কামনা করতে হয়। কিন্তু অনেক কবর যিয়ারতকারী এ জাতীয় বিষয়াদিও অলিগণের নিকট কামনা করে থাকেন, যা সুস্পষ্ট শির্ক।

৫. ওলীদেরকে সাহয্যের জন্য আহ্বান করা :

স্বাভাবিক অবস্থায় কাউকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করাকে বলা হয় ইস্তে‘আনাহ (استعانة), আর বিপদমুহূর্তে সাহায্যের জন্য কাউকে আহ্বান করাকে বলা হয় ‘ইস্তেগাছাহ’ (استغاثة), এ উভয় অবস্থায় সাহায্যের জন্য কেবল সে মানুষকেই আহ্বান করা যেতে পারে যিনি জীবিত এবং উপস্থিত। কোনো অনুপস্থিত বা মৃত মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের নিকট সাহায্য চেয়ে আহ্বান করা যায় না; যদি কেউ তা করে, তবে ধরে নিতে হবে যে, সে তাদের প্রতি গায়েব সম্পর্কে জানার ধারণা পোষণ করে এবং আল্লাহর ন্যায় অলৌকিকভাবে তারা মানুষের সাহায্য করতে পারেন বলেও বিশ্বাস করে, যা সুস্পষ্ট শির্ক। আমাদের দেশের সাধারণ লোকেরা ওলীদেরকে উপর্যুক্ত দুই ধারণার ভিত্তিতেই ‘ইয়া গউছ, ইয়া খাজা, ইয়া গরীব নেওয়াজ’ ইত্যাদি বলে দূর-দূরান্ত থেকে তাঁদেরকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করে থাকেন[7]।

৬. ওলীদের কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে বিনয় প্রকাশ করা :

নামায হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাতের সুবর্ণ সুযোগ ও মুনাজাত। এর মাধ্যমে বান্দা যেমন আল্লাহর তা‘যীম প্রকাশ করে, তেমনি অত্যন্ত সংগোপনে আল্লার কাছে তার মনের আকুতি, মিনতি ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করে। এ জন্য প্রয়োজন হয় বিনয় ও একাগ্রতার। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা নামাযে তাঁর সম্মুখে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দাঁড়াবার নির্দেশ করে বলেছেন :

﴿وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ﴾ [البقرة: ٢٣٨]

‘‘তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে (সালাত আদায় করার সময় তাঁর সামনে) অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দাঁড়াও।’’[8] কেউ নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে বিনয়ের সাথে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ালে বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা উপাসনার মত দেখালেও প্রকৃত অর্থে তা নামায হিসেবে তখনই গণ্য হবে যখন এর সাথে ভালবাসা ও এখলাসের সংমিশ্রণ হবে। নামাযে দাঁড়িয়ে একজন নামায আদায়কারী এভাবে আল্লাহর সম্মান ও তা‘যীম প্রকাশ করে থাকে। মানুষের পক্ষে এ ধরনের তা‘যীম প্রকাশ একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কারো জন্যে করা শির্ক। কিন্তু অনেক পীর ও আউলিয়া ভক্তদের দেখা যায় তারা নিজ পীর ও ওলিদের তা‘যীম করার জন্য তাঁদের পীরের সামনে বা ওলিদের কবরে অনুরূপ বিনয় প্রকাশের মাধ্যমে তাঁদের তা‘যীম করে থাকেন। সাথে সাথে কবরস্থ ওলিদের নিকট তাদের প্রয়োজনের কথাও অত্যন্ত বিনয়ের সাথে পেশ করে থাকেন যা সম্পূর্ণ শির্ক।

৭. আল্লাহর ইবাদতের জন্য কবরের পার্শ্বে ই‘তেকাফ বা অবস্থান করা

ই‘তিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো উদ্দেশ্যে কোথাও অবস্থান গ্রহণ করা। শর‘য়ী পরিভাষায় আল্লাহর উপাসনার উদ্দেশ্যে দশ দিন বা এর কম-বেশী সময়ের জন্য কোনো মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করাকে ই‘তিকাফ বলা হয়। এটি আল্লাহর একটি বিশেষ ধরনের উপাসনা। যা মসজিদেই কেবল করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন :

﴿ وَطَهِّرۡ بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ﴾ [الحج: ٢٦]

‘‘তুমি আমার গৃহ (মাসজিদুল হারাম)-কে ত্বাওয়াফকারী, অবস্থান তথা ই‘তিকাফকারী, রূকূ‘ ও সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।’’[9]

কোনো কবর বা দরবার যেহেতু মসজিদ নয়, সুতরাং আল্লাহর উপাসনার জন্য সেখানে অবস্থান গ্রহণ করা জায়েয নয়। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করলে তা বেদ‘আতী কর্ম হিসেবে গণ্য হবে। কেউ যদি কোনো কবরে অবস্থানের দ্বারা কবরস্থ ওলির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চায়, তা হলে তার এ অবস্থান শির্কী কর্ম হিসেবে গণ্য হবে; কেননা যুগে যুগে মুশরিকরা তাদের দেবতাদের পার্শ্বে এ জাতীয় উদ্দেশ্যেই অবস্থান গ্রহণ করতো।[10] এর প্রমাণ আমরা প্রথম অধ্যায়ে দিয়ে এসেছি। তাওহীদকে যথাযথভাবে অনুধাবন করে থাকলে কোনো মু’মিনের পক্ষে এ ধরনের কর্ম করা কখনও সম্ভব হতে পারে না। তবে আমাদের দেশের অনেক মুসলিমকে এ-ধরনের কর্ম করতে দেখা যায়। শাহজালাল (রহ.) বা হাইকোর্টে অবস্থিত শরফুদ্দিন চিশ্তি বেহেশতী (রহ.)-এর কবরে গেলে অসংখ্য লোককে এ জাতীয় কর্ম করতে দেখা যায়। এমনকি কোনো কোনো কবরে যিয়ারতের সময় কিভাবে, কতদূরে বসতে হবে, তাও বোর্ডে লিখিত দেখতে পাওয়া যায়।

৮. কবরের চার পার্শ্বে প্রদক্ষিণ করা :

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হজ্জ এবং ‘উমরা পালনের সময় ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়েও কেবলমাত্র মসজিদুল হারামের চার পার্শ্বে ত্বওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করার অনুমতি দিয়েছেন। এ কাজটি তাঁর সম্মান ও তা‘যীম প্রকাশের একটি বিশেষ মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বলেছেন :

﴿ وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ﴾ [الحج: ٢٩]

‘‘তোমরা সম্মানিত গৃহ অর্থাৎ কা‘বা শরীফের চার পার্শ্বে ত্বওয়াফ কর।’’[11]

ত্বওয়াফের এ উপাসনাটি কা‘বা শরীফের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার ফলে তা কোনো কবরে করা বৈধ হওয়া তো দূরের কথা, অপর কোনো মসজিদের চার পাশে করারও কোনো অনুমতি নেই। কেউ যদি আল্লাহর উপাসনার উদ্দেশ্যে তা কোনো মসজিদে করে তবে তা বেদ‘আত হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি কোনো ওলির কবরে করে, তবে তা শির্কী কর্ম হিসেবে গণ্য হবে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষদেরকে বিভিন্ন সময়ে ওলীদের কবরে এ ধরনের কর্ম করতে দেখা যায়। বিশেষ করে তথাকথিত শবে বরাতের সময় হাইকোর্ট কবরে এ ধরনের কর্ম অত্যন্ত বেশী হয়ে থাকে।

৯. কবরকে সামনে রেখে রুকূ‘ ও সেজদা করা:

