প্রশ্ন: ইবাদাতের হাকীকত ও সারাংশ যেহেতু সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সর্বোচ্চ বিনয়ী হওয়ার ওপর নির্ভর করে, কিন্তু দেখা যায়, সৃষ্টিকুল সৃষ্টিকুলকে পরস্পর ভালোবাসে ও একে অন্যের সামনে নত হয় অথবা একতরফা ভালোবাসে বা বিনয়ী হয়, তাহলে উপরোক্ত দু’টি উসূলের ভিত্তিতে সৃষ্টিকুলের সাথে সম্পৃক্ত ভালোবাসা ও বিনয় যা ইবাদতের স্তরে পৌঁছে না ও ইবাদতের হাকীকতের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: (আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা, তাঁর ওপরই তাওয়াক্কুল করছি এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবো)। জেনে রাখুন, এ প্রশ্নটি একটি বড় প্রশ্ন ও অতি গুরুত্বপূর্ণ। ইবাদাতের গুরু রহস্য ও হাকীকত এমনকি পুরো তাওহীদই ভালোবাসা ও বিনয় সম্পর্কে জানার ওপর নির্ভরশীল। কোন ভালোবাসা ও বিনয় ইবাদত আর কোনটি ইবাদত নয় ও এ দু’টি বিষয়ের পার্থক্য জানা, কেননা এ দু’টির পার্থক্য পরস্পর বিপরীতমুখী, যদিও শব্দ দু’টি দেখতে কাছাকাছি, তবে এ দুয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

এর বিস্তারিত বর্ণনা হলো, আল্লাহর ভালোবাসা ও তাঁর কাছে নত হওয়ার প্রকৃত অর্থ হলো, তাঁর শরী‘আতের সমস্ত সংবাদ সত্যায়ন করে আত্মসমর্পণ করা। এ সত্যায়নের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য তালাশ করা, যা অন্তরের জন্য ইলম ও উপকারী জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত হয়, এটি ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ লক্ষ্যে ও সর্বাধিক উদ্দেশ্যে পৌঁছায়। আল্লাহর নৈকট্য, তাঁর সন্তুষ্টি, দুনিয়া ও আখিরাতের সাওয়াবের প্রত্যাশায় তাঁর আদেশ মান্য করা ও নিষেধ থেকে বিরত থাকা। অতএব, আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা করাই প্রকৃত ভালোবাসা; বরং এটি সমস্ত ভালোবাসার সারাংশ। কেননা আবেদ তথা গোলাম হলো যখন তার রব তথা মালিককে ভালোবাসে তখন সমস্ত পন্থায় তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে ও তাঁর নিকটবর্তী হতে চায়। আর এ প্রচেষ্টা ও কাজই হলো প্রকৃত আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ, যা রবের সমীপে নত হওয়া ও তাঁকে সম্মান করার সারাংশ; বরং এটিই হলো মুমিনের আত্মিক শক্তি যার ওপর ভিত্তি করে সে দৃঢ় সংকল্প করে থাকে। আর তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনিত সমস্ত সংবাদের উপর সাধারণভাবে বিশ্বাস আনায়ন করে তাদের আনুগত্য করা, তাদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা। আর এটিই হলো প্রকৃত ভালোবাসা ও অপমান হওয়া। যেহেতু মুমিন বলে: (سمعنا وأطعنا) আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম। অতএব, দীনের যা কিছুই তারা করে থাকে, দীনের যে সব কাজ করার দৃঢ় প্রত্যায় করে থাকে এবং যা কিছু অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নিয়মিত করার সিদ্ধান্ত নেয় সব কিছুই ভালোবাসা ও অপমান বোধের কারণেই হয়ে থাকে। এটিই হচ্ছে ইবাদতের প্রকৃত প্রভাব। আর এর ফলাফল হলো, ইলম, প্রত্যয়, আমল ও নিয়তে দীনের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা।

