নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
মক্কায় পরাজয়ের খবর ও তার প্রতিক্রিয়া (وصول نبأ الهزيمة فى مكة ورد فعلها)

হায়সুমান বিন আব্দুল্লাহ আল-খুযাঈ সর্বপ্রথম মক্কায় পরাজয়ের খবর পৌঁছে দেয়। এ খবর তাদের উপরে এমন মন্দ প্রভাব ফেলল যে, তারা শোকে-দুঃখে পাথর হয়ে গেল এবং সকলকে বিলাপ করতে নিষেধাজ্ঞা জারী করল। যাতে মুসলমানেরা তাদের দুঃখ দেখে আননিদত হবার সুযোগ না পায়। যুদ্ধ ফেরত ভাতিজা আবু সুফিয়ান বিন হারেছ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিবকে দেখে আবু লাহাব সাগ্রহে যুদ্ধের খবর কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা এমন একটা দলের মুকাবিলা করেছি, যাদেরকে আমরা আমাদের কাঁধগুলি পেতে দিয়েছি। আর তারা ইচ্ছামত হত্যা করেছে ও বন্দী করেছে। এতদসত্ত্বেও আমি আমাদের লোকদের তিরষ্কার করছিনা এ কারণে যে, প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের মুকাবিলা এমন কিছু শুভ্রবসন লোকের সঙ্গে হয়েছিল, যারা আসমান ও যমীনের মাঝখানে সাদা-কালো মিশ্রিত(خَيْلٌ بُلْقٌ) ঘোড়ার উপরে সওয়ার ছিল। আল্লাহর কসম! না তারা কোন কিছুকে ছেড়ে দিচ্ছিল, না কেউ তাদের মুকাবিলায় দাঁড়াতে পারছিল’(وَاللهِ مَا تُلِيقُ شَيْئًا وَلاَ يَقُومُ لَهَا شَيْءٌ)। একথা শুনে পাশেই দাঁড়ানো আবু রাফে‘, যিনি আববাস-এর গোলাম ছিলেন এবং মুসলমান ছিলেন, তিনি বলে ওঠেন, تِلْكَ وَاللهِ الْمَلاَئِكَةُ ‘আল্লাহর কসম! ওঁরা ফেরেশতা’। একথা শুনে ক্ষুব্ধ নেতা আবু লাহাব তার গালে ভীষণ জোরে এক চড় বসিয়ে দিল। তখন উভয়ে লড়াই শুরু হয়ে গেল। আবু লাহাব আবু রাফে‘-কে মাটিতে ফেলে দিয়ে মারতে লাগল। তখন আববাস-এর স্ত্রী উম্মুল ফযল (রাঃ) এসে তাঁবুর একটা খুঁটি নিয়ে আবু লাহাবকে ভীষণ জোরে মার দিয়ে বললেন, اسْتَضْعَفْتَهُ أَنْ غَابَ عَنْهُ سَيِّدُهُ ‘ওর মনিব বাড়ী নেই বলে তুমি ওকে দুর্বল ভেবেছ?’ এতে লজ্জিত হয়ে আবু লাহাব উঠে গেল। এর মাত্র সাতদিনের মধ্যেই আল্লাহর হুকুমে সে আদাসাহ (عَدَسَة) নামক মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেহ পচে গলে মারা গেল। গুটি বসন্তের ন্যায় এই রোগকে সেযুগে মানুষ কু-লক্ষণ ও সংক্রামক ব্যাধি বলে জানত। ফলে পরিবারের লোকেরা তাকে ছেড়ে যায় এবং সে নিঃসঙ্গভাবে মৃত্যুবরণ করে। এ অবস্থায় তিনদিন লাশ পড়ে থাকলেও কেউ তার কাছে যায়নি। অবশেষে একজন লোকের সহায়তায় তার দুই ছেলে তার লাশ পাহাড়ের মাথায় নিয়ে একটা লাঠি দিয়ে ঠেলে গর্তে ফেলে তার উপর মাটি ও পাথর ছুঁড়ে পুঁতে দিল দুর্গন্ধের ভয়ে।[1] এইভাবে এই দুরাচার দুনিয়া থেকে বিদায় হ’ল। ছাফা পাহাড়ের ভাষণের দিন রাসূল (ছাঃ)-কে تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ ‘সর্বদা তুমি ধ্বংস হও’ (বুখারী হা/৪৭৭০) বলার ১৫ বছর পরে তার এই পরিণতি হয়।

[1]. হাকেম হা/৫৪০৩, যাহাবী চুপ থেকেছেন; ইবনু হিশাম ১/৬৪৭।