পাড়া-গ্রামে এ ধরনের পরিবেশের বিরুদ্ধে মানুষ এখনও বড় সচেতন ও সোচ্চার। কিন্তু সেখানেও যে ঘুণ ধরেনি তা নয়। বর্তমানের সিনেমা, ভিডিও ও টিভির মাধ্যমে সে অসভ্যতা ভালো ঘরেও অনুপ্রবেশ করছে। যারা এমন অসভ্যতা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে।

তাদেরকে সাদাসিধা, ক্ষ্যাপা মনে করা হয়! একদা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে কথা প্রসঙ্গে ভৎসনার সুরে বলল, তোমার ছেলেরা বড় শয়তানী করে বেড়ায়; শাসন করো।' দ্বিতীয় জন বলল, 'এখন সবারই ছেলেরা এমন করে। শুধু আমার ছেলেরা কেন? প্রথম ব্যক্তি বলল, 'আমার ছেলেরা ও পথে নেই। তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি অবজ্ঞার সুরে বলল, ‘তোমার ছেলেরা তো ক্ষ্যাপা!’

এ কথা সত্য যে, পরিবেশে এমন প্রবাদ তৈরী করেছে যে, যার ফলে বলা হয়ে থাকে, ‘পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ সত্য কথা বলে না। আর ক্ষ্যাপা ছাড়া কেউ ভালোবাসা (ব্যভিচার) ছাড়ে না! অতএব যে পরিবেশে কেউ ভালো থাকতে চাইলে তাকে ক্ষ্যাপা’ বলা হয়, সে পরিবেশে এ টিপ্পনী শোনার পর কে আর ভালো থাকতে চেষ্টা করবে?

যারা এমন নৈতিক অবক্ষয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করেন তাদেরকে লোকেরা নাক সিঁটকে মৌলবাদী’, ‘প্রাচীন-পন্থী’ প্রভৃতি বলে ব্যঙ্গ করে। ঐ শ্রেণীর ছন্নছাড়ারা ভাবে যে, নৈতিকতার পথ হল প্রাচীন। এ আধুনিক যুগে যৌনতাই হল নারী-পুরুষের স্বাধীনতা ও প্রগতির পথ। নতুনত্ব হল সংস্কারপন্থীদের (?) পথ। নতুনত্বে আছে জীবনের নতুন আনন্দ। গতানুগতিক সেকেলে ‘মোডেল চেঞ্জ’ না করলে একঘেয়ে কোন জিনিসই ভালো লাগে না। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে, (كل جديد لذيذ) অর্থাৎ, প্রত্যেক নতুন জিনিসই মনোহর হয়, মজাদার হয়। হাতে নতুন নোট এলে তা খরচ করতে মায়া লাগে, অন্য কেউ দেখলে তা নিতেও চায়। নতুন কনের প্রতি বরের টান একটু বেশীই থাকে। নতুনত্ব প্রায় সকলের মন আকর্ষণ করে। কিন্তু পরক্ষণেই যখন তা পুরাতন হয়ে যায়, তখন সেই জিনিসের প্রতি মনের ততটা বা মোটেই টান ও আগ্রহ থাকে না। তখন নূতন নূতন ন’ কড়া, পুরনো হলে ছ’ কড়া’ তে পরিণত হয়। এটাই বাস্তব।

অবশ্য সব কিছুতেই যে নতুনত্ব ভালো তা সকলেই স্বীকার করবে না। যেমন, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, পুরনো ঘিয়ে মাথা ছাড়ে। যতই নতুন নতুন চাল আবিষ্কার হোক এবং ফলন যত বেশীই হোক না কেন, পুরনো যুগের ও পুরনো চালের মত ভাত আর অন্য চালের হয়। অনেকে বলে, উনি পুরনো মেট্রিক পাশ, উনার শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশী। আগেকার পড়া পড়াই ছিল--- ইত্যাদি।

