(৪) নীরবে আমীন বলা :

সুন্নাত হল সরবে আমীন বলা। নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তার সবই যঈফ ও জাল।

(أ) عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ صَلَّى مَعَ رَسُوْلِ اللهِ فَلَمَّا بَلَغَ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَاالضَّالِّيْنَ قَالَ آَمِيْنِ وَأَخْفَى بِهَا صَوْتَهُ.

(ক) আলক্বামা ইবনু ওয়ায়েল তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করেন। যখন তিনি ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালাযযা-ল্লিন’ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন আমীন বললেন। তিনি আওয়ায করলেন নিম্নস্বরে।[1]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,

سَمِعْت مُحَمَّدًا يَقُوْلُ حَدِيْثُ سُفْيَانَ أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ شُعْبَةَ فِي هَذَا وَأَخْطَأَ شُعْبَةُ فِىْ مَوَاضِعَ مِنْ هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ وَإِنَّمَا هُوَ حُجْرُ بْنُ عَنْبَسٍ وَيُكْنَى أَبَا السَّكَنِ وَزَادَ فِيهِ عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ وَلَيْسَ فِيْهِ عَنْ عَلْقَمَةَ وَإِنَّمَا هُوَ عَنْ حُجْرِ بْنِ عَنْبَسٍ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ وَقَالَ وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ وَإِنَّمَا هُوَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারীকে) বলতে শুনেছি যে, সুফিয়ানের হাদীছ শু‘বার হাদীছের চেয়ে অধিক ছহীহ। এই হাদীছে শু‘বা অনেক জায়গায় ভুল করেছে। সে বর্ণনা করেছে হুজর আবুল আনবাস থেকে। অথচ তিনি হলেন, হুজর বিন আনবাস। তার উপাধি আবু সাকান। সে বৃদ্ধি করেছে আলক্বামা বিন ওয়ায়েল। অথচ তাতে আলক্বামা নেই। মূলত তা হবে ওয়ায়েল বিন হুজর থেকে হুজর বিন আনবাস। এছাড়া সে বলেছে, ‘তিনি নিম্নস্বরে বলেন’। অথচ তা হবে ‘তিনি তার স্বর উচ্চ করেন’।[2] ইমাম তিরমিযী আরো বলেন, سَأَلْتُ أَبَا زُرْعَةَ عَنْ هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَالَ حَدِيْثُ سُفْيَانَ فِيْ هَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ شُعْبَةَ ‘এই হাদীছ সম্পর্কে আমি আবু যুর‘আকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, শু‘বার হাদীছের চেয়ে সুফিয়ান বর্ণিত হাদীছ অধিকতর ছহীহ।[3]

(ب) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ إِذَا تَلاَ (غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ) قَالَ آمِيْنَ حَتَّى يَسْمَعَ مَنْ يَلِيْهِ مِنَ الصَّفِّ الأَوَّلِ.

(খ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ তেলাওয়াত করতেন, তখন এমনভাবে ‘আমীন’ বলতেন, যাতে প্রথম কাতারে যারা নিকটে থাকত তারা তা শুনতে পেত।[4]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে বাশার বিন রাফে‘ ও আবু আব্দুল্লাহ নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে।[5] তাছাড়া উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার পক্ষে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে ছহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে।[6]

জ্ঞাতব্য : উক্ত বর্ণনাগুলো ছাড়াও কতিপয় ছাহাবী ও তাবেঈর নামে কিছু আছার বর্ণিত হয়েছে, যা বাজারে প্রচলিত ‘নামায শিক্ষা’ পুস্তকগুলোতে পাওয়া যায়।[7] সেগুলো দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। কারণ সেগুলোর কোনটিই ছহীহ নয়। আমাদেরকে ছহীহ বর্ণনার সামনে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

[1]. তিরমিযী ১/৫৮, হা/২৪৮-এর শেষাংশ।

[2]. তিরমিযী ১/৫৮ পৃঃ।

[3]. তিরমিযী ১/৫৮ পৃঃ, হা/২৪৮-এর শেষাংশ।

[4]. আবুদাঊদ হা/৯৩৪।

[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৫২।

[6]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৫৫৪; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৫২-এর আলোচনা দ্রঃ-فإذا لم يثبت عن غير أبي هريرة وابن الزبير من الصحابة خلاف الجهر الذي صح عنهما فالقلب يطمئن للأخذ بذلك أيضا ولا أعلم الآن أثرا يخالف ذلك والله أعلم।

[7]. ত্বাহাবী ১/৯৯ পৃঃ; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ২/৮৭; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৮৯৪১, ২/৫৩৬; মাজমাউয যাওয়েদ ১/১৮৫ পৃঃ; কানযুল উম্মাল ৪/২৪৯; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ৩১৯।