নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ওহোদ যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ- ২৭. উত্তম ইহূদী (خير يهود)

ওহোদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নিহতদের মধ্যে মুখাইরীক্ব (مُخَيْرِيقٌ) নামের এক ইহূদী আলেমকে পাওয়া গেল। যিনি বনু নাযীর ইহূদী গোত্রের বনু ছা‘লাবাহ শাখার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি খেজুর বাগিচাসহ বহু মাল-সম্পদের অধিকারী ছিলেন। তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং তাঁর দ্বীনের প্রতি সর্বদা অনুরক্ত ছিলেন। ইতিমধ্যে ওহোদের যুদ্ধ উপস্থিত হয়। ঐ দিন ছিল শনিবার। যুদ্ধ চলাকালে তিনি স্বীয় গোত্রকে বলেন,يَا مَعْشَرَ يَهُودَ وَاللهِ لَقَدْ عَلِمْتُمْ أَنَّ نَصْرَ مُحَمَّدٍ عَلَيْكُمْ لَحَقٌّ ‘হে ইহূদীগণ! তোমরা জান যে, মুহাম্মাদকে সাহায্য করা তোমাদের উপর অবশ্য কর্তব্য’। তারা বলল, الْيَوْمَ يَوْمُ السَّبْتِ ‘আজকে যে শনিবার’। তিনি বললেন,لاَ سَبْتَ لَكُمْ ‘তোমাদের জন্য কোন শনিবার নেই’। এই বলে তিনি তরবারি ও অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জামাদি উঠিয়ে নিয়ে বলেন,إِنْ أُصِبْتُ فَمَالِي لِمُحَمَّدٍ يَصْنَعُ فِيهِ مَا شَآءَ ‘যদি আমি আজকে নিহত হই, তাহ’লে আমার মালামাল সব মুহাম্মাদের হবে। তিনি তা নিয়ে যা খুশী করবেন, যা আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিবেন’। এরপর তিনি যুদ্ধে গিয়ে নিহত হন। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,مُخَيْرِيقُ خَيْرُ يَهُودَ ‘মুখাইরীক্ব একজন উত্তম ইহূদী’।[1] অর্থাৎ ইহূদী থেকে মুসলমান হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঐ দিন যারা যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে তিনি উত্তম ছিলেন। নইলে ইতিপূর্বে ইসলাম কবুলকারী বিখ্যাত ইহূদী আলেম আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) ছিলেন সর্বোত্তম ও স্বীয় জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী’ (বুখারী হা/৩৮১২-১৩)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু নাযীর গোত্রে তার পরিত্যক্ত সাতটি খেজুর বাগান আল্লাহর রাস্তায় ওয়াফক করে দেন এবং এটাই ছিল মদীনার প্রথম ওয়াকফ ভূমি।[2]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৫১৮; ২/৮৮-৮৯; আর-রাহীক্ব ২৮০ পৃঃ। ইবনু ইসহাক এটি বিনা সনদে বর্ণনা করেছেন। ভাষ্যকার সুহায়লী বলেন, মুখাইরীক্ব মুসলিম ছিলেন। এজন্য তাঁকে خَيْرُ يَهُودَ ‘উত্তম ইহূদী’ বলা হয়েছে, خَيْرُ الْيَهُودِ ‘ইহূদীদের মধ্যে উত্তম’ বলা হয়নি (ইবনু হিশাম ১/৫১৮-টীকা; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৪/৩৭; মা শা-‘আ ১৫৯ পৃঃ)। ইবনু হাজার তাঁকে ছাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন (আল-ইছাবাহ, মুখাইরীক্ব ক্রমিক ৭৮৫৫; সীরাহ ছহীহাহ ২/৩৮৯)।

[2]. মুসলিম, শরহ নববী হা/১৭৫৯ (৫৪); ইবনু হিশাম ১/৫১৮; সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১১৪৯)।