পক্ষান্তরে সবচেয়ে আধুনিকতম ঐশীধর্ম ইসলামের নীতি-নৈতিকতাকে যারা প্রাচীন ও বস্তাপঁচা মনে করেন, তারা নিজেদের ধর্মের কথা ভেবে দেখতে পারেন। আর যদি ধর্মহীন। নাস্তিক হন, তাহলে তো তাঁর নিকট নূতন-পুরাতনের কোন প্রশ্নই নেই। পক্ষান্তরে নতুনত্ব ও সংস্কার আনার অর্থ যদি এই হয় যে, কিছুদিন অতিবাহিত হলেই তা বদলাতে হবে তাহলে আসল সংস্কৃতিটা কি? এর কি কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা বা রূপরেখা থাকবে? নারীবাদী ও যৌনদুষ্ট পরিবেশে নারী তথা জরায়ু-স্বাধীনতার যে দাবী চরিত্রহীনরা করে আসছে তা আসলে কি সংস্কার? পর্দার অন্তরাল থেকে বের হয়ে বেআবরু অবস্থায় মঞ্চে পুরুষের পাশাপাশি অবস্থানই কি সংস্কৃতি? মহিলাদের নিয়ে পুরুষদের বিভিন্ন উষ্ণ যৌনসুখ উপভোগের প্রবণতা, তাদেরকে কাছে-পাশে পাওয়ার বিভিন্ন ব্যবস্থা ইসলামের পূর্বে জাহেলী যুগে ছিল। নারী নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হত,

নৃত্যগীত হত, অর্ধনগ্ন দেহ নিয়ে যৌনসুখ ভোগ করা হত। পতিতালয় ছিল, অনেক বেশ্যাই তার ঘরের দরজায় বিশেষ পতাকা উড়উন রাখত, যা দেখে খদ্দের জমা হত। ৮৯ জন পুরুষ একত্রে জমায়েত হয়ে একটি নারীর সহিত যৌন-মিলন করত এবং তাতে গর্ভ হলে ঐ মহিলা নিজের পছন্দমত ওদের একজনকে তার সন্তানের পিতা বলে চিহ্নিত করত। কোন কোন ঈর্ষাহীন স্বামী তার স্ত্রীকে অন্যের কাছে বীর্য সংগ্রহ করে গর্ভধারণ করতে পাঠাত।

ইসলাম এসে ব্যভিচার হারাম ঘোষণা করে রমণীর মান বাড়িয়ে তুলল। সংস্কার এল মানুষের চরিত্রে। সভ্যতা বলতে যা কিছু ছিল সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে তা মানুষকে দেখিয়ে ও জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংস্কারের আবার কি সংস্কার চাই? এর পরেও সংস্কার কি অপসংস্কার নয়? একটি মৃত ভূমিকে উৎপাদনশীল করে তাকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করা হলে বলা হয় ভূমি-সংস্কার হয়েছে। এখন যদি কোন বুদ্ধিজীবী বলেন, 'এ ভূমিরও সংস্কার। চাই; অর্থাৎ, ফুল-ফলের গাছ নষ্ট করে কাটা ও আগাছা লাগাও, তাহলেই নতুনত্ব আসবে এবং গতানুগতিক সৌন্দর্য থেকে নিষ্কৃতি লাভ করা যাবে। তাহলে এমন বুদ্ধিজীবী যে কুবুদ্ধিজীবী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আজ যারা নারীকে মাঠে-ঘাটে, পথে-পার্কে, বাজারে-অফিসে বেপর্দায় এবং নৃত্য-গীত ও শিল্প-কলায় অবৈধ ও অশ্লীলভাবে ব্যবহার করাকে সংস্কার ও সংস্কৃতি মনে করে, সেই মাথা-মোটাদেরকে আর কি বলা যায়?

আর সংস্কার নয়ই বা কেন? নারীই তো এখন সবকিছু। নারীর হাতে রয়েছে সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। নারীর হাতে রয়েছে পুরুষের শান্তি ও স্বস্তি। সকল জ্বালার মলম। ব্যবসায় উন্নতি চাইলে একজন সুন্দরী যুবতীকে ম্যানেজার করে দাও, ব্যবসা দারুণ চলবে। চা, পান, মিষ্টি অথবা যে কোন দোকানে রূপসী যুবতীকে বসিয়ে দাও, খদ্দের বেশী আসবে তোমার ঐ দোকানেই। সেলুন খুলে যুবতীকে বসিয়ে দাও, আর কোন যুবক তোমার সেলুন ছাড়া অন্য সেলুনে যাবে না চুল-দাড়ি কাটতে। হোটেল খুলে সুন্দরী আধুনিকাদেরকে পরিচারিকা রেখে নাও, সমস্ত হোটেল বন্ধ হয়ে গেলেও তোমার হোটেল খুব ভালোভাবে। চলবে। যে কোন ব্যবসায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুন্দরী পাঠাও, সফলতা সুনিশ্চিত। যে অফিসে বারবার গিয়েও তোমার কার্য সিদ্ধ হয় না, সে অফিসে তুমি নিজে না গিয়ে তোমার আধুনিকা মিসেস’কে পাঠাও, তড়িঘড়ি কাজ হয়ে যাবে। কোন কিছুর বিজ্ঞাপন দেবে? সুন্দরীর মুখশ্রী ও সুঠাম রম্য আবেদনময়ী দেহ ব্যবহার কর, ক্রেতাদল তোমার মালকেই বেশী পছন্দ করবে। দর্জি যুবতী হলে আবার কি চাই?

