শির্কে আকবর হচ্ছে, বান্দা কর্তৃক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে আল্লাহর সাথে এমনভাবে শরীক স্থির করা যে, বান্দা তাকে বিশ্ব জাহানের প্রভু আল্লাহর সমতুল্য করে দেয়, তাকে আল্লাহর ন্যায় ভালবাসে, আল্লাহকে ভয় করার মতই তাকে ভয় করে, তার কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে, তাকে আহবান করে, তাকে ভয় করে, তার কাছে আশা করে, তার দিকে মনোনিবেশ করে, তার উপর ভরসা করে, আল্লাহর নাফরমানীর ক্ষেত্রেও তার আনুগত্য করে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির ক্ষেত্রেও তাকে অনুসরণ করে। এই প্রকার শির্কের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তার সাথে অংশী স্থাপন করাকে মার্জনা করেন না। অবশ্য তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে মহাপাপে জড়িয়ে মিথ্যা রচনা করল’’। (সূরা নিসাঃ ৪৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ

وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا

‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়’’। (সূরা নিসাঃ ১১৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

‘‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন, তার স্থান হবে জাহান্নাম, আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্য কারী থাকবে না’’। (সূরা মায়েদাঃ ৭২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنْ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল। অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোন স্থানে নিক্ষেপ করল’’। (সূরা হজ্জঃ ৩১) এ ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক আয়াত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

فَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا

‘‘বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, তারা আল্লাহর এবাদত করবে এবং তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, যে ব্যক্তি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করে না, তাকে শাস্তি না দেয়া’’।[1]

শির্কে আকবর তথা বড় শির্কে লিপ্ত হলে বান্দা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে প্রকাশ্যভাবে এই শির্কে লিপ্ত হোক, যেমন মক্কার কুরাইশ বংশের কাফের সম্প্রদায়ের শির্ক কিংবা গোপনে লিপ্ত হোক, যেমন প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা প্রদানকারী এবং কুফর গোপনকারী ধোঁকাবাজ মুনাফেক সম্প্রদায়ের শির্ক। আল্লাহ তা’আলা মুনাফেকদের শাস্তি সম্পর্কে বলেনঃ

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الأَسْفَلِ مِنْ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا * إلاَّ الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُوْلَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ

‘‘নিশ্চয়ই মুনাফেকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আপনি তাদের জন্য কখনও সাহায্যকারী পাবেন না। কিন্তু যারা তাওবা করে নিয়েছে, নিজেদের অবস্থা সংশোধন করেছে, আল্লাহর পথকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে এবং আল্লাহর জন্য তাদের দ্বীনকে বিশুদ্ধ করে নিয়েছে তারা মু’মিনদের সাথেই থাকবে’’। (সূরা নিসাঃ (১৪৫-১৪৬)

[1] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।