বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ভারত উপমহাদেশে শির্ক প্রচলনের বিশেষ কারণসমূহ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
৪. ‘‘ওয়াহ্দাতুল্ উজূদ্’’, ‘‘ওয়াহ্দাতুশ্ শুহূদ্’’ ও ‘‘’হুলূল’’ এর দর্শন: ২

চ. কারামাত:

সূফীগণ ‘‘’হুলূল’’ ও ‘‘ওয়াহ্দাতুল্ উজূদে’’ বিশ্বাস করার দরুন তাঁরা মনে করেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা এককভাবে যা করতে পারেন তাঁরাও তা করতে পারেন। তাই তো মনে করা হয়, তাঁরা বিশ্ব পরিচালনা করেন। গাউসের নিকট রয়েছে সব কিছুর চাবিকাঠি। চার জন ক্বুতুব গাউসেরই আদেশে বিশ্বের চার কোণ ধরে রেখেছেন। সাত জন আব্দাল গাউসেরই আদেশে বিশ্বের সাতটি মহাদেশ পরিচালনা করেন। আর নজীবগণ নিয়ন্ত্রণ করেন বিশ্বের প্রতিটি শহর। প্রত্যেক শহরে একজন করে নজীব রয়েছেন। হেরা গুহায় তাঁরা প্রতি রাত্রে একত্রিত হন এবং সৃষ্টিকুলের ভাগ্য নিয়ে খুব নিবিড়ভাবে তাঁরা চিন্তা করেন। তাঁরা জীবিতকে মারতে পারেন এবং মৃতকে জীবিত করতে পারেন। বাতাসে উড়তে পারেন এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন ; অথচ কোর’আন ও হাদীসের দৃষ্টিতে এ সবগুলো একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই করতে বা করাতে পারেন। অন্য কেউ নয়।

নিম্নে সূফীদের কিছু বানানো কাহিনী উল্লেখ করা হলো:

১. একদা আব্দুল কাদের জিলানী মুরগীর তরকারি খেয়ে হাড়গুলো পাশে রেখেছেন। অতঃপর হাড়গুলোর উপর হাত রেখে বললেন: আল্লাহ্’র আদেশে দাঁড়িয়ে যাও। ততক্ষণাতই মুরগীটি জীবিত হয়ে গেলো।

(সীরাতে গাউস্, পৃষ্ঠা: ১৯১ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ৪১১)

২. একদা আব্দুল কাদের জিলানী জনৈক গায়কের কবরে গিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমার আদেশে দাঁড়িয়ে যাও। তখন কবর ফেটে লোকটি গাইতে গাইতে কবর থেকে বের হয়ে আসলো।

(তাফরীজুল্ খা’ত্বির, পৃষ্ঠা: ১৯ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ৪১২)

৩. খাজা আবু ইস্হাক্ব চিশ্তী যখনই সফর করতে চাইতেন তখনই দু’ শত মানুষকে সাথে নিয়ে চোখ বন্ধ করলেই সাথে সাথে গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যেতেন। (তা’রীখে মাশায়িখে চিশ্ত, পৃষ্ঠা: ১৯২ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ৪১৮)

৪. সাইয়েদ মাওদূদ চিশ্তী ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর প্রথম জানাযা মৃত বুযুর্গরা পড়েছেন। দ্বিতীয় জানাযা সাধারণ লোকেরা। অতঃপর জানাযাটি একা একা উড়তে থাকে। এ কারামত দেখে অগণিত মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।

(তা’রীখে মাশায়িখে চিশ্ত, পৃষ্ঠা: ১৬০ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ৭৪)

৫. খাজা ’উস্মান হারুনী দু’ রাক’আত তাহিয়্যাতুল্ ওযু নামায পড়ে একটি ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে অগ্নিকুন্ডে ঢুকে পড়লেন। উভয়ে দু’ ঘন্টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। আগুন তাদের একটি পশমও জ্বালাতে পারেনি। তা দেখে অনেক অগ্নিপূজক মুসলমান হয়ে যায়।