রূকু‘ ও সেজদার মাধ্যমে আমাদের ভক্তি ও সম্মান লাভের একক অধিকারী হলেন মহান আল্লাহ। মানুষ কোনো মানুষকে এভাবে সম্মান করলে এটি একটি প্রত্যক্ষ শির্কী কর্ম হিসেবে গণ্য হবে। অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গের সম্মানের শর‘য়ী পন্থা হচ্ছে-তাঁদের আগমনের সংবাদ পেলে তাঁদেরকে এগিয়ে নিয়ে আসা, বা আসতে দেখলে এগিয়ে যেয়ে সালাম, মুসাফাহা ও আলিঙ্গন করা, কপালে ও হাতে চুমু দেওয়া। সাধ্যানুযায়ী আদর ও আপ্যায়ন করা। তাঁদের বিদায়ের সময় তাঁদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও সম্মানের সাথে বিদায় করা। কিন্তু ওলি ও পীরদের ভক্তগণ মানুষকে সম্মান প্রদর্শনের এ বৈধ পন্থা অতিক্রম করে অলিগণের কবরে সেজদা করে থাকেন এবং পীরদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাদের পায়ে পড়ে সেজদা করে থাকেন; কেননা তাদের দৃষ্টিতে ওলি ও পীরদের মন জয় করাই হলো প্রকৃত কাজ। তা করতে পারলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! এ উদ্দেশ্যেই দেওয়ানবাগের পীরকে তার ভক্তরা সেজদা করে থাকে।

১০. কবর, মাযার, দরবার ও মুকামে মানত করা:

অসুখ-বিসুখ নিবারণ, কিছু প্রাপ্তি বা পার্থিব যে কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আল্লাহর নামে কিছু প্রদান করার নিয়ত করাকে মানত বলা হয়। এর দ্বারা আল্লাহর সম্মান প্রদর্শিত হয় বিধায়, তা আল্লাহর একটি বিশেষ উপাসনা। মানতের মাধ্যমে মূলত নির্দিষ্ট কোনো ব্যাপারে তড়িৎ গতিতে আল্লাহর রহমত ও করুণা প্রাপ্তির আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সে জন্য তা একনিষ্টভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে- যে স্থানে তা প্রদান করা হবে সে স্থানটি অবশ্যই যাবতীয় ধরনের শির্কী কর্মকাণ্ড থেকে এবং তা মুশরিকদের বার্ষিক মেলা, ঈদ বা ওরস পালন করা থেকে পবিত্র হতে হবে।[12]

মানত দেওয়ার উপযুক্ত স্থান হচ্ছে- মসজিদ, মাদ্রারাসা, অসহায় এতীম, বিধবা, ফকীর, মিসকীন, অভাবী ও সমাজ কল্যাণমূলক খেদমতের স্থানসমূহ। ওলিদের কবরে তিনটি কারণে কোনো মানত দেয়া বৈধ নয় :

প্রথমত :

মানতের উদ্দেশ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্রুত আল্লাহর রহমত কামনা করা। মানতের উদ্দেশ্য যদি তা-ই হয়, তা হলে তা যেমন হতে হবে সরাসরি আল্লাহর কাছে, তেমনি তা হতে হবে এমন এক স্থানে যেখানে কেবল আল্লাহ ব্যতীত তাঁর কোনো সৃষ্টির কাছে কিছু কামনা করা হয় না। যারা ওলিদের কবরে মানত করে তারা সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্যটি হয় সরাসরি ওলিদের নিকটেই কামনা করে অথবা তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কামনা করে। যদি তাঁদের কাছে চেয়ে থাকে তা হলে তারা প্রকাশ্যই শির্ক করে। আর যদি তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চেয়ে থাকে, তা হলে তারা আল্লাহকে এই বলে অভিযুক্ত করে যে, তিনি তাঁর সাধারণ বান্দাদের অভাব ও অভিযোগের কথা অপর কোনো মাধ্যম ব্যতীত গ্রহণ করতে চান না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ-জাতীয় অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। পাপী-তাপী নির্বিশেষে সকলের জন্যেই তাঁর দরজা উন্মুক্ত। কোনো মৃত ওলি ও দরবেশদেরকে তাঁর এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার জন্য তিনি নিযুক্ত করেন নি। এটি মূর্খ ও ভণ্ডপীর এবং সাধারণ মানুষদের একটি সাজানো কল্পকথা বৈ আর কিছুই নয়। ওলিদের কবরে মানত করলে যেখানে এতো কথা রয়েছে, সেখানে মানত করা কি করে বৈধ হতে পারে।

দ্বিতীয়ত :