সমস্ত যুবকদল ভেঙ্গে পড়বে তার কাছে জামাপ্যান্টের মাপ দিতে। পত্রিকায় মডেল যুবতী বা হিরোইনের ছবি বেশি বেশি ছাপো, পত্রিকার গ্রাহক-সংখ্যা বেড়ে যাবে নাটকীয়ভাবে। তাছাড়া পতিতালয়, ফিল্ম, ব্লু ফিল্ম প্রভৃতির ক্ষেত্রে নারীর অবদান অস্বীকার করা যায় কি? সংস্কৃতি (?) নৃত্যশালায় যুবতী নর্তকীদের পিছনে অর্থ কামাও, এমন অর্থকরী ব্যবসা আর অন্য কিছু নেই। মোট কথা, অর্থ উপার্জনের এক আজব যন্ত্র এই নারী। একে গোপনে রাখলে, সতীর হালে ঘরের বউ করে রাখলে কি করে চলে? অনেক মোটা বুঝের মানুষ মনে করে থাকে যে, ইসলাম বা মুসলিমরা নারীকে ‘ভোগ্যপণ্য বা ভোগের বস্তু’ গণ্য করে। আসলে জলাতঙ্ক রোগী তো, তাই নির্মল জলেও কুকুর দেখে। থাকে। কিন্তু জিজ্ঞাস্য যে, যাদের ঘরে-বাইরে নারী, বডিগার্ড নারী, প্রাইভেট-সেক্রেটারী নারী, নাপিত নারী, পরিচারিকা নারী, কফি পরিবেশক নারী, সম্মুখে নারী, পশ্চাতে নারী, ডানে। নারী, বামে নারী, বিয়ের আগেও শয্যাসঙ্গী নারী, অফিসে নারী, ক্লাবে নারী, খেলার মাঠে নারী, পার্কে নারী, যাদের কাছে নারী পুরুষ সমাজের সেফটি ভাল্ব’, যাদের কাছে পত্নী ও উপপত্নী সমান, যাদের জীবনই নারীতে নারীময়, তাদের কাছে নারী ভোগের বস্তু, নাকি যারা নিজের বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে সন্তুষ্ট এবং অন্য কোন গম্য নারীর মুখদর্শনও অবৈধ ভাবে, তাদের কাছে নারী ভোগের সামগ্রী?

যুবক বন্ধু আমার! নারীবাদীদের কুহকে পড়ে ‘মেড়া’ হয়ে যেও না। স্ত্রী-কন্যা ও বোনের ব্যাপারে ঈর্ষাহীন হয়ে পড়ে না। তাদেরকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে তুমি নিজে সীমাহীন পরাধীনতার শিকার হয়ে যেও না। আমাদের সমাজ-বিজ্ঞানী নবী বলেন, “তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ বেহেশু হারাম করে দিয়েছেন; এদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হল মদ্যপায়ী, দ্বিতীয় ব্যক্তি হল পিতামাতার অবাধ্য সন্তান, আর তৃতীয় ব্যক্তি হল ‘মেড়া’ পুরুষ; যে তার পরিবারের নোংরামীতে মৌনসম্মতি জানায়।” (আহমাদ, সহীহুল জামে’ ৩০৪৭ নং)

