বিদআত দর্পণ বিদআতের প্রকারভেদ আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

বিদআতকে ভিন্ন আরো তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়ঃ (১) ই’তিক্বাদিয়্যাহ (বিশ্বাসগত) (২) ক্বাওলিয়্যাহ (কথাগত) এবং (৩) আমালিয়্যাহ (কর্মগত)।

১। বিশ্বাসগত বিদআত তখন হয়, যখন কোন কিছুর উপর কারো বিশ্বাস রসূল ও সাহাবার বিশ্বাসের পরিপন্থী হয়। যেমন খাওয়ারেজদের বিশ্বাস; তারা মনে করে যে, কোন মুসলিম কাবীরাহ গুনাহ (চুরি, চুগলী, হত্যা ইত্যাদি) করলে কাফের হয়ে

চিরস্থায়ী জাহান্নামবাসী হবে। তাই তারা অনেক সাহাবাদেরকেও কাফের মনে করে থাকে। অথচ আহলে সুন্নাহর মতে সে ব্যক্তি কাফের হয় না। পাপের পরিমাণ মত দোযখে শাস্তি ভোগ করে ঈমানের কারণে একদিন জান্নাতবাসী হবে। অথবা আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে মাফ করে জান্নাতে দেবেন। যেমন অনেকের বিশ্বাস; আল্লাহ সব জায়গায় বিদ্যমান। অথচ আল্লাহ আছেন সপ্তাকাশের উপর আরশে। তাঁর ইলম আছে সর্বত্রে।

তদনুরূপ এই বিশ্বাস যে, মানুষের কর্ম মানুষেরই সৃষ্টি, আল্লাহর সৃষ্টি নয়, অথবা কর্মে মানুষের কোন এখতিয়ার নেই প্রভৃতি।

২। কথাগত বিদআত তখন হয়, যখন এমন কথা বলা ও প্রচার করা হয় যা কিতাব ও সুন্নাহর বিপরীত। যেমন বিভিন্ন ফির্কা; রাফেযাহ, খাওয়ারেজ, জাহমিয়াহ, মু’তাযেলাহ, আশআরিয়্যাহ প্রভূতিদের কথা। যারা কিতাব ও সুন্নাহর মৌলনীতি বর্জন করে সাহাবায়ে কেরামগণের সমঝ ও তরীকা প্রত্যাখ্যান করে উভয়ের অপব্যাখ্যা ও ভুল অর্থ মনগড়াভাবে করে থাকে এবং আহলে সুন্নাহ তথা দুনিয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত হক ও ন্যায়ের সপক্ষে জিহাদে তায়েফাহ মানসুরাহ (সাহায্য প্রাপ্ত গোষ্ঠী) এবং আখেরাতে ‘ফিকাহ নাজিয়াহ’ (মুক্তিপ্রাপ্ত সম্প্রদায়)-এর বিরোধিতা করে থাকে। যারা সাহাবাদেরকে গালি দেয়, কেউ কাবীরাহ গোনাহ করলে তাকে কাফের ও চির-জাহান্নামী বলে, আল্লাহ মহিমান্বিত গুণাবলীর তাবীল ও অপব্যাখ্যা অথবা অস্বীকার করে ইত্যাদি।

৩। কর্মগত বিদআত তখন হয়, যখন এমন কোন কাজ দ্বীন ভেবে বা করতে হয় ভেবে করা হয়, যা শরীয়তে বর্ণিত কাজ ও তার পদ্ধতির প্রতিকুল হয়। যেমন। শবেবরাত, শবে মিরাজ, মুহারাম, চালশে প্রভৃতি পালন করা।

বিদআতের প্রতিক্রিয়ার দিকে লক্ষ্য করে তাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়

(ক) বিদআত মুকাফফিরাহ

(খ) গায়র মুকাফফিরাহ।

(ক) মুকাফফিরাহ বিদআত তখন বলা হয়, যখন ঐ বিদআত করার ফলে বিদআতী কাফের বলে গণ্য হয়। যেমন, সৰ্ববাদিসম্মত কোন দ্বীনী অনুশাসনকে অস্বীকার করা, কোন ফরয কর্মকে অস্বীকার করা, অথবা যা ফরয নয় তাকে ফরয। করে নেওয়া, সৰ্ব্বসম্মত কোন হালাল বস্তুকে হারাম অথবা তার বিপরীত করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অথবা কিতাব প্রসঙ্গে এমন বিশ্বাস রাখা, যা হতে আল্লাহ, তাঁর রসুল এবং কিতাব পবিত্র।