কবর বা কবরে মানতকারীর উদ্দেশ্য যদি সঠিকও হয়, তিনি যদি তার উদ্দেশ্যের কথা সরাসরি আল্লাহর কাছেই আবদার করে থাকেন, তবুও কোনো কবর বা কবরে মানত করা বৈধ নয়; কেননা, কবর বা কবরে মানতকারী সাধারণ ও মূর্খ লোকেরা উপর্যুক্ত এ অভিযোগদ্বয় থেকে মুক্ত নয়। আর যাহ্‌হাক রহ. এর হাদীস অনুযায়ী যেখানে শির্ক হয় সেখানে কোনো মানত করা বা করে থাকলেও সেখানে তা পূর্ণ করা বৈধ নয়।

তৃতীয়ত :

ওলিদের কবরে বার্ষিক যে ওরস পালিত হয়, তা আরবের মুশরিকদের বার্ষিক সে ঈদেরই সমতুল্য, যা তারা বছরান্তে পালন করতো। এ জাতীয় ঈদ পালন শরী‘আতে নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কবরকে এ জাতীয় ঈদ পালনের স্থান বানাতে তাঁর সাহাবীদের তথা আমাদের নিষেধ করেছেন, যার প্রমাণ প্রথম অধ্যায়ে প্রদত্ত হয়েছে। এমতাবস্থায় কোনো ওলির কবরে মানত দেয়া কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়। দিলেও তা সেখানে পূর্ণ করা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও দেশের সাধারণ মুসলিমরা ওলিদের কবর এমনকি তাঁদের স্মৃতি বিজড়িত কবর ও মুকাম তথা অবস্থানসমূহে মানত দিয়ে থাকে। সরাসরি আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায় কি না, এ সন্দেহে তারা যে-সব স্থানে মানত দেয়া বৈধ, সেখানে মানত না দিয়ে ওলিদের কাছে অথবা তাঁদের মধ্যস্থতায় চাওয়ার জন্য তাঁদের কবরে মানত দিয়ে থাকে। معاذ الله

১১. গায়রুল্লাহের নামে পশু যবাই করা:

আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করে এসেছি যে, পশু যবাই তা কোনো মানতের হোক আর না হোক সর্বাবস্থায় তা যবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তা যবাই করা হচ্ছে তাঁর একটি বিশেষ উপাসনা। এতে যেমন আল্লাহর তাওহীদ ঘোষিত হয় তেমনি এর দ্বারা তাঁর মর্যাদা সমুন্নত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও আমাদের দেশে ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। বিভিন্ন কবরে যারা মানত বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে পশু নিয়ে যায়, সেখানে তা যবাই করার সময় অনেকে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার বদলে পীর বা পীরের দরগার নাম উচ্চারণ করে থাকে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে ফরিদপুর জেলার বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এমনি ধরনের কর্ম হয়ে থাকে। সেখানে গরু যবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণের পরিবর্তে ‘জয় বিশ্ব জাকের মঞ্জিল’ বলে তা যবাই করা হয়। অথচ এ ধরনের যবাই যে কুরআনে বর্ণিত (وَمَا أُُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ) ‘‘আর যা গায়রুল্লাহের নামে উৎসর্গকৃত হয়’’[13] এ আয়াতের মর্মানুযায়ী গায়রুল্লাহের নামে উৎসর্গ করা হয়ে থাকে এবং সে অনুযায়ী এ ধরনের যবাইকৃত গরুর মাংস খাওয়া সন্দেহাতীতভাবে হারাম হয়ে যায়।

১২. আল্লাহ তা‘আলাকে ভালবাসার ন্যায় নিজের পীরকে ভালবাসা:

আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালবাসার অর্থ হচ্ছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বর্ণিত ও প্রদর্শিত আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আতকে আন্তরিকতা ও আগ্রহের সাথে সাধ্যানুযায়ী পালন করা। শরী‘আতের আদেশ ও নিষেধসমূহকে নিজের পছন্দ ও অপছন্দের উপরে স্থান দেয়া। আল্লাহর হুকুম পালন করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রয়োজনে নির্দ্বিধায় নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত থাকা। শরী‘আতের এ-জাতীয় নিঃশর্ত অনুসরণ ও আনুগত্য করাকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসা বলা হয়। এ জাতীয় ভালবাসা আল্লাহর এক ধরনের উপাসনা। যা তিনি ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতায় অন্য কারো আদেশ বা নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে প্রকাশ করা শির্ক। আমাদের দেশে পীর ও কবর ভক্ত এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদেরকে শরী‘আত বিহীন তরীকত ও মা‘রিফাত নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তারা তাদের পীরের নির্দেশে শরী‘আতের বিধি-বিধান পালন করা থেকে বিরত থাকে এবং পীরের নির্দেশকে শরী‘আতের নির্দেশের উপরে ভালবেসে থাকে। আমার জানা মতে সমাজে এমন লোকও রয়েছে যারা নিজের পীরের ভালবাসার আতিশয্যে পীরের হাতে অন্যায়ভাবে নিজের জীবনটুকুও বিলিয়ে দিয়েছে। শরী‘আতের বিধি-বিধান পালন না করে এভাবে তাদের পীর বা কোনো কবরের ওলিকে ভালবাসার মাধ্যমে যারা আখেরাতে নাজাত পেতে চায়, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের চেয়ে তাদের পীর বা ওলিকেই অধিক ভালবেসে থাকে। আর এভাবেই তারা আল্লাহর নিঃশর্ত ভালবাসার ক্ষেত্রে নিজেরদের পীর বা ওলিকে শরীক করে থাকে। এদের ব্যাপারেই মহান আল্লাহ বলেছেনঃ

﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٦٥]

‘‘মানুষের মাঝে এমনও কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে (তাঁর উলূহিয়্যাতের ক্ষেত্রে) অসংখ্য সমকক্ষ নির্ধারণ করে, তাদেরকে আল্লাহর ন্যায় ভালবাসে।’’[14]

তারা যে তাদের পীর বা ওলিকে আল্লাহর চেয়ে অধিক ভালবাসে এর জ্বলন্ত প্রমাণ হলো- যে সেজদার মাধ্যমে আল্লাহর ভালবাসা ও তাঁর সম্মান প্রদর্শিত হয়, তারা তা আল্লাহকে না করে তাদের পীর ও ওলিদেরকে করে থাকে।

১৩. অন্তরে পীর ও ওলিদের অনিষ্টের গোপন ভয় করা :

শত্রুর ষড়যন্ত্র, সাপের দংশন ও হিংস্র জীব-জন্তু ইত্যাদির আক্রমণের ভয় করাকে মানুষের স্বভাবসুলভ ভয় বলা হয়। এ জাতীয় ভয় থেকে সাধারণ মানুষ কেন স্বয়ং নবীগণও মুক্ত থাকতে পারেন না। তাই শর‘য়ী দৃষ্টিতে এমন ভয় কোনো দূষণীয় ব্যাপার নয়। তবে কোনো মানুষের প্রতি তিনি শত্রু আর মিত্র যা-ই হোন না কেন এমন ভয় করা যাবে না যে, তিনি বাস্তব কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়াই কারো অনিষ্টের ইচ্ছা করলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনিষ্ট করতে পারেন; কেননা আমাদের অন্তরে এ জাতীয় ভয় কেবল আল্লাহ ব্যতীত আর কারো জন্যে থাকতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা ওলীদের ব্যাপারে এমন গোপন ভয় করে থাকেন। যেমন সিলেট জেলায় অবস্থিত শাহ পরান ওলির ব্যাপারে সাধারণ জনমনে এমন ধারণা রয়েছে যে, তিনি খুবই গরম, তাঁর কবরে কেউ বেআ‘দবী করলে তিনি সে ব্যক্তির যে কোনো অনিষ্ট করতে পারেন। অনুরূপভাবে দিনাজপুর জেলার ‘চেহেলগাজী’ কবরের ব্যাপারে সে এলাকায় এমন ধারণা রয়েছে যে, সেখানে কেউ বেআদবী করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে কোনো মুহূর্তে কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে। বেআদবী হলে বিপদের আশংঙ্কায় সাধারণ যিয়ারতকারীরা সেখানে যিয়ারত শেষে মুখ সামনে রেখে পিছু হেঁটে বের হয়। গাড়ী চালকেরা দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচার জন্য কবরের নিকটে গাড়ী নিয়ে আসলে গাড়ীর গতি কমিয়ে নেয়।[15] এ ছাড়াও অনেকে কোনো কবরে গেলে কবরের নিকটস্থ গাছের ডাল ও পাতা কাটতে ও ছিঁড়তে অন্তরে গোপন একটি ভয় অনুভব করে। এ জাতীয় ভয় করা শির্ক। আরবের মুশরিকদের মধ্যে তাদের দেবতাদের ব্যাপারে এ জাতীয় গোপন ভয় বিদ্যমান ছিল। সে জন্য তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের দেবতাদের অনিষ্টের গোপন ভয় প্রদর্শন করতো। যার প্রমাণ প্রথম অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।

