(১৭) তাশাহ্হুদে বসে শাহাদাত আঙ্গুল একবার উঠানো

(১৭) তাশাহ্হুদে বসে শাহাদাত আঙ্গুল একবার উঠানো :

আঙ্গুল দ্বারা একবার ইশারা করার কোন দলীল নেই। এর পক্ষে কোন জাল হাদীছও নেই। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, প্রচলিত আছে যে, ‘লা ইলা-হা’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাতে হবে। কেউ বলেন, ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় উঠাতে হবে। এগুলো সবই ব্যক্তি মতামত। হাদীছে এগুলোর কোন দলীল নেই। ছহীহ সনদে নেই, যঈফ সনদে নেই, এমনকি জাল সনদেও নেই। অনুরূপভাবে আঙ্গুল উঠিয়ে রেখে দেয়ারও কোন ভিত্তি নেই। বরং ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সালাম পর্যন্ত আঙ্গুল নড়াতে থাকতে হবে।[1] উল্লেখ্য যে, অনেকে আঙ্গুল উঠিয়ে রাখে কিন্তু ইশারা করে না। এটাও ঠিক নয়। কারণ উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّ النَّبِىَّ كَانَ يُشِيْرُ بِأُصْبُعِهِ إِذَا دَعَا وَلاَ يُحَرِّكُهَا.

আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন দু‘আ করতেন তখন আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। কিন্তু নাড়াতেন না।[2]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[3] ‘আঙ্গুল নাড়াতেন না’ অংশটুকু ছহীহ হাদীছে নেই। বরং আঙ্গুল নাড়ানোর পক্ষেই ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন- ثُمَّ رَفَعَ أُصْبُعَهُ فَرَأَيْتُهُ يُحَرِّكُهَا يَدْعُو بِهَا ‘অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুল উঠাতেন। রাবী ওয়ায়েল বিন হুজর বলেন, আমি দেখতাম তিনি আঙ্গুল নাড়িয়ে দু‘আ করতেন’।[4]

অতএব তাশাহ্হুদ পড়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কিংবা শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা সর্বদা ইশারা করবে। এ সময় দৃষ্টি থাকবে আঙ্গুলের মাথায়।[5] দুই তাশাহ্হুদেই ইশারা করবে।[6]

عَنِ ابْنِ أَبْزَى أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يُشِيْرُ بِأُصْبُعِهِ السَّبَّاحَةِ فِى الصَّلاَةِ.

ইবনু আবযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) ছালাতে তার শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।[7]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا قَعَدَ يَدْعُو وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ السَّبَّابَةِ وَوَضَعَ إِبْهَامَهُ عَلَى أُصْبُعِهِ الْوُسْطَى وَيُلْقِمُ كَفَّهُ الْيُسْرَى رُكْبَتَهُ.

আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন তাশাহ্হুদে বসতেন, তখন দু‘আ করতেন। তিনি ডান হাত ডান উরুর উপর এবং বাম হাত বাম উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন এবং বৃদ্ধা আঙ্গুল মধ্যমা আঙ্গুলের উপর রাখতেন। আর বাম হাতের পাতা দ্বারা বাম হাঁটু চেপে ধরতেন।[8] উল্লেখ্য যে, অন্য হাদীছে এসেছে, তিপ্পান্নের ন্যায় ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে।[9]

[1]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৯০৬-এর টীকা দ্রঃ, ১/২৮৫ পৃঃ- والظاهر من الحديث أن الاشارة والرفع عقب الجلوس وما يقال إن الرفع إنما هو عند قوله لا إله وفي المذهب الآخر عند قوله إلا الله فكله رأي لا دليل عليه من السنة، وقول ابن حجو الفقيه كما نقله في المرقاة ويسن... أن يخصص الرفع بكونه مع إلا الله لما في رواية لمسلم. فوهم محض، فإنه لاأصل لذلك لا في مسلم ولا في غيره من كتب السنة لا باسناده صحيح ولاضعيف بل ولا موضوع. ومثله وضع الأصبع بعد الرفع لاأصل له بل ظاهر الحديث الآتى (৯০৭) وغيره استمرار تحريكها إلى السلام.।

[2]. আবুদাঊদ হা/৯৮৯, ১/১৪২ পৃঃ; নাসাঈ, আল-কুবরা ১/৩৭২; বায়হাক্বী ২/১৩২; মিশকাত হা/৯১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮১৫, ২/৩০৬ পৃঃ।

[3]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৯৮৯; তামামুল মিন্না, পৃঃ ২১৮।

[4]. নাসাঈ হা/৮৮৯, ১/১০৩ পৃঃ ও ১২৬৮, ১/১৪২ পৃঃ সনদ ছহীহ।

[5]. নাসাঈ হা/১২৭৫, ১/১৪২ পৃঃ, হা/১১৬০, ১/১৩০ পৃঃ।

[6]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৯০৩; সনদ ছহীহ, ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ১৫৯।

[7]. আহমাদ হা/১৫৪০৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩১৮১।

[8]. ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৬, ১৩৩৮, ১/২১৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮৪); মিশকাত হা/৯০৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪৭, ২/৩০৪ পৃঃ।

[9]. ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৮, ১/২১৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮৬); মিশকাত হা/৯০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪৬, ২/৩০৩ পৃঃ।