নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
১ম দিনের অন্যান্য খবর (أمور أخرى فى اليوم الأول)

(ক) কালো খেযাব নিষিদ্ধ (نهى الخضاب الأسود) :

এদিন আবুবকর (রাঃ) স্বীয় পিতা আবু কুহাফাকে ইসলাম কবুলের জন্য নিয়ে এলে তাঁর মাথার চুল ও দাড়ি কাশফুলের মত সাদা দেখে রাসূল (ছাঃ) বলেন,غَيِّرُوا هَذَا بِشَىْءٍ وَاجْتَنِبُوا السَّوَادَ ‘তোমরা এঁর চুলগুলি কালো ব্যতীত অন্য কোন রং দিয়ে পরিবর্তন করে দাও’।[1] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,يَكُونُ قَوْمٌ يَخْضِبُونَ فِى آخِرِ الزَّمَانِ بِالسَّوَادِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ لاَ يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ ‘শেষ যামানায় একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা কালো রং-এর খেযাব লাগাবে কবুতরের বুকের ঠোসার কালো পাখনা সমূহের ন্যায়। এরা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’।[2]

(খ) কা‘বাগৃহের চাবি হস্তান্তর (رد مفتاح بيت الله) :

জাহেলী যুগ থেকেই বনু হাশেমের উপর এবং সে হিসাবে ইসলামী যুগের প্রাক্কালে হযরত আববাস-এর উপরে হাজীদের পানি পান করানোর এবং ওছমান বিন ত্বালহার উপর কা‘বার চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল। ওছমান বিন ত্বালহা ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন’। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (ছাঃ) তার নিকটেই পুনরায় চাবি হস্তান্তর করেন (ইবনু হিশাম ২/৪১২)।[3] যা আজও অব্যাহত আছে। যাদের ১০৮তম বংশধর শায়খ আব্দুল কাদের আশ-শায়বী ৭৫ বছর বয়সে গত ২৩শে অক্টোবর’২০১৪-তে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পরে এখন দায়িত্বে আছেন শায়বী পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি ড. ছালেহ বিন ত্বোয়াহা আশ-শায়বী।[4]

(গ) ৮ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় (اداء الصلاة النافلت ثماني ركعات) :

মক্কা বিজয় সম্পন্ন হওয়ার পর দুপুরের কিছু পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘হাজূনে’ তাঁর অবস্থান স্থলে গমন করেন ও গোসল সারেন। এ সময় ফাতেমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করেন। গোসলের সময় আলী (রাঃ)-এর বোন উম্মে হানী (যিনি ঐ দিন ইসলাম কবুল করেন), সেখানে যান ও অনুমতি প্রার্থনা করেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এক কাপড়ে ৮ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, এটি ছিল ‘ছালাতুয যুহা’।[5] অতঃপর তিনি উম্মে হানীর সাথে কথা বলেন। ঐ সময় উম্মে হানীর গৃহে তার দু’জন দেবর হারেছ বিন হিশাম ও আব্দুল্লাহ বিন আবু রাবী‘আহ আশ্রিত ছিল। আলী (রাঃ) তাদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন। উম্মে হানী তাদের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আশ্রয় চাইলে তিনি তাদের আশ্রয় দেন।[6] ইবনু কাছীর বলেন, এটি ছিল বিজয়োত্তর শুকরিয়ার ছালাত, যা তিনি দুই দুই রাক‘আত করে পড়েছিলেন। পরে এটাই রীতি হয়ে যায়। যেমন সা‘দ ইবনু আবী ওয়াকক্বাছ মাদায়েন বিজয়ের দিন এটা পড়েন।[7]

(ঘ) কা‘বার ছাদে আযানের ধ্বনি (التأذين على سقف الكعبة) :

