মৃত্যু ও জানাযায় বিভিন্ন বিদআত যেমন; মরণাপন্ন ব্যক্তির শিথানে কুরআন শরীফ রাখা, সূরা ইয়াসিন পড়া, মুমূর্ষকে কেবলামুখ করা। নবী ও আহলে বায়তের ইমামগণের নাম নিয়ে ‘তালকীন’ করা। তার নিকট হতে ঋতুবতী, অপবিত্রা, প্রসূতি ও অন্যান্য অপবিত্র মানুষদিগকে দূর করা। রাতে মৃতব্যক্তির পাশে সকাল পর্যন্ত কোন ভয়ে বাতি রাখা। মৃতব্যক্তির নিকট গোসল না দেওয়া পর্যন্ত কুরআন পড়া। ধূপ ইত্যাদি দিয়ে (অপ্রয়োজনে) সুগন্ধময় করে রাখা। দম যাওয়ার স্থানে। লাতা ও ধূপবাতি দেওয়া। দাফন না হওয়া পর্যন্ত মড়া ঘরের কোন মানুষের পানাহার না করা।

মৃতব্যক্তির পা তুলে দাঁড়াতে নেই মনে করা অথবা দাঁড়াতে ভয় করা। মৃত্যুর খবর ব্যাপকভাবে (যেমন মাইক ও পত্রিকায় প্রচার করা (অবশ্য আশেপাশের লোককে মৃত্যুর খবর জানিয়ে জানাযার প্রস্তুতির কথা বলা দোষাবহ নয়।) মৃতব্যক্তির তাহারতের (পবিত্রতার) জন্য ব্যবহৃত খিরকা (বস্ত্রখন্ড) ইত্যাদি দূরে ফেলতে গিয়ে কোন বিপদের আশঙ্কায়) সঙ্গে লোহা রাখা।

গোসল দেওয়ার সময় প্রত্যেক অঙ্গে পানি ঢালার সময় বার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা অন্য যিকর অথবা বাংলায় বাঁধা হিয়ালি পড়া। লোয়ানো পানি ডিঙ্গাতে নেই মনে করা। লাশ উঠানো ও নামানোর সময় এবং পথে নিয়ে যাবার সময় উচ্চস্বরে সকলের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র যিকর।।

মহিলার চুল চুটি গেঁথে বুকের উপর খোলা ফেলে রাখা। বর্কতের আশায় বা আযাব মাফ হওয়ার আশায় কোন পীর বা ওলীর-সুপারিশ নামা (!) বা শাজারানামা অথবা তার অন্য কিছু অথবা কুরআনী আয়াত বা দুআ কাফনের ভিতরে রাখা। কোন ওলীর কবরের পাশে কবর দেওয়ার জন্য দূর থেকে লাশ বহন করা। মুর্দার গোসলে ব্যবহৃত সাবান, দাফন কাজে ব্যবহৃত অতিরিক্ত বাঁশ ও দাফনে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার করতে নেই মনে করা অথবা ব্যবহার করতে ভয় করা।

এই বিশ্বাস রাখা যে, মুর্দারা সকলে নিজ নিজ সুন্দর কাফন নিয়ে গর্ব করে। কাফনের উপর কোন আয়াত বা দুআ লিখা। জানাযার খাটকে ফুল ইত্যাদি দ্বারা সঞ্জিত করা। সৌন্দর্যখচিত বা কালেমা অথবা আয়াত লিখিত মখমলের চাদর দ্বারা লাশ ঢাকা। লাশের উপর বা কবরের উপর ফুল দেওয়া। পুষ্পমাল্য দ্বারা শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া। জানাযার সাথে পতাকা বহন করা। কোন খাদ্যদ্রব্য বা পয়সা ছিটানো।

