নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
অভিযান পরিকল্পনা ফাঁসের ব্যর্থ চেষ্টা ও চিঠি উদ্ধার(السعى الفاشل لاكتشاف خطة الغزوة الحصول على الكتاب)

বদর যুদ্ধের নিবেদিতপ্রাণ ছাহাবী এবং রাসূল (ছাঃ)-এর দান্দান মুবারক শহীদকারী উৎবা বিন আবু ওয়াকক্বাছের হত্যাকারী (ইয়ামন প্রত্যাগত-কুরতুবী) প্রসিদ্ধ বীর হাতেব বিন আবু বালতা‘আহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর আসন্ন মক্কা অভিযানের খবর দিয়ে একটি পত্র লিখে একজন মহিলার মাধ্যমে গোপনে মক্কায় প্রেরণ করেন। অহি-র মাধ্যমে অবগত হয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আলী, যুবায়ের ও মিক্বদাদ (রাঃ)-কে দ্রুত পশ্চাদ্ধাবনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, তোমরা ‘খাখ’(رَوْضَةُ خَاخ) নামক বাগিচায় গিয়ে একজন হাওদানশীন মহিলাকে পাবে, যার কাছে কুরায়েশদের নিকটে লিখিত একটি পত্র রয়েছে’। তারা অতি দ্রুত পিছু নিয়ে ১২ মাইল দূরে ঠিক সেখানে গিয়েই মহিলাকে পেলেন ও তাকে পত্রের কথা জিজ্ঞেস করলেন। মহিলা অস্বীকার করলে তার হাওদা তল্লাশি করা হ’ল। কিন্তু না পেয়ে আলী (রাঃ) তাকে বললেন,مَا كَذَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَتُخْرِجِنَّ الْكِتَابَ أَوْ لَنُجَرِّدَنَّكِ ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মিথ্যা বলেননি। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তুমি চিঠিটি বের করে দিবে। নইলে অবশ্যই আমরা তোমাকে উলঙ্গ করব’। তখন মহিলা ভয়ে তার মাথার খোঁপা থেকে চিঠিটা বের করে দিল। পত্রখানা নিয়ে তারা মদীনায় ফিরে এলেন।

তখন হাতেবকে ডেকে রাসূল (ছাঃ) কারণ জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তিনি বললেন,يَا رَسُولَ اللهِ، لاَ تَعْجَلْ عَلَىَّ، مَا بِىْ إِلاَّ أَنْ أَكُوْنَ مُؤْمِنًا بِاللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَا غَيَّرْتُ وَلاَ بَدَّلْتُ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন না। আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে বিশ্বাসী। আমার মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন আসেনি বা আমি আমার দ্বীন বদল করিনি’। তবে ব্যাপারটি হ’ল এই যে, আমি কুরায়েশদের গোত্রভুক্ত নই। বরং একজন চুক্তিবদ্ধ মিত্র (حَلِيف) মাত্র। তাদের মধ্যে রয়েছে আমার পরিবার ও সন্তান-সন্ততি। তাদের সাথে আমার কোন আত্মীয়তা নেই, যারা তাদের হেফাযত করবে। অথচ আপনার সাথে যেসকল মুহাজির আছেন, তাদের সেখানে আত্মীয়-স্বজন আছে, যারা তাদের পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পারে। এজন্য আমি চেয়েছিলাম যে, তাদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখাই, যাতে তারা আমার পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়।وَلَمْ أَفْعَلْهُ ارْتِدَادًا عَنْ دِينِى، وَلاَ رِضًا بِالْكُفْرِ بَعْدَ الإِسْلاَمِ ‘আমি এটা আমার দ্বীন থেকে ‘মুরতাদ’ হয়ে করিনি বা ইসলামের পরে কুফরীতে খুশী হয়ে করিনি’। রাসূল (ছাঃ) বললেন,صَدَقَ فَلاَ تَقُولُوا لَهُ إِلاَّ خَيْرًا ‘সে সত্য বলেছে। অতএব তোমরা তার সম্পর্কে ভালো ব্যতীত কিছু বলো না’।

তখন ওমর (রাঃ) বলে উঠলেন,إِنَّهُ قَدْ خَانَ اللهَ وَرَسُولَهُ وَالْمُؤْمِنِينَ فَدَعْنِى فَلْأَضْرِبَ عُنُقَهُ ‘সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাথে খেয়ানত করেছে। আমাকে ছেড়ে দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দেই’ (বুখারী হা/৩৯৮৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,دَعْنِى أَضْرِبْ عُنُقَ هَذَا الْمُنَافِقِ আমাকে ছেড়ে দিন এই মুনাফিকটার গর্দান উড়িয়ে দেই’ (বুখারী হা/৩০০৭)। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إِنَّهُ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا ‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল’। তোমার কি জানা নেই হে ওমর! আহলে বদর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন (হাদীছে কুদসী),اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ ‘তোমরা যা খুশী করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি’। একথা শুনে ওমরের দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত’।

অতঃপর আয়াত নাযিল হ’ল,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنْتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ, অথচ তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে, তার সাথে কুফরী করেছে। তারা রাসূলকে ও তোমাদেরকে বহিষ্কার করেছে এই কারণে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপরে ঈমান এনেছ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমার রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাক, তাহ’লে তোমরা তাদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব করো না। কেননা তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, তা আমি ভালভাবে অবগত। যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে এ কাজ করবে, সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে’ (মুমতাহিনা ৬০/১)।[1]

[1]. বুখারী হা/৩৯৮৩, ৪২৭৪ ‘মাগাযী’ অধ্যায়, ‘বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ ৯ এবং অনুচ্ছেদ ৪৬।