আমি প্রশ্নটি আগেও করেছিলাম। আশা করি এর উত্তর দিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন কারণ আমি এর কোনো সন্তোষজনক জবাব পাই নি। প্রশ্নটি হলো তারাবীহ সম্পর্কে, তা কি ১১ রাক্‌‘আত নাকি ২০ রাক্‌‘আত? সুন্নাহ মতে তো তা ১১ রাক্‌‘আত । শাইখ আল-আলবানী –রহিমাহুল্লাহ –“আল-ক্বিয়াম ওয়া আত-তারাউয়ীহ”-বইতে বলেছেন (তা) ১১ রাক্‌‘আত । কেউ কেউ সেই মাসজিদে যায় যেখানে ১১ রাক্‌‘আত সালাত আদায় হয়, আবার অনেকে সেই মাসজিদে যায় যেখানে ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় হয়। তাই এই মাসআলাটি এখানে যুক্তরাষ্ট্রে সংবেদনশীল হয়ে গেছে। যে ১১ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করে সে ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায়কারীকে দোষারোপ করে; আবার এর বিপরীতটিও হয়। তাই (এই ব্যাপারটি নিয়ে) ফিতনাহ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আল-মাসজিদ আল-হারামেও ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করা হয়।
কেন আল-মাসজিদ আল-হারাম ও আল-মাসজিদ আন-নাবাউয়ীতে সুন্নাহ থেকে বিপরীত করা হয়? কেন তারা আল-মাসজিদ আল-হারাম ও আল-মাসজিদ আন-নাবাউয়ী-তে ২০ রাক্‌‘আত তারাউয়ীহ-এর সালাত আদায় করেন?

ফাত্‌ওয়া নং : 9036
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

আমরা মনে করি না যে ‘আলিমগণের মধ্যে ইজতিহাদী মাসআলাসমূহ নিয়ে একজন মুসলিমের এ ধরনের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিৎ যা মুসলিমদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনাহ সৃষ্টির কারণ হয়।

যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ১০ রাক্‌‘আত আদায় করে উইতর (বিতর)-এর সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে এবং ইমামের সাথে তারাউয়ীহর সালাত পূর্ণ করে না, তার সম্পর্কিত মাস‘আলাহর ব্যাপারে বলতে গিয়ে শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন :

“এটি খুবই দুঃখজনক যে আমরা এই উন্মুক্ত ইসলামী উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন ব্যাপার নিয়ে বিভেদের সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা সেই ভিন্ন মতকে অন্তরসমূহের বিভেদের কারণ বানিয়ে দেয়। সাহাবীদের সময় থেকেই এই উম্মাতের মাঝে ভিন্ন মত ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরসমূহ ছিল ঐক্যবদ্ধ।

তাই ইসলামের ব্যাপারে একনিষ্ঠ সকলের উপর, বিশেষ করে যুবকদের উপর ওয়াজিব হলো ঐক্যবদ্ধ ও একত্রিত হওয়া; কারণ শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ওঁত পেতে আছে।”

[আশ-শারহ আল-মুমতি‘ (৪২২৫)]

আর এই মাসআলা এর ব্যাপারে দুটি দল বাড়াবাড়ি করেছে। প্রথম দলটি যারা ১১ রাক্‌‘আত এর বেশি পড়েছে তাদের বিরোধিতা করেছে আর তাদের কাজকে বিদ‘আত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর দ্বিতীয় দলটি, শুধু ১১ রাক্‌‘আতই পড়ে ও এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন, তাদের বিরোধিতা করে বলেছে যে, তারা ইজমা‘ এর বিপরীতে গেছে।

চলুন আমরা শুনি সম্মানিত শাইখ ইবনু ‘উসাইমীন-রহিমাহুল্লাহ-এর উপদেশ যেখানে তিনি বলেছেন :

“আমরা এক্ষেত্রে বলব আমাদের উচিৎ না বেশি বাড়াবাড়ি বা অতিরিক্ত কম করা। কেউ কেউ সুন্নাহ্ -তে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং বলে: সুন্নাহ্ তে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো জায়েয নয়। সুতরাং যে তা (১১ রাক্‌‘আত) থেকে বাড়িয়ে পড়ে, সে তার কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে - সে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী।

আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে এটি (এমন ধারনা) ভুল, সে কিভাবে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী হবে যেখানে নবী-(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন :

«مثنى مثنى»

“(তা) দুই দুই ( রাক্‌‘আত ) করে।[1]”

তিনি কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেন নি। আর এটি জানা কথা যে, যিনি রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি তার (রাকা‘আতের) সংখ্যা জানতেন না; কারণ যিনি (সালাতের) পদ্ধতি জানেন না, তার রাক্‌‘আত সংখ্যা না জানারই কথা। আর তিনি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, তিনি রাসূলের বাসার ভিতরে কি হচ্ছে তা জানতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সে ব্যক্তিকে রাক‘আত সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, তাই এটি জানা গেল যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে। সুতরাং, কেউ ১০০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করে ১ রাক্‌‘আত দিয়েও উইতর (বিতর) আদায় করতে পারে।

আর তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী :

«صلوا كما رأيتموني أصلي»

“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।”[2]

এটি তাদের কাছেও সাধারণভাবে (সর্বক্ষেত্রে) প্রযোজ্য (হুকুম) নয়। আর এ কারণেই তারা একবার ৫ রাক্‌‘আত, আর একবার ৭ রাক্‌‘আত, অন্যবার ৯ রাক্‌‘আত দিয়ে উইতর (বিতর) আদায় করা ওয়াজিব মনে করে না। আর আমরা যদি একে (হাদীসকে) সাধারণভাবে প্রযোজ্য ধরে নেই তাহলে আমাদের এ কথা বলতে হবে যে একবার ৫ রাক্‌‘আত, আর একবার ৭ রাক্‌‘আত, অন্যবার ৯ রাক্‌‘আত দিয়ে ধরে ধরে ‘উইতর (বিতর) আদায় করা ওয়াজিব। বরং “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সালাত আদায়ের পদ্ধতি, রাক্‌‘আত সংখ্যা নয় ; কেবল মাত্র যে নির্দিষ্ট রাক্‌‘আত সংখ্যার ব্যাপারে দলীল প্রমাণিত হয়েছে তা ব্যতীত।

আর যাই হোক, একজন মানুষের জন্য যাতে প্রশস্ততা আছে এমন কোন ব্যাপারে লোকদের উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিৎ নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, আমরা দেখেছি যে কিছু ভাইয়েরা এ বিষয়টিতে বেশি জোর প্রয়োগ করে, তারা সেসব ইমামগণের উপর বিদ‘আতের অপবাদ দেয় যারা ১১ রাকা‘আতের বেশি আদায় করে এবং তারা মাসজিদ থেকে বের হয়ে আসে। এক্ষেত্রে তাদের সাওয়াব ছুটে যায়, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেন :

«من قام مع الإمام حتى ينصرف كُتب له قيام ليلة»

رواه الترمذي ( 806 ) وصححه الألباني في صحيح الترمذي ( 646 )

“যে ইমামের সাথে ইমাম (সালাত সমাপ্ত করে) চলে যাওয়া পর্যন্ত ক্বিয়াম করে, তার জন্য সম্পূর্ণ রাতের ক্বিয়াম (এর সাওয়াব) লিখা হবে।”

[এটি বর্ণনা করেছেন আত-তিরমিযী (৮০৬) এবং আল-আলবানী ‘সহীহ্ আত-তিরমিযী’-তে (৬৪৬)-একে সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন]

আবার তারা অনেক সময় ১০ রাক্‌‘আত আদায় করে বসে থাকে ফলে কাতার ভঙ্গ হয়, আবার কখনও তারা কথা বলাবলি করে এবং মুসাল্লীদের সালাতে বিঘ্ন ঘটায়।

আমরা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করি না যে তাঁরা ভাল চান এবং তাঁরা ইজতিহাদ করেছেন, কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক মতে পৌঁছেন না।

আর দ্বিতীয় পক্ষটি হলো তাদের বিপরীত। তারা, যারা ১১ রাক্‌‘আত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাদের কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে: ‘তুমি ইজমা‘ থেকে বের হয়ে গেছ।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :

﴿ وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥ ﴾ [النساء: ١١٥]

“আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করব যেদিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [আন-নিসা: ১১৫]

আর আপনার আগে যারা গত হয়েছে তারা ২৩ রাক্‌‘আত ছাড়া কোন কিছু জানতেন না। এরপর তারা এ মতের বিরোধীদের উপর কঠোরভাবে আক্রমন করে বসে। এটিও একটি ভুল।” [আশ-শারহ আল মুমতি‘ (৩/৭৩-৭৫)]

