দাম্পত্য জীবন তথা পরিবার সংরক্ষণ ও সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দর জীবন যাপনে স্ত্রীর ভূমিকা

মুসলিম নারীর জেনে রাখা উচিত যে, সৌভাগ্য, ভালোবাসা ও অনুকম্পা তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করবে, যখন সে সচ্চরিত্রবান ও দ্বীনদার হবে; সে তার নিজের জন্য উপকারী ইতিবাচক দিকগুলো জেনে নিবে; যাতে সে তার সীমা অতিক্রম ও লঙ্ঘন না করে; সে তার স্বামীর আহ্বানে সাড়া দিবে; কারণ, তাকে পরিচালনার ব্যাপারে স্বামীর উপর দায়িত্ব রয়েছে, স্বামী তাকে হেফাযত করবে, সংরক্ষণ করবে এবং তার জন্য ব্যয় করবে; সুতরাং স্ত্রীর উপর আবশ্যক হলো, স্বামীর আনুগত্য করা, স্বামীর জন্য সে তার নিজকে সংরক্ষণের নিশ্চয়তা বিধান করা এবং স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা; আর স্ত্রী তার নিজের কাজ-কর্ম সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিবে ও তা যথাযথভাবে পালন করবে এবং সে তার নিজের ও সংসারের প্রতি যত্নবান হবে; সে হবে পবিত্রা স্ত্রী, মমতাময়ী মাতা, তার স্বামীর সংসারের রক্ষণাবেক্ষণকারিনী দায়িত্বশীলা, যে দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহী করতে হবে। সে তার স্বামীর ভালো ও সৌন্দর্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি দিবে, তার অবদান ও উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন-যাপনের বিষয়টিকে অবজ্ঞা ও অস্বীকার করবে না; এই ধরনের অবজ্ঞা প্রদর্শন ও অস্বীকার করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন, তিনি বলেছেন:

« أريت النار فإذا أكثر أهلها النساء يكفرن » . قيل : أيكفرن بالله ؟ قال : « يكفرن العشير ويكفرن الإحسان ؛ لو أحسنت إلى إحداهن الدهر ثم رأت منك شيئا قالت : ما رأيت منك خير قط » . ( رواه البخاري ) .

“আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়; (তখন আমি দেখি) তার অধিবাসীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক, যারা কুফরী করে। জিজ্ঞাসা করা হল: তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে? তিনি বললেন: “তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং ইহসান (সদ্ব্যবহার) অস্বীকার করে; তুমি যদি দীর্ঘকাল তাদের কারও প্রতি ইহসান করে থাক, এরপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখলেই বলে, আমি কখনও তোমার কাছ থেকে ভাল ব্যবহার পাইনি।”[1]

সুতরাং আবশ্যক হল ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করা এবং অপরাধ বা ভুল-ভ্রান্তির প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করা ... স্বামী উপস্থিত থাকলে তার প্রতি দুর্ব্যবহার করবে না, আর স্বামী অনুপস্থিত থাকলে, স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।

এর মাধ্যমেই পারস্পরিক সন্তুষ্টি অর্জিত হবে, সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব স্থায়ী হবে এবং আন্তরিকতা, ভালবাসা ও সহমর্মিতা প্রাধান্য বিস্তার করবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষায়:

« أيما امرأة ماتت وزوجها عنها راض دخلت الجنة » . (رواه الترمذي و ابن ماجه) .

“যে নারীই তার প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় মারা যাবে, সে নারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[2]

সুতরাং হে মুসলিম জাতি! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ যে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও একতা অর্জন করার মাধ্যমে সৌভাগ্য পরিপূর্ণতা লাভ করবে, শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ তৈরি হবে এবং তরুণ সমাজ বেড়ে উঠবে এমন এক মর্যাদাবান ঘরে, যা ভালাবাসার দ্বারা পরিপূর্ণ, পারস্পরিক বুঝাপড়ার দ্বারা সমৃদ্ধ ... মাতৃত্বের সহানুভূতিশীলতা ও পিতৃত্বের করুণার মাঝে (বিদ্যমান) ... তারা অবস্থান করবে অনেক দূরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও বিতর্কের শোরগোল এবং একে অন্যের সাথে বাড়াবাড়ি থেকে; যাতে করে সেখানে থাকবে না কোনো প্রকার অনৈক্য, মতবিরোধ ও দুর্ব্যবহার, কাছে কিংবা দূরে। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿... رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [الفرقان: ٧4]

“ ... হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা হবে আমাদের জন্য চোখজুড়ানো। আর আপনি আমাদেরকে করুন মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য।”- (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪)।

>
[1] বুখারী, আল-জামে‘উস সহীহ (৫১৯৭)

[2] হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযী (১১৬১) এবং তিনি তাকে ‘হাসান’ বলেছেন; ইবনু মাজাহ (১৮৫৪); হাকেম, ৪/১৭৩ এবং তিনি বলেছেন: হাদিসটির সনদ সহীহ (বিশুদ্ধ)।