এই বামরাই তো গ্রেফতারকৃত স্বঘোষিত নাস্তিকদের মুক্তি চেয়েছেন বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে। এরাই আবার কিভাবে বিশাল জনগোষ্ঠীর মত প্রকাশের সমাবেশে প্রতিরোধের কথা বলেন?! আসলে অনেক আগে থেকেই স্ববিরোধিতা ও স্বার্থপরতা এদের স্বভাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এরা নিজেদের স্বার্থের জন্য হেন কাজ নেই করে না। হেন কথা নেই বলে না। নিজেদের সুবিধার জন্য এরা টুপি পরে সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে বছরে দুয়েকবার মসজিদে যায়। কখনো গণ্যমান্য রাজনীতিবিদ কেউ মারা গেলে তার জানাজায় অংশ নেয়। এই মেনন-ইনু-শাহরিয়ার কবির গংরাই পেটু-পূজারী খাজাদের দখলে থাকা ফাউন্ডেশনে গিয়ে মিলাদুন্নবীসহ নানা হালুয়া-রুটির প্রোগ্রামে হাজির হয়ে ভাগ বসায়।

কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ যথার্থই লিখেছেন, ‘যাঁরা আগে মার্ক্সীয় তত্ত্ব আওড়াতেন, তাঁরা এখন আম-ছালাতত্ত্বের প্রবক্তা হয়েছেন। মার্ক্সবাদ, লেনিনবাদ ও মাও সে তুংয়ের চিন্তাধারা বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছে। গত ৪২ বছরে বুড়ো মার্ক্সের উম্মতরা—তাঁরা মস্কো তরিকার হোন বা বেইজিং তরিকার হোন—সব বেসামরিক ও সামরিক শাসকের স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে এখন তাঁরা প্রায় বিলুপ্ত এক প্রজাতি। কোনো ব্যক্তির কাছে একটি ছালার যে কদর, বড় শাসক দলগুলোর কাছে বামদের সে দামও নেই। শাসক দলগুলোর কাছে বঙ্গীয় বামরা ছেঁড়া ছালার চেয়ে বেশি কিছু নন।’ [দৈনিক প্রথম আলো, ০৯/০৪/১৩]

বামরা ফতোয়ার বিরুদ্ধে কত আন্দোলনই না করে ব্যর্থ হলো। অথচ এরাই দুদিন পরপর নিত্যনতুন ফতোয়া জারি করে। বামদের সাম্প্রতিক ফতোয়া হলো, আস্তিক-নাস্তিক নির্ধারণ করবেন আল্লাহ। এই ‘হুজুর’রা আবার কে? এই শিক্ষিত অর্বাচীনদের কে বুঝাবে নাস্তিক ফতোয়া দেবার দায়িত্ব আল্লাহর নয়। আল্লাহ যে বিধান ও আইন দিয়েছেন, তার আলোকে আল্লাহর বিধান বিষয়ে পারদর্শী আল্লাহর বান্দা তথা আলেম-উলামাই এ বিষয়ে ফতোয়া দেবেন।

এরাই প্রধানমন্ত্রীকে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নারীনীতি পাশ, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বিলুপ্তি এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনে বাধ্য করে তাঁর ও তাঁর দলের মহা সর্বনাশ করেছে। এরাই সিংহভাগ মুসলমানের রক্তে কেনা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ছেড়েছে। এরাই বেপথু শাহবাগীদের নেতা ইমরানকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণের সাহস দিয়েছে। এরাই আজ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিককে দুই শিবিরে বিভক্ত করে দেশের নিরাপত্তা, শান্তি ও অগ্রগতিকে প্রশ্ন ও শঙ্কার মুখে ঠেলে দিয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এই বামেরা প্রতিটি সরকারের আমলে তাদের ভোল পাল্টে বড় বড় সব সুযোগ বাগিয়ে নিয়েছে। আজ সারা দেশের আস্তিককূল এই নাস্তিকপ্রধান বামদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীর শান্তির মহান দূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননার প্রতিবাদে লংমার্চের পর শাপলা চত্বরে ঐতিহাসিক যে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো, তাতে বামদের তৈরি করা পরিবহন ধর্মঘট, প্রতিরোধের ঘোষণা এবং গুটিকয় শাহবাগির বৃথা আস্ফালন বালির বাঁধের মতো ভেসে গিয়েছে।

শত বাধাবিপত্তি ডিঙ্গিয়ে পঞ্চাশ ষাট মাইল পথ হেঁটে হেফাজতের সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রায় ত্রিশ লাখের মতো মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন এ দেশে বামদের ঠাঁই নেই। এদেশে রাসূল প্রেমিক লাখ লাখ মুসলিম ঘুমিয়ে নেই। প্রয়োজনে তাঁরা রক্ত দিতে জানেন। পারেন যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও। ৬ মার্চের (২০১৩) সমাবেশে মানুষ যে আপ্যায়ন, পরহিতৈষণা ও স্বার্থত্যাগের অসংখ্য নজির পেশ করেছেন তা এ দেশের ইতিহাসে বিরল। তার দেখা মেলে কেবল মক্কা-মদীনার পবিত্র ভূমিতেই। এ বিশাল সমাবেশে আগত নবীপ্রেমিকরা সেদিন যদি থুতুও নিক্ষেপ করতেন তবে তাতেও শাহবাগের সরকারি নিরাপত্তায় থাকা নব্য দেশপ্রেমিকরা ভেসে যেত। উপস্থিত আশেকে রাসূলদের এক সিকিভাগ মূত্রত্যাগ করলে তাতে শাহবাগ বানের তোড়ে ভেসে যেত।

কিন্তু ইসলামের শান্তির শিক্ষায় দীক্ষিত লাখো মুসলিম সব রাজনীতিবিদকে হতাশ করে জানিয়ে দিয়েছে আমরা অশান্তি চাই না। শান্তিই আমাদের প্রধান অন্বেষা। তাই তারা পরিস্থিতি অনুকূল থাকলেও তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ানো স্বঘোষিত শত্রুদের দিকে পা বাড়ায় নি। অথচ এরপরও হেফাজতের শান্তিপ্রিয় হরতালের বিরুদ্ধে এই বেয়াদব শাহবাগিরা লাঠি হাতে রাজপথে নেমেছে। গণতন্ত্রের কবর রচনা করে ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডা-পাণ্ডারাও বাংলার সবুজ ভূমিকে রক্তে লাল করেছে আলেম-তালেবে ইলমদের পবিত্র রক্তে। এর পেছনেও প্রধান ভূমিকা রেখেছে এই সুবিধবাদী বামেরা। হেফাজতের কর্মসূচির অপব্যাখ্যা করে এরাই রাজপথে নামিয়ে দিয়েছে তাদের নারীকর্মীদের।

সময় এসেছে এই কুলাঙ্গার বামগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। সময় হয়েছে দল-মত নির্বিশেষে সকল তাওহিদী জনতার প্রিয়তম ব্যক্তিত্ব রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার। আল্লাহর আইনকে যারা বুঝে না বুঝে বর্বর ও মধ্যযুগীয় বলে আখ্যায়িত করে আজই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।