গির্জার প্রভাব থেকে ইউরোপের মানুষগণ তখনও পুরোপুরি মুক্তি লাভ না করলেও বাষ্পের শক্তি আর যন্ত্র আবিষ্কারের ধারাবাহিকতা শুরু হতে না হতেই তাদের জীবনধারা সম্পূর্ণরূপে বদলে যেতে থাকে। মানুষ কৃষিকাজ বাদ দিয়ে শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ন্তসামন্তপ্রভু ও জায়গীরদাররা তাদের বাপ-দাদার পুরনো ঐতিহ্য ছেড়ে দিয়ে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে থাকে। এভাবে একপর্যায়ে অনেকটা রাতারাতিই তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। সেসব শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের তারা অন্যায়ভাবে ব্যবহার করতে থাকে। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয় নানারকম জুলুম-অত্যাচার আর শোষণের খড়্গ। ফলে জালেম পুঁজিবাদী আর মজলুম শ্রমিক নামে মানুষ দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অত্যাচারের এই নতুন পন্থা উদ্ভাবনের ফলে, পাশাপাশি ধর্মের পতাকাবাহীদের অত্যাচারী শ্রেণীদের সহায়তা কিংবা জুলুম-অত্যাচারের ক্ষেত্রে নীরবতা অবলম্বন সাধারণ মানুষের মনে ধর্মের বিরুদ্ধে নতুন করে ক্ষোভ আর ঘৃণার আগুন জ্বালায়। এক পর্যায়ে মানুষ আল্লাহর স্তিঅস্তিত্বে সন্দেহ করতে শুরু করে। ধর্মকে তারা জুলুমের হাতিয়ার কিংবা নিদেনপক্ষ সহায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করে। ধর্ম তাদের পার্থিব সমস্যার কোনো সমাধান দিতে সম্পূর্ণ অক্ষম- এমন বিশ্বাস তাদের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে ওঠে। আর এভাবেই মানুষের জীবন থেকে ধর্মের প্রভাব-বলয় ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যেতে থাকে। ফলে মানুষ নিজেই নিজের পার্থিব সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন উপায়-উপকরণ খুঁজতে থাকে। সত্যি কথা কি- এই ক্ষেত্রেও ইউরোপের গির্জা মানুষের কোনো সহায়তা করতে পারে নি।