নারী-স্বাধীনতাবাদীর অবস্থা এই যে, তার নতি স্বীকার করা দরকার ছিল আল্লাহর বিধানের কাছে; কিন্তু তা না করে গোবেচারা নতি স্বীকার করে স্ত্রীর কাছে! তাই স্ত্রীকে অন্যের সাথে অবৈধ সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে আঁটতে পারে না। কোন কোন কাজে বা খিদমতে বাধ্য করতে পারে না। কারণ, সে তো আধুনিক যুগের মানুষ। সে লাগামছাড়া নারী-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তাই স্ত্রীকে চরম ও পরম স্বাধীনতা দিয়ে মনের উদারতা প্রকাশ করে থাকে। কেউ তাকে ‘ভেড়া’ বললেও স্ত্রী ও তার বন্ধুরা তো তাকে উদার মনের মানুষ’ বলে প্রশংসা করে। এ যুগে এটাই তো পৌরুষ। অথচ সে বেচারা যে নিজে পরাধীনতার শিকার হয়ে পড়ে, তা হয়তো নিজেও অনুভব করতে পারে না। অবশেষে সে স্ত্রৈণ ও আঁচল-ধরা’ পুরুষে পরিণত হয়, তা নিজে বুঝতে না পারলেও সমাজের সচেতন মানুষরা অবশ্যই বোঝে।

আর একটি কথা মনে রেখো বন্ধু! লজ্জা হল নারীর ভূষণ এবং সতীত্ব হল তার মূলধন। এ দুই না থাকলে নারীর আর কিছুই থাকে না। তখন অবস্থা হয় বাদুড়-চোষা তালের মত। এতদুভয় নিয়ে নারী বা অন্য কেউ যখন ব্যবসা বা চিত্তবিনোদন শুরু করে, তখন নারী যে কেবল শাড়ী-সর্বস্বই থেকে যায় তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু নারীবাদীদের তাতে কি এসে যায়? তারা তো আসলে ‘কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দের। প্রগতিবাদীর প্রগতির চাকা সদা গতিময়। স্বামী-স্ত্রীর সংসার। সর্বদা ঘরে থেকে একঘেয়েমি জমে ওঠে মনে৷ এরও একটা সংস্কারের দরকার। এই গতানুগতিকতা দূর করতে প্রগতির পথে খোলা-মেলা বের হতে হবে প্রগতির ময়দানে মুক্ত আকাশের নিচে, কোন পার্কে, সবুজ বনানীতে, অথবা সমুদ্র সৈকতে। যেখানে প্রগতিময় প্রেমের সাক্ষী হবে ছায়াঘন বন, ফুটন্ত ফুল ও তার সুবাস, বিশাল সমুদ্রের ফুলে ফুলে ওঠা তরঙ্গমালা, সৈকতের ধুলাহীন বালি এবং সন্ধ্যা আকাশের কোটি কোটি তারকারাজি। জ্যোৎস্না-আলোকিত স্নিগ্ধময় রাত্রে প্রেমিক-প্রেমিকার মনে ক্ষণে ক্ষণে পুলক জেগে উঠবে। রোমা ছাড়া প্রেম জীবনের আর স্বাদ কোথায়? কুকুর-বিড়াল রাস্তা-ঘাটে প্রেম-মিলন ঘটায়, বাঘ-শিয়াল ঘটায় বনেঝোপে, সুতরাং মানুষ কেন তা ঘরের কোণে গোপনে ঘটাবে? আমি যে একজনকে ভালোবাসি, প্রেমের মিলন উপহার দিই, তা যদি অপ্রকাশিত থেকেই গেল এবং প্রকৃতির। কেউ জানতেও পারল না, তাহলে সে ভালোবাসা ও প্রেমের মূল্য কি?

বলা বাহুল্য এই হল প্রগতির গতি। পরন্তু সঙ্গিনী যদি উপপত্নী অথবা গার্ল ফ্রেন্ড’ হয় তাহলে প্রগতির প্রকৃতিই হল উক্ত প্রকার রোমান্স।

আসলে এসবের মূলে রয়েছে লজ্জাহীনতা ও মুসলিমের ঈমানী দুর্বলতা। মহানবী ও বলেন, “অবশ্যই লজ্জাশীলতা ও ঈমান এক অপরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুতরাং দু’টির একটি উঠে গেলে অপরটিও উঠে যায়।” (হাকেম সহীহুল জামে’ ১৬০৩ নং) সুতরাং এ শ্রেণীর মানুষদের ঈমান দুর্বল অথবা একেবারে নেই বলেই লজ্জা-হায়ও নেই। আর এ কথা ঠিক যে, বেহায়া মানুষের মনে ঈমানও লুপ্তপ্রায় হতে থাকে।