আল্লাহর নামসমূহ ও তাঁর সিফাতসমূহ জানার মাধ্যমে এ ভালোবাসা ও অপমান বোধ সৃষ্টি হয়। কেননা আল্লাহর রয়েছে পূর্ণমর্যাদাময় নামসমূহ ও মহান সিফাতসমূহ যা সমস্ত গুণে পরিপূর্ণ ও সর্বোচ্চ মহত্ব ও সৌন্দর্যে ভরপুর। এগুলো হলো সিফাতুল ইলাহিয়্যাত ও তাঁর গুণাবলী। অতএব, আল্লাহই হচ্ছেন ভালোবাসা ও নত হওয়ার মূল উৎস। যেহেতু তাঁর রয়েছে সর্বোচ্চ পরিপূর্ণ গুণাবলী, যা তাঁর জন্যই নির্ধারিত, কেউ এসব গুণে অংশীদার নয়। কুরআন ও তাঁর রাসূলগনের ভাষায় তাঁর যেসব গুণাবলী ও প্রশংসা উল্লেখ হয়েছে সেগুলোই সিফাতুল উলুহিয়্যাত, এসব গুণাবলীর কারণে বিনয়ী প্রেমিকরা তাঁকে ইলাহের আসনে বসায় (ইলাহ হিসেবে মানে) এবং এ কারণেই তারা তাঁর ইবাদাত করে। তাই তারা তাঁর বড়ত্ব, ক্ষমতা, সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জানে, ফলে তাঁর কাছে নত হয় ও নিজেকে অপমানিত ও নগণ্য মনে করে। আবার যখন তাঁর পরিপূর্ণতা, দানশীলতা, দয়া, বদান্যতা, ইহসান ইত্যাদি জানে তখন তাদের হৃদয় তাঁর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়, তাদের মুখ তাঁর প্রশংসায় ভরে যায়, তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাঁর নৈকট্য লাভ, সন্তুষ্টি অর্জন ও সাওয়াবের প্রত্যাশায় অনুগত হয়ে যায়। তারা আল্লাহর ন্যায় বিচার, প্রজ্ঞা, সব কিছু যথাস্থানে স্থাপন করার নিপুণতা, তাঁর বিরোধীদেরকে নানা রকমের শাস্তি প্রদান ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে তাঁকে ভয় করে, তাঁর অবাধ্যতা থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে ও বিরত থাকে। ভুলবশত অবাধ্যতায় পতিত হলেও তাড়াতাড়ি তাওবা করে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসে। মুমিনরা আল্লাহর অপরিসীম দয়া, অফুরন্ত রহমত, নানা ধরণের কোমতলা জানে, ফলে তারা তাঁর দয়া লাভে আগ্রহী হয়, তাঁর সাওয়াব ও বদান্যতা অর্জনের চেষ্টা করে, তখন তাদের কাছে কষ্টের কাজও হালকা মনে হয় যখন তারা ভাবে যে, এর বিনিময়ে তাদেরকে সম্মানিত করে হবে এবং সর্বোচ্চ সাওয়াব দান করা হবে। মুমিনরা জানে যে, আল্লাহ ছাড়া কারো থেকে কল্যাণ আসতে পারে না, আবার তিনি ছাড়া কেউ কোনো ক্ষতিও করতে পারে না, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরণের নি‘আমত একমাত্র তাঁর পক্ষ থেকেই, আর সব অকল্যাণ ও শাস্তি ব্যক্তির কর্মের কারণেই, তিনিই প্রকৃত ও একমাত্র রব আর তারা সবাই তাঁর প্রকৃত গোলাম। তারা নিজেদের পক্ষ থেকে কোন কিছু আবিষ্কার, সম্প্রসারণ ও সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়, তাঁর সৃষ্টি সব ফরিকগণ (সব সৃষ্টি) সব কাজেই তাঁর কাছে সাহায্য চায়, তাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয় কাজে-কর্মে, তাদের রিযিক ও পরিচালনা কাজে। তারা আসলেই একমাত্র আল্লাহর দাস, তিনি ছাড়া তাদের কেউ সাহায্যকারী নেই, কিন্তু তাদের কাছে আল্লাহ বিন্দুমাত্র মুখাপেক্ষী নন; বরং কল্যাণ বা অকল্যাণ যা কিছুই সংঘটিত হয় সব কিছুই একমাত্র মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই। ফলে তারা