প্রশ্ন: যে মুসলিম আল্লাহর ফরযগুলো আদায় করে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মান দ্বারা অসিলা গ্রহণ করে তার হুকুম কি? তাকে কি মুশরিক বলা যাবে? অনুগ্রহ করে উপকার করবেন।

উত্তর: যে মুসলিম আল্লাহকে এক জানবে, তাকে ডাকবে, এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহর অর্থের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই এবং বিশ্বাস করবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সত্য রাসূল, জ্বিন ও মানুষের নিকট তাঁকে পাঠিয়েছেন, সে একজন মুসলিম। কারণ সে কালেমার সাক্ষ্য দিয়েছে এবং রাসূলকে বিশ্বাস করেছে। অতঃপর সে যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে তার ঈমানের ঘাটতি হবে যেমন: ব্যভিচার করা, চুরি করা ও সূদ খাওয়া যতক্ষণ না তা হালাল মনে করবে। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যদি এ অপরাধ করে ফেলে তাহলে তার ঈমানের ঘাটতি হবে এবং ঈমানের দুর্বলতা হবে।

আর যদি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের অসিলা করে বলে, হে আল্লাহ, আমি রাসূলের সম্মান বা তাঁর হক্বের অসিলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, তাহলে অধিকাংশ আলেমের নিকট তা বিদ‘আত, তার ঈমান কমে যাবে কিন্তু মুশরিক বা কাফের হবে না। যেমন অন্যান্য অপরাধের দ্বারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না; বরং সে মুসলিমই থেকে যাবে। কারণ দো‘আ এবং দো‘আর পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ। এতে নবীর সম্মান, বা তাঁর হক্ব বা অন্যান্য নবীদের সম্মান বা হক্ব অথবা আহলে বাইতের অন্য কারো সম্মান বা হক্বের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

সুতরাং তা ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব। কিন্তু তা শির্ক নয় বরং শির্কের মাধ্যম, তা করলে মুশরিক হবে না বরং অধিকাংশ আলেমের নিকট সে বিদ‘আতে পতিত হবে; ফলে তার ঈমান কমে যাবে, কেননা দো‘আর পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ।

কাজেই যে কোনো মুসলিম আল্লাহর গুণ এবং নামের দ্বারা অসিলা গ্রহণ করবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]

“আর আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, সুতরাং এর দ্বারা তোমরা তাকে ডাক।” [সূরা আল-আ‘রাফ/১৮০]

অনুরূপ তাওহীদ ও ঈমানের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করবে, যেমন হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«اللهم إني أسألك بأني أشهدُ أنك أنت الله لا إله إلا أنت الأحد الصمدُ الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد»

“হে আল্লাহ, আমি তোমারই নিকট প্রার্থনা করি, কেননা আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই, একক সত্তা, যার নিকট সকল কিছু মুখাপেক্ষী, তিনি জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি, আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।”[1] এটি হচ্ছে তাওহীদের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা।

