মৃত্যুর পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামার নেতৃত্বে রোমানদের বিরুদ্ধে এক সেনাবাহিনী প্রেরণের সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন। মুসলিমদের অধিকাংশ লোক এবং নেতৃস্থানীয় সকলেই এই বাহিনীতে ছিলেন। মদীনার বাইরে আল জুরফ-এ ক্যাম্প করে এই বাহিনী অবস্থান করছিল। সকলে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে অভিযান শুরুর কথা ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ ছিলেন। যাত্রার আদেশ দেওয়ার পরই তিনি মারা যান। রোমানদের বিরুদ্ধে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছিল, যায়েদসহ অনেক বড় বড় সাহাবী শহীদ হয়েছিলেন। পরের বৎসর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সৈন্য নিয়ে তাবুক গিয়েছিলেন। তার পরের বছরই উসামার নেতৃত্বে এই অভিযানের আদেশ দিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরই আরবের কিছু গোত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মদীনার ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ সময়ে উসামার বাহিনীকে অভিযানে না পাঠানোর জন্য নেতৃস্থানীয় সাহাবীগণ পরামর্শ দেন খলিফাকে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার সমস্ত সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দেন। খলিফাকে অবশ্যই নবীর পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে এটাই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

এমনকি উসামার মত অল্পবয়স্ক সাহাবীকে সেনাপতিত্ব থেকে সরিয়ে অন্য কোনো বয়স্ক সাহাবীকে সেনাপতি নিযুক্ত করার প্রস্তাব করা হলে তিনি রেগে গিয়ে বলেছিলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে নিয়োগ দিয়েছেন আবু বকর তাকে অপসারণ করবে? আবু বকর একাই সকলের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন এবং সেটাই ছিল সঠিক। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই যে সবসময় সঠিক ও গ্রহণযোগ্য তা নয়। এই দূরদর্শিতা, জ্ঞান, ইয়াকীন, বিশুদ্ধ ঈমান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবু বকরের ঘনিষ্ঠতার ফল।

উসামা রওয়ানা হয়ে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিলেন। খলিফা পাশে পাশে পায়ে হঁটে চলছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-নির্দেশ দিচ্ছিলেন। উসামার শত অনুরোধেও তিনি ঘোড়ায় চড়তে রাজী হননি, তাকেও নেমে তাঁর পাশে হেঁটে চলতে দেননি। বলেছিলেন: আমার পা যদি আল্লাহর রাস্তায় ধূলি-ধূসরিত হয় কিছু দূর, তাতে ক্ষতি কি? ওমরকে তিনি তাঁর কাজের জন্য উসামার কাছ থেকে চেয়ে নিলেন।

যুদ্ধের কিছু নিয়মনীতি স্পষ্টভাবে তিনি জানিয়ে দিলেন। যেমন:

১. বিশ্বসঘাতকতা না করা,

২. চুরি না করা,

৩. বিশ্বস্ত থাকা,

৪. শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের হত্যা না করা,

৫. ফলবান গাছ না কাটা,

৬. বিধর্মী পুরোহিতদের বিরক্ত না করা,

৭. বিসমিল্লাহ বলে কোনো খাবার খাওয়া,

৮. প্রতারণা না করা,

৯. লাশ বিকৃত না করা।

আরব গোত্রগুলির মধ্যে যারা বিদ্রোহ করেছিল, এই বাহিনী তাদের মাঝে ভীতি ও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর মাত্র তিনদিন পরেই এ বাহিনী পাঠানো হয়েছিল তখনকার সবচেয়ে শক্তিধর রোমানদের বিরুদ্ধে।

সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদীনার ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এন্টওয়ার্পে অবস্থান নিল-সে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল। একই দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর খবর ও উসামার অভিযানের খবর তার কাছে পৌঁছাল। সে আর কোনো বাহিনী পাঠাল না।

উসামা রোমান ভূমিতে গেলেন, জিযিয়া গ্রহণ করলেন, সন্ধিচুক্তি করলেন এবং নিরাপদে ফিরে এলেন। এভাবেই আল্লাহর উপর নির্ভরতা ও দৃঢ় বিশ্বাসের ফলাফল আসে।