আর তারাউয়ীহর (তারাবীহর) সালাতে ৮ রাকা‘আতের বেশি পড়া জায়েয না হওয়ার মত পোষণকারীরা যে দলীল দিয়েছেন তা হলো, আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদির রাহমান এর হাদীস যাতে তিনি ‘আয়েশাহ্‌ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে প্রশ্ন করেছিলেন :

«كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم في رمضان ؟ فقالت : ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا فقلت يا رسول الله أتنام قبل أن توتر قال يا عائشة إن عينيَّ تنامان ولا ينام قلبي»

رواه البخاري ( 1909 ) ومسلم ( 738 )

“রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত কেমন ছিল?” তিনি বললেন : “তিনি (রাসূলুল্লাহ) রমযানে বা এর বাইরে ১১ রাক‘আতের বেশি আদায় করতেন না, তিনি ৪ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন- এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত!), এরপর তিনি আরও ৪ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন-এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত!), এরপর তিনি ৩ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি (‘আয়েশাহ) [উইতর (বিতর) এর আগে শুতে দেখে] বললাম :

“হে রাসূলুল্লাহ! আপনি কি উইতর (বিতর) এর আগে ঘুমিয়ে নিবেন?” তিনি (রাসলুল্লাহ) বললেন :

“হে ‘আয়েশাহ্‌, আমার দুই চোখ তো ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।” [এটি বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী (১৯০৯) ও মুসলিম (৭৩৮)]

তারা বলেন : এই হাদীস থেকে রমযানে ও এর বাইরে রাতের বেলা সালাতের (রাক্‌‘আত সংখ্যার) ব্যাপারে নিয়মিত থাকার নির্দেশনা পাওয়া যায়।

আর ‘আলিমগণ এ হাদীসকে তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-আচরণের (কাজের) দলীল হিসেবে পেশ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেননা (তাঁর) কাজ (আচরণ) থেকে ওয়াজিব হওয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায় না।

আর রাতের সালাত যেমন ‘তারাউয়ীহ’ (তারাবীহ), যা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত নয়। এ ব্যাপারে (বর্ণিত) স্পষ্ট দলীলগুলোর একটি হলো, ইবনু ‘উমার এর হাদীস, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :

«صلاة الليل مثنى مثنى فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلَّى» . رواه البخاري ( 946 ) ومسلم ( 749 )

“রাতের সালাত দুই দুই (রাক্‌‘আত) করে, এরপর আপনাদের মধ্যে যে ভোর (ফাজর) হবার আশংকা করে তিনি যেন এক রাক্‌‘আত পড়ে নেন যা আদায় করা সালাতের উইতর (বিতর, সালাতের রাক‘আত সংখ্যাকে বেজোড় করা) হিসেবে গণ্য হবে।”

[এটি বর্ণনা করেছেন, আল-বুখারী (৯৪৬) ও মুসলিম (৭৪৯)]

বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য (ফিক্বহী) মাযহাবসমূহের ‘আলিমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে, আর ১১ রাক‘আত-এর বেশি পড়ায় কোনো দোষ নেই।

ইমাম আস-সারখাসী, যিনি হানাফী (ফিক্বহী) মাযহাবের ইমামগণের একজন, বলেছেন :

“আমাদের মতে উইতর (বিতর) ছাড়া তা (তারাউয়ীহ) ২০ রাক্‌‘আত।” [আল-মাবসূত (২/১৪৫)]

ইবনু ক্বুদামাহ বলেছেন :

“আবূ-‘আবদিল্লাহ (অর্থাৎ ইমাম আহমাদ) রাহিমাহুল্লাহ-এর কাছে পছন্দনীয় মতটি হলো, তা ২০ রাক্‌‘আত। আর ইমাম আস-সাউরী, ইমাম আবূ-হানীফা ও ইমাম আশ-শাফি‘ঈ-ও এ মত ব্যক্ত করেছেন। আর ইমাম মালিক বলেছেন: “তা (তারাউয়ীহ) ৩৬ রাক‘আত।” [আল-মুগনী (১/৪৫৭)]

ইমাম আন-নাওয়াউয়ী বলেছেন :

