নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

(ক) সাধারণ ইহূদীদের চক্রান্ত : মুসলমানেরা সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে رَاعِنَا বলত, যার অর্থ أَرْعِنَا ‘আপনি আমাদের দেখাশুনা করুন’। কিন্তু ইহূদীরা তাদের হিব্রু ভাষায় এটিকে গালি হিসাবে বলত। তারা الرُّعُونَةُ (বেওকূফী) কিংবা شَرِيْرُنَا ‘আমাদের মন্দ লোকটি’ অর্থ নিত ও মুখ ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্য ভরে উচ্চারণ করত। এমতাবস্থায় তাদেরকে রা‘এনা বলতে নিষেধ করা হয় এবং তার পরিবর্তে ‘উনযুরনা’ (انْظُرْنَا) বলার নির্দেশ দেওয়া হয়’।[1] এতদ্ব্যতীত মুসলমানদেরকে সালাম দেওয়ার সময় তারা আসসা-মু আলাইকুম(السَّامُ عَلَيْكُمْ) বলত। অর্থাৎ ‘তোমাদের মৃত্যু হৌক’।[2]

(খ) ইহূদী নেতাদের চক্রান্ত : মদীনার তিনটি ইহূদী গোত্র বনু ক্বায়নুক্বা, বনু নাযীর ও বনু কুরায়যার নেতারা সর্বদা মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত থাকত। অতঃপর বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর বিজয়ে তারা চরমভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানাবিধ কষ্টদায়ক ও বিদ্রূপাত্মক আচরণ শুরু করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, সম্পদশালী ও মুসলমানদের প্রতি সর্বাধিক বিদ্বেষপরায়ণ ছিল বনু ক্বায়নুক্বা।[3] ২য় হিজরীর ১৫ই শাওয়াল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের দুর্গ অবরোধ করেন ও দু’সপ্তাহ অবরোধের পর তারা আত্মসমর্পণ করে। অতঃপর তাদেরকে সর্বপ্রথম মদীনা থেকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর একই কারণে ৪র্থ হিজরীতে বনু নাযীরকে এবং ৫ম হিজরীতে বনু কুরায়যাকে বিতাড়নের মাধ্যমে মদীনাকে ইহূদীমুক্ত করা হয়।

বনু নাযীর খায়বরে নির্বাসিত হয়ে সেখান থেকে কুরায়েশদের সাথে ষড়যন্ত্র করে মদীনাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। যার ফলে সম্মিলিত শত্রু বাহিনীর হামলার মাধ্যমে ৫ম হিজরীতে ‘খন্দক যুদ্ধ’ সংঘটিত হয়। খন্দকের যুদ্ধে মদীনার সর্বশেষ ইহূদী গোত্র বনু কুরায়যা সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে শত্রুবাহিনীকে সাহায্য করে। ফলে উক্ত যুদ্ধ শেষে তাদেরকে মদীনা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে পুনরায় বিতাড়নের জন্য ৭ম হিজরীতে খায়বর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। একইভাবে তাদের চক্রান্তে মদীনায় রোমক হামলার আশংকা দেখা দেয়। ফলে ৮ম হিজরীতে মুতার যু্দ্ধ ও ৯ম হিজরীতে সর্বশেষ তাবূক অভিযান সংঘটিত হয়। এমনকি ১১ হিজরীতে মৃত্যুর দু’দিন আগেও রোমক হামলা প্রতিরোধের জন্য রাসূল (ছাঃ) ওসামা বিন যায়েদকে প্রেরণ করেন।

এভাবে দেখা যায়, মদীনায় হিজরতের শুরু থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু পর্যন্ত অধিকাংশ যুদ্ধের পিছনে ইহূদী চক্রান্ত সক্রিয় ছিল। মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি তাদের চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে।

[1]. মুজাম্মা‘ লুগাতুল ‘আরাবিইয়াহ (মিসর : ১৪০৯/১৯৮৮) ১/৫০৬; আরবী ভাষায় رَاعِنَا অর্থ ‘আমাদের তত্ত্বাবধায়ক’। মাদ্দাহ الرعاية والحفظ এই লকবে ডেকে তারা বাহ্যতঃ মুসলমানদের খুশী করত। কিন্তু এর দ্বারা তারা নিজেদের ভাষা অনুযায়ী গালি (الرُّعُونَةُ) অর্থ নিত। সেকারণ আল্লাহ এটাকে নিষিদ্ধ করে انظُرْنَا (‘আমাদের দেখাশুনা করুন’) লকবে ডাকার নির্দেশ দিলেন (কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ১০৪ আয়াত)।

[2]. বুখারী হা/৬০৩০; মুসলিম হা/২১৬৫ (১০)।

[3]. বনু ক্বায়নুক্বার চক্রান্ত বিষয়ে দ্রষ্টব্য ‘গাযওয়া বনু ক্বায়নুক্বা’ পৃঃ ৩২৫ টীকা সমূহ।