যোহরের ওয়াক্ত সমাগত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেলালকে নির্দেশ দিলেন কা‘বার ছাদে দাঁড়িয়ে আযান দিতে। শুরু হ’ল বেলালের মনোহারিণী কণ্ঠের গুরুগম্ভীর আযান ধ্বনি। শিরকী জাহেলিয়াত খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো তাওহীদ ও রিসালাতের গগনভেদী আওয়াযে। মক্কার পাহাড়ে ও উপত্যকায় সে আওয়ায ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে চলে গেল দূরে বহু দূরে। ছবি ও মূর্তিহীন কা‘বা পুনরায় ইবরাহীমী যুগের আসল চেহারা ফিরে পেল। বেলালী কণ্ঠের এ আযান ধ্বনি যেন তাই খোদ কা‘বারই কণ্ঠস্বর। মুমিনের হৃদয়ে তা এনে দিল এক অনাবিল আনন্দের অব্যক্ত মূর্চ্ছনা, এক অনুপম আবেগেয় বাঙ্ময় অনুভূতি। আড়াই হাযার বছর পূর্বে নির্মিত ইবরাহীম ও ইসমাঈলের স্মৃতিধন্য কা‘বার পাদদেশে মাক্বামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে ছালাতের ইমামতি করবেন ইসমাঈল-সন্তান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। মক্কার অলিতে-গলিতে শুরু হ’ল এক অনির্বচনীয় আনন্দের ফল্গুধারা। দলে দলে মুমিন নর-নারী ছুটলো কা‘বার পানে। সে দৃশ্য কেবল মনের চোখেই দেখা যায়। লিখে প্রকাশ করা যায় না। কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়, মুখে বলা যায় না। কিন্তু শয়তান কখনই তার স্বভাব ছাড়ে না।[8]

(ঙ) যাদের রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করা হয় (رجال من أهدر دمائهم) :

মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বড় বড় পাপীদের মধ্যে ৯ জনের রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করেন এবং কঠোর নির্দেশ জারী করেন যে, এরা যদি কা‘বার গেলাফের নীচেও আশ্রয় নেয়, তথাপি তাদের হত্যা করা হবে। এই নয় জন ছিল- (১) আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবু সারাহ। ইনি ওছমান গণী (রাঃ)-এর দুধ ভাই ছিলেন। পরে মুসলমান হন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর ‘অহি’ লেখক হন। পরে ‘মুরতাদ’ হয়ে কুরায়েশদের কাছে ফিরে যায়। (২) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বাল। এ ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) তাকে যাকাত সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি তার মুসলিম গোলামকে হত্যা করেন। অতঃপর ‘মুরতাদ’ হয়ে মুশরিকদের সাথে মিশে যায়। সে কা‘বাগৃহের গেলাফ ধরে ঝুলছিল (যাদুল মা‘আদ ৩/৩৯০)। জনৈক ছাহাবী এখবর দিলে রাসূল (ছাঃ) তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। (৩-৪) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বালের দুই দাসী। যারা রাসূল (ছাঃ)-কে ব্যঙ্গ করে গান গাইত (৫) হুওয়াইরিছ বিন নুক্বাইয বিন ওয়াহাব (حُوَيرث بن نُقَيذ)। সে মক্কায় রাসূল (ছাঃ)-কে কঠিনভাবে কষ্ট দিত। এ ব্যক্তি মক্কা থেকে মদীনায় প্রেরণের সময় রাসূল-কন্যা হযরত ফাতেমা ও উম্মে কুলছূমকে তীর মেরে উটের পিঠ থেকে ফেলে দিয়েছিল’। (৬) মিক্বইয়াস বিন হুবাবাহ (مِقْيَس بن حُبابة)। এ ব্যক্তি ইতিপূর্বে মুসলমান হয়ে জনৈক আনছার ছাহাবীকে হত্যা করে ‘মুরতাদ’ হয়ে মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। (৭) সারাহ- যে আব্দুল মুত্ত্বালিবের সন্তানদের কারু দাসী ছিল। ধারণা করা হয় যে, এই দাসীই মদীনা থেকে গোপনে হাতেব বিন আবু বালতা‘আহর পত্র বহন করেছিল (ইবনু হিশাম ২/৩৯৮)। (৮) ইকরিমা বিন আবু জাহল (ইবনু হিশাম ২/৪০৯-১০)। (৯) হাববার ইবনুল আসওয়াদ (هَبَّار بن الأَسوَد)। এ ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর গর্ভবতী কন্যা যয়নবকে হিজরতের সময় তার হাওদায় বর্শা নিক্ষেপ করেছিল। যাতে আহত হয়ে তিনি উটের পিঠ থেকে নীচে পাথরের উপরে পতিত হন এবং তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায় (ইবনু হিশাম ১/৬৫৪)

উপরের ৯ জনের মধ্যে যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়, তারা হ’ল- (১) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বাল। তাকে হত্যা করেন সাঈদ বিন হুরায়েছ আল-মাখযূমী এবং আবু বারযাহ আসলামী। (২) মিক্বইয়াস বিন হুবাবাহ। তার কওমের নুমায়লা বিন আব্দুল্লাহ তাকে হত্যা করেন। (৩) ইবনু খাত্বালের দুই দাসীর মধ্যে একজন। (৪) হুওয়াইরিছ বিন নুক্বাইয বিন ওয়াহাব। আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করেন।

