বড় শির্ক ও ছোট শির্ক মুখবন্ধ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

الْـحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ أَمَرَنَا فِيْ كِتَابِهِ أَوَّلَ مَا أَمَرَ، بِعِبَادَتِهِ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، حَيْثُ قَالَ: «يَآ أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ ، لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ» وَنَهَانَا أَوَّلَ مَا نَهَانَا عَنِ الشِّرْكِ بِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى، حَيْثُ قَالَ: «فَلاَ تَجْعَلُوْا لِلهِ أَنْدَادًا، وَّأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»، وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلَى الْـمَبْعُوْثِ رَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ مُحَمَّدِ ابْنِ عَبْدِ اللهِ، خَاتَمِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْـمُرْسَلِيْنَ ، الَّذِيْ عَلَّمَنَا طُوْلَ حَيَاتِهِ تَجْرِيْدَ الطَّاعَةِ وَالْعِبَادَةِ لِلهِ رَبِّ الْعَالَـمِيْنَ، وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ

সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য যিনি নিজ কোর’আন মাজীদের মধ্যে সর্ব প্রথম আমাদেরকে এককভাবে তাঁরই ইবাদাত করার জন্য আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ হে মানব সকল! তোমরা একমাত্র তোমাদের প্রভুরই ইবাদাত করবে যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা আল্লাহ্ভীরু হতে পারো। তেমনিভাবে তিনি কোর’আন মাজীদের মধ্যে সর্ব প্রথম আমাদেরকে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন: তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করোনা। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, তাঁর কোন শরীক নেই।

সকল দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর জন্য যিনি সর্ব জগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। যিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। যিনি পুরো জীবন আমাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার একক আনুগত্য ও ইবাদাত শিক্ষা দিয়েছেন। যিনি (আল্লাহ্ তা’আলা) সর্ব জগতের প্রতিপালক। তাঁর সকল পরিবারবর্গ এবং সাহাবাদের প্রতিও বিশেষ সালাম রইলো।

পরকালে জান্নাতে যেতে পারা অথবা জাহান্নাম থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়া সকল মু’মিন-মোসলমানদের একান্ত কামনা ও পাওনা। যা সর্বোচ্চ সফলতাও বটে।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْـجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ»

‘‘যাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে জান্নাত দেয়া হলো সেই সত্যিকার সফলকাম’’। (আ’লি ’ইমরান : ১৮৫)

তবে মুশ্রিক ব্যক্তি কখনো এ সফলতার নাগাল পাবে না। সে যতই জনকল্যাণমূলক কাজ করুক না কেন অথবা সে যত বড়ই নেক্কার হোক না কেন। পরকালে জাহান্নামই হবে তার জন্য চির অবধারিত।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ أَنْ يَّعْمُرُوْا مَسَاجِدَ اللهِ شَاهِدِيْنَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِ، أُوْلآئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُـهُمْ، وَفِيْ النَّارِ هُمْ خَالِدُوْنَ»

‘‘আল্লাহ্ তা’আলার ঘর মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের কোন অধিকার মুশ্রিকদের নেই। কারণ, তারা আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সরাসরি শির্ক ও কুফরী ঘোষণা করছে। তাদের সকল নেক আমল একেবারেই নিষ্ফল এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে’’। (তাওবাহ্ : ১৭)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ

‘‘যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো যে, সে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করছে তাহলে সে নিশ্চিতভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। (বুখারী, হাদীস ১২৩৮, ৪৪৯৭, ৬৬৮৩ মুসলিম, হাদীস ৯২)

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! এমন দু’টি বস্ত্ত কি? যা কারোর জন্য জান্নাত বা জাহান্নামকে একেবারেই অবধারিত করে দেয়। রাসূল (সা.) বললেন:

مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْـجَنَّةَ ، وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ

‘‘যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো যে, সে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কখনো কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করেনি তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো যে, সে আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করছে তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। (মুসলিম, হাদীস ৯৩)

কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করে বিনা তাওবায় মৃত্যু বরণ করে তাহলে জাহান্নামই হবে তার জন্য চির অবধারিত। সে জন্যই রাসূল (সা.) জনৈক সাহাবীকে নিম্নোক্ত ওয়াসীয়ত করেন:

لاَ تُشْرِكْ بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُتِلْتَ وَحُرِّقْتَ

