নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
অঙ্গীকারনামা ছিন্ন ও বয়কটের সমাপ্তি (نقض صحيفة الميثاق وانةهاء المقاطعة)

প্রায় তিন বছর পূর্ণ হ’তে চলল। ইতিমধ্যে মুশরিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও দ্বিধা-বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিল। যারা এই অন্যায় চুক্তিনামার বিরোধী ছিল, তারা ক্রমেই সংগঠিত হ’তে লাগল। বনু ‘আমের বিন লুওয়াই গোত্রের হেশাম বিন আমরের উদ্যোগে যোহায়ের বিন আবু উমাইয়া ও মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী সহ পাঁচজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হারামের নিকটবর্তী ‘হাজূন’ নামক স্থানে বসে এ ব্যাপারে একমত হন এবং তাঁদের পক্ষে যোহায়ের কা‘বাগৃহ তাওয়াফ শেষে প্রথম সরাসরি আবু জাহলের মুখের উপরে উক্ত চুক্তিনামাটি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন। সাথে সাথে বাকী চারজন পরপর তাকে সমর্থন করেন। আবু জাহ্ল বললেন, বুঝেছি। তোমরা রাতের বেলা অন্যত্র পরামর্শ করেই এসেছ’। ঐ সময়ে আবু ত্বালিব কা‘বা চত্বরে হাযির হ’লেন। তিনি কুরায়েশ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আল্লাহ তাঁর রাসূলকে তোমাদের চুক্তিনামা সম্পর্কে অবহিত করেছেন যে, ‘আল্লাহ ঐ অঙ্গীকারপত্রের উপরে কিছু উঁই পোকা প্রেরণ করেছেন। তারা এর মধ্যকার বয়কট এবং যাবতীয় অন্যায় ও অত্যাচারমূলক কথাগুলো খেয়ে ফেলেছে, কেবল আল্লাহর নামগুলি ব্যতীত’। অতঃপর আবু ত্বালেব বললেন,فَإِنْ كَانَ كَاذِبًا خَلّيْنَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ وَإِنْ كَانَ صَادِقًا رَجَعْتُمْ عَنْ قَطِيعَتِنَا وَظُلِمْنَا ‘যদি সে মিথ্যা বলে থাকে, তাহ’লে তোমাদের ও তার মধ্য থেকে আমরা সরে দাঁড়াব। আর যদি তার কথা সত্য প্রমাণিত হয়, তাহ’লে তোমরা আমাদের প্রতি বয়কট ও যুলুম থেকে ফিরে যাবে’। আবু ত্বালিবের এই সুন্দর প্রস্তাবে সকলে সমস্বরে বলে উঠল,قَدْ أَنْصَفْتَ ‘আপনি ইনছাফের কথাই বলেছেন’। ওদিকে আবু জাহল ও মুত্ব‘ইম এবং অন্যান্যদের মধ্যে বাকযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী কা‘বাগৃহে প্রবেশ করে অঙ্গীকারনামাটি ছিঁড়ে ফেলার উদ্দেশ্যে বাইরে নিয়ে এলেন। দেখা গেল যে, সত্য সত্যই তার সব লেখাই পোকায় খেয়ে ফেলেছে কেবলমাত্র ‘বিসমিকা আল্লা-হুম্মা’ (‘আল্লাহ তোমার নামে শুরু করছি’) বাক্যটি এবং অন্যান্য স্থানের আল্লাহর নামগুলি ব্যতীত। এভাবে আবু ত্বালিবের মাধ্যমে প্রেরিত রাসূল (ছাঃ)-এর প্রাপ্ত অহীর সংবাদ সত্যে পরিণত হ’ল। কুরায়েশ নেতারা অবাক বিস্ময়ে তা অবলোকন করল। অতঃপর অঙ্গীকারনামাটি মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী সর্বসমক্ষে ছিঁড়ে ফেললেন এবং এভাবে বয়কটের অবসান ঘটল ঠিক তিন বছরের মাথায় ১০ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসে’।[1]

নবুঅতের সত্যতার এ চাক্ষুষ প্রমাণ দেখেও নেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অহংকারী প্রবণতার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,وَإِن يَّرَوْا آيَةً يُّعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ ‘আর যদি তারা কোন নিদর্শন দেখে, তখন তারা এড়িয়ে যায় আর বলে এসব চলমান জাদু’ (ক্বামার ৫৪/২)

বলা বাহুল্য সকল যুগের হঠকারী নাস্তিক ও মুনাফিকের চরিত্র একই রূপ।

[1]. ইবনু হিশাম ১/৩৭৪-৭৭। বর্ণনাগুলির সনদ যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৬৮)। আল-বিদায়াহ ৬/১৮৬; যাদুল মা‘আদ ৩/২৬-২৮; আর-রাহীক্ব ১০৯-১১২।