অতঃপর বাকী ৫ জন যাদের ক্ষমা করা হয় তারা হ’লেন : (১) আব্দুল্লাহ বিন আবু সারাহ। মক্কা বিজয়ের দিন হযরত ওছমান (রাঃ) তাকে সাথে নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ফলে তাকে ক্ষমা করা হয়। পরে আমৃত্যু তার ইসলাম খুবই ভাল ছিল। (২) ইকরিমা বিন আবু জাহল। তার স্ত্রী এসে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে ইয়ামনের পথে পলায়নরত অবস্থায় তার স্ত্রী গিয়ে তাকে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তার ইসলাম খুবই ভাল ছিল। (৩) হাববার ইবনুল আসওয়াদ। মক্কা বিজয়ের দিন এই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। পরে মুসলমান হন এবং তার ইসলাম সুন্দর ছিল। (৪) ইবনু খাত্বালের দুই গায়িকা দাসীর মধ্যে একজনের জন্য আশ্রয় চাওয়া হয়। অতঃপর সে ইসলাম কবুল করে। (৫) সারাহর জন্যও আশ্রয় প্রার্থনা করা হয় এবং সেও ইসলাম কবুল করে।[9]

উল্লেখ্য যে, ইবনু হাজার বিভিন্ন সূত্রে ৮ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী সহ মোট ১৪ জনের কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর বর্ণিত তালিকা মতে পুরুষের সংখ্যা হয় ৯ জন এবং নারীর সংখ্যা ৪ জন সহ মোট ১৩ জন। যাদের মধ্যে ইতিপূর্বে বর্ণিত ৬ জন পুরুষ ছাড়াও বাকী ৩ জন হ’লেন, (ক) হারেছ বিন ত্বালাত্বেল আল-খুযাঈ (حارثُ بنُ طَلاطِلَ الْخُزاعِيُّ)। যাকে আলী (রাঃ) হত্যা করেন। (খ) হামযাহ (রাঃ)-এর হত্যাকারী ওয়াহ্শী বিন হারব, যিনি পরে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন। (গ) রাসূল (ছাঃ)-কে ব্যঙ্গকারী বিখ্যাত কবি কা‘ব বিন যুহায়ের, যিনি পরে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর ১ জন নারী হ’লেন, (ঘ) আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে ওৎবা। যিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।[10]

উপরের হিসাব মতে নিহতদের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ জন। (১) আব্দুল্লাহ বিন খাত্বাল (২) মিক্বইয়াস বিন হুবাবাহ (৩) হুওয়াইরিছ বিন নুক্বাইয বিন ওয়াহাব (৪) হারেছ বিন ত্বালাত্বেল আল-খুযাঈ এবং একজন নারী- (৫) ইবনু খাত্বালের দুই গায়িকা দাসীর মধ্যে একজন।

ক্ষমাপ্রাপ্তদের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ৫ জন। (১) আব্দুল্লাহ বিন আবু সারাহ (২) ইকরিমা বিন আবু জাহল (৩) হাববার ইবনুল আসওয়াদ (৪) ওয়াহশী বিন হারব ও (৫) কা‘ব বিন যুহায়ের এবং নারী ৩ জন।- (৬) ইবনু খাত্বালের দুই গায়িকা দাসীর মধ্যে একজন (৭) দাসী সারাহ (৮) আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে ওৎবা।

উল্লেখ্য যে, রক্ত প্রবাহিত করা স্রেফ মক্কা বিজয়ের দিন কয়েক ঘণ্টার (سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ) জন্য হালাল করা হয়েছিল। পরবর্তীতে চিরকালের জন্য হারাম করা হয় (বুখারী হা/২৪৩৪)