যখন তাদের রবকে জানতে পারে তখন তারা নিজেরাও নিজেদের আসল পরিচয় জানতে পারে, তখন তারা নিজেদেরকে আল্লাহর সামনে অপদস্ত, অপমানিত ও বিনীত মনে করেন এবং যেসব কাজে তাঁর নৈকট্য লাভ করা যায় সেসব কাজ করতে তারা পাগলপারা (আগ্রহী) হয়ে যায়। যখনই রহমতের প্রয়োজন পরে তখনই তারা তাঁর কাছে রহমত প্রার্থনা করে, তিনি তাদেরকে রহমত করেন, তাদের মা‘বুদ সর্বক্ষণই অভাবীর ডাকে সাড়া দেন ও তাদেরকে সাহায্য করেন। অতএব, উপরোক্ত আলোচনার থেকে স্পষ্ট হলো যে, ভালোবাসা ও অপমানবোধ মূলত আল্লাহর ইবাদত এবং তাকে ইলাহ হিসেবে মেনে নেওয়া, কাউকে তাঁর অনুরূপ না বানানো, উপকরণ ও দায়-দায়িত্বে অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষ না বানানো। দীনের কাজ-কর্ম পালনই হলো প্রকৃত ভালোবাসা ও বিনয়। আল্লাহর পরিচয় জানা, তাঁর যেসব মহত্ব, বড়ত্ব ও একত্ব রয়েছে সেগুলো জানা, বান্দা নিজের পরিচয় জানা, সে যে রবের বন্দেগীতে শুধুই মাত্র দাস ও তাঁরই কাছে অসহয় অভাবী তা জানা, ইলাহের কাছে তার প্রয়োজন, তার সুখ-সৌভাগ্য তাঁরই উপর নির্ভরশীল, তিনি এ ইবাদতের একমাত্র যোগ্য বান্দার এটি জানা, কেননা তারা তো আল্লাহরই দাস এবং তাঁরই ইবাদত করতে আদিষ্ট ইত্যাদি জানা প্রকৃত ভালোবাসা ও বিনয়। মাবুদ যেহেতু সর্ব গুণে ও পূর্ণতায় পরিপূর্ণ, তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, সেহেতু ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারিত, কেউ এতে অংশিদার হবে না। বান্দার মাঝে এ বিশ্বাস যত বেশি শক্তিশালী হবে তার তাওহীদও তত বেশি পরিপূর্ণ হবে এবং আল্লাহর ইবাদতও তত বেশি পূর্ণাঙ্গ হবে। আক্বীদা, কথা ও কাজে আল্লাহর ইখলাস, আল্লাহর পরিচিতি সংক্ষিপ্ত, বিস্তারিত, মৌলিক ও আনুসঙ্গিক রূপে জানার মাধ্যমে তাওহীদ পরিপূর্ণ হয়। আর এসব বিষয়ের জ্ঞান যত দুর্বল হবে তার তাওহীদও তত দুর্বল হবে। এ কারণেই রুবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত, উবুদিয়্যাত, তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত ওয়াল আফ‘আল (আল্লাহর নামসমূহ, সিফাতসমূহ ও কাজসমূহ) এ শির্ক সর্বদাই ইবাদতের বিপরীত যা সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসা ও অবনত হওয়া। কেননা যে ব্যক্তি ধারণা করে যে এ মহাবিশ্ব প্রতিপালন ও পরিচালনায় আল্লাহর সাথে কেউ শরীক আছে, অথবা আল্লাহর পরিপূর্ণ গুণাবলীতে তাঁর সমকক্ষ বা অনুরূপ কেউ আছে তাহলে সে আল্লাহর রুবুবিয়্যাতে শির্ক করল এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ করল; বরং সৃষ্টিকুলকে স্রষ্টার সাথে, দাস ও পরিচালিতকে মালিক ও পরিচালকের সাথে সমান করল এবং আল্লাহর উলুহিয়্যাতের বৈশিষ্ট্যসমূহকে নেতিবাচক করল যা প্রকৃতপক্ষে একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারিত। যে ব্যক্তি উবুদিয়্যাত ও ইখলাসে শির্ক করল অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করল সে তার তাওহীদ অপূর্ণাঙ্গ করল ও তার দীন বিনষ্ট করল যা শুধুই একনিষ্ঠতা ও ইখলাস। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُ﴾ [الزمر: ٣]

“জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩] তাহলে কোন ভালোবাসা ও কোন বিনীত হওয়া এ ইখলাসের সমান বা কাছাকাছি? হ্যাঁ, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে এ ধরণের ভালোবাসা ও তার সামনে এ ধরণের বিনয় হচ্ছে ইবাদতের সমপর্যয় আর এটি করা শির্ক। এ ধরণের ভালোবাসাই মুশরিককের থেকে প্রকাশ পায় যারা তাদের প্রতিমাগুলোকে বিনয়, সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শনে মহাবিশ্বের রব রাব্বুল আলামীনের সমান মনে করে। এ কারণেই জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়ে ভীষণ অনুতপ্ত হয়ে বলতে থাকবে যে, তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে পতিত ছিলো। তাদের ভাষায়ই শুনুন,

﴿تَٱللَّهِ إِن كُنَّا لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ٩٧ إِذۡ نُسَوِّيكُم بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٨﴾ [الشعراء : ٩٧، ٩٨]

“আল্লাহর কসম! আমরা তো সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিলাম। যখন আমরা তোমাদেরকে সকল সৃষ্টির রবের সমকক্ষ বানাতাম।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ৯৭-৯৮]

অথচ এটি তাদের তাওহীদে শির্ক, কেননা তারা রবের ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনে মুমিনদের মত ছিলো না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ١٦٥﴾ [البقرة: ١٦٥]

আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালবাসার মতো ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫]

অতএব, এ আলোচনা থেকে ইবাদতের হাকীকত তথা মূল স্পষ্ট হলো যে, ইবাদতে ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন আর স্বভাবজাত ও আনুসঙ্গিক ভালোবাসার মধ্যে বিশাল পার্থক্য। স্বভাবজাত ভালোবাসা কোন জিনিসের গুণ ও উক্ত জিনিসের প্রতি আকর্ষণের কারণে হয়, উক্ত গুণ বা আকর্ষণ অবশিষ্ট থাকলে সে জিনিসের প্রতি ভালোবাসা থাকে আর গুণ বা আকর্ষণ চলে গেলে তার প্রতি আর ভালোবাসা থাকে না। অন্যদিকে স্বভাবজাত বিনয় সৃষ্টিকুলের কারো শাস্তির ভয়ে হতে পারে যে নিজেরই কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। এ দু’টি ব্যাপার কখনও সৃষ্টির মাঝে একত্রিত হতে পারে, ফলে সে কাউকে ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতে পারে বা তার কাছে বিনয়ীও হতে পারে। যেমন, সে পিতার অধিকার বা ইহসান ইত্যাদি লক্ষ্য করে তখন তাকে ভালোবাসে ও তার প্রতি বিনয়ী হয়। যেহেতু পিতার অবদান ও তার অধিকার সে জানে বলে তাকে সম্মান ও ভালোবাসে, অথচ সে ভালো করেই জানে যে, তিনি (পিতা) তারই মতো একজন সৃষ্টজীব, তারই মতো অসম্পূর্ণ, তারই মতো সর্বক্ষেত্রে অভাবী, সে কোনো উপকার বা ক্ষতি, জীবন-মৃত্যু দান ও পুনরুত্থান করতে পারে না (এ সত্ত্বেও তাকে ভালোবাসে ও সম্মান করে)। অন্যদিকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নির্বাচিত লোকদের (নবী-রাসূল) প্রতি ভালোবাসা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ভালোবাসা কারণেই সৃষ্টি হয়। কেননা তাদের মধ্যে যখন তাদের প্রেমিকের (আল্লাহ) ভালোবাসা দেখে, যেহেতু আল্লাহ যেসব কাজ করলে সন্তুষ্ট তারা সেসব কাজ করে, ফলে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে ভালোবাসেন। এ কারণেই উবুদিয়্যাত ও তাওহীদের শক্তির কারণে এ ধরণের ভালোবাসা শক্তিশালী ও মজবুত হয়।

হে আল্লাহ! আপনার কাছে প্রার্থনা আপনি আমাদেরকে আপনার ভালোবাসা, যে আপনাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা এবং যে আমল আপনার ভালোবাসায় পৌঁছায় সে আমলের ভালোবাসা দান করুন। আমরা আপনার দয়ার উসিলায় আপনার কাছে পানাহ চাই আপনার ভালোবাসার সাথে মাখলুকের ভালোবাসার শির্ক থেকে, আপনার সাথে যে সব বিষয় নির্দিষ্ট সেসব বিষয়ে অন্যের সাথে সমকক্ষ করার শির্ক থেকে এবং আপনি যেসব ব্যাপারে একক ও একচ্ছত্র সেসব ব্যাপারে শির্ক করা থেকে। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে আরও প্রার্থনা করি আমাদের শক্তি-সামর্থ্য, সুস্থতা, আরোগ্যতা, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধন সব কিছু আপনার ভালোবাসার সাহায্যকারী ও আপনার আনুগত্যের কাজে শক্তি হিসেবে কবূল করুন। আপনি আমাদেরকে সব কাজে পূর্ণ ইখলাস দান করুন, যাতে ইবাদত ও অন্যান্য কাজে-কর্মে আমাদের নিয়ত ও প্রচেষ্টা আপনার কাছে পৌঁছায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে খারাপ কাজ ও পাপ আমল থেকে রক্ষা করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদানশীল ও পরম দয়ালু।