পরিবেশ নোংরা করতে বড় হাত রয়েছে ঐ তথাকথিত নারীবাদী বহু লেখক-লেখিকাদের। যারা নারী-পুরুষের সর্ব বিষয়ে সমান অধিকার দাবী করে থাকেন। যারা বলেন,

‘সাম্যের গান গাই

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোন(?) ভেদাভেদ নাই।

ইসলাম যদিও নারীর উপর কোন পীড়ন আনেনি তবুও ঐ শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের পর্দার বিধানকে নারীর জন্য অবরোধ-প্রথা মনে করে দ্বীনের উপর বাকতরবারির আঘাত চালান। এদের ধারণা হল, ইসলামে নারী হল নরের দাসী। মুসলিম পরিবেশে নারীদেরকে হেরেম কারাগারে বন্দিনী করে রাখা হয়। অবশ্য এ হল কোন কোন বাহ্যিক পরিবেশের অবস্থা দর্শনের পর সীমিত ও সংকীর্ণ জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গির ফল। আর উক্ত দাবীর ফলেই কবির এ কথা সত্য হয়ে প্রকাশ পেয়েছে,

পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর,

নারী চাপা ছিল এতদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর।

আজ সর্বক্ষেত্রে নারী ও নারীবাদীরা পুরুষের মত সমান অধিকার দাবী করছে। ভাবতে অবাক লাগে যে, তারা এমন অধিকার দাবী করে বসে, যাতে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি থাকে। আমেরিকার কিছু মহিলা সৈনিক দাবী জানায় যে, বৈষম্য না রেখে পুরুষ সৈনিকদের মত তাদেরকেও মাথা নেড়া করতে অনুমতি দেওয়া হোক! কেউ চায় পুরুষদের মত প্যান্ট পরে দাড়িয়ে পেশাব করতে, পুরুষদের মত খালি গায়ে থাকতে! গরমে পুরুষরা খালি গায়ে মেয়েদের সামনে হাওয়া খাবে, অথচ মেয়েরা পুরুষদের সামনে খালি গায়ে হাওয়া খেতে পারবে না কেন? অনেকে কার্যক্ষেত্রে সমান অধিকার নিতে গিয়ে বন্ধুত্ব ও অবাধ স্বাধীনতায় সমান অধিকার দাবী করে। পুরুষ যে কাজ করবে সে কাজ নারী করবে না কেন?

নারীদেরকে যে কষ্ট ভোগ করতে হয় তা তারা একা ভোগ করবে কেন? পুরুষদেরকেও তাতে ভাগী হতে হবে। আর পরিশেষে হয়তো সম্ভব হলে এ দাবীও উঠবে যে, প্রথম সন্তান যদি স্ত্রী প্রসব করে তাহলে দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করতে হবে স্বামীকে! অথচ সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষ সকলকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে রেখেছেন ইনসাফের সাথে। তিনি নারীর উপর নরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আর এ কথাও স্পষ্ট ঘোষণায় বলে দিয়েছেন যে, “যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তোমরা তার লালসা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে, তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে, তা তার প্রাপ্য অংশ। তোমরা আল্লাহরই নিকট অনুগ্রহ ভিক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা নিসা ৩২ আয়াত)

শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতেই নয় বরং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও নারী ও পুরুষ এক অপরের সমকক্ষ নয়। দৈহিক ও প্রকৃতিগত বহু পার্থক্য রয়েছে নারী-পুরুষের মাঝে। যেমন, পুরুষরা নারীদের চেয়ে শতকরা ১০ ভাগ বেশি লম্বা, ২০ ভাগ বেশি ভারী এবং ৩০ ভাগ বেশী শক্তিশালী। পুরুষ এবং মহিলা একই খাদ্য খেলে নারীদের পক্ষে তা হজম করতে বেশি সময় লাগে। নারীদের ব্যথার অনুভূতি অনেক তীব্র। মানসিক দিক দিয়ে নারীদের পক্ষে বিষাদগ্রস্ত। হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মস্তিষ্কের উপর হরমনের প্রতিক্রিয়াও মহিলা এবং পুরুষ। ভেদে যথেষ্ট আলাদা। মানুষের মন-মেজাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী সেরেটনী’ নামক রাসায়নিক পদার্থ নারীদের দেহে কম তৈরী হয়। যার ফলে নারীদের মানসিক প্রতিক্রিয়া পুরুষদের তুলনায় তীব্র। সে জন্যই বাইরের ঘটনার প্রতি নারীদের প্রতিক্রিয়া অনেক প্রবল। হার্ট এ্যাটাকের ফলে পুরুষদের মারা যায় শতকরা ২৪ জন এবং মহিলাদের মৃত্যুর সংখা হল ৪২। বেশি বয়সের নারীদের হাড় দুর্বল হয়। তাদের হাড়ের ওজনও পুরুষদের তুলনায় অনেক কম। এমনকি তাদের মাংসপেশী কম জোড়ালো এবং তার ওজনও কম।