(তা’রীখে মাশায়িখে চিশ্ত, পৃষ্ঠা: ১২৪ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ৩৭৫)

৬. জনৈকা মহিলা কাঁদতে কাঁদতে খাজা ফরীদুদ্দীন গাঞ্জে শুক্রের নিকট এসে বললোঃ রাষ্ট্রপতি আমার বেকসুর ছেলেকে ফাঁসি দিয়েছে। এ কথা শুনে তিনি নিজ সাথীদেরকে নিয়ে ওখানে পৌঁছে বললেনঃ হে আল্লাহ্! যদি ছেলেটি বেকসুর হয়ে থাকে তাহলে আপনি তাকে জীবিত করে দিন। এ কথা বলার সাথে সাথেই ছেলেটি জীবিত হয়ে তাঁর সাথেই রওয়ানা করলো। তা দেখে এক হাজার হিন্দু মুসলমান হয়ে যায়।

(আস্রারুল আউলিয়া, পৃষ্টা: ১১০-১১১ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ৩৭৬)

৭. জনৈক ব্যক্তি আব্দুল কাদির জিলানীর দরবারে একজন ছেলে
সন্তান ছেয়েছিলো। অতএব তিনি তাঁর জন্য দো’আ করেন। ঘটনাক্রমে লোকটির মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। অতএব তিনি লোকটিকে বললেন: তাকে ঘরে নিয়ে যাও এবং কুদরতের খেলা দেখো। যখন লোকটি ঘরে ফিরলো তখন মেয়েটি ছেলে হয়ে গেলো।

(সাফীনাতুল্ আউলিয়া, পৃষ্ঠা: ১৭ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ২৯৯)

৮. আব্দুল কাদির জিলানী মদীনা যিয়ারত শেষে খালি পায়ে বাগদাদ ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর সাথে জনৈক চোরের সাক্ষাৎ হয়। লোকটি চুরি ছাড়তে চাচ্ছিলো। অতএব লোকটি গাউসে আ’জমকে চিনতে পেরে তাঁর পায়ে পড়ে বলতে শুরু করলো: হে আব্দুল কাদির! আমাকে বাঁচান। তিনি তার এ অবস্থা দেখে তার উপর দয়ার্দ্র হয়ে তার ইস্লাহের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে দো’আ করলেন। গায়েব থেকে আওয়াজ আসলো, তুমি চোরকে হিদায়াত করতে যাচ্ছো। তা হলে তুমি তাকে ক্বুতুব বানিয়ে দাও। অতএব চোরটি তাঁর এক দৃষ্টিতেই ক্বুতুব হয়ে গেলো।

(সীরাতে গাউসিয়া, পৃষ্ঠা: ৬৪০ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ১৭৩)

৯. মিয়া ইসমাঈল লাহোরী ফজরের নামাযের পর সালাম ফেরানোর সময় ডান দিকে দয়ার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে সঙ্গে সঙ্গে ডান দিকের সকল মুসল্লী কোর’আন মাজীদের হাফিজ হয়ে যায় এবং বাম দিকের সকল মুসল্লী কোর’আন শরীফ দেখে দেখে পড়তে পারে।

(হাদীক্বাতুল্ আউলিয়া, পৃষ্ঠা: ১৭৬ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ৩০৪)

১০. খাজা আলাউদ্দীন সাবের কালীরিকে খাজা ফরীদুদ্দীন গাঞ্জে শুক্র ‘‘কালীর’’ পাঠিয়েছেন। এক দিন খাজা সাহেব ইমামের নামাযের জায়গায় বসে গেলেন। লোকেরা তাতে বাধা প্রদান করলে তিনি বললেন: ক্বুতুবের মর্যাদা কাজীর চাইতেও বেশি। অতঃপর সবাই তাঁকে জোর করে সেখান থেকে উঠিয়ে দিলে তিনি মসজিদে নামায পড়ার জন্য কোন জায়গা পাননি। তখন তিনি মসজিদকে উদ্দেশ্য করে বললেন: সবাই সিজদাহ্ করছে। সুতরাং তুমিও সিজদাহ্ করো। সাথে সাথে মসজিদটি ছাদ ও দেয়াল সহ ভেঙ্গে পড়লো এবং সবাই মরে গেলো।