এমনিভাবে সৎ আমল দ্বারা অসীলা গ্রহণ করাও অনুমোদিত। যেমন, পাহাড়ের গর্তে আটকে পড়া লোকদের ঘটনা বর্ণনার হাদীসে এসেছে যে, রাত্রি বা বৃষ্টির কারণে কিছু লোক গর্তে প্রবেশ করলে একটি বড় পাথর এসে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিল। তারা চেষ্টা করেও তা সরাতে পারল না। অতঃপর তারা একে অপরকে বলল, এ পাথর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই; কিন্তু যদি তোমরা তোমাদের কৃত সৎ আমলের দ্বারা দো‘আ কর। তারপর তারা তাদের সৎ আমলের অসীলায় দো‘আ করল। তাদের একজন তার মাতা-পিতার সাথে সদ্যবহারের দ্বারা অসিলা করল ফলে পাথরটি সামান্য সরে গেল, অপর একজন ব্যভিচার থেকে বিরত থাকার দ্বারা অসীলা করল, তার একজন চাচাত বোন ছিল, সে তাকে খুব ভালোবাসতো, একদিন তাকে কাছে পাওয়ার জন্য চাইল কিন্তু সে তাতে রাজি হলো না, অতঃপর চাচাত বোনের খুব অভাব দেখা দিলে তার নিকট এসে কিছু সাহায্য চাইল। সে বলল: তুমি যদি আমার কথায় রাজি হও তাহলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, অতঃপর মেয়েটি একশত বিশটি সোনার দিনারের বদলায় রাজি হলো। তারপর সে যখন ব্যভিচারের জন্য তার দু’পায়ের উপর বসল তখন মেয়েটি বলল: আল্লাহকে ভয় কর, সতীত্বের হক্ব আদায় ব্যতীত তা নষ্ট করো না। তখন সে আল্লাহর ভয়ে উঠে গেল, ব্যভিচার করেনি এবং একশত বিশটি দিনারও ছেড়ে দিল। তা স্মরণ করে বলল, হে আল্লাহ, তুমিতো জন, আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছিলাম কাজেই আমাদের এ বিপদ থেকে তুমি রক্ষা কর। পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিন্তু এতে তারা বের হতে পারল না, অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি তার আমানত আদায়ের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করে বলল, তার নিকট এক শ্রমিকের পয়সা বাকী ছিল, সে তা না নিয়ে চলে গেলে সে তা ব্যবসার মাধ্যমে বাড়িয়েছে, বাড়তে বাড়তে উঁট, গরু, ছাগল এবং রাখালসহ বহু সম্পদ হয়েছে। তারপর একদিন সে ব্যক্তি এসে তার পারিশ্রমিক চাইলে সবগুলো দিয়ে দিল। তা স্মরণ করে বলল, হে আল্লাহ, তুমিতো জান, আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছিলাম কাজেই তুমি আজ আমাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা কর, ফলে পাথরটি সরে গেল এবং তারা সকলেই গর্ত থেকে বের হয়ে চলে গেল।”[2]

এতে প্রমাণিত হয় যে, সৎ আমল দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ। আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের অসীলা বা আবু বকর সিদ্দিক, উমর, আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) বা আহলে বাইতের কারো অথবা তাদের মত অন্য কারো সম্মানের অসীলা গ্রহণ করার কোনো ভিত্তি নেই বরং তা বিদ‘আত। শর‘ঈ অসীলা হলো: আল্লাহর নাম বা গুণাবলী বা তার প্রতি ঈমানের দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা। যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট চাচ্ছি তোমার প্রতি ঈমানের অসিলায় বা তোমার নবীর প্রতি ঈমানের অসিলায়, বা তোমার প্রতি আমার মহব্বতের অসীলায় বা তোমার নবীর প্রতি আমার মহব্বতের অসীলায়, তা ভালো আর এটিই শর‘ঈ অসীলা।

অথবা তাওহীদের দ্বারা অসীলা গ্রহণ, যেমন কেউ বলল: হে আল্লাহ, আমি তোমারই নিকট চাই, কেননা আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাসক নেই, তুমি এক ও একক সত্তা। এটিও ভালো। অথবা মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার, সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থাকার দ্বারা অসীলা গ্রহণ করা, এ সবগুলোই সৎ আমলের অসীলা গ্রহণ। আর এগুলোই আলেমগণ স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের অসীলা বা অন্য কারো সম্মানের অসীলা গ্রহণ করা বিদ‘আত। পূর্বে তা উল্লেখ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ আলেমের মত হলো যে, তা জায়েয নেই।

>
[1] আহমাদ,২২৪৪৩, আবু দাউদ১৪৯৩ এবং তিরমিযী ৩৪৭৫।

[2] বুখারী শরীফ ২২১৫, মুসলিম শরীফ ২৭৪৩।