নবীদের কাহিনী ১৪-১৫. হযরত মূসা ও হারূণ (আলাইহিমাস সালাম) ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

(১) মূসা (আঃ)-এর সিন্দুক ও নবীগণের ছবি :

বাক্বারাহ ২৪৮ : إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَن يَّأْتِيَكُمُ التَّابُوْتُ ‘তাদের নবী (শ্যামুয়েল) তাদেরকে বললেন (ত্বালূতের) রাজা হওয়ার নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকটে সেই ‘তাবূত’ (সিন্দুক) আসবে...।’

এখানে তাবূত-এর ব্যাখ্যায় (ক) তাফসীর জালালাইনে বলা হয়েছে, الصندوق كان فيه صور الأنبياء، أنزله الله على أدم- ‘সেই সিন্দুক, যা আল্লাহ আদম (আঃ)-এর উপরে নাযিল করেন এবং যার মধ্যে রয়েছে নবীদের ছবিসমূহ’। (খ) তাফসীর কাশশাফে বলা হয়েছে, التابوت هي صورة كانت فيه من زبرجد أو ياقوت لها رأس كرأس الهر وذنب كذنبه وجناحان ‘উক্ত তাবূত হ’ল একটি মূর্তি, যার মধ্যে যবরজদ ও ইয়াকূত মণি-মুক্তা সমূহ রয়েছে। উক্ত তাবূতের মাথা ও লেজ মদ্দা বিড়ালের মাথা ও লেজের ন্যায়, যার দু’টি ডানা রয়েছে।’ (গ) তাফসীর বায়যাবীতে বলা হয়েছে, وفيه صورة الأنبياء من آدم إلى محمد ‘তাতে নবীগণের ছবি রয়েছে আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত।’

(ঘ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ কুরআন শরীফে (পৃঃ ৬৩ টীকা ১৭০) বলা হয়েছে, ‘বিধর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা কালে হযরত মূসা (আঃ) ইহা সম্মুখে স্থাপন করিতেন’।

উপরে বর্ণিত কোন ব্যাখ্যাই কুরআন ও হাদীছ সম্মত নয়। বরং প্রকৃত কথা এই যে, এটি হ’ল আল্লাহর হুকুম মোতাবেক মূসা (আঃ)-এর তৈরী সেই সিন্দুক, যার মধ্যে তাঁর লাঠি, তাওরাত এবং তাঁর ও হারূণ (আঃ)-এর পরিত্যক্ত অন্যান্য পবিত্র বস্ত্তসমূহ সংরক্ষিত ছিল। বনু ইস্রাঈলগণ এটিকে বরকত হিসাবে ও বিজয়ের নিদর্শন হিসাবে মনে করত।

(২) তাওরাতের পৃষ্ঠা সমূহ :

আ‘রাফ ১৪৫ : وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَّوْعِظَةً وَّتَفْصِيْلاً لِّكُلِّ شَيْءٍ ‘আমরা তার (মূসা) জন্য ফলকে (তাওরাতে পৃষ্ঠাসমূহে) সকল বিষয়ে উপদেশ ও স্পষ্ট ব্যাখ্যাসমূহ লিখে দিয়েছি’। এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে, أي ألواح التوراة وكانت من سدر الجنة أو زبرجد أو زمرد سبعة أو عشرة ‘অর্থাৎ তাওরাতের ফলক সমূহ, যা ছিল জান্নাতের পত্র সমূহ বা যবরজাদ অথবা যুমুর্রুদ, যা ছিল ৭টি অথবা ১০টি’। অথচ এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। ঐ ফলকগুলির সংখ্যা কত ছিল, কি দিয়ে তৈরী ছিল, কতটুকু তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ছিল, কি দিয়ে ও কিভাবে সেখানে লেখা ছিল, এগুলি বিষয় জানা বা তার উপরে ঈমান আনার কোন বাধ্যবাধকতা আমাদের উপরে নেই। কুরআন-হাদীছ এবিষয়ে চুপ রয়েছে। আমরাও এ বিষয়ে চুপ থাকব। বস্ত্ততঃ এগুলি স্রেফ ইস্রাঈলী কল্পকাহিনী মাত্র।