(হাদীক্বাতুল্ আউলিয়া, পৃষ্ঠা: ৭০ শরীয়ত ও তরীক্বত, পৃষ্ঠা: ১৯৬)

১১. একদা কা’বা শরীফের প্রতিটি পাথর শায়েখ ইব্রাহীম মাত্বূলীর চতুর্দিকে তাওয়াফ করে পুনরায় নিজ জায়গায় ফিরে আসে।

১২. ইব্রাহীম আল-আ’যাব সম্পর্কে বলা হয়, আগুনকে বেশি ভয় পায় এমন লোককে তিনি বলতেন: আগুনে ঢুকে পড়ো। এ কথা বলেই তিনি আগুনে প্রবেশ করে সেখানে দীর্ঘক্ষণ থাকতেন ; অথচ তাঁর জামা-কাপড় এতটুকুও পুড়তো না এবং তাঁর কোন ক্ষতিও হতো না। এমনিভাবে তিনি নির্ভয়ে সিংহের পিঠে চড়ে এ দিক ও দিক ঘুরে বেড়াতেন।

১৩. ইব্রাহীম আল-মাজ্যূব সম্পর্কে বলা হয়, তিনি কখনো কোন জিনিসের প্রয়োজন অনুভব করলেই তা পূরণ হয়ে যেতো। তাঁর জামাগুলো গলা কাটা থাকতো। গলাটি সঙ্কীর্ণ হলে সকল মানুষই খুব কষ্টে জীবন যাপন করতো। আর গলাটি প্রশস্ত হলে সকল মানুষই খুব আরাম অনুভব করতো।

১৪. ইব্রাহীম ’উস্বাইফীর সম্পর্কে বলা হয়, তিনি সাধারণত শহরের বাইরে গিয়ে নিচু ও গভীর জায়গায় ঘুমুতেন। বাঘের পিঠে চড়ে তিনি শহরে ঢুকতেন। পানির উপর দিয়ে তিনি হাঁটতেন। তাঁর নৌকার কোন প্রয়োজন ছিলো না।

১৫. ইব্রাহীম মাত্বূলী সম্পর্কে আরো বলা হয়, তিনি যখন কোন বাগানে ঢুকতেন তখন সেখানকার সকল গাছ ও উদ্ভিদগুলো নিজেদের সকল গুণাগুণ তাঁকে ডেকে ডেকে বলতো।

১৬. ইব্রাহীম মাত্বূলী সম্পর্কে আরো বলা হয়, তিনি কখনো মিসরে জোহরের নামায পড়তেন না। একদা জনৈক মুফতী সাহেব তাঁকে তিরস্কার করেন। অতঃপর তিনি ফিলিস্তিন সফর করে দেখেন, ইব্রাহীম মাত্বূলী রামাল্লাহ্’র সাদা মসজিদে জেহরের নামায আদায় করছেন। মসজিদের ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ এ তো সর্বদা এখানেই নামায পড়ে।

১৭. শায়েখ ইব্রাহীম ’উরয়ান সম্পর্কে বলা হয়, যখন তিনি কোন শহরে ঢুকতেন তখন সেখানকার ছোট-বড়ো সবাইকে তিনি তাদের নাম ধরে ডাকতেন। যেন তিনি এখনকার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা। অতঃপর তিনি মিম্বরে উঠে উলঙ্গ অবস্থায় খুতবা দিতেন।

১৮. শায়েখ আবু ’আলী সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ছিলেন বহু রূপী। কখনো তাঁকে সৈন্য রূপে দেখা যেতো। আবার কখনো নেকড়ে বাঘ রূপে। কখনো হাতী রূপে। আবার কখনো ছোট ছেলের রূপে। তিনি মানুষকে মুষ্ঠি ভরে মাটি দিলে তা স্বর্ণ বা রুপা হয়ে যেতো।