মোটকথা, আন্দোলনের ফলে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নারীবাদীদের নিকট অংশতঃ স্বীকৃত হলেও প্রাকৃতিক দিক দিয়ে পুরুষ পুরুষ এবং নারী নারীই। তারা সমান হতে পারছে । হয়তো কোন কালে পারবেও না। (বিবিসির প্রতিবেদন) সুতরাং যুবক বন্ধু পানি ঘোলা করে মাছ শিকার করে যারা খেতে চায়, তাদের কুহকে পড়ে তুমিও অনুরূপ শিকারীতে পরিণত হয়ো না। এটাই আমার উপদেশ।

আমরা যে পরিবেশে বসবাস করি তার অবস্থা একেবারে উল্টা বুঝিল রাম। যেখানে কথা ছিল, দাড়িহীন মুখ দেখে লোকে ঠাট্টা করে বলত, 'আরেপুরুষ অথচ মুখে দাড়ি নেই! অথবা মুসলিম অথচ মুখে দাড়ি নেই!’ সেখানে লোকে বলে, 'এ্যা! মুখভর্তি দাড়ি! যেখানে দরকার ছিল অর্ধনগ্নতা দেখে অবাক হওয়া, সেখানে তা না হয়ে অবাক হয় পর্দা-পুশিদা দেখে! যেখানে কথা ছিল, নারী (মাথা সহ) গলা-ঢাকা ও পায়ের গাঁট-ঢাকা লেবাস পরিধান করবে, সেখানে এ শ্রেণীর লেবাস ব্যবহার করে পুরুষরা। আর নারীরা করে তার বিপরীত। অর্থাৎ, পুরুষের গলা টাই দ্বারা টাইট করে বাধা হয় এবং প্যান্ট ইত্যাদি মাটিতে ঝুলিয়ে পরা হয়। আর মহিলাদের মাথা ও গলার কাপড় নেমে যায় স্তনের উপর এবং গাটের নিচের কাপড় উঠে আসে হাঁটুর উপর! পুরুষদের চুল ছোট এবং মেয়েদের চুল বড় করার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে অধিকাংশ তার উল্টাটাই হয়ে থাকে। আর সম্ভবতঃ এ ধরণের উল্টাপাল্টা করার নামই হল বর্তমানের সংস্কৃতি ও প্রগতি। সুতরাং সমাজে ইসলামী সংস্কার আনার জন্য যে তোমার বিশেষ ভূমিকা থাকা উচিত, তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতি এই যে, সমাজে যে শ্রেণীর মানুষ বেশী হবে তাদেরই হবে জয়জয়কার এবং তাদের চরিত্রই পরিণত হবে নৈতিকতা ও সভ্যতায়। লম্পটের সংখ্যা অধিক হলে পুরো সমাজের প্রতিনিধি হয়ে বসবে লম্পট! বেশ্যার সংখ্যা অধিক হলে তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার দাবী উত্থাপিত হলে তাদেরকেও দেওয়া হবে প্রতিনিধিত্ব! কেউ তা দিতে না চাইলে সমাজের কত চিন্তাবিদ ও কবিরা তাদের সুরে সুর মিলিয়ে গাইবেন,

কেহ নহে হেথা পাপ-পঙ্কিল কেহ সে ঘৃণ্য নহে,

ফুটিছে অযুত বিমল কমল কামনা-কালিয় দহে।

শোন মানুষের বাণী,

জন্মের পর মানব জাতির থাকে না ক’ কোন গ্লানি।

---- শুনো ধর্মের চাই

জারজ-কামজ সন্তানে দেখি কোনো সে প্রভেদ নাই!

