নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
মাক্কী বাহিনীর অগ্রযাত্রা (مسيرة الجيش المكى)

আবু সুফিয়ানের প্রথম পত্র পেয়ে বাণিজ্য কাফেলা উদ্ধারের জন্য ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আবু জাহলের নেতৃত্বে ১৩০০ মাক্কী ফৌজ রওয়ানা হয়ে যায়। অতঃপর রাবেগ-এর পূর্ব দিকে জুহফা নামক স্থানে পৌঁছলে পত্রবাহকের মাধ্যমে আবু সুফিয়ানের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের খবর পেয়ে বাহিনীর সবাই মক্কায় ফিরে যেতে চাইল। কিন্তু আবু জাহলের দম্ভের সামনে কারু মতামত গ্রাহ্য হ’ল না। তবু তার আদেশ অমান্য করে আখনাস বিন শারীক্ব আছ-ছাক্বাফী(الْأَخْنَسُ بْنُ شَرِيق الثَّقَفِيُّ)-এর নেতৃত্বে বনু যোহরা(بَنُو زُهْرَة) গোত্রের ৩০০ লোক মক্কায় ফিরে গেল। আখনাস ছিলেন ত্বায়েফের ছাক্বীফ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিনি ছিলেন বনু যোহরা গোত্রের মিত্র ও নেতা। তাঁর এই দূরদর্শিতার কারণে তিনি উক্ত গোত্রে আজীবন সম্মানিত নেতা হিসাবে বরিত ছিলেন। বনু হাশেমও ফিরে যেতে চাইল। কিন্তু মুহাম্মাদ-এর স্বগোত্র হওয়ায় তাদের উপরে আবু জাহলের কঠোরতা ছিল অন্যদের চেয়ে বেশী। ফলে তারা ক্ষান্ত হন।

উল্লেখ্য যে, আলী (রাঃ)-এর বড় ভাই ত্বালিব বিন আবু ত্বালিব বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও জনৈক কুরায়েশ নেতার সাথে বাদানুবাদের প্রেক্ষিতে প্রত্যাবর্তনকারীদের সাথে মক্কায় ফিরে যান (ইবনু হিশাম ১/৬১৯)

অতঃপর আবু জাহল বদর অভিমুখে রওয়ানা হন এবং দর্পভরে বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা বদরে যাব ও সেখানে তিনদিন থাকব ও আমোদ-ফূর্তি করে পান ভোজন করব। এর ফলে সমগ্র আরব জাতির উপরে আমাদের শক্তি প্রকাশিত হবে ও সকলে ভীত হবে। এই সময় সব মিলিয়ে মাক্কী বাহিনীতে এক হাযার ফৌজ ছিল। তন্মধ্যে দু’শো অশ্বারোহী, ছয়শো লৌহবর্ম ধারী এবং গায়িকা বাঁদী দল তাদের বাদ্যযন্ত্রাদি সহ ছিল। প্রতি মনযিলে খাদ্যের জন্য তারা ৯টি বা ১০টি করে উট যবেহ করত।

উল্লেখ্য যে, আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলায় সকল গোত্রের লোকদের মালামাল ছিল। তাছাড়া মাক্কী বাহিনীতে বনু ‘আদী ব্যতীত কুরায়েশদের সকল গোত্রের লোক বা তাদের প্রতিনিধি যোগদান করেছিল। অথবা যোগদানে বাধ্য করা হয়েছিল। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা আববাস, হযরত আলীর দু’ভাই ত্বালেব ও ‘আক্বীল। রাসূল (ছাঃ)-এর জামাতা আবুল ‘আছ সহ বনু হাশেমের লোকেরা। তারা আসতে অনিচ্ছুক ছিলেন। নেতাদের মধ্যে কেবল আবু লাহাব যাননি। তিনি তার বদলে তার কাছে ঋণগ্রস্ত একজন ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন।[1]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৬১৮-১৯; আল-বিদায়াহ ৩/২৬০।