নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

মদীনায় অবস্থিত তিনটি ইহূদী গোত্রের সর্বশেষ গোত্রটি ছিল বনু কুরায়যা। তারা ছিল আউস গোত্রের মিত্র। এদের সঙ্গে রাসূল (ছাঃ)-এর চুক্তি ছিল যে, তারা বহিঃশত্রুর আক্রমণ কালে সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-কে সাহায্য করবে। গোত্রনেতা কা‘ব বিন আসাদ আল-ক্বোরাযী নিজে উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তাদের বাসস্থান ছিল মুসলিম আবাসিক এলাকার পিছনে। মাসব্যাপী খন্দক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা মুসলিম বাহিনীকে কোনরূপ সাহায্য করেনি। মুনাফিকদের ন্যায় তারাও যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিল। ইতিমধ্যে বিতাড়িত বনু নাযীর ইহূদী গোত্রের নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব খায়বর থেকে অতি সঙ্গোপনে বনু কুরায়যার দুর্গে আগমন করে এবং তাদেরকে নানাভাবে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে ফুসলাতে থাকে। সে তাদেরকে বুঝায় যে, কুরাইশের নেতৃত্বে সমস্ত আরবের দুর্ধর্ষ সেনাদল সাগরের জোয়ারের মত মদীনার উপকণ্ঠে সমবেত হয়েছে। তারা সবাই এই মর্মে আমার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে যে,قَدْ عَاهَدُونِي وَعَاقَدُونِي عَلَى أَنْ لاَ يَبْرَحُوا حَتَّى نَسْتَأْصِلَ مُحَمَّدًا وَمَنْ مَعَهُ ‘মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদের উৎখাত না করা পর্যন্ত তারা ফিরে যাবে না’। কা‘ব বিন আসাদ দুর্গের দরজা বন্ধ করে দেন ও বারবার তাকে ফিরে যেতে বলেন এবং মুহাম্মাদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। কিন্তু ধুরন্ধর হুয়াইয়ের অব্যাহত চাপ ও তোষামোদীতে অবশেষে তিনি কাবু হয়ে পড়েন। তখন একটি শর্তে তিনি রাযী হন যে, যদি কুরায়েশ ও গাত্বফানীরা ফিরে যায় এবং মুহাম্মাদকে কাবু করতে না পারে, তাহ’লে হুয়াই তাদের সঙ্গে তাদের দুর্গে থেকে যাবেন। হুয়াই এ শর্ত মেনে নেন এবং বনু কুরায়যা চুক্তিভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। এখবর রাসূল (ছাঃ)-এর কর্ণগোচর হ’লে তিনি আউস ও খাযরাজ গোত্রের দু’নেতা সা‘দ বিন মু‘আয ও সা‘দ বিন ওবাদাহ এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা ও খাউয়াত বিন জুবায়েরকে(خَوَّاتُ بنُ جُبَير) পাঠান সঠিক তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। তিনি তাদেরকে বলে দেন যে, চুক্তিভঙ্গের খবর সঠিক হ’লে তারা যেন তাকে এসে ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয় এবং অন্যের নিকটে প্রকাশ না করে। তারা সন্ধান নিয়ে এসে রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন,عَضَلٌ وَالْقَارَّةُ অর্থাৎ রাজী‘-এর আযাল ও ক্বাররাহ গোত্রদ্বয়ের ন্যায় বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটেছে’।[1]

প্রথমে ২য় হিজরীর রামাযান মাসে বনু ক্বায়নুক্বা, অতঃপর ৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়ালে বনু নাযীর এবং সর্বশেষ ৫ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে তৃতীয় ও সর্বশেষ ইহূদী গোত্র বনু কুরায়যার নির্মূলের ফলে মদীনা ইহূদীমুক্ত হয় এবং মুসলিম শক্তি প্রতিবেশী কুচক্রীদের হাত থেকে রেহাই পায়। এক্ষণে আমরা বনু কুরায়যা যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ বিবৃত করব।

[1]. আর-রাহীকব ৩০৯ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/২২১-২২। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৩৫৮)।