“আলিমগণের ইজমা‘ মতে তারাউয়ীহর সালাত সুন্নাহ। আর আমাদের মাযহাবে তা ১০ সালামে ২০ রাক‘আত। তা একাকী ও জামা‘আতের সাথে আদায় করা জায়েয।” [আল-মাজমূ‘ (৪/৩১)]

এগুলো হলো তারাউয়ীহর সালাতের রাক‘আতের সংখ্যার ব্যাপারে চার ইমামের মাযহাবসমূহ, তাঁদের সবাই ১১ রাক‘আতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। যে কারণে তাঁরা ১১ রাক‘আতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন সম্ভবত তা হলো :

১.তারা দেখেছেন যে, আয়েশাহ্‌ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর হাদীস নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে না।

২.পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবি‘ঈগণের অনেকের কাছ থেকে (১১ রাক‘আতের) বেশি পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। [আল-মুগনী (২/৬০৪) ও আল-মাজমূ‘(৪/৩২)]

৩.নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ১১ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন তা এতটা দীর্ঘ করতেন যে তার পুরো রাতই লেগে যেত, এমনকি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- তারাউয়ীহর সালাতে তাঁর সাহাবীগণের সাথে যে সালাত আদায় করেছিলেন তা ফাজর (সুবহে সাদিক) উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন, এমনকি সাহাবীগণ সাহূর (সেহেরী) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণও (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তাঁরা তা দীর্ঘ মনে করতেন না। তাই ‘আলিমগণ এই মত ব্যক্ত করেছেন যে ইমাম যদি এভাবে সালাত দীর্ঘ করেন তবে তা মা’মূম তথা মুসল্লীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায় যা তাদেরকে (সালাত থেকে) বিমুখ করতে পারে, এমতাবস্থায় ইমাম ক্বিরা‘আত সংক্ষিপ্ত করে রাক্‌‘আত সংখ্যা বাড়াতে পারেন।

সার কথা হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১১ রাক্‌‘আত সালাত পড়ে সে ভাল করল এবং সুন্নাহ পালন করল। আর যে ক্বিরা‘আত সংক্ষিপ্ত করে রাকাআতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে সেও ভাল করল। যে এই দুটি বিষয়ের যে কোনো একটি করল, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেছেন :

“যে তারাউয়ীহর (তারাবীহর) সালাত আবূ হানীফাহ, আশ-শাফি‘ঈ ও আহমাদ-এর মাযহাব অনুসারে ২০ রাক্‌‘আত আদায় করল অথবা মালিক এর মাযহাব অনুসারে ৩৬ রাক্‌‘আত আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাক্‌‘আত আদায় করল সে ভাল করল, যেমনটি ইমাম আহমাদ মত পোষণ করেছেন এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে। তাই রাক্‌‘আত সংখ্যা বেশি বা কম করা ক্বিয়াম দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করা অনুযায়ী হবে।” [আল-ইখতিয়ারাত (পৃষ্ঠাঃ ৬৪)]

আস-সুয়ূত্বী বলেছেন :

“রমযানে ক্বিয়াম করার আদেশ দিয়ে ও এর ব্যাপারে উৎসাহিত করে সহীহ ও হাসান হাদীসসমূহে যা বর্ণিত হয়েছে তাতে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়নি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে এমনও প্রমাণিত হয় নি যে তিনি ২০ রাক্‌‘আত তারাউয়ীহ (তারাবীহ) পড়েছেন। বরং তিনি রাতের সালাত আদায় করেছেন যার (রাক্‘আতের) সংখ্যা উল্লেখিত হয় নি। এরপর তিনি ৪র্থ রাতে দেরি করলেন এই আশঙ্কায় যে তা (তারাউয়ীহর সালাত) তাঁদের উপর ফরয করে দেয়া হবে আর তাঁরা তা (পালন) করতে অসমর্থ হবেন।” ইবনু হাজার আল-হাইসামী বলেছেন: “নাবী-সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে তারাউয়ীহর সালাত ২০ রাক্‌‘আত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, “তিনি ২০ রাক্‌‘আত সালাত আদায় করতেন, তা অত্যন্ত দুর্বল।” [আল-মূসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)]

আর এইসবের পর প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাউয়ীহর (তারাবীহর) সালাত ২০ রাক্‌‘আত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা করেছেন। আর তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ আছে।

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

[1] বুখারী, হাদীস নং ৪৭২; মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯। [সম্পাদক]
[2] বুখারী, হাদীস নং ৬৩১।