বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

আশ্রয়ের শির্ক বলতে যে কোন অনিষ্টকর বস্ত্ত বা ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর শরণাপন্ন হওয়াকেই বুঝানো হয়।

আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ জাতীয় কোন আশ্রয় কামনা করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত যা তিনি ছাড়া অন্য কারোর জন্য ব্যয় করা জঘন্যতম শির্ক। তবে যে আশ্রয় মানব সাধ্যাধীন তা সক্ষম যে কারোর নিকট চাওয়া যেতে পারে। তবুও এ ব্যাপারে কারোর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত।

শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিকটই আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন:

«وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ»

‘‘যদি শয়তান তোমাকে কুমন্ত্রণা দিয়ে প্ররোচিত করতে চায় তাহলে তুমি একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই আশ্রয় চাবে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ’’। (ফুস্সিলাত/হা-মীম আসসাজদাহ্ : ৩৬)

তিনি আরো বলেন:

«وَقُلْ رَّبِّ أَعُوْذُبِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَعُوْذُبِكَ رَبِّ أَنْ يَّحْضُرُوْنَ»

‘‘আর আপনি বলুন: হে আমার প্রভু! আমি শয়তানের প্ররোচনা হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আপনার নিকটই আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের উপস্থিতি হতে’’। (মু’মিনূন : ৯৭-৯৮)

মানব শত্রুর অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও একমাত্র তাঁরই নিকট আশ্রয় প্রার্থনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নবীকে নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন:

«فَاسْتَعِذْ بِاللهِ، إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ»

‘‘অতএব আপনি (ওদের শত্রুতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য) একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলারই শরণাপন্ন হোন। তিনিই তো সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’’। (গাফির/মু’মিন : ৫৬)

আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রিয় নবীকে আরো ব্যাপকভাবে তাঁর আশ্রয় চাওয়া শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন:

«قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وَمِنْ شَـرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ، وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِيْ الْعُقَدِ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ»

‘‘আপনি বলুন: আমি আশ্রয় চাচ্ছি প্রভাতের প্রভুর তাঁর সকল সৃষ্টি, অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত, গ্রন্থিতে ফুৎকারকারিনী নারী এবং হিংসুকের হিংসার অনিষ্ট থেকে’’। (ফালাক্ব : ১-৫)

তিনি আরো বলেন:

«قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ، مَلِكِ النَّاسِ، إِلَهِ النَّاسِ، مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْـخَنَّاسِ، الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ، مِنَ الْـجِنَّةِ وَالنَّاسِ»

‘‘আপনি বলুন: আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানবের প্রভু, মালিক ও উপাস্যের আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে। যে কুমন্ত্রণা দেয় মানব অন্তরে। চাই সে জিন হোক অথবা মানুষ’’। (নাস : ১-৬)

আল্লাহ্ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারোর আশ্রয় চাইলে তাতে তারা তাদের অনিষ্ট কখনো বন্ধ করেনা বরং তারা আরো হঠকারী, অনিষ্টকারী ও গুনাহ্গার হয় এবং আশ্রয় অনুসন্ধানীরা আরো বিপথগামী ও পথভ্রান্ত হয়।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الإِنْسِ يَعُوْذُوْنَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْـجِنِّ فَزَادُوْهُمْ رَهَقًا»

‘‘আর কিছু সংখ্যক মানুষ কতক জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করতো। তাতে করে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা আরো বাড়িয়ে দেয়’’। (জিন : ৬)

জিনদের আশ্রয় কামনাকারী মুশ্রিক বা জাহান্নামী হলেও তারা আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় মানুষের কিছুনা কিছু উপকার করতে অবশ্যই সক্ষম। সুতরাং তাদের থেকে উপকার পাওয়া যাচ্ছে বলে তাদের আশ্রয় কামনা করা কখনোই জায়েয হবেনা। শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তি কর্তৃক উপকৃত হওয়া তা জায়েয বা হালাল হওয়া প্রমাণ করেনা। এমনও অনেক বস্ত্ত বা কর্ম রয়েছে যা হারাম বা না জায়েয হওয়া সত্ত্বেও তা কর্তৃক মানুষ কিছু না কিছু উপকৃত হয়ে থাকে। যেমন: ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে, কোর’আন ও হাদীসে অজ্ঞ বা অপরিপক্ব পীর ফকিররা যে কোন সমস্যার সমাধানে সাধারণত জিনদের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।

মানুষরা যে জিন জাতি কর্তৃক কখনো কখনো উপকৃত হতে পারে তা আল্লাহ্ তা’আলা কোর’আন মাজীদের মধ্যে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেন।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُمْ مِنَ الإِنْسِ، وَقَالَ أَوْلِيَآؤُهُمْ مِّنَ الإِنْسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَآ أَجَلَنَا الَّذِيْ أَجَّلْتَ لَنَا، قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِيْنَ فِيْهَآ إِلاَّ مَا شَآءَ اللهُ، إِنَّ رَبَّكَ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ»

‘‘হে মোহাম্মাদ! স্মরণ করুন সে দিনকে যে দিন আল্লাহ্ তা’আলা কাফির ও জিন শয়তানদেরকে একত্রিত করে বলবেন: হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা বহু মানুষকে গুমরাহ্ করেছো। তখন তাদের কাফির অনুসারীরা বলবে: হে আমাদের প্রভু! আমরা একে অপরের মাধ্যমে প্রচুর লাভবান হয়েছি। এভাবেই আমরা আমাদের নির্ধারিত জীবন অতিবাহিত করেছি। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন: জাহান্নামই হচ্ছে তোমাদের বাসস্থান। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। তবে আল্লাহ্ তা’আলা যাকে মুক্তি দিতে চাইবেন সেই একমাত্র মুক্তি পাবে। অন্যরা নয়। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু সুকৌশলী এবং অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়’’। (আন্’আম : ১২৮)

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) বিশেষ প্রয়োজনে সকলকে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার আশ্রয় চাওয়া শিখিয়েছেন। অন্য কারোর নয়।

খাওলা বিন্তে হাকীম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ نَزَلَ مَنْزِلًا ثُمَّ قَالَ: أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى يَرْتَحِلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ

‘‘যে ব্যক্তি কোন জায়গায় অবস্থান করে বলবেঃ আল্লাহ্ তা’আলার পরিপূর্ণ বাণীর আশ্রয় চাচ্ছি তাঁর সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে। তাহলে উক্ত স্থান ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তি তার এতটুকুও ক্ষতি করতে পারবে না’’। (মুসলিম, হাদীস ২৭০৮ তিরমিযী, হাদীস ৩৪৩৭)