এই বিশ্বাস রাখা যে, মৃত ব্যক্তি নেক হলে তার লাশ হাল্কা অথবা ভারী হয়। জানাযা বের হওয়ার সাথে সাথে সদকা করা। চল্লিশ কদম মাত্র জানাযা বহন করে নির্দিষ্ট সওয়াবের আশা করা। লাশ নিয়ে ধীরে চলা। লাশের উপর ভিড় জমানো। কোন বিশ্বাসে জানাযার নিকটবর্তী বা সম্মুখবর্তী না হওয়া। নীরবতা ত্যাগ করা। আপোসে তর্কাতর্কি ও বচসা করা। জানাযা সহ কোন ওলীর কবর তওয়াফ করা। মৃতের উপর জানাযা পড়া হয়েছে তা জানা সত্ত্বেও পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া। জানাযার নামাযের কাতারে গোলাপ পানি ছিটানো। জানাযা পড়ার সময় লাশের বাধন খুলে দেওয়া। জুতার ময়লা নেই একীন সত্ত্বেও জানাযার নামাযের জন্য জুতা খুলে ফেলা অথবা খুলে তার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়া। নামাযে ইস্তিফতাহর দুআ পড়া। সূরা ফাতিহাসহ অন্য একটি সূরা পাঠ ত্যাগ করা। নামায শেষে হাত তুলে জামাআতী দুআ করা।

দাফন করার সময় যিকর জোরে-শোরে পড়া। মাথার দিক থেকে লাশ নামানো। মুর্দার জন্য কবরে বালিশ তৈরী করা। কবরকে সুগন্ধিত করা। মাটি দেবার সম ‘মিনহা খালাকনাকুম’ আয়াত পড়া। (কবরে যে লাশ রাখে সে ছাড়া) সকলের ‘বিসমিল্লাহি অআলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ’ দুআ পড়া। লাশের বুকে মাটি রাখা। কবর। এক বিদ্যার অধিক উচু করা। কবরের চার কোণে ও মাঝে খেজুর ডাল গাড়া। (অবশ্য পশুর নষ্ট করা থেকে বাঁচাতে কাটা ইত্যাদি রাখা দুষণীয় নয়।) কবর লোয়ানো। (অবশ্য ‘লহদ কবরে শুষ্ক মাটিকে ভিজিয়ে বসানোর জন্য পানি ঢালা উত্তম।) এই সময় সকলের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়া। দাফন শেষে হাত তুলে দুআ-দরূদ পড়া। মাথার দিকে সূরা ফাতিহা বা সূরা বাক্বারার প্রথমাংশ এবং পায়ের দিকে সূরা বাক্বারার শেষাংশ পাঠ করা। দাফনের পর তালব্দীন দেওয়া। কবরের পাশেই মাটির পাত্র (ব্যবহার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও) ছেড়ে আসা। বিশ্বাস রাখা যে, কবরের মাটি বাড়লে হালে আবার কেউ মরবে!

দাফনের পর কবরের পাশে বাস করা ও (পাহারা দেওয়া। অবশ্য লাশের কোন। অঙ্গ অথবা কাফন চুরি হওয়ার আশঙ্কায় পাহারা দিলে ভিন্ন কথা।) আমাবশ্যার রাতে মরা খারাপ বা অশুভ মনে করা। দাফন করা থেকে ফিরে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে বাড়ি প্রবেশ করতে বা কাউকে স্পর্শ করতে নেই ভাবা। কবরের পাশে কোন খাদ্য বিতরণ বা পশু যবেহ। মরা ঘরের যিয়াফত গ্রহণ করা। মরা ঘরে ভোজ করা। (আত্মীয় বা প্রতিবেশীর কেউ না খাওয়ালে সাধারণভাবে দূরের কুটুমদেরকে খাওয়ানো দোষের নয়)।

মরা ঘরের আত্মীয়-স্বজনকে দেখা করার জন্য এবং সান্ত্বনা দেবার উদ্দেশ্যে তাদের গৃহে জমায়েত হওয়া ও তার জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করা। কেবল শোকপালনের উদ্দেশ্যে দাড়ি-গোফ লম্বা করা। অভ্যাসমত ভালো খাওয়া। ত্যাগ করা। (মৃতব্যক্তির স্ত্রী ব্যতীত) অন্য কারো শোক পালনের উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য ত্যাগ করা। বিধবার মৃত্যু অবধি সৌন্দর্য ত্যাগ করা। (গায়র মাহরামের নিকট সৌন্দর্য প্রকাশ হারাম)। পুনঃ বিবাহ করাকে মন্দ ও দূষণীয় জানা। (অথচ মন্দের পথে পা বাড়াতে এবং ব্যভিচার করতে ভয় করে না!)