যেমন; আল্লাহর পুত্র আছে ভাবা, রসুলকে আল্লাহ মনে করা (আহমাদকে আহাদ মনে করা) কুরআনকে মখলুক (সৃষ্ট) মনে করা ইত্যাদি। তদনুরূপ কবর বা আস্তানা পূজা করা এবং জান্নাত, জাহান্নাম, তকদীর, ফিরিশ্মা জিন প্রভৃতি অস্বীকার ও অবিশ্বাস করা ইত্যাদি।

(খ) গায়র মুকাফফিরাহ বিদআত তখন বলা হয়, যখন বিদআত করে বিদআতী। তার কারণে কাফের হয়ে যায় না, তবে পাপী নিশ্চয় হয়। যেমন, নির্দিষ্ট সময় হতে নামায দেরী করে পড়া, ঈদের নামাযের পুর্বে খুতবাহ পড়া, বিভিন্ন পর্ব ও ঈদের উদ্ভাবন করা ইত্যাদি।

প্রকাশ যে, বিদআতে হাসানাহ (যে বিদআত কোন উপকার ও মঙ্গলের খাতিরে রচনা করা হয়) বলে কোন বিদআত নেই; যা করলে পাপ না হয়ে পুণ্যলাভ হয়, অথবা তা মুবাহ। বরং দ্বীনে প্রত্যেক নবীন বিরচনই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই সাইয়েআহ ও ভ্রষ্টতা। বলা বাহুল্য, বিদআতকে বিদআতে হাসানাহ ও বিদআতে সাইয়েআহ এই দুই ভাগে ভাগ করাও এক বিদআত। রসুল (সা.) জুমআর খুতবায় বলতেন, “নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ কথা আল্লাহর বাণী এবং সর্বোত্তম হেদায়াত (পথনির্দেশ) মুহাম্মাদ (সা.)-এর হেদায়াত। সর্বনিকৃষ্ট বিষয় যাবতীয় অভিনব রচিত বিষয়। প্রত্যেক অভিনব রচিত বিষয়ই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, “আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে।”

সতর্কতার বিষয় যে, হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম সুন্নাহ (প্রথা বা রীতি রচনা বা) চালু করে, তার জন্য রয়েছে ঐ সুন্নাহর সওয়াব এবং তার সওয়াবও যে ঐ সুন্নাহর উপর আমল করে------।”

এর অর্থ এ নয় যে, যদি কেউ শরীয়তে কোন উত্তম কর্ম বা প্রথা নতুনভাবে প্রচলন। করে তবে সে ঐ সওয়াবের অধিকারী হবে। বরং এর অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি কোন বিধিসম্মত উত্তম কাজ প্রারম্ভ করে এবং তার দেখাদেখি অন্যান্য লোক সেই কাজ করে, অথবা কোন সুন্নাহর সংস্কার করে; অর্থাৎ, যা আসলে সুন্নাহ ও দ্বীনী রীতি, কিন্তু তার উপর কেউ আমল না করার ফলে তা মৃতপ্রায় থাকে এবং কেউ এসে তা পুনর্জীবিত করে, অথবা এমন পদ্ধতি ও পথ আবিষ্কার করে যা আসলে ধর্ম বা সুন্নাহ

হলেও তা ধর্মের অসীলা বা মাধ্যম; যেমন, মাদ্রাসা নির্মাণ, বই-পুস্তক ছাপা ইত্যাদি, তাহলে তার জন্য ঐ সওয়াবও রয়েছে।

সুতরাং এ ধরনের কর্ম বা সুন্নাহ মানুষ নিজের তরফ থেকে বিরচন করে না; বরং তার সংস্কার বা বৈধ উন্নয়ন সাধন করে যা উত্তম কাজ। আর তা বিদআত নয়।