যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কসম করার পরও সন্তুষ্ট হয় না

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল­াম বলেছেনঃ

«لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ مَنْ حَلَفَ بِاللَّهِ فَلْيَصْدُقْ وَمَنْ حُلِفَ لَهُ بِاللَّهِ فَلْيَرْضَ وَمَنْ لَمْ يَرْضَ بِاللَّهِ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ»

‘‘তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করোনা। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কসম করে, সে যেন সত্য বলে। আর যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নামে কসম করা হয়, সে যেন উক্ত কসমে সন্তুষ্ট থাকে। আল্লাহর কসমে যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট হয়না, তার সাথে আল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই’’। ইমাম ইবনে মাজাহ হাসান সনদে এটি বর্ণনা করেছেন।[1]

ব্যাখ্যাঃ لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ ‘‘তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করোনা’’- পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে কসম করা জায়েয নয়।

مَنْ حَلَفَ بِاللَّهِ فَلْيَصْدُقْ ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কসম করে, সে যেন সত্য বলে’’- আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর যেসব বিষয় ওয়াজিব করেছেন, তার মধ্যে সত্য বলা অন্যতম। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

‘‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো’’। (সূরা তাওবাঃ ১১৯) সূরা নাহলের ১০৫ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآَيَاتِ اللَّهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ

‘‘মিথ্যা কেবল তারা রচনা করে, যারা আল্লাহ্‌র নিদর্শনে বিশ্বাস করেনা এবং তারাই মিথ্যাবাদী’’।

وَمَنْ حُلِفَ لَهُ بِاللَّهِ فَلْيَرْضَ ‘‘আর যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নামে কসম করা হবে, সে যেন উক্ত কসমে সন্তুষ্ট থাকে’’- এটি এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের হকসমূহের অন্যতম একটি হক। যখন একজন মুসলিম কসম করবে তখন অন্য মুসলিমের উচিত তা সত্য বলে গ্রহণ করে নেয়া। বিশেষ করে যখন কোনো মুসলিম অন্য মুসলিমের জন্য কোনো বিষয়ে উযর পেশ করে শপথ করবে। এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, আল্লাহর নামে শপথকারীকে বিশ্বাস করা এবং তা মেনে নেয়া ওয়াজিব। এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের আরো হক এই যে, তার মুসলিম ভাইয়ের পক্ষ হতে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো মিথ্যা প্রকাশ না পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করবে। যেমন উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তোমার ভাইয়ের মুখ হতে কোনো বাক্য বের হলে যতক্ষণ সেই বাক্যকে ভাল অর্থে ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে খারাপ অর্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেনা। এটিই মুসলিমের উত্তম চরিত্র, উত্তম স্বভাব, পরিপূর্ণ বিবেক এবং দ্বীন পালনে তার দৃঢ়তার মজবুত দলীল। এই অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১) বাপ-দাদার নামে কসম করার উপর নিষেধাজ্ঞা।

২) যার জন্য আল্লাহর নামে কসম করা হয়, তার প্রতি কসমের বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকার নির্দেশ রয়েছে।

৩) আল্লাহর নামে কসম করার পর, যে উহাতে সন্তুষ্ট থাকেনা, তাকে ভয় প্রদর্শন ও হুশিয়ার করা হয়েছে।

[1] - এই হাদীছের সনদে দুর্বলতা থাকলেও তার মর্মাথ গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ বিষয়ে একাধিক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

«أَلا مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلا يَحْلِفْ إِلاَّ بِاللَّهِ». فَكَانَتْ قُرَيْشٌ تَحْلِفُ بِآبَائِهَا، فَقَالَ:«لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ»

‘‘খবরদার যে ব্যক্তি শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ না করে। কুরাইশরা তাদের বাপদাদার নামে শপথ করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কথার প্রতিবাদ করে বললেনঃ তোমরা তোমাদের বাপদাদাদের নামে শপথ করোনা’’। (বুখারী, হাদীছ নং- ৩৮৩৬)