বিতর মূলতঃ এক রাক‘আত। কারণ যত ছালাতই আদায় করা হোক এক রাক‘আত আদায় না করলে বিতর হবে না। এ মর্মে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এক রাক‘আত বলে কোন ছালাতই নেই, এই কথাই সমাজে বেশী প্রচলিত। উক্ত মর্মে কিছু উদ্ভট বর্ণনাও উল্লেখ করা হয়।

(أ) عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ أَنَّ النَّبِىَّ نَهَى عَنِ الْبُتَيْرَاءِ أَنْ يُّصَلِّىَ الرَّجُلُ وَاحِدَةً يُوْتِرُ بِهَا.

(ক) আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন। তাই কোন ব্যক্তি যেন এক রাক‘আত ছালাত আদায় করে বিজোড় না করে।[1]

তাহক্বীক্ব : আব্দুল হক্ব বলেন, উক্ত বর্ণনার সনদে ওছমান বিন মুহাম্মাদ বিন রবী‘আহ রয়েছে।[2] ইমাম নববী বলেন, এক রাক‘আত বিতর নিষেধ মর্মে মুহাম্মাদ বিন কা‘ব-এর হাদীছ মুরসাল ও যঈফ।[3] উক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য না হলেও ‘হেদায়ার’ ভাষ্য গ্রন্থ ‘আল-ইনাইয়াহ’ কিতাবে তাকে খুব প্রসিদ্ধ বলে দাবী করা হয়েছে। অর্থাৎ এক রাক‘আত বিতর পড়ার বিরোধিতা করা হয়েছে।[4]

(ب) عَنْ حُصَيْنٍ قَالَ بَلَغَ ابْنَ مَسْعُوْدٍ أَنَّ سَعْدًا يُوْتِرُ بِرَكْعَةٍ قَالَ مَا أَجْزَأْتُ رَكْعَةً قَطُّ

(খ) হুছাইন (রাঃ) বলেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে যখন এই কথা পৌঁছল যে, সা‘দ (রাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়েন। তখন তিনি বললেন, আমি এক রাক‘আত ছালাতকে কখনো যথেষ্ট মনে করিনি’।[5] অন্যত্র সরাসরি তাঁর পক্ষ থেকে বর্ণনা এসেছে, عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ مَا أَجْزَأْتُ رَكْعَةً قَطُّ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি কখনো এক রাক‘আত ছালাত যথেষ্ট মনে করি না’।[6]

তাহক্বীক্ব : ইমাম নববী (রাঃ) উক্ত আছার উল্লেখ করার পর বলেন, এটি যঈফ ও মাওকূফ। ইবনু মাসঊদের সাথে হুছাইনের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। ইবনু হাজার আসক্বালানীও তাই বলেছেন।[7]

(ج) قَالَ أَبُوْ حَنِيْفَةَ لاَ يَصِحُّ الْإِيْتَارُ بِوَاحِدَةٍ وَلاَ تَكُوْنُ الرَّكْعَةُ الْوَاحِدَةُ صَلاَةً قَطُّ.

(গ) আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, ‘এক রাক‘আত বিতর পড়া ঠিক নয়। তাছাড়া ছালাত কখনো এক রাক‘আত হয় না’।[8]

তাহক্বীক্ব : উক্ত বক্তব্যের কোন সত্যতা নেই। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) যেহেতু এক রাক‘আত বিতর পড়েছেন এবং পড়তে বলেছেন, সেহেতু অন্য কারো ব্যক্তিগত কথার কোন মূল্য নেই।

জ্ঞাতব্য : ইমাম ত্বাহাবী বলেন, ‘বিতর ছালাত এক রাক‘আতের অধিক। এক রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি।[9] হেদায়া কিতাবে বিতর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, কিন্তু এক রাক‘আত বিতর সম্পর্কে কোন কথা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তিন রাক‘আতের কথা বলা হয়েছে।[10] মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান তার ‘তালীমুস্-সালাত’ বইয়ে বিতর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন প্রায় ছয় পৃষ্ঠা। কিন্তু কোথাও এক রাক‘আত বিতর-এর কথা উল্লেখ করেননি।[11] ড. ইলিয়াস ফায়সাল ‘নবীজীর নামায’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বিতর সর্বনিম্ন তিন রাকাআত। আমরা জানি যে, দু’ রাকাআতের নিচে কোনো নামায নেই। .. হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায় যে, বিতর হল সর্বনিম্ন তিন রাকাআত’।[12] ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইয়ে ৩২০ থেকে ৩৩২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিতর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও এক রাক‘আত বিতরের কথা বলা হয়নি। বরং বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছে যে, তিন রাক‘আতের কম বিতর পড়া যায় না। ভাবখানা এমন যে, তারা জানেন না বা হাদীছে কোন দিন দেখেননি যে বিতর ছালাত এক রাক‘আতও আছে।

আমরা শুধু এতটুকু বলব যে, সাধারণ মুছল্লীদেরকে যে কৌশলেই ধোঁকা দেয়া হোক, আল্লাহ সে বিষয়ে সর্বাধিক অবগত। কেউই তাঁর আয়ত্বের বাইরে নয়। অতএব সাবধান!

[1]. ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তামহীদ, আল-আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ; আলোচনা দ্রঃ টীকা, মুওয়াত্ত্বা মালেক, তাহক্বীক্ব : ড. তাক্বিউদ্দীন আন-নাদভী হা/২৫৮।

[2]. فى إسناده عثمان بن محمد بن ربيعة والغالب على حديثه الوهم আল-আহকামুল উস্তা ২/৫০ পৃঃ।

[3]. حديث محمد بن كعب في النهي عن البتيراء مرسل ضعيف ...নববী, খুলাছাতুল আহকাম হা/১৮৮৮; কাশফুল খাফা।

[4]. اُشْتُهِرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ الْبُتَيْرَاءِ হেদায়াহ ২/১৮৪ পৃঃ।

[5]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৯৪২২।

[6]. খুলাছাতুল আহকাম ফী মুহিম্মাতিস সুনান ওয়া ক্বাওয়াইদিল ইসলাম হা/১৮৮৯।

[7]. তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্ব মুহাম্মাদ ২/২২ পৃঃ।

[8]. ছহীহ মুসলিম শরহে নববী ১/২৫৩ পৃঃ, হা/১৭৫১-এর হাদীছের আলোচনা দ্রঃ।

[9]. ত্বাহাবী হা/১৭৩৯-এর আলোচনা দেখুন أَنَّ الْوِتْرَ أَكْثَرُ مِنْ رَكْعَةٍ وَلَمْ يُرْوَ فِى الرَّكْعَةِ شَيْءٌ।

[10]. হেদায়া ১/১৪৪-১৪৫ পৃঃ।

[11]. ঐ, পৃঃ ১৬৯-১৭৪।

[12]. ঐ, পৃঃ ২৪১।