১৯. ইউসুফ আজ্মী সম্পর্কে বলা হয়, একদা হঠাৎ তাঁর চোখ একটি কুকুরের উপর পড়ে গেলে সকল কুকুর তার পিছু নেয়। কুকুরটি হাঁটলে সেগুলোও হাঁটে। আর কুকুরটি থেমে গেলে সেগুলোও থেমে যায়। মানুষ এ ব্যাপারটি তাঁকে জানালে তিনি কুকুরটির নিকট খবর পাঠিয়ে বললেন: তুমি ধ্বংস হয়ে যাও। তখন সকল কুকুর কুকুরটিকে কামড়াতে শুরু করলো। অন্য দিন আরেকটি কুকুরের উপর তাঁর হঠাৎ দৃষ্টি পড়লে সকল কুকুর আবার তার পিছু নেয়। তখন মানুষ কুকুরটির নিকট গেলে তাদের সকল প্রয়োজন সমাধা হয়ে যেতো। কুকুরটি একদা রোগাক্রান্ত হলে সকল কুকুর একত্রিত হয়ে কাঁদতে শুরু করলো। তারা কুকুরটির জন্য আপসোস করতে লাগলো। একদা কুকুরটি মরে গেলে সকল কুকুর চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো। আল্লাহ্ তা’আলার ইলহামে কিছু মানুষ কুকুরটিকে দাপন করে দিলো। কুকুরগুলো যতোদিন বেঁচে ছিলো তারা উক্ত কুকুরটির যিয়ারত করতো।

২০. আবুল খায়ের মাগরিবী সম্পর্কে বলা হয়, তিনি একদা মদীনায় গেলেন। তিনি পাঁচ দিন যাবত কিছুই খাননি। নবী (সা.), আবু বকর ও ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে সালাম দিয়ে তিনি রাসূল (সা.) কে আবদার করে বললেনঃ হে আল্লাহ্’র রাসূল (সা.)! আমি আজ রাত আপনারই মেহমান। এ কথা বলে তিনি মিম্বরের পেছনে শুয়ে পড়লেন। স্বপ্নে দেখেন স্বয়ং রাসূল (সা.) আবু বকর, ’উমর ও ’আলী  কে নিয়ে তাঁর সামনেই উপস্থিত। আলী (রা.) তাঁকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললেন: উঠো, রাসূল (সা.) এসেছেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে রাসূল (সা.) এর দু’ চোখের মাঝে চুমু খেলেন। রাসূল (সা.) তাঁকে একটি রুটি দিলেন। যার অর্ধেক তিনি স্বপ্নে খেয়েছেন। আর বাকি অর্ধেক ঘুম থেকে উঠে নিজের হাতেই দেখতে পেলেন।

২১. বায়েযীদ বোস্তামী সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এক বছর যাবত ঘুমাননি এবং পানিও পান করেননি।

২২. শায়েখ মুহাম্মাদ আহমাদ ফারগালী সম্পর্কে শুনা যায়, একদা একটি কুমির মুখাইমির নাক্বীবের মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর নিকট আসলে তিনি বললেন: যেখান থেকে তোমার মেয়েটিকে কুমির ছিনিয়ে নিলো সেখানে গিয়ে উচ্চ স্বরে ডাক দিয়ে বলবে: হে কুমির! ফারগালীর সাথে কথা বলে যাও। তখন কুমিরটি সাগর থেকে উঠে সোজা ফারগালীর বাড়িতে চলে আসলো। আর মানুষ তা দেখে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছিলো। তখন তিনি কামারকে বললেন: এর দাঁতগুলো উপড়ে ফেলো। তখন সে তাই করলো। অতঃপর তিনি কুমিরকে মেয়েটি উগলে দিতে বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েটি জীবিতাবস্থায় কুমিরের পেট থেকে বের হয়ে আসলো। তখন তিনি কুমিরটিকে এ মর্মে অঙ্গিকার করালেন যে, যতোদিন সে বেঁচে থাকবে কাউকে আর এ এলাকা থেকে ছিনিয়ে নিবে না। তখন কুমিরটি কাঁদতে কাঁদতে সাগরের দিকে নেমে গেলো।