মৃতের নামে কুরআনখানী, ফাতেহাখানি ও চল্লিশে (চালশে) করা। মুর্দার দম যাওয়ার স্থানে কয়েক দিন ধরে লাতা দেওয়া, বাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে রাখা। এই বিশ্বাস যে বাড়িতে রূহ আসে। মৃত যা খেতে ভালোবাসতো তাই সদকাহ করা। মৃতের ব্যবহৃত পোশাকাদি সদকাহ করা। কারো মরার পুর্বেই কবর খনন করে রাখা। দাফনের পর কয়েকদিন সকালে কবর যিয়ারত করা। যিয়ারতের জন্য কোন দিন নির্ধারিত করা, কারো কবর যিয়ারতে তাবারুক বা নেকীর আশা করা। কবরের সামনে মুসল্লীর মত খাড়া হওয়া।

কোন যিয়ারতকারীর মাধ্যমে সালাম পাঠানো। নামায ও তেলাঅত দ্বারা ঈসালে সওয়াব করা। ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোন অনুষ্ঠান করা। সালেহীনদের কবরের নিকট দুআ কবুল হয় এই বিশ্বাস রাখা এবং এই উদ্দেশ্যে যিয়ারত করা। কবরস্থানের গাছ-পালাকে পবিত্র মানা এবং তা কাটতে নেই মনে করা বা কাটতে ভয় করা। কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে দুর থেকে সফর করা। তাতে এত এত নেকী আছে মনে করা। কবর বাঁধানো, শিয়রদেশে পাথরের উপর নাম খোদাই করা, কোন আয়াত লিখা বা ‘জান্নাতী’ লিখা।

কবরের উপর দর্গা, মাযার ও বাগান তৈরী করা, মসজিদ ও গম্বুজ নির্মাণ করা, বাতি জ্বালানো, ধূপ-ধুনা দেওয়া। মাটির হাতি-ঘোড়া পেশ করা, ন্যর নিয়ায় পেশ করা, পশু যবেহ করা। কবরকে সিজদাহ করা, তার তওয়াফ করা, সম্মুখ করে কবরবাসীর ধ্যান করা, কবরের নিকট বসে বা স্পর্শ করে তাবারুক নেওয়া। কবর বা মাযার চুম্বন বা স্পর্শ করে গায়ে মাখা। কবরের দেওয়ালে বা মাযারে কপাল, গাল পিঠ বা পেট লাগিয়ে দুআ করা। সন্তান লাভের আশায় যোনি। দ্বারা স্পর্শ করা! তাযীম করে কবরের দিকে পিঠ না করা। কবরের প্রতি সম্মুখ করে। নামায পড়া।

কবরবাসীকে নাজাতের অসীলা বা বিপদে সুপারিশকারী মানা, তার অসীলায় দুআ করা। তার নামে আল্লাহর উপর কসম খাওয়া। তার নিকট সাহায্য, সন্তান, সম্পদ, সুখ ও বিপদ মুক্তি চাওয়া। কবরের পাশে ধ্যান ও যিক করা। কবর যিয়ারতের পর উল্টাপায়ে ও কবরকে সামনে করেই ফিরে আসা। মসজিদে কারো কবর দেওয়া। কবরের উপর উরস, মেলা প্রভৃতি পাপের মিলনক্ষেত্র অনুষ্ঠান করা, চাদর চড়ানো।