এদিকে মক্কার অন্যতম নেতা ছাফওয়ান বিন উমাইয়ার রক্ত বৃথা সাব্যস্ত করা না হ’লেও তিনি পালিয়ে যান। ওমায়ের বিন ওয়াহাব আল-জুমাহী তার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তা মনযূর করেন এবং তাকে আশ্রয় দানের প্রতীক স্বরূপ নিজের পাগড়ী প্রদান করেন। যে পাগড়ী পরে তিনি বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন। অতঃপর ওমায়ের যখন ছাফওয়ানের নিকটে পৌঁছেন, তখন তিনি জেদ্দা হ’তে ইয়ামন যাওয়ার জন্য জাহাযে ওঠার প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলেন। ওমায়ের তাকে ফিরিয়ে আনেন। তিনি এসে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট দু’মাস সময়ের আবেদন করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে চার মাস সময় দেন। অতঃপর ছাফওয়ান ইসলাম কবুল করেন। তার স্ত্রী পূর্বেই ইসলাম কবুল করেছিলেন। ফলে তাদের মধ্যে বিবাহ বহাল রাখা হয়।[11] ছাফওয়ান মুশরিক অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে হোনায়েন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

[1]. মুসলিম হা/২১০২ (৭৯); মিশকাত হা/৪৪২৪।

[2]. আবুদাঊদ হা/৪২১২; নাসাঈ হা/৫০৭৫; মিশকাত হা/৪৪৫২ ‘পোষাক’ অধ্যায়, ‘চিরুনী করা’ অনুচ্ছেদ।

[3]. আর-রাহীক্ব ৩৪৭-৪৮, ৪০৫ পৃঃ। এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, ভাষণ শেষে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মাসজিদুল হারামে বসে পড়লেন। এমন সময় চাবি হাতে নিয়ে হযরত আলী (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আমাদেরকে হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্বের সাথে সাথে কা‘বাগৃহের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্বটাও অর্পণ করুন’। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এই দাবীটি চাচা আববাস (রাঃ) করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘ওছমান বিন ত্বালহা কোথায়? অতঃপর তিনি এলে তাকে বললেন, هَاكَ مِفْتَاحَكَ يَا عُثْمَانُ الْيَوْمَ يَوْمُ بِرّ وَوَفَاءٍ ‘হে ওছমান! এই নাও তোমার চাবি। আজ হ’ল সদাচরণ ও ওয়াদা পূরণের দিন’ (ইবনু হিশাম ২/৪১২; আর-রাহীক্ব ৪০৫ পৃঃ)। এর সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (আলবানী, যঈফাহ হা/১১৬৩)। উল্লেখ্য যে, ওছমান-এর পিতা ত্বালহা ও চাচা ওছমান বিন আবু ত্বালহা আল-‘আবদারী আল-হাজাবী ওহোদের যুদ্ধে নিহত হন (আল-ইছাবাহ, ওছমান বিন ত্বালহা ক্রমিক ৫৪৪৪)।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) একথাও বলেন, خُذُوهَا خَالِدَةً تَالِدَةً لاَ يَنْزِعُهَا مِنْكُمْ إلاَّ ظَالِمٌ ‘তোমরা এটা গ্রহণ কর চিরদিনের জন্য। তোমাদের কাছ থেকে কেউ এটা ছিনিয়ে নেবে না যালেম ব্যতীত। হে ওছমান! আল্লাহ তাঁর গৃহের জন্য তোমাদেরকে আমানতদার করেছেন। ‘অতএব এই গৃহ থেকে ন্যায়সঙ্গত ভাবে যা তোমাদের কাছে আসবে, তা তোমরা ভক্ষণ করবে’ (ফাৎহুল বারী হা/৪২৮৯-এর আলোচনা; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬০; আর-রাহীক্ব ৪০৫ পৃঃ)। বর্ণনাটি বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত নয়’ (মা শা-‘আ ১৯২ পৃঃ)। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। যা আজও অব্যাহত আছে।

[4]. মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী, ডিসেম্বর’১৪, ১৮তম বর্ষ ৩য় সংখ্যা ৪৬ পৃঃ।

[5]. বুখারী হা/৩৫৭; মুসলিম হা/৩৩৬ (৮২)।

প্রসিদ্ধ আছে যে, এদিন রাসূল (ছাঃ) উম্মে হানীর গৃহে প্রবেশ করেন ও সেখানে গোসল করে ৮ রাক‘আত ছালাত আদায় করেন (আর-রাহীক্ব ৪০৬ পৃঃ)। কথা সঠিক নয়। বরং সঠিক সেটাই যা উপরে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।

