১। (محمد رسول الله) মুহাম্মাদূর রসূলুল্লাহ’র অর্থ এই বিশ্বাস যে, তিনি আল্লাহর তরফ হতে প্রেরিত দূত ও রসূল। সুতরাং তিনি আমাদেরকে যে খবর দেন তা বিশ্বাস ও সত্যজ্ঞান করব, তিনি আমাদেরকে যা আদেশ করেন তাতে আমরা তার আনুগত্য করব। তিনি আমাদেরকে যা নিষেধ করেন ও বাধা দেন তা আমরা বর্জন করব এবং তিনি যা বিধেয় করেছেন কেবল সেই অনুসারেই আমরা আল্লাহর ইবাদত করব।

শায়খ আবুল হাসান নদবী ‘নবুওঅত’ গ্রন্থে বলেন, 'প্রত্যেক যুগ ও প্রত্যেক পরিবেশে আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালামগ)ণের সর্বপ্রথম দাওয়াত এবং সর্ববৃহৎ লক্ষ্য ছিল আল্লাহ তাআলা সম্বন্ধে আকীদাহ ও বিশ্বাসের সংশুদ্ধি, আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মাঝে সম্পর্ক যথার্থকরণ, দ্বীন ও আনুগত্যকে আল্লাহরই জন্য বিশুদ্ধকরণের প্রতি আহ্বান, কেবলমাত্র আল্লাহরই জন্য ইবাদত ও উপাসনাকরণ, এবং (এই কথার জ্ঞানদান যে,) তিনিই একমাত্র উপকারী ও অপকারী, তিনিই ইবাদত, দুআ, শরণ প্রার্থনা, যবেহ ইত্যাদির একক অধিকারী। তাদের দাওয়াতী সংগ্রাম তাদের যুগে সেই পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীভূত ছিল যা মূর্তি, ছবি এবং জীবিত ও মৃত সাধু-সজ্জনদের উপাসনা রূপে প্রচলিত ছিল।”

২। এই আমাদের রসূল, যাকে সম্বোধন করে তার প্রভু বলেন,

قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ ۚ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

অর্থাৎ, বল, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভালোমন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের (গায়বের) খবর জানতাম, তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করে নিতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী মাত্র।' (সূরা আরাফ ১৮৮ আয়াত)

রসূল (সা.) বলেন, “তোমরা আমার প্রশংসায় অতিরঞ্জন করো না; যেমন খ্রিষ্টানরা মারয়্যাম-তনয়ের প্রশংসায় অতিরঞ্জন করেছিল। আমি তো একজন। বান্দা মাত্র। সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূলই বলো।”

উক্ত হাদীসে (اطراء) শব্দের অর্থ হল, প্রশংসায় (না’তে) বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করা। অতএব আমরা তার প্রশংসায় সীমালংঘন করব না এবং আল্লাহকে ছেড়ে তাকে উপাস্য বলে আহবান করব না; যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা বিন মারয়্যামের ব্যাপারে মাত্রাধিক প্রশংসায় অতিরঞ্জন করে (এবং তাঁকে মাবুদের আসনে বসিয়েছিল) শির্কে আপতিত হয়েছিল। তাই আমাদেরকে আমাদের রসূল (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমরা যেন কেবল বলি, মুহাম্মাদ আল্লাহর দাস এবং তার প্রেরিত দূত।

৩। একমাত্র আল্লাহকেই (বিপদে-আপদে) আহবান করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে আহবান না করা; যদিও তিনি রসূল হন অথবা কোন নৈকট্যপ্রাপ্ত অলী। এই নির্দেশে রসূল (সা.) এ-এর আনুগত্য করলে তার মহব্বত ও প্রেম প্রকাশ হয়। তিনি বলেন, “যখন তুমি চাইবে তখন আল্লাহরই নিকট চাও এবং যখন সাহায্য ভিক্ষা করবে তখন আল্লাহর নিকটেই সাহায্য ভিক্ষা করো।” (তিরমিযী, তিনি এটিকে হাসান-সহীহ বলেছেন।)

রসূল (সা.) কোন উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তায় পড়লে বলতেন, “হে চিরঞ্জীব! হে অবিনশ্বর! আমি তোমার রহমতের অসীলায় (তোমার নিকট) সাহায্যের আবেদন করছি।” (তিরমিযী, হাদীসটি হাসান) আল্লাহ কবির প্রতি সদয় হন। তিনি বলেছেন,

‘দূর হয়ে যাক বিপদ মোদের আল্লাহর কাছেই চাই।

আল্লাহ ছাড়া বিপত্তারণ আর তো কেহ নাই।”