‘‘তুমি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করো না। যদিও তোমাকে হত্যা করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়’’। (ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ৪৭৯ আওসাত্ব, হাদীস ১৫৬ বায়হাক্বী, হাদীস ১৪৫৫৪)

এমনকি আল্লাহ্ তা’আলা কোর’আন মাজীদের মধ্যে নিজ প্রিয় নবীকেও এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেন।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«فَلاَ تَدْعُ مَعَ اللهِ إِلَـهًا آخَرَ فَتَكُوْنَ مِنَ الْـمُعَذَّبِيْنَ»

‘‘অতএব আপনি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে অন্য কোন ইলাহ্কে ডাকবেন না। নতুবা আপনি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন’’। (শু’আরা’ : ২১৩)

কোন মুশ্রিক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট মাগফিরাত কামনা করা কোর’আন মাজীদের দৃষ্টিতে অবৈধ। যদিও সে মাগফিরাতকারীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা নিকটতম ব্যক্তি হোক না কেন।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

«مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ، وَلَوْ كَانُوْا أُوْلِيْ قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَـهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْـجَحِيْمِ»

‘‘কোন নবী বা ঈমানদার ব্যক্তির জন্য এটি জায়িয নয় যে, তারা মুশ্রিকদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা তাদের নিকটতম আত্মীয়-স্বজন হোক না কেন। যখন তারা সুস্পষ্টভাবে এ কথা জানে যে, নিশ্চয়ই ওরা জাহান্নামী’’। (তাওবাহ্ : ১১৩)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

زَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ، فَقَالَ: اسْتَأْذَنْتُ رَبِّيْ فِيْ أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِيْ، وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِيْ أَنْ أَزُوْرَ قَبْرَهَا فَأَذِنَ لِيْ، فَزُوْرُوْا الْقُبُوْرَ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْـمَوْتَ

‘‘একদা নবী (সা.) নিজ মায়ের কবর যিয়ারত করলেন। তখন নিজেও কাঁদলেন এবং আশপাশের সকলকেও কাঁদালেন। অতঃপর তিনি বললেন: আমি আমার প্রভুর নিকট আমার মায়ের মাগফিরাত কামনার অনুমতি চাইলে তিনি তা নামঞ্জুর করেন। তাই আমি তাঁর নিকট আমার মায়ের মাগফিরাত কামনা না করে শুধু তার কবরটি যিয়ারতের অনুমতি চাইলাম। তখন তিনি তা মঞ্জুর করলেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কারণ, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়’’।

(মুসলিম, হাদীস ৯৭৬ আবু দাউদ, হাদীস ৩২৩৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৫৯৪ ইবনু হিব্বান/ইহসা’ন, ৩১৫৯ বাগাওয়ী, হাদীস ১৫৫৪ নাসায়ী : ৪/৯০ আহমাদ্ : ২/৪৪১ হা’কিম: ১/৩৭৫ বায়হাক্বী : ৪/৭০, ৭৬ ও ৭/১৯০)

মানুষ যতই গুনাহ্ করুক না কেন সে যদি এমতাবস্থায় মৃত্যু বরণ করে যে, সে কখনো আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করেনি অথবা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে থাকলেও তা হতে খাঁটি তাওবাহ্ করে পুনরায় তাঁর উপর শির্কমুক্ত খাঁটি ঈমান এনেছে এবং এমতাবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা নিজ কৃপায় তার সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন।

আনাস্ ও আবু যর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন: আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

مَنْ لَقِيَنِيْ بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطِيْئَةً لاَ يُشْرِكُ بِيْ شَيْئًا لَقِيْتُهُ بِمِثْلِهَا مَغْفِرَةً

‘‘যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে জমিন ভর্তি গুনাহ্ নিয়ে সাক্ষাৎ করবে অথচ সে কখনো আমার সাথে কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করেনি তাহলে আমি ততটুকু ক্ষমা নিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করবো’’।

(মুসলিম, হাদীস ২৬৮৭ আবু দাউদ, হাদীস ৩৫৪০ ইব্নু মাজাহ্, হাদীস ৩৮৮৯ ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ১২৩৪৬ বাগাওয়ী, হাদীস ১২৫৩ আহমাদ্ : ৫/১৫৩, ১৬৯, ১৭২ দা’রামী : ২/৩২২)