[6]. হাকেম হা/৫২১০; আহমাদ হা/২৬৯৩৬, সনদ ছহীহ।

[7]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নছর, ৮/৪৮২।

[8]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ান বিন হারব এবং তার সাথী মুশরিক নেতা আত্তাব বিন আসীদ ও হারেছ বিন হেশাম- যারা তখন কা‘বার চত্বরে বসেছিলেন, এ আযান তাদের হৃদয়ে কোন রেখাপাত করেনি। জাহেলী যুগের কৌলিন্যের অহংকার তখনও তাদেরকে তাড়া করে ফিরছিল। তাদের অন্যতম নেতা উমাইয়া বিন খালাফের সাবেক ক্রীতদাস ও তার হাতে সে সময় মর্মান্তিকভাবে নির্যাতিত নিগ্রো যুবক বেলাল আজ মহাপবিত্র কা‘বার ছাদে উঠে দাঁড়িয়েছে, এটা তাদের কাছে ছিল নিতান্ত অসহনীয় বিষয়। কথায় কথায় আল্লাহর নাম নিলেও লাত ও ‘উয্যার এই সেবকদের নিকটে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর আযান ধ্বনি অত্যন্ত অপছন্দনীয় ঠেকলো। তাই আত্তাব বলে উঠলেন, (পিতা) আসীদকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন যে, তিনি এটা শুনেননি, যা তাঁকে ক্রুদ্ধ করত’। হারেছ বললেন, আল্লাহর কসম! যদি আমি জানতে পারি যে, ইনি সত্য, তাহ’লে অবশ্যই আমি তাঁর অনুসারী হয়ে যাব’। আবু সুফিয়ান বললেন, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই বলব না। কেননা যদি আমি কিছু বলি তাহ’লে এই কংকরগুলিও আমার সম্পর্কে খবর পৌঁছে দিবে’। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখানে উপস্থিত হ’লেন এবং বললেন, এইমাত্র তোমরা যেসব কথা বলছিলে, তা আমাকে জানানো হয়েছে। অতঃপর তিনি সব বলে দিলেন। তখন হারেছ ও আত্তাব বলে উঠলেন,نَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল’! আল্লাহর কসম! আমাদের নিকটে এমন কেউ ছিল না যে, সে গিয়ে আপনাকে বলে দিবে’ (ইবনু হিশাম ২/৪১৩)। বর্ণনাটির সনদ যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬৮৫)।

[9]. যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬২; ইবনু হিশাম ২/৪১০; নাসাঈ হা/৪০৬৭, সনদ ছহীহ; মুওয়াত্ত্বা হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩১৮০; সনদ ‘মুরসাল’। উল্লেখ্য যে, অন্য বর্ণনায় আব্দুল ‘উযযা বিন খাত্বাল (عبد الْعُزَّى بنُ خَطَلٍ), মাক্বীস বিন ছুবাবাহ (مَقِيسُ بن صُبَابَةَ) এবং হারেছ বিন নুফায়েল বিন ওয়াহাব (حارثُ بنُ نُفَيْل بنِ وَهْب) বলা হয়েছে (যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬২)।

প্রসিদ্ধ আছে যে, এইদিন ইকরিমা বিন আবু জাহল রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ইসলাম কবুল করার জন্য এলে তিনি তাকে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানিয়ে বলেন, مَرْحَبًا بِالرَّاكِبِ الْمُهَاجِرِ‘মুহাজির আরোহীর প্রতি অভিনন্দন’ (তিরমিযী হা/২৭৩৫; মিশকাত হা/৪৬৮৪; হাদীছটি যঈফ)। এখানে মুহাজির অর্থ কুফরী থেকে ইসলামের দিকে হিজরতকারী (মিরক্বাত)।

[10]. ফাৎহুল বারী হা/৪২৮০-এর আলোচনা; আর-রাহীক্ব ৪০৬-০৭ পৃঃ।

[11]. ইবনু হিশাম ২/৪১৮; মুওয়াত্ত্বা হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩১৮০। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ। তার নিকট থেকে হোনায়েন যুদ্ধের সময় বর্মসমূহ ধার নেওয়া বিষয়ে বর্ণিত হাদীছগুলির বিশুদ্ধতার ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। বায়হাক্বী বলেন, বিষয়টির বর্ণনা ‘মুরসাল’। কিন্তু তার বহু ‘শাওয়াহেদ’ বা সমার্থক বর্ণনা রয়েছে’। বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে আলবানী বর্ণনাটিকে ‘হাসান’ বলেছেন’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৩১-এর আলোচনা; ইরওয়া হা/১৫১৩, ৫/৩৪৪-৪৬; মা শা-‘আ ১৯৬-৯৮)।