[1] যদিও শুধু আল্লাহ বা শুধু রাহমান অথবা শুধু রাহীম নামের যিকির কুরআন ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত নয়। অবশ্যই সাথে থাকতে হবে কি জন্য তাঁকে ডাকা হচ্ছে সেটার উল্লেখ। [সম্পাদক]

[2]. মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুল জানাইয, ২/৬৬৮;নাসাঈ, প্রাগুক্ত; ২/৬২; আহমদ, প্রাগুক্ত; ৪/১৩৫।

[3]. মুল্লা আলী ক্বারী আল-হানাফী, আল-মিরক্বাত ফী শরহিল মিশকাত; ২/৩৭২।

[4]. আল-কুরআন, সূরা বাক্বারাঃ :১১৫।

[5]. আল-কুরআন, সূরা গাফির : ৬০।

[6]. মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুয যুহদ, বাব নং: ৫, হাদীস নং ২৯৮৫; ৪/২২৮৯; আহমদ, প্রাগুক্ত; ২/২০১।

[7] সুতরাং দেখা গেল যে, এ ধরনের আহ্বান ও সাহায্যপ্রার্থনা দু’দিক থেকে শির্ক। এক. সে মনে করছে যে এ ব্যক্তি তার আহ্বান সম্পর্কে দূরে থেকেও জানছে, যা ইলমে গায়েবের জ্ঞানের অংশ, আবার ধারণা করছে যে এমন সময়ে সে সাহায্য করতে সক্ষম, যা আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ শক্তির সাথে শরীক করা। এ দুটোই শির্ক ফির রবুবিয়্যাহ। আর সে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের আহ্বান করছে সেটা উলুহিয়্যতে শির্ক। [সম্পাদক]

[8]. আল-কুরআন, সূরা বাক্বারাহ : ২৩৮।

[9]. আল-কুরআন, সূরা বাক্বারাহ : ১২৫।

[10]. ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর জাতির মুশরিকদের লক্ষ্য করে বলেন,

﴿ مَا هَٰذِهِ ٱلتَّمَاثِيلُ ٱلَّتِيٓ أَنتُمۡ لَهَا عَٰكِفُونَ ﴾ [الانبياء: ٥٢]

‘‘এ মূর্তিগুলো কি যে তোমরা এর পার্শ্বে অবস্থান গ্রহণ করছো।’’ সূরা ত্বা-হা : ৯১। মুসা আলাইহিস সালাম-এর জাতির মুশরিকরা গরু পূজা করা উপলক্ষ্যে বলেছিল :

﴿ قَالُواْ لَن نَّبۡرَحَ عَلَيۡهِ عَٰكِفِينَ حَتَّىٰ يَرۡجِعَ إِلَيۡنَا مُوسَىٰ ٩١ ﴾ [طه: ٩١]

‘‘মূসা আলাইহিস সালাম ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এর পার্শ্বে অবস্থান করেই যাব।’’ সূরা আম্বিয়া : ৫২।

[11]. আল-কুরআন, সূরা হজ্জ : ২৯।

[12]. এ সম্পর্কে দাহ্‌হাক রহ. থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যা প্রথম অধ্যায়ে মানত সম্পর্কিত আলোচনায় বর্ণিত হয়েছে।

[13]. আল-কুরআন; সূরা আল-মায়িদাহ : ৩।

[14]. আল-কুরআন, সূরা বাক্বারাহ : ১৬৫।

[15]. গোলাম ছাকলায়েন, প্রাগুক্ত; পৃ.৪৮।