যদিও ধর্মে উভয় সন্তানের মাঝে মানবিকতায় কোন পার্থক্য নেই তবুও উভয়ের পিতামাতার মাঝে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে তা বলাই বাহুল্য। যেমন নিজ হাতে কামাই করা টাকাও টাকা এবং চুরি করা টাকাও টাকা। কিন্তু পরিশ্রমী ও চোরের মাঝে যে বিরাট পার্থক্য আছে, তা তো সকলকেই মানতে হবে। পরন্তু সংখ্যাধিক্যের কারণে লম্পট ও বেশ্যাদের দাবী রক্ষার্থে দেশে বিশেষ আইন তৈরী হবে! বরং তাদের ঐ লাম্পট্য ও বেশ্যাবৃত্তি সুবিধা ও সহজ করার জন্য দেশের সরকার সাহায্য-সহযোগিতা করবে। তাদেরকে সমাজের বন্ধু মনে করে দেশ উন্নয়নের (যৌন) কর্মী মনে করা হবে। মানবাধিকার রক্ষার নামে সংগঠন ও সংস্থা কায়েম হবে! এটাই হল বাস্তব, যাদের সংখ্যা ও ভোট বেশী, জয় তাদের। আইন প্রণয়নের ক্ষমতাও তাদেরই হাতে।

আর এও এক বাস্তব যে, পৃথিবীতে চিরদিনই সৎ ও ভালো লোকের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। জগতের অধিকাংশ লোকই অসৎ। অধিকাংশ লোকেই যৌনবাদ ও জরায়ু-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কারণ, এতেই আছে জীবনের পরম তৃপ্তি, মানুষের প্রকৃতিগত চরম সুখ। সুতরাং তারাই যে পৃথিবীর নেতৃত্ব হাতে পাবে, তা তো গণতন্ত্র-শাস্ত্র আমাদেরকে ভবিষ্যৎবাণী করে। আজ যারা অর্ধনগ্ন হয়ে কোমর দুলিয়ে দুনিয়াকে অশ্লীল নাচ দেখাচ্ছিল, তারাই কাল দুনিয়ার নেতৃত্ব হাতে পাবে। কারণ, দুনিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের নাচে খুশী হয়েছে, তাই তাদেরকে পছন্দ ও নির্বাচিত করবে। কাল যাদের দেহরূপ ও অঙ্গভঙ্গি দেখে চক্ষুশীতল করেছে, আজ দুনিয়া তাদের নিকট মাথা নত করে তাদের আনুগত্য করবে!

যুবক বন্ধু! মহানবী সঃ এর এক অহীলব্ধ ভবিষ্যৎ-বাণী শোন, তিনি বলেন, “মানুষের। নিকট এমন ধোকাব্যঞ্জক যুগ আসছে, যাতে মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদীরূপে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদীরূপে পরিগণিত করা হবে। যখন খেয়ানতকারীকে আমানতদার মনে করা হবে এবং আমানতদার আমানতে খেয়ানত করবে। যখন জনসাধারণের ব্যাপারে তুচ্ছ লোক মুখ চালাবে।” (আহমাদ, ইবনে মাজাহ হাকেম, সহীহুল জামে ৩৬৫০ নং) তিনি বলেন, “কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত কায়েম হবে না, যতদিন না পার্থিব ব্যাপারে সবচেয়ে সুখী ও সৌভাগ্যের অধিকারী হবে অধমের পুত্র অধম।” (আহমাদ, তিরমিযী, সহীহুল জামে' ৭৪৩ ১ নং)

বলা বাহুল্য, সে যুগ যে এসে গেছে তাতে কোন মুমিনের সন্দেহ থাকতে পারে না। গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও লাগামছাড়া পাশ্চাত্য সভ্যতা-ঘেরা দেশ ও পরিবেশ। যেখানকার এমন কোন আইন নেই, যা মানুষের প্রবৃত্তিপূজায় বাধা দেয়। বরং অনেক আইনেই উদ্বুদ্ধ করা হয় প্রবৃত্তিপূজায়, ভোগবাদিতায় এবং ধর্মহীন অবাধ স্বেচ্ছাচারিতায়। তাদের সকলের মুখেই যেন একই বাণী,

দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও-দাও ফুর্তি কর,

আগামী কাল বাঁচবে কি না বলতে পার?