নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

ব্যবসায়ে অভাবিত সাফল্যে খাদীজা দারুণ খুশী হন। অন্যদিকে গোলাম মায়সারার কাছে মুহাম্মাদের মিষ্টভাষিতা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী এবং উন্নত চিন্তা-চেতনার কথা শুনে বিধবা খাদীজা মুহাম্মাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। ইতিপূর্বে পরপর দু’জন স্বামী মৃত্যুবরণ করায় মক্কার সেরা নেতৃবৃন্দ তাঁর নিকটে বিয়ের পয়গাম পাঠান। কিন্তু তিনি কোনটাই গ্রহণ করেননি। এবার তিনি নিজেই বান্ধবী নাফীসার মাধ্যমে নিজের বিয়ের পয়গাম পাঠালেন যুবক মুহাম্মাদ-এর কাছে। তখন উভয় পক্ষের মুরববীদের সম্মতিক্রমে শাম থেকে ফিরে আসার মাত্র দু’মাসের মাথায় সমাজনেতাদের উপস্থিতিতে ধুমধামের সাথে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। মুহাম্মাদ স্বীয় বিবাহের মোহরানা স্বরূপ ২০টি উট প্রদান করেন। এ সময় খাদীজা ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারিণী হিসাবে ‘ত্বাহেরা’ (পবিত্রা) নামে খ্যাত। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪০ এবং মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫। মুহাম্মাদ ছিলেন খাদীজার তৃতীয় স্বামী। অন্যদিকে খাদীজা ছিলেন মুহাম্মাদের প্রথমা স্ত্রী।[1] উভয়ের দাম্পত্য জীবন পঁচিশ বছর স্থায়ী হয়। মৃত্যুকালে খাদীজার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তবে উভয়ের বয়স নিয়ে মতভেদ আছে।[2]

[1]. ইবনু হিশাম ১/১৮৭-৮৯; আল-বিদায়াহ ২/২৯৩-৯৪।

[2]. অধিকাংশ জীবনীকারের নিকট প্রসিদ্ধ মতে বিয়ের সময় উভয়ের বয়স ছিল যথাক্রমে ২৫ ও ৪০ (ইবনু হিশাম ১/১৮৭)। তবে কেউ কেউ ঐ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স সম্পর্কে বলেছেন ২১, ৩০ ও ৩৭ এবং খাদীজার বয়স সম্পর্কে বলেছেন ২৫, ২৮, ৩৫ ও ৪৫। মৃত্যুকালে খাদীজার বয়স সম্পর্কে বলা হয়েছে ৫০ ও ৬৫। দ্রঃ ইবনু হিশাম ১/১৮৭, টীকা ১-২; হাকেম হা/৪৮৩৮, ৩/২০০; বায়হাক্বী দালায়েল হা/৪০৪; মা শা-‘আ ১৮-১৯ পৃঃ।

খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক উইলিয়াম মূর (১৮১৯-১৯০৫) ভিত্তিহীন কিছু বক্তব্য তাঁর প্রণীত নবী জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। যেমন খাদীজার পিতা খুওয়াইলিদ এই বিয়েতে আদৌ সম্মত ছিলেন না। তাই খাদীজা তাঁর পিতাকে মদ পান করিয়ে মাতাল করেন। অতঃপর তাঁর অজ্ঞান অবস্থায় বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে নেন’। এছাড়া এখানে উভয়ের সম্পর্ক নিয়েও কিছু বাজে কথা লেখা হয়েছে (ঐ, নবীজীবনী পৃঃ ২৪)। অন্যতম লেখক মার্গোলিয়থ (১৮৫৮-১৯৪০) খাদীজার বয়স যে ৪০ ছিল, তা মানতে রাযী হননি। কেবল এতটুকুই স্বীকার করেছেন যে, খাদীজার বয়স মুহাম্মাদের চেয়ে কিছুটা বেশী ছিল (ঐ, নবীজীবনী পৃঃ ৬৬; দ্রঃ মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোস্তফা চরিত ২৯০-৯১ পৃঃ)।

উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর অভিভাবকদের পক্ষ থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বিয়েতে যান তাঁর চাচা হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব। তিনি খাদীজার পিতা খুওয়াইলিদ বিন আসাদ-এর নিকটে বিয়ের পয়গাম পেশ করেন। অতঃপর উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিবাহ হয়। বিয়েতে খুৎবা পাঠ করেন গোত্রনেতা চাচা আবু ত্বালিব (ইবনু হিশাম ১/১৮৯-৯০ ও টীকা ১)। তবে যুহরী (৫০-১২৪ হিঃ) বর্ণনা করেন যে, খুওয়াইলিদ ঐ সময় মাতাল ছিলেন। অতঃপর হুঁশ ফিরলে তিনি বিয়েতে অস্বীকার করেন। অবশেষে রাযী হন এবং বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। পক্ষান্তরে ইবনু ইসহাক ব্যতীত অন্যেরা বলেন যে, খুওয়াইলিদ ঐ সময় জীবিত ছিলেন না। ফলে খাদীজার বিয়ে দেন তাঁর চাচা ‘আমর বিন আসাদ। কেউ বলেন, তাঁর ভাই ‘আমর বিন খুওয়াইলিদ (ইবনু হিশাম ১/১৯০, টীকা ২)। দুষ্টু ঐতিহাসিক মূর যুহরীর অপ্রমাণিত বক্তব্যকে পুঁজি করে তাতে আরও রং চড়িয়েছেন।