বহু সংখ্যক আয়াত, হাদীস এবং সলফের উক্তি আল্লাহর সৃষ্টির উর্ধে থাকার কথা প্রমাণ করে।

১। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ

অর্থাৎ, তাঁর প্রতিই সৎবাক্য আরোহণ করে এবং সৎকর্মকে তিনি উখিত করেন। (সূরা ফাতুির ১০ আয়াত)

২। তিনি আরো বলেন,

ذِي الْمَعَارِجِ تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ

অর্থাৎ, ---যিনি সোপান-শ্রেণীর মালিক। ফিরিস্তা এবং রূহ তাঁর প্রতি ঊর্ধ্বগামী হবে---। (সূরা মাআরিজ ৩-৪ আয়াত)

৩। তিনি অন্যত্রে বলেন, (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى) অর্থাৎ, তুমি তোমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা কর। (সূরা আ’লা ১ আয়াত)

৪। বুখারী (তার সহীহ গ্রন্থে) কিতাবুত তাওহীদে আবুল আলিয়াহ ও মুজাহিদ হতে (নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেনঃ (ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ) (অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি আরোহণ করেন) অর্থাৎ উর্ধে হন এবং উপরে উঠেন।

৫। আল্লাহ তাআলা বলেন, (الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ) অর্থাৎ, দয়াময় আরশে আরোহণ করলেন। (সূরা ত্বা-হা ৫ আয়াত)* এর অর্থও (তিনি আরশের) ঊর্ধ্বে আছেন এবং (তার উপরে) উঠেছেন; যেমন তফসীরে ত্বাবারীতে এ কথার উল্লেখ এসেছে।

৬। বিদায়ী হজ্জে আরাফার দিনে আল্লাহর রসূল (সা.) তার ভাষণে বলেন, “শুনো! আমি কি পৌছে দিলাম?” সকলে বলল, 'হ্যা। (অতঃপর) তিনি আকাশের দিকে অঙ্গুলী উত্তোলন করে এবং সকলের প্রতি তা নত করে বলেন, “হে আল্লাহ সাক্ষী থাকুন।” (মুসলিম)

৭। প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, “আল্লাহ সৃষ্টি সৃজন করার পুর্বে এক কিতাব লিখেছেন। (যাতে আছে) আমার ক্রোধ অপেক্ষা আমার করুণা অগ্রগামী।” সুতরাং তা তার নিকট আরশের উপর লিপিবদ্ধ রয়েছে।”

৮। “তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর না কি? অথচ আমি তার নিকট বিশ্বস্ত যিনি আকাশে আছেন। আমার নিকট সকাল ও সন্ধ্যায় আকাশের খবর । আসে।” (বুখারী ও মুসলিম)

৯। ইমাম আওযায়ী বলেন, বহু সংখ্যক তাবেঈন বর্তমান থাকা কালীন সময়েও আমরা বলতাম, “আল্লাহ জাল্লা যিকরুহ আরশের উপরে আছেন। তার যে সমস্ত সিফাত (গুণাবলী)র বর্ণনা সুন্নাহতে (হাদীসে) এসেছে আমরা। তাতে ঈমান (বিশ্বাস) রাখি। (এটিকে বাইহাক্বী সহীহ সনদ দ্বারা বর্ণনা করেছেন, দেখুন ফতহুল বারী)।

১০। ইমাম শাফেয়ী বলেন, 'আল্লাহ তাআলা আকাশে আরশের উপর আছেন। যেভাবে ইচ্ছা তিনি সৃষ্টির নিকটবর্তী হন এবং আল্লাহ যেভাবে চান। পৃথিবীর আকাশের প্রতি অবতরণ করেন। (এটিকে হাকাব ‘আকীদাতুশ শাফেয়ী’তে বর্ণনা করেছেন।}

১১। ইমাম আবু হানীফাহ বলেন, যে ব্যক্তি বলে যে, জানি না আমার প্রতিপালক আকাশে আছেন নাকি পৃথিবীতে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যায়। যেহেতু আল্লাহ বলেন, (الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ)। অর্থাৎ, “দয়াময় আরশে আরোহণ করলেন।” আর তার আরশ সপ্তাকাশের উপরে। আবার সে যদি বলে, তিনি আরশের উপরেই আছেন, কিন্তু বলে, জানি না যে, আরশ আকাশে আছে নাকি পৃথিবীতে’-তাহলেও সে কাফের। কারণ সে একথা অস্বীকার করে যে তিনি আকাশে আছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তার আকাশে থাকার কথা অস্বীকার করে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যায়। যেহেতু আল্লাহ সকল সৃষ্টির উর্ধে আছেন এবং উপর দিকে মুখ করেই তাঁকে ডাকা হয় (দুআ করা হয়), নিচের দিকে মুখ করে নয়।' (শারহুল আকীদাতিত্ব তাহাবিয়্যাহ ৩১২ পৃঃ)

১২। আল্লাহ কিভাবে আরশে সমারূঢ়?’ -এ বিষয়ে ইমাম মালেক জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেছিলেন, 'আরোহণ করা বিদিত, এর কেমনত্ব অবিদিত, এর প্রতি ঈমান (বিশ্বাস) রাখা ওয়াজেব এবং এর কেমনত্ব প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলা বিদআত। আর এই (প্রশ্নকারী) বিদআতীকে (আমার মজলিস থেকে) বের করে দাও।

১৩। (استوى) ইসতাওয়া (আরোহণ করেছেন) এর তফসীর ও ব্যাখ্যা (استولي) ‘ইসতাওলা’ (ক্ষমতাসীন বা আধিপত্য বিস্তার করেছেন) করা বৈধ নয়। কারণ এরূপ ব্যাখ্যা সলফ কর্তৃক বর্ণিত হয়নি। আর তাদের নীতি ও পথ অধিকতম নিরাপদ, নিখুঁত, জ্ঞানগর্ভ, বলিষ্ট ও প্রজ্ঞাময়।

ইবনুল কাইয়েম আল-জাওযিয়্যাহ বলেন, “আল্লাহ ইয়াহুদকে (حطة) ‘হিত্তাহ’ বলতে আদেশ করেছিলেন, কিন্তু ইয়াহুদ তা বিকৃত করে (حنطة) হিনত্বাহ’ বলেছিল। আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন যে তিনি (استوي علي العرش) 'ইসতাওয়া আলাল আরশ' (আরশে আরোহণ করেন)। কিন্তু অপব্যাখ্যাকারীরা বলে, (استولي) ‘ইসতাওলা’ (ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করেন)! সুতরাং লক্ষ্য করুন, এদের বর্ধিত ل এর সহিত ইয়াহুদীদের বর্ধিত ن এর কি সুন্দর মিল রয়েছে!!” (এটিকে মুহাম্মাদ আল আমীন শানকীত্বী ইবনে কাইয়েম আল-জাওযিয়্যাহ থেকে নকল করেছেন)।

* আরশে আরোহণ করার কথা কুরআনে ৭ বার পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যা এ বিষয়ে গুরুত্ব নির্দেশ করে।