২৩. শায়েখ আব্দুর রহীম ক্বান্নাভী সম্পর্কে বলা হয়, একদা তাঁর বৈঠকে আকাশ থেকে একটি মূর্তি নেমে আসলো। কেউ চিনলো না মূর্তিটি কি? ক্বান্নাভী সাহেব কিছুক্ষণ পর্যন্ত তাঁর মাথাটি নিচু করে রাখলেন। অতঃপর মূর্তিটি উঠে গেলো। লোকেরা এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন: একজন ফিরিশ্তা দোষ করে বসলো। তাই সে আমার নিকট সুপারিশ কামনা করলো। আমি সুপারিশ করলে আল্লাহ্ তা’আলা তা কবুল করেন। অতঃপর ফিরিশ্তাটি চলে গেলো।

২৪. সাইয়েদ আহমাদ স্বাইয়াদী সম্পর্কে বলা হয়, তিনি যখনই নদীর পাড়ে যেতেন তখন নদীর মাছগুলো তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়তো। কোন মরুভূমি দিয়ে তিনি চলতে থাকলে সকল পশু তাঁর পায়ে গড়াগড়ি করতো। এমনকি তাঁর স্বাভাবিক চলার পথেও রাস্তার দু’ পার্শ্বে পশুরা তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতো।

তাঁর সম্পর্কে আরো বলা হয়: তিনি একটি সিজ্দায় পূর্ণ একটি বছর কাটিয়ে দিলো। একটি বারের জন্যও তিনি সিজ্দাহ্ থেকে মাথাটি উঠাননি। যার দরুন তাঁর পিঠে গাস জন্মে গেলো।

২৫. সাইয়েদ বাদাভী সম্পর্কে বলা হয়, তিনি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট তিনটি দো’আ করেন। যার মধ্যে দু’টি দো’আ আল্লাহ্ তা’আলা কবুল করেছেন। আরেকটি দো’আ কবুল করেননি। তিনি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ মর্মে দো’আ করেছেন যে, কেউ যদি তাঁর কবর যিয়ারত করে তা হলে আল্লাহ্ তা’আলা যেন তার ব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকে যে কোন সুপারিশ কবুল করেন। আল্লাহ্ তা’আলা তা কবুল করলেন। তিনি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ মর্মেও দো’আ করেছেন যে, কেউ যদি তাঁর কবর যিয়ারত করে তা হলে আল্লাহ্ তা’আলা যেন তাকে একটি হজ্জ ও একটি ’উমরাহ্’র পূর্ণ সাওয়াব দেন। আল্লাহ্ তা’আলা তাও কবুল করলেন। তিনি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ মর্মেও দো’আ করেছেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা যেন তাঁকে জাহান্নামে প্রবেশ করান। আল্লাহ্ তা’আলা কিন্তু তা কবুল করলেন না। লোকেরা এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ আমি যদি জাহান্নামে ঢুকে গড়াগড়ি করি তা হলে জাহান্নাম সবুজ বাগানে পরিণত হবে। আর আল্লাহ্ তা’আলার তো এ অধিকার অবশ্যই রয়েছে যে, তিনি কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে তাদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।

আরো জানার জন্য দেখতে পারেন শা’রানী রচিত আত-ত্বাবাক্বাতুল-কুবরা’।

ছ. জা’হির ও বা’তিন শব্দদ্বয়ের আবিষ্কার:

সূফীদের আক্বীদা-বিশ্বাস কোর’আন ও হাদীসের সরাসরি বিরোধী হওয়ার দরুন মানুষ যেন সেগুলো বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে পারে সে জন্য তারা বা’তিন শব্দের আবিষ্কার করে। তারা বলে: কুর’আন ও হাদীসের দু’ ধরনের অর্থ রয়েছে। একটি জা’হিরী। আরেকটি বা’তিনী এবং বা’তিনী অর্থই মূল ও সঠিক অর্থ। তারা এ বলে দৃষ্টান্ত দেয় যে, জা’হিরী অর্থ খোসা বা খোলসের ন্যায় এবং বা’তিনী অর্থ সার, মজ্জা ও মূল শরীরের ন্যায়। জা’হিরী অর্থ আলিমরা জানে। কিন্তু বা’তিনী অর্থ শুধু ওলী-বুযুর্গরাই জানে। অন্য কেউ নয় এবং এ বা’তিনী জ্ঞান শুধুমাত্র কাশ্ফ, মুরাক্বাবাহ্, মুশাহাদাহ্, ইল্হাম অথবা বুযুর্গদের ফয়েয বা সুদৃষ্টির মাধ্যমেই অর্জিত হয়। আর এ গুলোর মাধ্যমেই তারা শরীয়তের মনমতো অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

যেমন: তারা কোর’আন মাজীদের নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলে:

«وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ»

‘‘তুমি তোমার প্রভুর ইবাদাত করো এক্বীন বা মা’রিফাত হাসিল হওয়া পর্যন্ত। যখন মা’রিফাত হাসিল হয়ে যাবে তথা আল্লাহ্ তা’আলাকে চিনে যাবে তখন নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ও তিলাওয়াতের কোন প্রয়োজন হবেনা। অথচ মূল অর্থ এই যে, তুমি তোমার প্রভুর ইবাদাত করো মৃত্যু আসা পর্যন্ত’’। (’হিজ্র : ৯৯)

তেমনিভাবে তারা নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলে:

«وَقَضَى رَبُّكَ أَنْ لاَ تَعْبُدُوْا إِلاَّ إِيَّاهُ»

‘‘তোমরা যারই ইবাদাত করোনা কেন তা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদাত হিসেবেই গণ্য করা হবে। ব্যক্তি পূজা, পীর পূজা, কবর পূজা ও মূর্তি পূজা সবই আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদাত। প্রকাশ্যে অন্য কারোর ইবাদাত মনে হলেও তা তাঁরই ইবাদাত হিসেবে গণ্য করা হবে। অথচ মূল অর্থ এই যে, আপনার প্রভু এ বলে আদেশ করেছেন যে, তোমরা তিনি (আল্লাহ্) ছাড়া অন্য কারোর ইবাদাত করবে না’’। (বানী ইস্রাঈল : ২৩)

তারা কালিমায়ে তাওহীদের অর্থ করতে গিয়ে বলে থাকে, দুনিয়াতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্। তিনি ভিন্ন অন্য কিছু কল্পনাই করা যায় না।

সূফীরা কোন হালাল বস্ত্তকে হারাম এবং হারাম বস্ত্তকে হালাল করার জন্য বা’তিন শব্দ ছাড়াও আরো কিছু পরিভাষা আবাষ্কিার করেছে যা নিম্নরূপ:

‘‘অবস্থা’’, ‘‘জযবা’’, ‘‘পাগলামি’’, ‘‘মত্ততা’’, ‘‘চেতনা’’ ও ‘‘অবচেতনা’’।

তারা আরো বলে: ঈমান বলতে আল্লাহ্ তা’আলার খাঁটি প্রেমকে বুঝানো হয়। আর নকল প্রেম ছাড়া খাঁটি প্রেম কখনো অর্জিত হয়না। তাই তারা নকল প্রেমের সকল উপকরণ তথা নাচ, গান, বাদ্য, সুর, তাল, মদ, গাঁজা, রূপ-সৌন্দর্য ও প্রেমের কাহিনী শুনে মত্ত হওয়াকে হালাল মনে করে।